গোপন নথিসমূহ ১ম খণ্ড (৫১-১০০)
৫১
১৭/৪/১৯৪৯ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নিপীড়ন-বিরোধী দিবস’ উপলক্ষ্যে ছাত্রদের আয়োজিত ধর্মঘট সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট আইবিইবি, ঢাকার দুইজন অফিসার জমা দেন।
ঢাকা, ১৭ এপ্রিল ১৯৪৯
‘নিপীড়ন-বিরোধী দিবস’ উপলক্ষ্যে ছাত্রদের আয়োজিত ধর্মঘট সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট। তারিখ ১৭/৪/৪৯
সকাল ৭:৪০-এ নাদিরা বেগম, শেখ মুজিবুর রহমান ও বাহাউদ্দীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে দণ্ডায়মান ছিল এবং ক্লাসে অংশ নিতে ছাত্রদের বাধা প্রদান করছিল। কখনও প্ররোচনার মাধ্যমে ও কখনও জোরপূর্বক আবেদনের মাধ্যমে। বাধা সত্ত্বেও কিছু ছাত্র ক্লাসে যোগ দেয়। আর কিছু তাদের সাথেই যোগ দেয়।
দুপুর ১২টার দিকে মেডিকেল কলেজ ও স্কুল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধিকাংশ ছাত্র নিয়ে প্রায় ৬০জন ছাত্রের একটি সম্মিলিত মিছিল মেডিকেল কলেজের দিক থেকে আসতে দেখা গেছে। ফ্যাসিস্ট নীতির অবসান চাই, ছাত্র নেতাদের শাস্তির প্রত্যাহার চাই, ইউনিভার্সিটির অন্যায় অত্যাচার মানবে না, স্বৈরাচার চলবে না, জুলুমবাজ চলবে না ইত্যাদি স্লোগান দিতে দিতে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ প্রদক্ষিণরত অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে প্রবেশ করে।
১৩:০০ ঘটিকায় সব আন্দোলনকারী ও অন্য কিছু ছাত্র মিলে একটি সভায় জমায়েত হয়। শামসুল হুদা সেই সভায় সভাপতিত্ব করেন। (১) শেখ মুজিবুর রহমান, (২) আবদুল মতিন চৌধুরী, (৩) কাজি মাহবুব হুসাইন, (৪) নাদিরা বেগম ও (৫) বাহাউদ্দীন উক্ত সভায় বক্তৃতা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ধর্মঘটের প্রতি সহমর্মিতা দেখানোর জন্য ২৭জন ছাত্রছাত্রীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থার সমালোচনা করে ১,২ ও ৩ তাঁদের বক্তব্য প্রদান করেন। শাস্তি তুলে না নেওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যেতে তারা ছাত্রদের আহ্বান করে।
বাহাউদ্দীন বলেন যে, ছাত্রদের ন্যায্য দাবিকে দমন করার জন্য ফ্যাসিস্ট সরকার সর্বত্র ছাত্রদের ওপরই নিপীড়ন-নির্যাতন চালায়। চীনে চিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর বোমা নিক্ষেপ করে। ছাত্র আন্দোলন দমন করতে কায়রোতে ব্রিটিশ সাহায্য নেওয়া হয়। বর্ণিত এই নিপীড়ন সরকারকে পতনের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায় আর ছাত্রদের নিয়ে যায় বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। একই ফল বয়ে আনতে এই উদাহরণগুলোও এখানে চিরস্থায়ী হবে।
নাদিরা বক্তৃতায় বলেন, “শ্রমিক শ্রেণি থেকে ছাত্রসমাজ পৃথক নয়। তাই আমাদের আন্দোলন কেবল ছাত্রকেন্দ্রিক হবে না। বরং সব শোষিত-নির্যাতিত কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি জনতার জন্য এ আন্দোলন। উপাচার্য হলো ফ্যাসিস্ট সরকারের আদেশবাহক যে পুঁজিবাদ, মুনাফালোভী, কালোবাজারিদের সাথে যোগসাজশে আই.বি. ও পুলিশের সহায়তায় আইনসঙ্গত যে কোনো দাবির জন্য আন্দোলনকে দমন করে। তাই আমাদের আন্দোলন আদেশবাহকের বিরুদ্ধে নয়, বরং এই জালিম লীগ সরকারের বিরুদ্ধে।” সে বলতে লাগল, “চীন, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, বার্মা, ভারতসহ সর্বত্র এই ফ্যাসিস্ট সরকারগুলো জনগণের দাবি অবদমন করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এখানেও এই সরকার একই পরিণতি ভোগ করবে।” নিজেদের একতাবদ্ধ করতে এবং নুরুল আমিনকে তাঁর গদি ছেড়ে দিতে বাধ্য করতে তিনি ছাত্রদের সনির্বন্ধ অনুরোধ করেন।
নাদিরার বক্তব্যের পর যখন সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত পড়ে শোনাতে গোলাম মোস্তফা উঠে দাঁড়ালো তখন দলিলুর রহমান, সুলতান উদ্দীন ও মোখলেসুর রহমান তাতে বাধা দেন। ফলে বিশৃঙ্খলার ভেতর দিয়ে ১৪:০০ ঘটিকায় সভা শেষ হয়। সভার সিদ্ধান্তগুলো শোনা হয়নি। ৪জন ছাত্রী সমেত প্রায় ২০০জন ছাত্র সভায় অংশ নেয়। নিতাই গাঙ্গুলি, আবদুল ওদুদ পাটোয়ারি, মৃণাল কান্তি বড়ুয়াও সভায় উপস্থিত ছিল।
সেখান থেকে তারা বেলা ১৪:৩০ ঘটিকায় উপাচার্যের বাসভবন অভিমুখে স্লোগান দিতে দিতে একটি মিছিল নিয়ে যায়। উপাচার্যের সাথে তারা দেখা করতে চায়। কিন্তু তিনি নেমে আসলেন না। প্রোভোস্ট জনাব আয়েঙ্গার ও ওসমান গনি তাদের বুঝিয়ে-সুজিয়ে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শর্তহীনভাবে ছাত্রদের শাস্তি মওকুফ না করলে শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যরা তাদের কোনো রূপ ছাড় দিতে রাজি হন নি।
জমাকৃত
শাহজাদা খান এসআই, আইবি
মুহাম্মদ ইউনুস ২
এসআই আইবি, ১৮/৪
ওয়াচ সেক.
৫৭
চট্টগ্রামের আন্দারকিল্লার এমএসএল-এর উপবিভাগ ‘এ’ -এর সভাপতি এম.এ. তাহের কর্তৃক ঢাকার ইপিএমএসএল-এর অফিস, ১৫০ মোঘলটুলি নিবাসী শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রেরিত ১৮/৪/১৯৪৯ তারিখের একটি বাংলা চিঠি। চিঠিটি ২০/৪/১৯৪৯ তারিখে জিপিও ঢাকায় অভিগ্রহণ করা হয়। চিঠিটি ইংরেজিতে অনূদিত হয়।
ঢাকা, ২১ এপ্রিল ১৯৪৯
ইন্টেলিজেনস ব্রাঞ্চ
ঢাকা, ২১/৪/১৯৪৯
(অনুগ্রহপুর্বক অভিগ্রহণের বিষয়টি গোপনীয় রাখুন)
- প্রেরক (ঠিকানা সহ) : এম.এ. তাহের, সভাপতি। ‘এ’ উপবিভাগ, এম.এস.এল., প্রযত্নে আমানিয়া রেস্টুরেন্ট, আন্দারকিল্লা, চট্টগ্রাম
- প্রাপক (ঠিকানা সহ) : শেখ মুজিবুর রহমান, বি.এ., ইপিএমএসএল অফিস, ১৫০ মোঘলটুলি রোড, ঢাকা
- চিঠির ভাষা : বাংলা
- চিঠির তারিখ : ১৮/৪/৪৯
- পোস্টাল মোহর : অস্পষ্ট, ১৯/৪/৪৯
- অভিগ্রহণকারী ডাকঘর : ঢাকা, জিপিও
- অভিগ্রহণের তারিখ : ২০/৪/৪৯
- অভিগ্রহণের পরীক্ষক অফিসারের নাম : এএসআই, খন্দকার নুরুদদীন আহমেদ
- ছবি তুলে রাখা হয়েছে কি : …
- চিঠি আটকে রাখা হয়েছে না কি পাঠানো হয়েছে : অরিজিনাল কপি জমা দেওয়া হয়েছে
- প্রেরিত হলে অনুলিপি রাখা হয়েছে কি : রাখা হয়েছে
- অভিগ্রহণের অনুমতি প্রদানকারী সরকারি নির্দেশের নম্বর ও তারিখ : নৈমিত্তিক অভিগ্রহণ
অনুলিপি/অনুবাদ পাঠানো হয়েছে
ডিএস ভি
অনুগ্রহপূর্বক মনোনিবেশ সহকারে পড়ুন।
এমএ তাহির, সভাপতি, ‘এ’ সাব এমএসএল এই চিঠিটি ইপিএমএসএল-এ শেখ মুজিবুর রহমানকে পাঠিয়েছেন।
রিপোর্ট আরও বলা হয়, চট্টগ্রামের ডিএম এমএসএল-এর জিএল. সেককে টেলিগ্রাম ম্যাসেজ পাঠানো বন্ধ করেছেন।
সব স্কুল ও কলেজে ধর্মঘট ও মিছিল হয়েছে। সম্ভবত এগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কিত। চট্টগ্রামের ডিআইবিকে হয়তো এই চিঠির কপি পাঠানো হয়েছে।
স্বাক্ষর তারিখসমেত
২১/৪
পার্শ্ব নোট: অনুগ্রহপূর্বক টাইপ করে রেখে দিন, সংযুক্ত, স্বাক্ষর তারিখসমেত ২৯/৪
ইংরেজি অনুবাদটিতে সংশোধন প্রয়োজন। ডি/এস কি দয়া করে তা প্রথমে সংযুক্ত করে দেবেন?
: এসএস৩, প্রাপক মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু সমস্যা তৈরি করার দায়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন এবং এখন জেলে আছেন, চিঠিটি তাঁর পিএফে রাখা যায় এবং কপিটি চট্টগ্রামে পাঠানো যায়। স্বাক্ষর তারিখসমেত ২৮/৪
: ডিএস. ভি, একজন কর্মকর্তাকে চিঠিটি অনুবাদ করার জন্য পাঠানো যায়, অনুবাদ সংযুক্ত। স্বাক্ষর তারিখসমেত ২৭/৪
[চিঠির ছবি]
চট্টগ্রামের আন্দারকিল্লার আমানিয়া রেস্টুরেন্টস্থ সাব এমএসএল উপবিভাগ ‘এ’ -এর সভাপতি এম.এ. তাহের কর্তৃক ঢাকার ১৫০ মোঘলটুলি রোডস্থ ইপিএমএসএল-এর অফিস নিবাসী শেখ মুজিবুর রহমান, বি.এ.কে প্রেরিত ১৮/৪/১৯৪৯ তারিখের একটি বাংলা চিঠির অনুলিপি।
১৮/৪/৪৯
প্রযত্নে আমানিয়া রেস্টুরেন্ট
আন্দারকিল্লা, চট্টগ্রাম
[বাংলা চিঠি]
স্বাক্ষর তারিখসমেত
সভাপতি ‘এ’ উপবিভাগ, এম.এস.এল.
পেশকৃত
স্বাক্ষর তারিখসমেত ২১/৪/৪৯
এএসআই
চট্টগ্রামের আন্দারকিল্লার আমানিয়া রেস্টুরেন্টস্থ সাব এমএসএল উপবিভাগ ‘এ’ -এর সচিব এম.এ. তাহের কর্তৃক ঢাকার ১৫০ মোঘলটুলি রোডস্থ ইপিএমএসএল-এর অফিস নিবাসী শেখ মুজিবুর রহমান, বি.এ.কে প্রেরিত ১৮/৪/১৯৪৯ তারিখের বাংলায় লেখা একটি চিঠির ইংরেজি অনুবাদ। চিঠিটি ২০/৪/৪৯ তারিখে জিপিও, ঢাকায় অভিগ্রহণ করা হয়।
জনাব শেখ সাহেব,
তছলিম বাদ সংবাদ এই আপনাদের উপড় অত্যাচারের খবর পেয়ে আমরা (D.M.S.L. president & ‘A’ & ‘B’ sub-division M.S.L. secretary) এক যুক্ত বিবৃতি প্রতিবাদ করে প্রেস টেলিগ্রাম মারফত করা হইয়াছিল ১৪/৪ A.P.I. জানা গেল D.M. সাহেব বন্ধ করে দিয়াছেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর বিশেষ কড়া নজর রাখা সত্ত্বেও খোদার রহমতে প্রায় স্কুলের ছাত্ররা ধর্মঘট, সভা, শোভাযাত্রা করেছে এবং অত্যাচারের প্রতিবাদও করা হয়েছে। আশা করি যখন প্রবেশিকা পরীক্ষা শেষ হবে ২৬/ তাং একটা ছাত্র জনসভা তার প্রতিবাদে ডাকার বন্দবস্ত করিতেছি। কথা হলো এই, আমরা কোন প্রেস দিতে না পারায় আপনাদিগকে জানাইতেছি।আপনারা এই ১৭ তাং একখানা রিপোর্ট ভাল করে দিয়া দিবেন পত্রিকায়, … নইমুদ্দিন সাহেবের ব্যাপার নিয়ে চিন্তায় আছি। এই কাজটার দ্বারায় EPMSL নাম খারাপ হয়েছে। আমিও এবার প্রবেশিকা পরিক্ষার্থী, সময় কোথায়, দোওয়া করবেন। AEPMSL secretary. Qudus, Moulana Islam, Sultan এসেছিল সুবিধা করতে পারি নাই। আমায় দোওয়া করবেন।রহমান চৌ.কে আমার ছালাম জাং
স্বাক্ষর তারিখসমেত/-
এমএ তাহের
সচিব, ‘এ’ সাব এমএসএল
৫৮
দিনাজপুরের এসপি ঢাকার আইবিইবি-র এসএসপির নিকট একটি গোপন ম্যামো পাঠান। ম্যামোতে লেখা ছিল, একজন নিরাপত্তা বন্দির সাথে দেখা করতে শেখ মুজিবুর রহমান ২৩/৩/১৯৪৯ তারিখে দিনাজপুরে যান। তিনি স্থানীয় ছাত্রদের সাথেও দেখা করেন।
ঢাকা, ২২ এপ্রিল ১৯৪৯
গোপনীয়
জেলা ইন্টেলিজেনস ব্রাঞ্চ
দিনাজপুর, ২২ এপ্রিল ১৯৪৯
নং ১৩৫১/১০২-৪৮ (III)
খান সাহিব মু. ইউসুফ
বিশেষ পুলিশ সুপার, আইবি
পূর্ববঙ্গ, ঢাকা
আপনার নম্বরের রেফারেনস ৬৪৯(২)/৬০৬-৪৮ তারিখ ৬/৪/৪৯
শাহ আবদুল হামিদ চৌধুরি নামের এক ব্যক্তির সাথে শেখ মুজিবুর রহমান ২৩/৩/৪৯ তারিখে এখানে আসেন এবং নিরাপত্তা বন্দি দবিরুল ইসলামের সাথে দেখা করেন। তাঁরা স্থানীয় ছাত্রদের সাথে দেখা করেন এবং কমউনিস্ট কর্তৃক বিপথগামী না হতে বিশেষভাবে জোর দেন। ঢাকার উদ্দেশ্যে তাঁরা ২৬/৩/৪৯ তারিখে দিনাজপুর ত্যাগ করেন।
স্বাক্ষর, তারিখসমেত ২২/৪/৪৯
পুলিশ সুপার ইনটেনডেন্ট
দিনাজপুর
৫৯
ঢাকা জেলার ডব্লিউসিআর থেকে নেওয়া ২৩/৪/১৯৪৯ তারিখের সপ্তাহান্তের রিপোর্ট যেখানে এ কথা উল্লেখ করা হয় যে, ১২.৪.১৯৪৯ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ঢাবি,মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রদের একটি মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের চত্বর অভিমুখে যায়। রিপোর্টে আরও উল্লেখ ছিল, ছাত্র ও ঢাবির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যদের মধ্যে নিষ্ফল একটি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, ছাত্ররা চত্বরে অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নেয় ইত্যাদি।
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ১৯৪৯
২৩/৪/৪৯ তারিখে সপ্তাহান্তের ঢাকা জেলার ডব্লিউসিআর থেকে নেওয়া
- যুবক ও ছাত্র আন্দোলন
- (ক) একজন ডিআইও রিপোর্ট করেন যে, বেচারাম দেউড়ি ও দেওয়ান বাজার রোড হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের প্রায় ৫০/৬০ জন ছাত্র বেলা ১২:৪৫ ঘটিকার দিকে একটি মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের দিকে যায়।
তারা নিম্নরূপ স্লোগান দেয়-
“নারা-এ-তাকবির-আল্লাহু আকবার, ফ্যাসিস্ট রাজ চলবে না, ছাত্রদলন চলবে না, বহিষ্কার-আদেশ প্রত্যাহার কর, বন্দি ছাত্রদের মুক্তি চাই”।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে প্রবেশের মুখে তারা পিকেটারদের সাথে যোগ দেয়। ক্লাসে উপস্থিতি কম ছিল।
(খ) বিপুল সংখ্যক ছাত্রদের জমায়েত নিয়ে উপাচার্যের বাসভবন অভিমুখে অগ্রসর হওয়ার লক্ষ্যে একই দিন (১২/৪/৪৯) ১৩:০০ ঘটিকার সময় মেডিক্যাল স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৫০/২৬০জন ছাত্র মিছিল নিয়ে অধিক ছাত্র সংগ্রহের জন্য কার্জন হল, মেডিক্যাল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে যায়।
মিছিলে নেতৃত্ব দেন শেখ মুজিবুর রহমান (ইপিএমএসএল), বাহাউদ্দীন চৌধুরী (এসএফ), নাদিরা বেগম (এসএফ), আবদুল ওদুদ (ইপিএমএসএল) ও শামসুল হুদা নামে মেডিক্যাল কলেজের একজন ছাত্র। প্রায় ১৪:০০ ঘটিকার দিকে তারা উপাচার্যের বাসভবনের চত্বরের প্রাচীর বেয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। চত্বরের ভেতরে তারা ছাত্রদমন চলবে না, উপাচার্য অন্যায় আদেশ প্রত্যাহার কর ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে।
(গ) ১৮:০০ ঘটিকার দিকে বাসভবনের সভাকক্ষের দিকে তারা সবাই জমায়েত হয়। সেখানে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। শেখ মুজিবুর রহমান ও গোলাম মোহাম্মদ সভায় বক্তৃতা প্রদান করেন এবং ছাত্রদের বাসভবন ত্যাগ না করতে অনুরোধ করেন। তারা আরও বলে যে, আগামী কাল সকালে (১৯/৯/৪৯) বাজার করতে উপাচার্যের পরিচারকদের বাইরে যেতে দেবেন না তারা।
(ঘ) ১৮:৩০ ঘটিকার দিকে কার্যনির্বাহী পরিষদের কয়েকজন সদস্য উপাচার্যের বাসভবনে আসেন এবং উপরের তলায় একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। তাদের সিদ্ধান্ত শুনতে ছাত্ররা সভাকক্ষের বাইরে অপেক্ষা করে। ২১:০০ ঘটিকার দিকে বি. কাউন্সিলের কয়েকজন সদস্য যেমন (১) জনাব ইবরাহিম খান, (সভাপতি, মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড), (২) জনাব আবদুল হালিম (ঢাবির ইতিহাসের অধ্যাপক), (৩) জনাব মিজানুর রহমান (যুগ্মসচিব, শিক্ষা বিভাগ), (৪) ড. টি. আহমেদ (অধ্যক্ষ, মেডিক্যাল কলেজ), (৫) ড. চক্রবর্ত্তী (প্রোভোস্ট, ঢাকা হল) ছাত্রদের সামনে আসেন এবং নিষ্পত্তির জন্য তাদের সাথে আলোচনা করেন। ছাত্ররা তাদের ভুল স্বীকার করার জন্য প্রস্তুত বলে ঘোষণা করে।
অনতিবিলম্বে সদস্যরা আবার উপাচার্যের বাসভবনে ফিরে যান এবং কয়েক মিনিট পরে ফিরে আসেন। ফেরে এসে তাঁরা ছাত্রদের নিজ নিজ বাসায় ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করলেন।কিন্তু নির্দেশ তুলে নেওয়ার ব্যাপারে তাঁরা কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেননি।
অতঃপর ছাত্ররা এ কথা বলে সদস্যদের চলে যাওয়া পথের ওপরে শুয়ে পড়ল যে, তাদের সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তারা সদস্যদের বের হতে দেবে না। তারপর জনাব সিদ্দিক নামের কোনো এক উকিল এই বিষয়টি নিয়ে মধ্যস্থতায় নামেন। কিন্তু তাঁর মধ্যস্থতাও বিফলে যায়।
১.০০ ঘটিকা নাগাদ ই.সি. সদস্যদের আলোচনা চলে। (১৯/৪/৪৯) তারিখের সকাল বেলায়ও কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি। আলোচনা শেষ হলে উপাচার্যের বাসভবন ত্যাগ করেন তাঁরা।
প্রায় ২৫জন ছাত্র উপাচার্যের বাসভবনে অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে যায়। পরিস্থিতি অবলোকন করা হচ্ছিল।
পার্শ্ব নোট: ডি.এস.ভি/ডি.এস.II, স্বাক্ষর তারিখসমেত/- ইয়া.এ.সি. ১২/৫,
: শেখ মুজিবুর রহমানের পি.এফ. থেকে নেওয়া, স্বাক্ষর তারিখসমেত/- এ.এইচ. ১৩.৫.
৬০
১৯/৪/১৯৪৯ তারিখে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫৪ ধারা অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত শেখ মুজিবুর রহমানের আটককাল বৃদ্ধি করার বিষয়ে পূর্ববঙ্গের সরকারের সহকারী সচিব কর্তৃক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ইনটেনডেন্টকে প্রেরিত একটি এক্সপ্রেস চিঠি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ১৯৪৯
বিশেষ দূত কর্তৃক
প্রেরক: মৌলভী এ.বি. খান
পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব
প্রাপক: সুপার ইনটেনডেন্ট, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার
এক্সপ্রেস চিঠি
নং ১১৭৭-এইচ.এস, তারিখ, ঢাকা, ২৫ এপ্রিল, ১৯৪৯
ফৌজদারি দণ্ডবিধির ধারা ৫৪ মোতাবেক ১৯ এপ্রিল, ১৯৪৯ তারিখে গ্রেফতারকৃত শেখ মুজিবুর রহমানের আটকাবস্থা অনুগ্রহপূর্বক চালিয়ে যান এবং পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায় থাকুন।
স্বাক্ষর তারিখসমেত/- এ.বি. খান
পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব
নং ১১৭৭/১(৪)-এইচ.এস.
অবহিত করতে যাদের কাছে অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে:-
- উপমহাপরিদর্শক, পূর্ববঙ্গ ইন্টেলিজেনস ব্রাঞ্চ
- মহাকারাপরিদর্শক, পূর্ববঙ্গ
- জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকা
- পুলিশের বিশেষ সুপারইনটেনডেন্ট, পূর্ববঙ্গ ইন্টেলিজেনস ব্রাঞ্চ, ঢাকা
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ১৯৪৯
স্বাক্ষর তারিখসমেত/- ২৫/৪/৪৯
পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব
৬১
২৭/৪/১৯৪৯ তারিখে বাকেরগঞ্জ নিবাসী ও ঢাবির ছাত্র কাজি গোলাম মাহবূবের একটি বক্তব্য রেকর্ড করা হয়। তার বক্তব্যে সে বলে যে, ঢাকায় ইপিএমএসএল-এর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সে এই সংগঠনের একজন সদস্য। ইপিএমএসএল-এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্যদের মধ্যে যে ৩৫জন ঢাকা শহরের ছিল তাদের মধ্যে সে একজন ছিল। শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্য ৪জন ছাত্রনেতাকে সে চিনত।
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ১৯৪৯
২৭/৪/৪৯ তারিখে রেকর্ডকৃত বাকেরগঞ্জ জেলার গৌরনদী থানাধীন কসবা নিবাসী কাজি আবদুল মজিদের পুত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এম.এ. ২য় বর্ষের ছাত্র (৩৭, বিষ্ণুচরণ দাস লেন, ঢাকা) কাজি গোলাম মাহবূব ওরফে সরুর বক্তব্য।
ওপরে যেরূপ লিখিত আমার নাম ও বিস্তারিত সেরূপ। আমার বর্তমান বয়স প্রায় ২১ বছর। ১৯৪২ সালে বরিশাল জিলা স্কুল থেকে বেসরকারি প্রার্থী হিসেবে আমি ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাশ করি। এরপর আমি কলকাতায় গিয়ে সেই বছরেই ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হই। কলকাতায় গিয়ে আমি প্রায়ই ৩০, ইউরোপিয়ান এজাইলাম লেনে অবস্থিত আমার বোনের বাসায় উঠতাম। তাঁর স্বামী হলেন জনাব এস.এ. সালিক, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।
উক্ত কলেজ থেকে আই.এ. শেষ করার পর আমি ১৯৪৬ সালে বেকার হোস্টেলে স্থানান্তরিত হই। বেকার হোস্টেলে থাকাকালে জাতীয় সংসদের জনাব আবদুর রহমান সিদ্দিকের পক্ষ হয়ে আমি নির্বাচন প্রচারণায় অংশ নেই। জনাব এ.কে ফজলুল হকের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মুসলিম লীগের প্রতিনিধি জনাব সদরুদ্দীনের হয়েও আমি বঙ্গের সংসদ নির্বাচনের জন্য কাজ করি। এবং আফজাল সাহেব (মন্ত্রী)-এর বিপরীতে দাঁড়ানো জনাব সোবহান (এম.এল. প্রতিনিধি)-এর হয়ে এর আগে কাজ করেছি।
আবদুর রহমান চৌধুরী (কে. এস. আবদুল লতিফের পুত্র) বরিশালে দলের দায়িত্বে ছিলেন।
১৯৪৮ সালে (জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি) আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। তখন থেকে আমি ৩৭ বিষ্ণুচরণ দাস লেন, লালবাগ, ঢাকায় থাকি।
ঢাকায় যখন ইপিএমএসএল গঠিত হয় তখন থেকেই আমি এই সংগঠনের সদস্য। ইপিএমএসএল-এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্যদের মধ্যে যে ৩৫জন ঢাকা শহরের ছিলেন তাঁদের মধ্যে আমি একজন ছিলাম। নিম্নোক্তদের আমি চিনি:-
- আবদুল চৌধুরী (ঢাবি) (বরিশালের লতিফ মঞ্জিল ও এসএম হল, ঢাকার নিবাসী আবদুল লতিফ চৌধুরীর পুত্র)
- আবদুল মতিন খান চৌধুরী (ঢাবি)
- আবদুর রশীদ (ঢাবি)
- শেখ মুজিবুর রহমান (ঢাবি, ফরিদপুরের পাটগাটি থানার টুঙ্গিপাড়া গ্রামনিবাসী শেখ লুৎফর রহমানের পুত্র)
- জালাল (এম.এ. ২য় বর্ষ রাষ্ট্রবিজ্ঞান) (জালালুদ্দীন মোল্লা, ফরিদপুরের চন্দ্র-অধী থানার পর্ফা গ্রামের মুনশি হাতিমুল্লাহর পুত্র)
৬২
ফরিদপুরস্থ ডিআইবির একটি ডিআইও রিপোর্টের অনুলিপি। রিপোর্টটিতে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে যে, শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মাদারীপুরে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের একটি শাখা গঠনে স্থানীয় মুসলিম লীগার ও নাজিমউদ্দীন কলেজের অধ্যাপকবৃন্দ সর্বোচ্চ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। শেখ মুজিবুর রহমান সরকারকে সমর্থনই করতেন না। মাদারীপুর উপবিভাগীয় এমএসএল-এর ছাত্রনেতা ও শেখ মুজিবুর রহমানের সমর্থক হামিদ মাদারীপুর নাজিমুদ্দিন কলেজে ইপিএমএসএল-এর একটি শাখা সংগঠিত করে। কয়েকজন ব্যক্তি ও মিঠাপুর এল.এন.এইচ.ই. স্কুল এমএসএল-এর কার্যরত কমিটির সদস্যদের বিস্তারিতও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
ফরিদপুর, ২৮ এপ্রিল ১৯৪৯
গোপনীয়
[২৮/৪/৪৯ তারিখের ডি.আই.ও.র একটি রিপোর্টের অনুলিপি]
তদন্ত করে আমি জানতে পেরেছি যে, শেখ মুজিবুর রহমানের (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ থানার টুঙ্গিপাড়া গ্রামের নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র) নেতৃত্বে মাদারীপুরে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের একটি শাখা গঠনে স্থানীয় মুসলিম লীগার ও নাজিমউদ্দীন কলেজের অধ্যাপকবৃন্দ সর্বোচ্চ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। কারণ তারা ভেবেছিল, শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের যে শাখাটি গঠন করা হচ্ছিল সেটি বর্তমান সরকারকে সমর্থন করবে না। এই ছাত্রদলটির সদস্যরা জনাব সোহরাওয়ার্দীর (বঙ্গের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী) সমর্থক ছিল ও এখনও তারা বর্তমান মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে জনমত গঠনের জন্য নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। নাজিমুদ্দিন কলেজের ছাত্ররাও স্থানীয় লীগ নেতৃবৃন্দের দাবিগুলোকে সমর্থন করে। সুতরাং মুজিবুর রহমানের পার্টির পক্ষে সেখানে কোনো ছাত্র ইউনিয়ন গঠন করা সম্ভব নয়।
২১/১২/৪৮ তারিখে মঞ্চস্থ হবে এমন একটি নাটকের মঞ্চায়ন নিয়ে ডিসেম্বরের শেষের দিকে মাদারীপুর শহর নিবাসী আবদুল লতিফ ভুইয়ার পুত্র ও মাদারীপুর নাজিমুদ্দিন কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্র লুতফর রহমান ভুইয়া ওরফে বাদলের প্রস্তাবিত অভিনেতাদের বাছাই করা নিয়ে নাজিমুদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ ড. মহিউদ্দীনের সাথে গণ্ডগোল বাঁধে। এর ফলে লুতফর রহমান ভুইয়া ওরফে বাদল কলেজ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এই ঘটনায় নাজিমুদ্দিন কলেজের ছাত্রদের মধ্যে একটি বিভাজন তৈরি হয়। কলেজ ছাত্রদের অভ্যন্তরে এই বিভাজনের সুবিধা নিয়ে মাদারীপুর উপবিভাগীয় মুসলিম ছাত্রলীগের প্রাক্তন সভাপতি, মুজিবুর রহমানের দলের লোক ও বর্তমানে মাদারীপুর সিভিল সাপ্লাই অফিসের করণিক (মাদারীপুর থানার আওজ নিবাসী সাইজুদ্দীনের পুত্র) খন্দকার আবদুল হামিদ মাদারীপুর নাজিমুদ্দিন কলেজে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের একটি শাখা গঠন করে।
নিম্নলিখিত ব্যক্তিবর্গের বিস্তারিত বর্ণনা নিচে প্রদত্ত হলো:-]
- মাদারীপুর শহর (আমিরাবাদ) নিবাসী আবদুল লতিফ ভুইয়ার পুত্র বাদল ওরফে লুৎফর রহমান ভুইয়া। বয়স ২০ বছর। সে আই.এ. ১ম বর্ষের ছাত্র। মুসলিম ছাত্রলীগেরও সে একজন সদস্য।
- মাদারীপুর শহরের হাসেনুদ্দিনের পুত্র আবদুল লতিফ ভুইয়া। তার বয়স ৪৪ ও অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। এমজেপির সদস্য।
- ফরিদপুরের মাদারীপুর থানার কার্দি নিবাসী খান সাহিব জনাব আলী খানের পুত্র এসকান্দার আলী মিয়া। তার বয়স ৪০। তিনি স্নাতক ও একজন এম.এল.এ।
- ফরিদপুরের মাদারীপুর শহরের কালকিনি থানার চর দৌলতখান নিবাসী মৃত আইনুদ্দীনের পুত্র ফরিদপুর জেলা বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান, ফরিদপুর জেলা মুসলিম লীগের সম্পাদক খান সাহিব আলিমউদ্দীন। তাঁর বয়স ৫৫ ও তিনি একজন মুক্তার।
মিঠাপুর এল.এন. এইচ.ই. স্কুল মুসলিম ছাত্রলীগের কার্যকর কমিটির সদস্যদের বিস্তারিত বর্ণনা নিম্নরূপ:
- ফরিদপুরের মাদারীপুর থানার হোগলপাটি নিবাসী আফতারুদ্দীনের পুত্র মিঠাপুর এইচ.ই. স্কুলের হেড মৌলভী আফতাবুদ্দীন। তাঁর বয়স ৪৫। তিনি জামিয়াতুল উলা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
- ফরিদপুরের মাদারীপুর খানার চরনাচনা নিবাসী মফিজুদ্দীন ফকিরের পুত্র এল.এন.এইচ.ই. স্কুল, মিঠাপুর মুসলিম ছাত্রলীগের কার্যকর কমিটির সভাপতি আবদুল আজিজ মিয়া। মিঠাপুর এইচ.ই. স্কুল নবম শ্রেণির ছাত্র সে। বয়স প্রায় ২০।
- মাদারীপুর থানার বুড়ির চর নিবাসী জমাদার নদাইয়ের পুত্র মুসলিম ছাত্রলীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট জমাদার ইউসুফ আলী। মিঠাপুর এইচ.ই. স্কুলের ৯ম শ্রেণির ছাত্র সে।বয়স ১৯ বছর।
- ফরিদপুরের মাদারীপুর থানার গৌরবর্দী নিবাসী সাবার মাতবরের পুত্র মুসলিম ছাত্রলীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট আলেফুদ্দীন আহমেদ। তার বয়স ১৮। সে মিঠাপুর এইচ.ই. স্কুলের ৯ম শ্রেণির ছাত্র।
- ফরিদপুরের জঞ্জিরা থানার গায়ঘর গঙ্গানগর নিবাসী মৃত গিয়াসুদ্দীন তালুকদারের পুত্র মুসলিম ছাত্রলীগের সম্পাদক মুজিবর রহমান। তার বয়স প্রায় ২১ বছর। সে মিঠাপুর এইচ.ই. স্কুলের ৯ম শ্রেণির ছাত্র।
- ফরিদপুর মুকসুদপুর থানার বামনডাঙ্গা নিবাসী মৌলভী আলাউদ্দীন মিয়াঁর পুত্র সহকারী সচিব আবদুল হুসাইন। তার বয়স ১৮। সে মিঠাপুর এইচ.ই. স্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্র।
- ফরিদপুরের মাদারীপুর থানার কালিকাপুরের সালামত খানের পুত্র মুসলিম ছাত্রলীগের যুগ্মসচিব আফসারুদ্দীন। তার বয়স ১৯ বছর। ৯ম শ্রেণির ছাত্র সে।
- ফরিদপুরের শিবচর থানার হতসেরোয়ার নিবাসী আফেলুদ্দীন কাজির পুত্র মুসলিম ছাত্রলীগের খাজাঞ্চী কবিরুদ্দীন। তার বয়স ১৮ বছর। মিঠাপুর এইচ.ই. স্কুলের ৯ম শ্রেণির ছাত্র সে।
মাদারীপুর নাজিমুদ্দিন কলেজ মুসলিম ছাত্রলীগের কার্যকরী কমিটির সদস্যদের বিস্তারিত বিবরণ নিম্নরূপ:-
- ফরিদপুরের মাদারীপুর থানার চরমুগুরিয়া নিবাসী মৌলভী মোহাম্মদ মালফুস মিয়াঁ ওরফে ব্যাপারির পুত্র সভাপতি মোহাম্মদ হুসাইন মিয়াঁ। তার বয়স প্রায় ১৬ বছর।মাদারীপুর নাজিমুদ্দিন কলেজের আই.এ. ১ম বর্ষের ছাত্র।
- ফরিদপুরের মাদারীপুর থানার হাজিরহাওলা নিবাসী মৃত কোরমান তালুকদারের পুত্র ভাইস প্রেসিডেন্ট মুজিবুর রহমান। তার বয়স ১৬ বছর। সে আইএ ১ম বর্ষের ছাত্র।
- ফরিদপুর জঞ্জিরা থানার গৈঘর-গঙ্গানগর নিবাসী চেরাগ আলী মাতবরের পুত্র আবদুল মাজিদ মিয়া। তার বয়স ২০ বছর। আই.এ. শ্রেণির ১ম বর্ষের ছাত্র সে।
- ফরিদপুরের মাদারীপুর থানার চর পাখাইরা নিবাসী লাল চাঁদ ফকিরের পুত্র সভাপতি মোহাম্মদ নোয়াব আলী। তার বয়স ১৮ বছর। সে আইএ ১ম বর্ষের ছাত্র।
- ফরিদপুর মাদারীপুর থানার পঞ্চখোলা নিবাসী হাজি ইসলাম খানের পুত্র যুগ্মসচিব আবদুল হামিদ খান। তার বয়স ১৮ বছর। সে আইএ ১ম বর্ষের ছাত্র।
- ফরিদপুর মাদারীপুর থানার শুচিয়ারভাঙ্গা নিবাসী মৌলভী নাজিমুদ্দিন ঢালির পুত্র সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তার বয়স ১৮ বছর। সে আইএ ১ম বর্ষের ছাত্র।
- ফরিদপুর মাদারিপুর থানার পঞ্চখোলা নিবাসী মৌলভী আদেলুদ্দীনের পুত্র খাজাঞ্চী সিরাজুল হক। তার বয়স ২০ বছর। সে আইএ পর্যন্ত পড়েছে। বর্তমানে পাকিস্তান নেভিতে কর্মরত।
- ফরিদপুর জঞ্জিরা থানার জঞ্জিরা নিবাসী মৌলভী আবদুল মাজিদ ফকিরের পুত্র অডিটর আবদুল সাত্তার মিয়া। তার বয়স ১৮ বছর। সে আইএ ১ম বর্ষের ছাত্র।
- ফরিদপুর পালঙ্গ থানার আঙ্গারিয়া নিবাসী হাজি ইব্রাহিম হাওলাদারের পুত্র শামসুল হক। তার বয়স ১৭ বছর। সে আইএ ১ম বর্ষের ছাত্র।
- ফরিদপুরের মাদারীপুর থানার গাইদা নিবাসী জব্বার আলী মিয়াঁর পুত্র করম আলী। তার বয়স প্রায় ১৮ বছর। সে আইএ ১ম বর্ষের ছাত্র।
- ফরিদপুরের মাদারীপুর থামার চান্দিবার্দি নিবাসী পাঞ্জু মোল্লার পুত্র মিয়া আবদুল হামিদ। তার বয়স প্রায় ১৮ বছর। সে আইএ ১ম বর্ষের ছাত্র।
- ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ থানার বনগ্রাম নিবাসী আবদু সরদারের পুত্র হেমায়েতউদ্দীন। তার বয়স প্রায় ১৭ বছর। সে আইএ ১ম বর্ষের ছাত্র।
- ফরিদপুরের শিবচর থানার মোজাফফরপুর নিবাসী নিজামুদ্দীন ব্যাপারীর পুত্র আবদুল গাফফার। তার বয়স প্রায় ১৮ বছর। সে আইএ ১ম বর্ষের ছাত্র।
গোপনীয়
একজন ডি.আই.ও.-এর ২৮/৪/৪৯ তারিখের রিপোর্টের কপি
জেলা ইন্টেলিজেনস ব্রাঞ্চ
ফরিদপুর, ১৩ মে, ১৯৪৯
নং ১৯৩৭/৬-৪৯(১)
পূর্ববঙ্গ, ঢাকাস্থ আই.বি.-র বিশেষ পুলিস সুপার খান সাহেব এম. ইউসুফের নিকট তাঁর সূত্রের নম্বর ২৪৪৮/৬০৬-৪৮ (হাই), তারিখ ১৪/২/৪৯ সম্পর্কে তথ্য জানিয়ে প্রেরিত।
স্বাক্ষর তারিখসমেত/- ১৩/৫
(এম.এস. হক)
পুলিশ সুপার, ডিআইবি, ফরিদপুর
৬৩
ঢাকাস্থ ডিআইবি-র এডিশনাল এসপি ঢাকাস্থ আইবিইবি-র এসএসপিকে একটি দাপ্তরিক পত্র পাঠান। পত্রে ডিএম, ঢাকা কর্তৃক শেখ মুজিবুর রহমানকে ৩মাসের জন্য ডিটেনশনে নিতে বলা হয়েছে।
ঢাকা, ২৯ এপ্রিল ১৯৪৯
জেলা ইন্টেলিজেনস ব্রাঞ্চ
ঢাকা, ২৯ এপ্রিল, ১৯৪৯
নং ২৯৮৭/১০০-৪৯
গোপনীয়
বরাবর
খান সাহিব মো. ইউসুফ
বিশেষ পুলিশ সুপার, আই.বি., ই.বি., ঢাকা
সূত্র নং ৭৯৮০/৬০৬-৪৮-পি.এফ., তারিখ ২৫/৪/৪৯
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকা কর্তৃক পূর্ববঙ্গ নিবৃত্তিমূলক আটক অধ্যাদেশ (১৯৪৯-এর অধ্যাদেশ ৬)-এর ধারা ২-এর অধীনে শেখ মুজিবুর রহমানকে ৩ মাসের জন্য বন্দি করে রাখার সুপারিশ করা হচ্ছে।
তারিখ, স্বাক্ষরসমেত ২৯/৪
পুলিশের অতিরিক্ত সুপার
ডি.আই.বি., ঢাকা
৬৪
ডিআইবি, ঢাকার এডিশনাল এসপি কর্তৃক জমাকৃত ৩০/৪/১৯৪৯ তারিখের দৈনিক গোয়েন্দা রিপোর্ট নং ৭৩। রিপোর্টে বলা হয় যে, বেঙ্গল নিবৃত্তিমূলক আটক অধ্যাদেশের ধারা ১৮(২)-এ শেখ মুজিবুর রহমানকে ২৯/৪/১৯৪৯ তারিখে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়। সিরাজুল হক ও অন্য আরও ৬ জনকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এদের সবাই ১৯/৪/১৯৪৯ তারিখে ঢাবির ভিসির বাসভবন থেকে গ্রেফতার হয়েছিল।
ঢাকা, ৩০ এপ্রিল ১৯৪৯
দৈনিক গোয়েন্দা রিপোর্ট নং ৭৩, তারিখ ৩০/৪/৪৯
- সূত্র: ডি.আই.আর. নং ৬৫-এর প্যারা ২, তারিখ ২০/৪/৪৯
- লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমান বেঙ্গল নিবৃত্তিমূলক আটক অধ্যাদেশের ১৮(২) ধারাতে ২৯/৪/৪৯ তারিখে গ্রেফতার হয়েছেন ও তাঁকে কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়েছে। এবং নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে:-
- হাফিজুল হকের পুত্র সিরাজুল হক
- মরহুম মো. সোলাইমানের পুত্র এ.এইচ.এম. আবদুস সাত্তার
- আখতারউদ্দীনের পুত্র আতাউর রহমান
- বাসিরুদ্দীনের পুত্র এ.এইচ.এম. শামসুল হুদা
- ওয়াসিহুদ্দীনের পুত্র মোজহারুদ্দীন
- আবদুর রহিমের পুত্র আবু নাসের মো.ওয়াহেদ
(১৯/৪/৪৯ তারিখে উপাচার্যের বাসভবন থেকে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গকে গ্রেফতার করা হয়।)
গোপনীয়
জেলা ইন্টেলিজেনস ব্রাঞ্চ
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ১৯৪৯
তথ্যের জন্য অনুলিপি প্রেরিত হলো:-
- ম. আহমদ, মাননীয়, পি.পি.এস., এস.এস.আই.বি., ই.বি., ঢাকা
- ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ, ঢাকা রেঞ্জ, ঢাকা
- জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকা
- মনোযোগ দিয়ে পড়ে ফেরত পাঠাতে ঢাকার পুলিশ সুপারকে
স্বাক্ষর তারিখসমেত/-
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ডিআইবি
ঢাকা ৩০/৪
৬৫
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ইন্টেনডেন্ট কর্তৃক পূর্ববঙ্গ সরকারের উপসচিবকে প্রেরিত একটি দাপ্তরিক চিঠি। চিঠিতে এ কথা উল্লেখ করা হয় যে, ২৯/৪/১৯৪৯ তারিখে পাঁচজন ছাত্রসহ শেখ মুজিবুর রহমানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মঘট চালানোর সময় বন্দি করা হয় ও জেলে পাঠানো হয়। নিরাপত্তা বন্দি হিসেবে তারা বিভাগ ২ ক্যাটাগোরিতে স্থান পায়।
ঢাকা, ৩০ এপ্রিল ১৯৪৯
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার অফিস
ম্যামো নং ৮৩৮/ এস.বি., তারিখ ৩০/৪/৪৯
বরাবর
পূর্ববঙ্গ সরকারের উপসচিব
স্বদেশ (বিশেষ) বিভাগ
বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মঘটের সাথে সংশ্লিষ্ট নিম্নলিখিত বন্দিরা ২৯/৪/৪৯ তারিখে পরবর্তী ৩০ দিনের জন্য বেঙ্গল বিশেষ ক্ষমতা অধ্যাদেশের (১৯৪৬ সালের অধ্যাদেশ ৬) ১৮(২) ধারার অধীনে ঢাকার ডি.আই.বি.-র পুলিশ ইন্সপেক্টর কর্তৃক পুনরায় জেলে প্রবেশকৃত হয়। ডি.আই.বি. কর্তৃক কৃত সুপারিশের অনুমোদনের প্রত্যাশায় নিরাপত্তা বন্দি হিসেবে তারা ডিভিশন ২-এ স্থান পেয়েছে:-
- কাজি গোলাম মাহবুব
- বাহাউদ্দীন আহমেদ
- শেখ মুজিবুর রহমান
- খালেক নেওয়াজ খান
- শামসুল হুদা
- আজিজ আহমেদ
স্বাক্ষর তারিখসমেত/- এ.এইচ. খান
সুপার, ঢাকা কেন্দ্রীয় জেল, ৩০.৪
গোপন
নং ৮৩৮/৩- এস.বি. তারিখ ৩০/৪/৪৯
যাঁদেরকে অনুলিপি পাঠানো হয়েছে:-
i. বন্দিদের উল্লিখিত শ্রেণিবিন্যাস মঞ্জুর করতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকাকে
ii. অবহিত করতে পূর্ববঙ্গের কারাগারের ইন্সপেক্টর-জেনারেলকে
iii. অবহিত করতে ঢাকার আই.বি.-র পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেলকে
৬৬
ঢাকা ডিআইবির এডিশনাল এসপি কর্তৃক পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিবকে প্রেরিত একটি অ্যাক্সপ্রেস চিঠি। চিঠিতে তিনি (এডিশনাল এসপি) শেখ মুজিবুর রহমানের ৩ মাসের আগাম গ্রেফতারি পরওয়ানা জারির অনুরোধ করেন। ঢাকার এসপি ও ডিএম-ও তাঁর গ্রেফতারির জন্য সুপারিশ করেন।
ঢাকা, ৩০ এপ্রিল ১৯৪৯
অ্যাক্সপ্রেস
গোপনীয় জেলা ইন্টিলেজেনস ব্রাঞ্চ
নং ৩০৩৮/১০০-৪৯ ঢাকা, ৩০ এপ্রিল ১৯৪৯
পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব
স্বরাষ্ট্র বিভাগ, বিশেষ সেকশন
ইডেন বিল্ডিং, রমনা, ঢাকা
মাধ্যম
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ও
পুলিশ সুপার, ঢাকা
সূত্র: এই অফিস ম্যামো নং ২৭২৫, তারিখ ২০/৪/৪৯
জনাব,
যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শনপূর্বক আমি রিপোর্ট করছি যে, গোপালগঞ্জ থানার টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র ও ঢাকার লালবাগ থানাধীন ১৫০ মোগলটুলি নিবাসী শেখ মুজিবুর রহমান বেঙ্গল বিশেষ ক্ষমতা অধ্যাদেশের (১৯৪৬ সালের অধ্যাদেশ ৬) ১৮(২) ধারার অধীনে গ্রেফতার হয়েছেন এবং ২৯/৪/৪৯ তারিখে ঢাকা কেন্দ্রীয় জেলে প্রবেশকৃত হয়েছেন।
বেঙ্গল বিশেষ ক্ষমতা অধ্যাদেশের (১৯৪৬ সালের অধ্যাদেশ ৬) ১০ক (১), (১৯৪৯ সালের অধ্যাদেশ ৬-এর ধারা ২-এর অধীনে নয়) ধারার অধীনে যে কোনোভাবে বিচারকার্য থেকে শুরু করে জননিরাপত্তায় অংশগ্রহণ হতে তাঁকে বিরত রাখার লক্ষ্যে ও জনআদেশ বজায় রাখার জন্য ৩মাসের জন্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাঁকে বন্দি করে রাখার আদেশ জারি করতে জনাবের যেন আজ্ঞা হয়।
শ্রদ্ধাপ্রদর্শনপূর্বক
আপনার একান্ত বাধ্যগত
স্বাক্ষর তারিখসমেত/- আ. গফুর
এডিশনাল পুলিশ সুপার ইন্টেনডেন্ট
ডি.আই.বি., ঢাকা
এফ.আর. খন্দকার, মাননীয় পি.পি.এস.; ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ, আই.বি., ই.বি., ঢাকাকে মেমো নং ২৭২৫/(১) তারিখ ২০/৪/৪৯-এর ধারাবাহিকতায় অবহিত করার লক্ষ্যে প্রেরিত।
রেফারেন্সের অধীন মেমোর সাথে উক্ত বিষয়ের রেফারেন্স নোট ইতোমধ্যে প্রেরিত হয়েছে। বিবৃতি ও ইতিহাসের শিটে এ সম্পর্কে আছে।
স্বাক্ষর তারিখসমেত/- ৩০/৪
এডিশনাল সুপার ইন্টেনডেন্ট অফ পুলিশ
ডিআইবি, ঢাকা
পার্শ্ব নোট: পাঠানো হয়েছে। ৩ মাসের জন্য আমি বন্দিত্বের সুপারিশ করছি। স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- এস.এ. চৌধুরী, ১/৫/৪৯, এসপি, ঢাকা
: আমি সম্মত আছি। স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- এ. রেজা, ২/৫, ডি.এম. ঢাকা
৬৭
ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া নিবাসী শেখ লুৎফর রহমানের পুত্র এবং ১৫০ মোগলটুলি, ঢাকা নিবাসী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি ২য় বর্ষের ছাত্র শেখ মুজিবুর রহমানের বিবৃতি। ঢাকাস্থ ডিআইবির এসআই কর্তৃক বিবৃতিটি লিখিত হয়েছে।
ঢাকা, ১ মে ১৯৪৯
ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাটি ডাকঘরের অধীন টুঙ্গিপাড়া নিবাসী মৌলভী শেখ লুৎফর রহমানের পুত্র এবং ১৫০ মোগলটুলি, ঢাকা নিবাসী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে এলএলবি ২য় বর্ষের অধ্যয়নরত শেখ মুজিবুর রহমানের বিবৃতি।
আমার নাম শেখ মুজিবুর রহমান। আমি ফরিদপুর জেলাধীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া নিবাসী মোলভী শেখ লুৎফর রহমানের পুত্র। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। শেখ আবু নাসের নামে আমার এক ছোটো ভাই আছে যে গোপালগঞ্জের এসএন একাডেমি থেকে এ বছর ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দিয়েছে। আমার চার বোনের নাম ১) ফাতেমা বেগম ২) আসিয়া বেগম ৩) আমেনা বেগম ৪) লায়লা বেগম। আমি ১৯৪২ সালে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৪৫ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে আই.এ. ও ১৯৪৭ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি.এ. পাশ করি। আমার বয়স প্রায় ২৮ বছর।
১৯৩৭ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত আমি ফরিদপুরের অধীন গোপালগঞ্জ মহকুমার মুসলিম ছাত্রলীগের সম্পাদক ছিলাম।
একই সাথে আমি ১৯৩৯ থেকে ১৯৪২ পর্যন্ত গোপালগঞ্জ মহকুমাধীন মুসলিম লীগ ও ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলাম। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত গোপালগঞ্জের মুসলিম লীগ প্রতিরক্ষা কমিটির সম্পাদকও ছিলাম। ১৯৪০ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত ফরিদপুর জেলায় মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগকে আমি সংগঠিত করি। ১৯৪৩-৪৪ সালের জন্য বঙ্গের প্রাদেশিক মুসলিম লীগ রিলিফ কমিটির সম্পাদক মোয়াজ্জম হোসেন চৌধুরীর সহকারী হিসেবে কাজ করেছিলাম। নাটোর ও বালুঘাট উপনির্বাচনে জনাব ফজলুল হক ও শ্যামাপ্রসাদ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে মুসলিম লীগের পক্ষে কাজ করেছিলাম। ১৯৪৩ সালে গোপালগঞ্জে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান সভার অভ্যর্থনা কমিটিতে আমি ছিলাম চেয়ারম্যান। উক্ত সভায় পাকিস্তান সংবিধান সভার সভাপতি জনাব তমিজউদ্দিন খান, পাকিস্তান রাষ্ট্রের সম্প্রচার ও আন্তবাণিজ্যের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী সম্মানিত খাজা শাহাবুদ্দীন সাহেব এবং মুসলিম লীগের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ১৯৪৪ সালে মুসলিম লীগের প্রতিনিধির পক্ষে কলকাতা কর্পোরেশন ইলেকশনে আমি কাজ করি। ১৯৪৫ থেকে ১৯৪৬ পর্যন্ত ফরিদপুর জেলা মুসলিম লীগ নির্বাচনে আমি ছিলাম চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী ও বঙ্গের প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সংসদীয় বোর্ড কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রচারকর্মী। আমার অধীনে ৬টি নির্বাচনী এলাকা ছিল।
বঙ্গের প্রাদেশিক মুসলিম লীগের ৬৮ প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৪৪ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের ৬৯ সভায় অংশ নেই আমি। উক্ত সভায় কায়েদ-এ-আজম সভাপতিত্ব করেন। ১৯৪৬ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের বিশেষ অধিবেশনেও আমি অংশ নেই যেখানে কায়েদ-এ-আজমের সম্মুখে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিজের জীবন বাজি রাখার শপথ নিয়েছিলাম। বিহারে রায়ট চলা কালে বঙ্গের প্রাদেশিক মুসলিম লীগের প্রতিনিধি ছিলাম আমি। ১৯৪৬ সালে প্রায় তিন মাসের জন্য আমি আসানসোল, কান্দুলিয়া, মাদাইগঞ্জ, মায়েরা, নিগা প্রভৃতি স্থানে বিহারি রিফিউজি ক্যাম্পের ইনচার্জ ছিলাম। কলকাতায় রায়ট চলা কালে ব্রাভার্ন কলেজ, মুসলিম লীগ অফিসের রিফিউজি ক্যাম্পে কলকাতা মুসলিম ছাত্রলীগের ইনচার্জ হিসেবে কাজ করেছি। ১৯৪৭ সালে সিলেটে গণভোট ৭০ অনুষ্ঠিত হলে ৩ লক্ষ স্বেচ্ছাসেবীর ইনচার্জ ছিলাম আমি। সব শেষে, ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত বেঙ্গল প্রাদেশিক মুসলিম লীগের কাউন্সিলর ছিলাম। ১৯৩৮ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সদস্য ছিলাম। দেশবিভাগের পর আমি ইপিএমএসএল-এর একজন সদস্য হিসেবে কাজ করেছি। কমউনিস্ট পার্টির সাথে বা পূর্ব পাকিস্তানের অন্য কোনো দলের সাথে আমার কোনো সংযোগ নেই। ঢাবির ২৭জন ছাত্রকে শাস্তি প্রদানের প্রতিবাদে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ছাত্র ধর্মঘটে আমি যোগ দিয়েছি। এর আগে ঘটে যাওয়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ধর্মঘটে আমি যোগ দেইনি। ডিএম, ডিআইজি ও শহরের এসপি কর্তৃক ১৯/৪/৪৯ তারিখে প্রায় ১৬:১০ ঘটিকায় অপর ৬জন ছাত্রসহ আমি গ্রেফতার হই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয় থেকে আমাদের জেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
উপরের বক্তব্যটিতে নজর বুলিয়ে নিন ও তা সঠিক বলে স্বীকার্য।
স্বাক্ষর তারিখসমেত
ডিআইবি, ঢাকা
১/৫/৪৯
স্বাক্ষর তারিখসমেত
এস.এম. রহমান
১/৫/৪৯
- বেঙ্গল প্রাদেশিক মুসলিম লীগ: ১৯১২ সালের ২রা মার্চ ঢাকায় বেঙ্গল প্রাদেশিক মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি গঠিত হয়। নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন নওয়াব খাজা সলীমুল্লাহ, সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ও জাহিদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন এর সম্পাদক।
- নিখিল ভারত মুসলিম লীগ: নিখিল ভারত মুসলিম লীগ (মুসলিম লীগ হিসেবে জনপ্রিয়) একটি রাজনৈতিক দল যা ১৯০৬ সালে ঢাকার অবাঙালি মুসলিম অভিজাত শ্রেণি, নাইট, নওয়াব ও জমিদারদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে এ দলটি মুসলিম অধ্যুষিত একটি পৃথক জাতিরাষ্ট্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করে।
- সিলেট গণভোট: ১৯৪৭ সালের ৪ঠা জুলাই ব্রিটিশ রাজের সরকার এই বলে একটি গণভোট আহ্বান করেন যে, ১৯৪৭ সালের ৭ই জুলাই সিলেটের ভবিষ্যৎ নির্ধারক একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটের কমিশনার নিযুক্ত হন এইচ.সি. স্টক। সিলেট কি ভারতের আসামের সাথে যুক্ত হবে, না পাকিস্তানের পূর্ববঙ্গের সাথে থাকবে এই সিদ্ধান্ত নিতে ‘সিলেট গণভোট’ অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তানের যোগদানের পক্ষে গণভোটে সিদ্ধান্ত আসে।
গোপনীয়
ইতিহাস শিট
(রেকর্ডকৃত বিবৃতি হিসেবে ব্যবহার্য)
- নাম, উপনাম, ডাকনাম (যদি থাকে) : শেখ মুজিবুর রহমান
- পিতার নাম: মৌলভী শেখ লুৎফর রহমান
- ঠিকানা সমূহ
(ক) বাড়ির ঠিকানা: গ্রাম: টুঙ্গিপাড়া, ডাকঘর: পাটগাটি, থানা: গোপালগঞ্জ, জেলা: ফরিদপুর
(খ) অন্য ঠিকানা: ১৫০ মোঘলটুলি, ঢাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এল.এল.বি. দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র
- ধর্ম: মুসলিম
- জন্মতারিখ: ১৯২১ (২৮ বছর)
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (পরীক্ষায় পাশের সন ও স্থানসহ): গোপালগঞ্জ মিশন এইচ.ই. স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন ১৯৪২ সালে।
কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে আই.এ. পাশ করেন ১৯৪৫ সালে, কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি.এ. পাশ করেন ১৯৪৭ সালে, বর্তমানে ঢাবির এল.এল.বি. ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত।
- কর্মস্থলসমূহ (যদি থাকে) প্রায় যথাযথ তারিখসহ: নিল
- সম্পর্কের নাম
(ক) সরকারি চাকরিতে: নিল
(খ) রাজনৈতিক অপরাধ সংশ্লিষ্ট বা বেঙ্গল ফৌজদারি আইন সংশোধন আইন বা অন্য বিশেষ আইনপ্রণয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট: নিল
(গ) বেসরকারিভাবে নিয়োজিত, হলে কোন প্রতিষ্ঠানে: নিল
(ঘ) অন্যান্য ভাই: ১) শেখ আবু নাসের
বোন: ১) ফাতেমা বেগম
- আছিয়া বেগম
- লায়লা বেগম
- আমেনা বেগম
৬৮
পূর্ববঙ্গ পুলিশের ৭/৫/১৯৪৮ তারিখের সপ্তাহান্তের গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকে নেওয়া। রিপোর্টে এ কথা উল্লেখ করা হয় যে, গোপালগঞ্জে মুসলিম ছাত্রলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিছু ছাত্রের বিরুদ্ধে ঢাবি কর্তৃপক্ষের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সভায় বক্তারা তার প্রতিবাদ করেন এবং শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্য বন্দি ছাত্রদের মুক্তির দাবি জানান তারা। একই দাবিতে মাদারীপুর শহরে ২৮/৪/১৯৪৯ তারিখে ছাত্ররা ধর্মঘট করে।
ঢাকা, ৭ মে ১৯৪৯
শনিবারকে সপ্তাহের শেষ দিন ধরে পূর্ববঙ্গ পুলিশের ৭ই মে ১৯৪৯ তারিখের সপ্তাহান্তের গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকে নেওয়া। ঢাকা
৭৮৩, ফরিদপুর — গোপালগঞ্জ শহরের করোনেশন হলে স্থানীয় এম.এস. লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় ২৬শে এপ্রিল তারিখে ২০০ ছাত্রের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। গোপালগঞ্জ থানার ভেন্ডাবাড়ি থানা নিবাসী এবং গোপালগঞ্জ শহরের এস.এন. একাডেমির শিক্ষক আবুল হাসান (বি.এ.) সভার সভাপতিত্ব করেন। কিছু ছাত্রের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সভায় সমালোচনা করা হয় এবং শেখ মুজিবুর রহমান (প্যারা ৬৯৯) -সহ অন্য বন্দি ছাত্রদের মুক্তির দাবি জানানো হয়। বক্তারা ছাত্রদের জোটবদ্ধ হতে বলেন এবং তাদের সংগঠনে কোনো বিভাজন গ্রহণযোগ্য হবে না বলে ঘোষণা করেন।
ফরিদপুরের মাদারীপুর শহরের স্কুল ও কলেজগামী ছাত্রছাত্রীরা ২৮শে এপ্রিল একই দাবিতে ধর্মঘট পালন করে এবং বন্দি ছাত্রদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে দিতে শহর প্রদক্ষিণ করে।
৬৯
ঢাকার ইন্টেলিজেনস ব্রাঞ্চের ডিআইজি শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক কার্যক্রমের ওপর আইজিপিকে একটি সংক্ষিপ্ত চিঠি প্রেরণ করেন। সেই চিঠিতে উল্লেখ করা হয় যে, ধানকাটুরেদের একটি সমাবেশে তিনি ভাষণ দিয়েছিলেন এবং তারা যেন অর্জিত ধান নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারে তার অনুমতি প্রদান করতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের বাসভবন অভিমুখে একটি মিছিলে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। চরম খাদ্য সমস্যা, জমিদারি প্রথার বিলোপসাধন, অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা, মিলিটারি প্রশিক্ষণ ও দেশের প্রতিরক্ষার জন্য জনগণকে অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করা প্রভৃতি বিষয়ে তিনি পূর্ববঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের ক্ষেপিয়ে তুলেছিলেন। ঢাবির তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অধিকারের প্রতি কর্তৃপক্ষের চরম অনীহা প্রদর্শনপূর্বক সরকারের দুঃশাসন, বাংলা ভাষায় আরবি হরফ চালুকরণ, রাজশাহী কলেজের কিছু ছাত্রদের কলেজ থেকে বহিষ্কার করা ইত্যাদির চরম সমালোচনা করেন তিনি। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫৪ ধারা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মঘটে অংশ নেয়ায় তিনি ১৯.৪.১৯৪৯ তারিখে গ্রেফতার হন এবং ইবিএসপিও-এর ১৮(২) ধারা অনুযায়ী ২৯.৪.১৯৪৯ তারিখে পুনরায় গ্রেফতার হন।
ঢাকা, ৯ মে ১৯৪৯
গোপনীয়
বরাবর
আইজিআরপি
পর্যবেক্ষণ করে পুনরায় ফেরত পাঠাতে এতদসঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের একটি অভিপ্রেত সংক্ষিপ্ত ইতিহাস প্রেরিত হলো।
স্বাক্ষর/- তারিখসমেত
ডিআইজিআরআইবি
- ২৮/১/৪৯ তারিখে আমাদের বক্তব্যের বিষয়জন খুলনায় ফরিদপুর, ঢাকা ও কুমিল্লা অঞ্চলের ধানকাটুরেদের প্রায় ৩৫০জন ছাত্রের একটি সভায় বক্তৃতা প্রদান করেন। তারা যেন তাদের অর্জিত ধান নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারে তার অনুমতি প্রদান করতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের বাসভবন অভিমুখে একটি মিছিলেও তিনি নেতৃত্ব দান করেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রার্থিত অনুমতি প্রদান না করায় তিনি ধান কাটতে পুনরায় খুলনায় না আসতে ধানকাটুরেদের আদেশ দেন।
কোনো রূপ ক্ষতিপূরণ ছাড়াই জমিদারি প্রথা বিলোপের জন্য শ্রোতাদের জনমত গঠন করার আহ্বান জানান তিনি। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের অবস্থার উন্নতির প্রতি সরকারের অবহেলার সমালোচনা করেন তিনি। উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের ও মন্ত্রীদের কাড়ি কাড়ি টাকার বেতনের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেন তিনি এবং তাঁদের বেতন কমিয়ে অধস্তনদের বেতন বৃদ্ধি করার পরামর্শ দেন।
- ২০/২/৪৯ তারিখে মুসলিম ছাত্রদের একটি সভা ফরিদপুরের মাদারীপুরে অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের আলোচ্য ব্যক্তি সেখানে সভাপতিত্ব করেন। তিনি উপস্থিত ছাত্রদের নতুন ভাবে মুসলিম ছাত্রলীগ গঠনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন। চরম খাদ্য সমস্যা, জমিদারি প্রথার বিলোপসাধন, অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা, মিলিটারি প্রশিক্ষণ ও দেশের প্রতিরক্ষার জন্য জনগণকে অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করা প্রভৃতি বিষয়ে তিনি পূর্ববঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের ক্ষেপিয়ে তুলেছিলেন।
- আমাদের আলোচ্য ব্যক্তি মাদারীপুর শহরে অনুষ্ঠিত ২১/২/৪৮ তারিখের একটি সভায় সভাপতিত্ব করেন। কয়েকজন বিখ্যাত সি.পি. ও যুগান্তর সদস্য সহ আরও অনেকে সভায় অংশ নেন। দুঃশাসন ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে তিনি সরকারের তুমুল সমালোচনা করেন। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, প্রত্যন্ত গ্রামে রেশনিং ব্যবস্থা, অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা ও বাধ্যতামূলক মিলিটারি প্রশিক্ষণের দাবি তুলে সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে তিনি উপস্থিত সবাইকে আহ্বান করেন।
২৩/৩/৪৯ তারিখে আমাদের আলোচ্য ব্যক্তি নিরাপত্তা বন্দি দবিরুল ইসলামের সাথে দিনাজপুরে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে স্থানীয় ছাত্রদের সাথেও সাক্ষাৎ করে তিনি দলের বিষয়-আশয় নিয়ে আলাপ করেন।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ও ছাত্রদের ডাকা ধর্মঘটের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি সভা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে ১৯.৩.৪৯ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আমাদের আলোচ্য ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ধর্মঘটকারীদের প্রতি সহমর্মিতা লাভের আশায় তাঁর নেতৃত্বে একটি মিছিল শহরের মধ্যে ছাত্রদের বিভিন্ন হোস্টেল প্রদক্ষিণ করে।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে ১২/৩/৪৯ তারিখে আমাদের আলোচ্য ব্যক্তি শহর প্রদিক্ষণরত একটি মিছিলে নেতৃত্ব দান করেন।
- ইপিএমএসএল, রংপুরের একটি সভা ২৯/৩/৪৯ তারিখে রংপুর কলেজ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। দিনাজপুর ইপিএমএসএল-এর কয়েকজন ছাত্রনেতাকে গ্রেফতার করায় উল্লিখিত জন দিনাজপুর পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেন। বাংলায় আরবি হরফ প্রচলনের বিষয়ে আন্দোলনের সূচনা করতে উপস্থিত জনতার প্রতি আহ্বান করেন তিনি।৩০/৩/৪৯ তারিখে গাইবান্ধা, রংপুরের কিছু দলীয় লোকের সাথে তিনি যোগাযোগ করেন এবং তাদেরকে উপর্যুক্ত কথাগুলো বলেন।
- ১৯৪৯ সালের এপ্রিল মাসে আমাদের আলোচ্য ব্যক্তি সম্পর্কে রিপোর্ট করা হয় যে, তিনি ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ লীগ ও পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় সদস্য। আর এ দুটো দল পূর্ববঙ্গের সরকারের বিরুদ্ধে নানাবিধ প্রচারণা চালায়। রাজশাহী কলেজের কয়েকজন ছাত্রকে বহিষ্কার করার প্রতিবাদে ফরিদপুর, বরিশাল ও খুলনার ছাত্রদের ধর্মঘট, মিছিল, সভা ও অনশন ধর্মঘটের জন্য জোটবদ্ধ করার বিষয়ে তিনি বিশ্বস্ত ভূমিকা নিয়েছেন। আরও রিপোর্ট করা হয় যে, পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের ঐক্যকে সমর্থন করে যে বোস-সোহরাওয়ার্দী গোষ্ঠী সে গোষ্ঠীর সাথে তাঁর যোগাযোগ ছিল।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়ির সম্মুখে একটি মিছিল করায় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫৪ ধারা অনুযায়ী তিনি ১৯.৪.১৯৪৯ তারিখে গ্রেফতার হন। তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়।
- ২৯/৪/৪৯ তারিখে আমাদের আলোচ্য ব্যক্তি ইবিএসপিও-র ১৮(২) ধারানুযায়ী পুনরায় গ্রফতারকৃত হন ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরিত হন। তিনি এখন সেখানকার হাজতে আছেন।
হুসাইন
স্বাক্ষর তারিখসমেত/- ৯.৫
(ক্রমিক নং ২২ (১ম প্যারা) ও ২৩-৩১-এর বিষয়বস্তু ও ৭১ নং শিরোনামের ২২-৩১-এর বিষয়বস্তু একই)
৭১
পূর্ববঙ্গ, ঢাকার ইন্টেলিজেনস ব্রাঞ্চের ডিআইজি পূর্ববঙ্গ ঢাকার পুলিশের ইনসপেক্টর জেনারেলকে ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ থানার টুঙ্গিপাড়া নিবাসী শেখ লুৎফর রহমানের পুত্র ও ঢাকার ১৫০ মোঘলটুলি নিবাসী শেখ মুজিবুর রহমানের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস প্রেরণ করেন।
ঢাকা, ১০ মে ১৯৪৯
ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ থানার টুঙ্গিপাড়া নিবাসী শেখ লুৎফর রহমানের পুত্র ও ঢাকার ১৫০ মোঘলটুলি নিবাসী শেখ মুজিবুর রহমানের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
- আলোচ্যজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র। তিনি নাইমউদ্দীন আহমেদ বি.এ. (উভয়ই পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ শ্রমিক শিবির, ১৫০, মোঘলটুলি, ঢাকা নিবাসী)-এর সাথে একসাথে ‘পূর্ব পাকিস্তানে দুর্ভাগা জনসাধারণ কৈফিয়ত দিতে হবে আমাদের দাবি’ এই শিরোনামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন।
- পূর্ব পাকিস্তানের মন্ত্রিসভা গঠিত হওয়ার পর পরই আশাহত এই দলটি মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে শুরু করে। এই প্রচারণায় যারা অংশ নিয়েছিল আলোচ্যজন তাদের মধ্যে অন্যতম।
- ১/৩/৪৮ তারিখে যে গোপনীয় প্রতিবেদন হস্তগত হয়েছে তা বলে যে, গণপরিষদে উর্দু ভাষাকে সমর্থন দানের লক্ষ্যে পাকিস্তান হতে প্রত্যাবর্তনের পর মাননীয় খাজা নাজিমুদ্দীনের কর্মতৎপরতার জন্য আলোচ্য জন তাঁর বিরুদ্ধে উত্তেজনা সৃষ্টির পরিকল্পনা করে আসছিল। এই উত্তেজনা সৃষ্টিকারীরা করাচি থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে বিমানবন্দরে বা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে কালো পতাকা মিছিল করার পরিকল্পনা নিয়েছিল। আলোচ্যজন বক্তৃতায় বলেছিলেন যে, মাননীয় খাজা নাজিমউদ্দীনকে অপমান ও অপধ্বস্ত করতে ছাত্রসমাজ বদ্ধপরিকর এবং প্রয়োজনে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে হলেও তারা এ কাজ করতে ইচ্ছুক।
- জয়নুল আবেদিন সরকারের সভাপতিত্বে গোপালগঞ্জের আদালত মসজিদের প্রাঙ্গণে ৩/৩/৪৮ তারিখে ছাত্রদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। উল্লিখিত জন এই সভায় ভাষণ দেন এবং আদালতের ভাষা হিসেবে বাংলাকে গ্রহণ করতে ও মাননীয় মন্ত্রীদের বেতন হতে সর্বসম্মতিক্রমে একটি অংশ কেটে নিতে প্রস্তাব দেন।
- ৪/৩/৪৮ তারিখে একটি গোপন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ কথা বলা হয় যে, আরও কয়েকজনের সাথে মিলে আলোচ্যজন ভাষা প্রশ্নে ১১/৩/৪৮ তারিখে ঢাকায় ধর্মঘট পালনের জন্য প্রচারণা চালায়।
- ১২/৩/৪৮ তারিখে একটি গোপন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ কথা বলা হয় যে, আরও কয়েকজনের সাথে মিলে আলোচ্যজন ১০/৩/৪৮ তারিখে ফজলুল হক হলে অনুষ্ঠিত একটি আলোচনায় অংশ নেন এবং ১১/৩/৪৮ তারিখে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে মত দেন। এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে হিন্দু ও মুসলিম ছাত্রদের ছোটো ছোটো দল ১১/৩/৪৮ তারিখে জিপিও, সচিবালয় ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কার্যালয়ের সামনে পিকেটিং করতে বেরিয়ে যায়। আইন অমান্য করায় আলোচ্যজন ১১/৩/৪৮ তারিখে গ্রেফতার হন।
- আলোচ্যজন জনাব সোহরাওয়ার্দীর একনিষ্ঠ সমর্থক। জনাব সোহরাওয়ার্দীর অন্য ছাত্র সমর্থকদের সাথে তাঁর সমর্থনে তিনি আন্দোলন চালিয়ে যান। ৩০/৪/৪৮ তারিখে জনাব সোহরাওয়ার্দীকে এগিয়ে আনতে যারা সিন্দিয়াঘাট স্টেশনে যারা অপেক্ষা করেছিল তাদের মধ্যে আলোচ্যজনও একজন ছিলেন।
- ফরিদপুরের এস.এন. একাডেমির চত্বরে ২৯/৪/৪৮ তারিখে অনুষ্ঠিত একটি জনসভায় জনাব সোহরাওয়ার্দী, মুজাফফর হোসেন ও উল্লিখিত জন বক্তৃতা প্রদান করেন। পূর্ব পাকিস্তানের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, খাদ্যসামগ্রী ও কাপড়ের ঘাটতি নিয়ে তিনি বিশদ আলোচনা করেন। এইসব জিনিসের অভাবে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত লোকেরা কী কষ্টে দিনাতিপাত করছে তা তিনি ব্যাখ্যা করেন এবং অনুশোচনা করে বলেন যে, পাকিস্তানের জন্য যেসব ছাত্র সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছিল তারাই এখন পুলিশি নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে এবং কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো যুক্তিসংগত দাবি পেশ করলে বা সাংবিধানিক উপায়ে সরকারের কোনো নীতির সমালোচনা করলে তাদেরকে পঞ্চম কলামিস্ট বলে অভিহিত করা হচ্ছে। জনাব সোহরাওয়ার্দীর কাছে তিনি ব্যাখ্যা চান, এ যদি হয় অবস্থা তবে তিনি কেন ছাত্রদের পাকিস্তান আন্দোলনের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন।
- গোপালগঞ্জের টাউনফিল্ডে ৭/৫/৪৮ তারিখে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচ্যজন তাতে সভাপতিত্ব করেন। সভাপতির ভাষণে তিনি বলেন, শুধু মন্ত্রিবর্গ নয় গণপরিষদের সদস্যরাও খাদ্য ও বস্ত্র সমস্যার জন্য দায়ী। অবিলম্বে জমিদারি প্রথার বিলোপসাধনের আহ্বান করেন তিনি। অতি নিম্ন বেতনের সরকারি কর্মচারীদের প্রতি তিনি তাঁর সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, যদি মন্ত্রীরা ও সদস্যরা এর সমাধান করতে ব্যর্থ হয় তবে তাদের পদত্যাগ করা উচিত। তিনি আরও পরামর্শ দেন যে, শেষ অবলম্বন হিসেবে তাঁদের একটি নো-ট্যাক্স ক্যাম্পেইন চালু করা উচিত। পূর্ব পাকিস্তানে আদালতের ভাষা হিসাবে বাংলা চালুর পক্ষে ও জমিদারি প্রথার বিলোপ সাধনের পক্ষে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
- নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়াস্থ মিউচুয়াল ক্লাবে ১৬/৫/৪৮ তারিখে অনুষ্ঠিত বেঙ্গল প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাবেক কাউন্সিলারদের একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আলোচ্যজনকে অংশ নিতে দেখা গেছে।
- নারায়ণগঞ্জের পাবলিক লাইব্রেরিতে ১৭/৫/৪৮ তারিখে অনুষ্ঠিত একটি সভায় আলোচ্যজন অংশ নেন ও বক্তৃতা করেন। ভাষণে তিনি বলেন যে, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্য মুসলিম কর্মীদের সাথে মিলে তিনি অনেক কাজ করেছেন অথচ তাদেরকে এখন পঞ্চম কলামিস্ট হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে এবং মুসলিম লীগের সদস্য হওয়ায় এখন তারা অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
- নরসিংদীর ঈদগাহ ময়দানে আলোচ্যজন ১/৬/৪৮ তারিখে একটি জনসভায় অংশ নিয়ে বক্তৃতা প্রদান করেন। তিনি বলেন যে, কোনো রূপ ক্ষতিপূরণ ছাড়াই জমিদারি প্রথার বিলোপসাধন মুসলিম লীগের প্রতিশ্রুতি ছিল। নেতা ও অন্যরা তাঁদের প্রচারণায় এই বলতেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা পরিপূর্ণ হয়নি। কৃষকরা ছিল ঘরহারা, খাদ্যহীন, বস্ত্রহীন।তারা অনাহারে মারা যাচ্ছিল। এ প্রথার রদ করা না হলে দেশের অভ্যন্তরে কোনো শান্তি, শৃঙ্খলা ও উন্নতি থাকবে না। মুসলিম লীগকে পুনরায় সংগঠনের কাজে মুসলিম লীগের নেতৃবৃন্দের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন তিনি।
- আলোচ্যজন ১৩ই জুন ১৯৪৮ সালে বরিশালের আইনজীবী শমশের আলী ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে বরিশাল শহরে দেখা করে বর্তমান সংসদীয় রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করেন ও মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে কিন্তু জনাব সোহরাওয়ার্দীর পক্ষে কথা বলেন।
- গোপালগঞ্জ শহরে আলোচ্যজনের বাসায় ২৬/৬/৪৮ তারিখে তাঁরই সভাপতিত্বে একটি ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপবিভাগীয় মুসলিম ছাত্রলীগ পুনর্গঠিত হয়। উল্লিখিত জন তাঁর বক্তৃতায় জমিদারি প্রথার বিলোপসাধনের ওপর জোর দেন, গোপালগঞ্জ মহকুমার বর্তমান এম.এল.এ. মৌলভী শামসুদ্দীন আহমদের সমালোচনা করেন এবং বলেন যে, খাদ্য ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে স্বীয় নির্বাচনী এলাকার বাশিন্দাদের কষ্ট লাঘব করতে না পারলে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত। জমিদারি প্রথার বিলোপ সাধন, মুসলিম ন্যাশনাল গার্ডের সালার-এ-সুবা জহিরুদ্দীন সাহেবের নিঃশর্ত মুক্তি, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও মন্ত্রীদের বেতন হ্রাস প্রভৃতি দাবিতে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
- ১৫০ মোঘলটুলি থেকে কাগমারি ইসলামিয়া মিশনের মাওলানা আবদুল হামিদ খানের ঠিকানায় আলোচ্যজন একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে তিনি প্রাপককে অবহিত করেন যে, প্রায় ৫০ জন পুলিশকে গুলি করা হয়েছে।
- আলোচ্যজন ২০/৭/৪৮ তারিখে ১৫০ মোঘলটুলি, ঢাকায় প্রগ্রেসিভ মুসলিম ছাত্রলীগের কর্মীদের একটি একান্ত সভার আয়োজন করে। সভায় এই সিদ্ধান্ত হয় যে, লীগকে অধিকার করার লক্ষ্যে তারা সবাই মুসলিম লীগে কাজ করবে। কৃষক সমাজের দুর্দশার প্রতিকারে সভা সমিতি করে ও মিছিলের আয়োজন করে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য দলের কর্মীদের পরামর্শ প্রদান করা হয়।
- প্রাপ্ত গোপন তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায় যে, আলোচ্যজন ৪ঠা সেপ্টেম্বর ‘৪৮ তারিখে গত আগস্ট মাসে ঈশ্বরদীতে সংঘটিত ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ লীগের রাজশাহী বিভাগীয় সভায় পুলিশি হস্তক্ষেপের তদন্ত করতে ঈশ্বরদীর উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন।
- ৮/৯/৪৮ তারিখে প্রাপ্ত গোপন তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায় যে, এম.এন.জি.-র সালার-এ-সুবা জনাব জহিরুদ্দীনের সভাপতিত্বে ২২/৮/৪৮ তারিখে ১৫০ মোঘলটুলিতে অনুষ্ঠিত ইপিএমএসএল (প্রগ্রেসিভ দল)-এর একটি সভায় আলোচ্যজন অংশ নেন। সভায় পাকিস্তানের বিভিন্ন জেলায় পি.ডি.ওয়াই.এল. কর্তৃক কৃত কাজের বিষয়ে আলোচনা করা হয় এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাজের জন্য ৩০০০/- রুপির ফান্ড গঠন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই উদ্দেশ্যে উল্লিখিত জন উত্তরবঙ্গে একটি ভ্রমণে যেতে নির্বাচিত হন।
- ১৫/৯/৪৮ তারিখে প্রাপ্ত গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে, আলোচ্যজন পাবনায় গিয়ে একটি জনসভা ও একটি ছাত্রসভার আয়োজন করে। নাজিম মন্ত্রিসভা ও ঈশ্বরদীতে পুলিশের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে উভয় সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
- পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ৭ই ডিসেম্বর ১৫০ মোঘলটুলি, ঢাকায় অনুষ্ঠিত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাজশাহী কলেজের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নেওয়া সরকারের দমনমূলক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয় এবং সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, রাজশাহী কলেজের ছাত্রদের ওপর থেকে বহিষ্কারাদেশ তুলে নিতে পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রেরিত প্রতিনিধিদল যদি ব্যর্থ হয় তাহলে ছাত্ররা প্রদেশব্যাপী ধর্মঘট ও মিছিলের আয়োজন করবে এবং সম্ভব হলে তারা পুনরায় অনশন ধর্মঘট করবে। ফরিদপুর, বাকেরগঞ্জ ও খুলনায় আলোচ্যজনকে প্রস্তাবিত সংগঠনের ইনচার্জের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
- ঢাকায় ছাত্রছাত্রী কর্তৃক ৮/১/৪৯ তারিখকে দমনবিরোধী দিবস হিসেবে উদযাপন উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচ্যজন ছিলেন উক্ত সভার প্রধান বক্তাদের একজন এবং তিনি বিভিন্ন জেলায় ছাত্রদের বিরুদ্ধে দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন এবং ছাত্রদের দাবি পূরণ না হলে সরাসরি একশনে যাওয়ার প্রস্তাব করেন। আলোচ্যজন কর্তৃক উপর্যুক্ত বিষয়গুলোর ওপর প্রস্তাবিত একটি রেজুলেশন সভায় পাশ হয়।
- ফরিদপুর, ঢাকা ও কুমিল্লার প্রায় ৩৫০জন ধানকাটুরেদের নিয়ে খুলনায় আয়োজিত একটি সভায় উক্ত ব্যক্তি ২৮/১/৪৯ তারিখে একটি ভাষণ দেন। সভা শেষে অর্জিত ধান নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার দাবিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের বাসভবনের দিকে অগ্রসররত একটি মিছিলে তিনি তাদের নেতৃত্ব দেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি না পাওয়ার তারা যেন ধান কাটতে আর খুলনায় না আসে সেজন্য তিনি তাদের পরামর্শ দেন।
- আলোচ্যজন ঘোষের চরে ১১/২/৪৯ তারিখে একটি সভা করেন। এতে খুলনা থেকে অর্জিত ধান ফরিদপুর ও ঢাকার ধানকাটুরেদের নিজেদের সাথে নিয়ে যাওয়ার সরকারি আদেশ না পাওয়ার প্রতিবাদ করেন তিনি। কোনো রূপ ক্ষতিপূরণ ছাড়াই জমিদারি প্রথার বিলোপ সাধনের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে তিনি শ্রোতাদের পরামর্শ দেন এবং প্রাথমিক শিক্ষকদের অবস্থা পরিবর্তনে সরকারের অনীহার সমালোচনা করেন তিনি। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও মন্ত্রীদের উচ্চ বেতনের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে তিনি তাদের বেতন হ্রাস করে হ্রাসকৃত বেতন তাঁদের অধীনস্থদের বাড়িয়ে দিতে প্রস্তাব করেন।
- আলোচ্যজনের সভাপতিত্বে মুসলিম ছাত্রদের একটি সভা ফরিদপুরের মাদারীপুরে ২০/২/৪৯ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। নতুন করে মুসলিম ছাত্রলীগ গঠনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তিনি উপস্থিত ছাত্রদের ব্যাখ্যা করে বলেন। তুমুল খাদ্য সংকট, জমিদারি প্রথার বিলোপ সাধন, বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষার প্রবর্তন, মিলিটারি প্রশিক্ষণ ও দেশের প্রতিরক্ষার জন্য জনগণকে অস্ত্র সরবরাহ করা ইত্যাদি দাবিতে পূর্ববঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের ক্ষেপিয়ে দেওয়ার আহ্বান করেন তিনি।
- আলোচ্যজন মাদারীপুর শহরে ২১/২/৪৯ তারিখে অনুষ্ঠিত একটি জনসভায় সভাপতিত্ব করেন। কমউনিস্ট পার্টি ও যুগান্তরের কয়েকজন সদস্য সভায় অংশ নেয়। দুঃশাসন ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি সরকারকে চরমভাবে সমালোচনা করেন। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাবিতে সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে তিনি তাদের আহ্বান করেন।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ও ছাত্রদের ধর্মঘট সম্পর্কিত একটি সভা ১০/৩/৪৯ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। এতে উক্ত ব্যক্তি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। সভার গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ধর্মঘটরত ব্যক্তিদের প্রতি সমর্থন অর্জন করতে উক্ত ব্যক্তি শহরের বিভিন্ন ছাত্র হোস্টেলের দিকে প্রদক্ষিণরত একটি মিছিলে নেতৃত্ব দেন।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ধর্মঘটরত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বহিষ্কারের প্রতিবাদে ১২/৩/৪৯ তারিখে আলোচ্যজন শহর প্রদক্ষিণরত ছাত্রদের একটি মিছিলে নেতৃত্ব দেন।
- রংপুর কলেজ প্রাঙ্গণে ২৯/৩/৪৯ তারিখে অনুষ্ঠিত ইপিএমএসএল রংপুরের একটি সভায় উক্ত ব্যক্তি ইপিএমএসএল দিনাজপুরের কিছু ছাত্রকে দিনাজপুর পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতারের সমালোচনা করেন। বাংলায় আরবি হরফ প্রচলনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে তিনি উপস্থিত শ্রোতাদের আহ্বান জানান। ৩০/৩/৪৯ তারিখে গাইবান্ধা, রংপুরের কয়েকজন দলীয় সদস্যের সাথে যোগাযোগ করে তিনি উপর্যুক্ত কখাগুলো বলেন।
- ১৯৪৯ সালের এপ্রিল মাসে উক্ত ব্যক্তির বিষয়ে তদন্তে বলা হয় যে, তিনি ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ লীগ ও পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় সদস্য আর এ দুটো দলই পূর্ববঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায়। রাজশাহী কলেজের কিছু ছাত্রকে বহিষ্কারের বিরুদ্ধে ফরিদপুর, বরিশাল ও খুলনার ছাত্রদের নিয়ে ধর্মঘট, মিছিল, সভা ও অনশন ধর্মঘট আয়োজনের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন নিয়োজিত ব্যক্তি। তদন্তে আরও বলা হয় যে, বসু-সোহরাওয়ার্দী ঐক্যের সাথেও তার যোগাযোগ আছে যে দল পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের একীভবনকে সমর্থন করে।
- ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫৪ ধারায় উল্লিখিত ব্যক্তি ১৯/৪/৪৯ তারিখে গ্রেফতার হন। তিনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলন পরিচালনা করছিলেন। তাঁকে আটক করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়।
- ই.বি.এস.পি.ও.-র ১৮(২) ধারা মোতাবেক উক্ত ব্যক্তি ২৮/৪/৪৯ তারিখে পুনরায় গ্রেফতার হন। তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয় যেখানে তিনি এখন কাস্টডিতে আছেন।
স্বাক্ষর তারিখসমেত/- ১০.৫.৪৯
(এফ.আর. খন্দকার)
ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ
ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ
পূর্ববঙ্গ, ঢাকা
(ক্রমিক নং ২২-৩১ এর বিষয়বস্তু ও ক্রমিক নং ২২ (১ম প্যারা) ও ৬৯ নং শিরোনামের ২৩-৩১-এর বিষয়বস্তু একই)
গোপনীয়
পূর্ববঙ্গ ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ
৭, ওয়াইজ ঘাট রোড
ঢাকা, ১০ মে, ১৯৪৯
নং ৯২৩৯/৬০৬-৪৮ পি.এফ.
বরাবর,
জেড হুসাইন, মাননীয় পি.পি.এস., জে.পি.
পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল
পূর্ববঙ্গ, ঢাকা
মনোযোগ দিয়ে পড়ে ফেরত পাঠানোর জন্য মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস পাঠানো হলো।
স্বাক্ষর তারিখসমেত /- ১০.৫
জন্য (এফ. আর. তালুকদার)
ডেপুটি ইন্সপেক্টর অব পুলিশ, আই.বি.
পূর্ববঙ্গ, ঢাকা
পার্শ্ব নোট: দেখে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাঁর বয়স, পারিবারিক অবস্থা, উপার্জনের উৎস ইত্যাদি বিষয়ক একটি নোট কাজে আসবে। স্বাক্ষর, তারিখসমেত ১১/৫
: তাঁর বয়স ২৮ বছর। স.বি.তে তাঁর পারিবারিক অবস্থা নিয়ে একটি নোট সংযুক্ত হয়েছে।
:নং ১০৩৬১ তারিখ ২৫/৫/৪৯। তদন্ত করতে, মনোযোগ গিয়ে পড়ে ফেরত পাঠাতে নিচে স.বি. তে সংযোজন করা হয়েছে। স্বাক্ষর, তারিখসমেত /- ডি.আই.জিআর, আই.বি., ডি.আই.জি., আই.বি., স্বাক্ষর তারিখসমেত/- ১৩.৫
৮০
স্পেশাল অফিসার, আইবি, ঢাকার নিকট শেখ লুৎফর রহমান ৮/৬/১৯৪৯ তারিখে একটি আবেদনপত্র জমা দেন। তাঁর নাতি এস. হোসেন সহ স্বীয় পুত্র ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করতে তিনি এতে অনুমতি চেয়েছেন।
ঢাকা, ৮ জুন ১৯৪৯
বরাবর,
স্পেশাল অফিসার, আইবি, ঢাকা
তারিখ, ঢাকা, ৮ জুন ১৯৪৯
জনাব,
সম্মান প্রদর্শনপূর্বক আমি আপনাকে অবহিত করতে চাই যে, পাঁচটার সময় আমি আমার পুত্র শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করতে আপনার সদয় অনুমতি প্রাপ্ত হয়েছি। যেহেতু গতকালও সাধারণ অপরাধীদের সাথে সাক্ষাতের দিন ছিল সেহেতু জেলগেটে অসম্ভব ভিড় ছিল। আর তাই সাক্ষাতে আমার বিলম্ব হয়েছিল।
আমার ওয়ার্ড আমি খুঁজে পেরেছিলাম। ছেলের শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ দেখতে পেয়েছি। অধিকন্তু ছেলে তার ডান হাতে চোট পেয়েছে। এমতাবস্থায়, আমাকে ও আমার নাতি এস. হোসেন মিয়াকে আমার ছেলের সাথে আগামী কাল সকালে আরেক বার সাক্ষাতের সদয় অনুমতি প্রদান করলে আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ ও বাধ্য থাকব। কারণ ৯/৬/৪৯ তারিখে সকালে আমি বাড়ি ফিরে যেতে মনস্থির করেছি।
তেমনটাই প্রত্যাশা করে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই।
আপনার একান্ত
লুৎফর রহমান
১২, অভয় দাস লেন, ঢাকা
পার্শ্ব নোট: একজন আই.বি. অফিসারের উপস্হিতিতে ১০/৬/৪৯ তারিখে সকাল ১০.০০ টায় সাক্ষাৎ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- ৮/৬/৪৯
দ্রুত ডাক
তাৎক্ষণিক
গোপনীয়
নং ১১৪৬০, তারিখ ১০/৬/৪৯
বরাবর,
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সুপার ইন্টেনডেন্ট
বিশেষ কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের পিতা জনাব লুৎফর রহমানের ৮/৬/৪৯ তারিখে করা পিটিশনের একটি কপি এর সাথে পাঠিয়ে আমি লিখছি যেন বিকেল পাঁচটার সময় একজন আই.বি. অফিসারের উপস্হিতিতে এই সাক্ষাৎ মঞ্জুর করা হয়।
ডিএসভি
স্বাক্ষর তারিখসমেত/- এসএস-১ -এর জন্য
৮১
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি স্বীয় পুত্র শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করার অনুমতি চেয়ে ৯/৬/১৯৪৯ তারিখে আইবিইবি-র বিশেষ অফিসারের নিকট শেখ লুৎফর রহমান একটি আবেদনপত্র জমা দেন। পূর্বে প্রদত্ত ১০ই জুন ১৯৪৯ তারিখে সকাল ১১টার সাক্ষাতের অনুমতি পরিবর্তন করে বিকেল ৫টায় নিতে তিনি অনুরোধ করেন।
ঢাকা, ৯ই জুন ১৯৪৯
বরাবর,
বিশেষ অফিসার
আই.বি. ঢাকা
তারিখ, ঢাকা ৯/৬/৪৯
জনাব,
আমার নাতি মৌলভী সৈয়দ হোসেন সহ আগামী কাল সকাল এগারোটায় পুত্র শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করতে আমি অনুমতি পেয়েছি। কিন্তু অনিবার্য কারণে সকাল এগারোটায় আমি দেখা করতে পারব না। সুতরাং একই দিন বিকেল পাঁচটায় আমার সাক্ষাতের সময় পিছিয়ে দিতে আপনাকে অনুরোধ করছি।
প্রসঙ্গক্রমে এখানে উল্লেখ করা যায় যে, আমার করা এর আগের প্রার্থনার অনুমতি নিয়ে আমার নাতি সকালে আমার পুত্রের সাথে দেখা করবে।
তেমনটাই প্রত্যাশা করে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই।
আপনার বিশ্বস্ত
লুৎফর রহমান
পার্শ্ব নোট: আজ (১০/৬/৪৯) বিকেল পাঁচটায় একজন আই.বি. অফিসারের উপস্থিতিতে সাক্ষাৎ মঞ্জুর করা হয়েছে। পূর্বে অনুমতিপ্রাপ্ত সকাল ১১ টার সাক্ষাৎ বাতিল করা হলো।স্বাক্ষর তারিখসমেত/- ১৯/৬/৪৯
বেঙ্গল ফর্ম নং ৪৫
টেলিফোন বার্তা
যে সময়ে হস্তান্তর করা হয়েছে : সকাল/বিকেল
তারিখ : ১১.৬.৪৯
প্রাপ্তির সময় : ১২:১৫
বাক্যে
প্রেরক: কেন্দ্রীয় কারাগার, ঢাকা
প্রাপক: এস.এস. আই.বি., ঢাকা
বিশেষ বন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তাঁর পিতার সাক্ষাৎ যা ১০/৬/৪৯ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়নি তা আজ (১১/৬/৪৯) তারিখে বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে। অনুগ্রহপূর্বক এ জন্য একজন আই.বি. অফিসারকে প্রেরণ করা হোক।
ম্যাসেজের সমাপ্তি, দয়া করে পেছনের অংশ চেক করুন
টেলিফোন অপারেটর
স্বাক্ষর তারিখসমেত/- এএসআই, এ আহাদ ১১/৬
পার্শ্ব নোট: ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, স্বাক্ষর তারিখসমেত/- ১১/৬/৪৯
নং ১১৫৪৮ তারিখ ১১/৬/৪৯
গোপনীয়
সুপার ইন্টেনডেন্ট ঢাকা কেন্দ্রীয় জেল
অনুগ্রহপূর্বক মৌলভী লুৎফর রহমান ও মৌলভী এস, হোসেনকে এই বিভাগের এস.আই. এ. হোসেনের উপস্হিতিতে বিশেষ বন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আজ বিকেল ৫টায় সাক্ষাতের অনুমতি প্রদান করা হোক। এস.আই. এ. হোসেনকে এই উদ্দেশ্যেই প্রেরণ করা হয়েছে।
বরাবর,
স্পেশাল অফিসার, আই.বি., ঢাকা
তারিখ, ঢাকা, ১১ই জুন, ১৯৪৯
জনাব,
অনুগ্রহপূর্বক আমি আপনাকে জানাতে চাই যে, ১০/৬/৪৯ তারিখ বিকেল পাঁচটায় আমার পুত্র শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করতে আপনি আমাকে অনুমতি দিয়েছেন। সেই মোতাবেক, বিকেল পাঁচটায় আমি কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলাম। কিন্তু সে সময় প্রয়োজনীয় আদেশ সহ কোনো আই.বি. অফিসার ঘটনাস্থলে না থাকায় আপনার দ্বারা আয়োজিত সাক্ষাৎ না করেই আমাকে চলে আসতে হয়েছিল।
আজ আমি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করছি। তাই আপনার কাছে করজোড়ে নিবেদন এই যে, আমার নাকি জনাব এস. হোসেন সহ আমাকে আমার পুত্রের সাথে বিকেল ৪টায় দেখা করার যদি অনুমতি প্রদান করতেন তবে আমি আপনার নিকট অশেষ কৃতজ্ঞ থাকতাম।
ধন্যবাদান্তে,
আপনার একান্ত
স্বাক্ষর তারিখসমেত/- ১১.৬.৪৯
লুৎফর রহমান
পার্শ্ব নোট: একজন আই.বি. অফিসারের উপস্হিতিতে আজ বিকেল ৪টায় সাক্ষাৎ মঞ্জুর করা হয়েছে
স্বাক্ষর তারিখসমেত/- ১১.৬.৪৯
: ডিএস-২ মারফত জানা গেছে যে, বিশেষ বন্দির সাথে সাক্ষাতের আদেশপত্রে লিখিত সময়ের ব্যাপারে তাঁরা সচেতন
: এসআই এম. হোসেন দয়া করে উপস্থিত থাকবেন স্বাক্ষর তারিখসমেত/- ১১.৬.
[সূত্র ৬০৬/৪৮ পি.এফ.]
বরাবর,
ডিএস (৫)
মহোদয়,
অনুগ্রহপূর্বক আমি আপনাকে জানাতে চাই যে, ১০/৬/৪৯ তারিখে ১৭:০০ ঘটিকায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আমি উপস্থিত ছিলাম। নিরাপত্তা বন্দি মুজিবুর রহমানের সাক্ষাতে ইচ্ছুক ব্যক্তিবর্গ বেলা ১৭.০০ থেকে ১৭.৩০ ঘটিকায় জেল গেইটে উপস্থিত হননি। ডেপুটি জেলার মৌলভী এমদাদুল্লাহ নিরাপত্তা কারাবন্দির ইনচার্জ। তিনি সাক্ষাতে ইচ্ছুক ব্যক্তিবর্গের বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি।
এম.ও.এস.
স্বাক্ষর তারিখসমেত /- এম. হোসেন
পুলিশের এস.আই., আইবি, ১১/৬
বরাবর
ডিএস (৫)
মহোদয়,
অনুগ্রহপূর্বক আমি আপনাকে জানাতে চাই যে, নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ১১/৬/৪৮ তারিখে মৌলভী লুৎফর রহমান ও সৈয়দ হোসেনের সাক্ষাতের সময় আমি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে উপস্থিত ছিলাম। তখন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কোনো রূপ আলোচনা হয়নি।
এম.ও.এস.
স্বাক্ষর তারিখসমেত/- এম. হোসেন
এস.আই.আই.বি., ঢাকা
১৪/৬/৪৯
৮২
আইবিইবি-র এসএসপি নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাৎলাভের সরকারি পদ্ধতি নিয়ে ঢাকার ডিআইবি-র অতিরিক্ত এসপি-কে একটি চিঠি লেখেন।
ঢাকা, ১০ জুন ১৯৪৯
খসড়া
নং ১১৪৫৬/৬০৬-৪৮ (সেক) এ, তারিখ ১০/৬/৪৯
বরাবর,
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার
ডি.আই.বি., ঢাকা
আপনার ৭/৫/৪৯ তারিখের সূত্র নং ৪১৬০/১০০-৪৯, ঢাকা জেলার ম্যাজিস্ট্রেটের একটি স্লিপ হতে জনাব মোসলেমুদ্দীনের একটি আবেদনপত্রের প্রেক্ষিতে এই পত্র লেখা হচ্ছে।
আপনার জ্ঞাতার্থে লিখছি যে, নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাতের জন্য আবেদন করা হয়েছে এবং এই ধরনের সাক্ষাতে অনুমতি দানের এখতিয়ার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেই। এমন আবেদন আমাদের কাছে পাঠানোর পরিবর্তে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দৃষ্টি আকর্ষণ করা আপনার কর্তব্য ছিল এবং আবেদনকারীকে আমাদের প্রতি দরখাস্ত লিখতে বলা উচিত ছিল। দয়া করে ভবিষ্যতে আপনি এটা লক্ষ করবেন যে, আমরা বিশেষ ভিত্তিতে যেসব দরখাস্ত প্রেরণ করি সেসব জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক অনুমোদন লাভ করে না।যাই হোক, এ ক্ষেত্রে আমি সাক্ষাতের অনুমতি দিলাম।
স্বাক্ষর, তারিখসমেত /- ৮.৬
(এম. আহমদ)
স্পেশাল সুপার ইনটেনডেন্ট অব পুলিশ, আই.বি.
৮৩
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের বিভাগীয় বন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করতে চেয়ে অন্য দুজনের সাথে মো. মোসলেম উদ্দীন ১৪/৬/১৯৪৯ তারিখে ঢাকার এসএসপি, আইবিইবি-র কাছে দরখাস্ত দেন
ঢাকা, ১৪ জুন ১৯৪৯
বরাবর,
এসপি
আইবিইবি ঢাকা
জনাব,
যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শনপূর্বক আমরা আপনাকে অনুরোধ করছি যে, ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের বিভাগীয় বন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করার অনুমতি দিতে জনাবের যেন আজ্ঞা হয়। যেহেতু বন্দি আমাদের অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু সেহেতু তাঁর সাথে পারিবারিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলাপ করে পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
স্থায়ী ঠিকানা:-
পিতার নাম:- মো. মেহের মোল্লা
গ্রাম: বনগ্রাম
ডাকঘর: আমথালি
জেলা: ফরিদপুর
সম্মানার্থে
আপনার একান্ত বাধ্যগত
- মো. মোসলেম উদ্দীন
- মো. ইসরাইল হোসেন
৩২, কোতোয়ালি রোড, ঢাকা
১৪/৬/৪৯
৮৪
শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান খান ঢাকা হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাসের আবেদন করবেন। খবরটি ১৬/৬/১৯৪৯ তারিখে দৈনিক ইত্তেহাদে প্রকাশিত হয়।
ঢাকা, ১৬ জুন ১৯৪৯
ইত্তেহাদ, তারিখ ১৬/৬
(বাংলা অংশটি টাইপ করুন)
পার্শ্ব নোট : রিপোর্ট সংযুক্ত, স্বাক্ষর তারিখসমেত/- ২৪.৬
: পার্সনাল ফাইলে রাখা আছে, অনুগ্রহপূর্বক এসএস-৩ দেখুন, স্বাক্ষর তারিখসমেত/- ১৭.৬
ডিএস ভি
: এটা কি হয়েছে
? স্বাক্ষর তারিখসমেত/- ২১.৬
ডিএস ভি
: মনোযোগ দিয়ে দেখুন। ফাইলটি এসএস৩-এর অধীনে ক্রিয়াশীল। স্বাক্ষর তারিখসমেত/- ২৩.৬
এসআই
: যদি কেইসটি প্রকৃতই ফাইলবন্দি হয়ে থাকে তবে মোসলেম হোসেন অনুগ্রহপূর্বক সচিবালয় থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন
এসএস-৩
: অনুগ্রহপূর্বক সংযুক্ত রিপোর্ট দেখুন। নিরাপত্তা কারাবন্দি আপনার সুপারিশে ২৬/৬/৪৯ তারিখে সকাল ৮টায় মুক্তি পাবেন।
৮৫
পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানকে বন্দি হিসেবে রাখার কারণ উল্লেখ করে ডিটেনশন অর্ডার বিষয়ক একটি স্মারকলিপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপারইন্টেনডেন্টকে প্রেরণ করেন।
ঢাকা, ১৬ জুন ১৯৪৯
গোপনীয়
তাৎক্ষণিক
নিরাপত্তা বিভাগ, স্বাক্ষর তারিখসমেত /- ২০/৬
পূর্ববঙ্গ সরকার
স্বরাষ্ট্র বিভাগ
বিশেষ ভাগ
প্রেরক: মৌলভী এ.বি. খান, সহকারী সচিব, পূর্ববঙ্গ সরকার
প্রাপক: সুপার ইন্টেনডেন্ট, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার
স্মারক নং: ১৭১৩-এইচ.এস., তারিখ ঢাকা, ১৬ জুন ১৯৪৯
নিম্নে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তি বেঙ্গল এতদ্সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রসঙ্গে পূর্ববঙ্গ অধ্যাদেশ অস্থায়ী আইন প্রণয়ন ও আইন পুনর্প্রণয়ন আইন ১৯৪৯ (১৯৪৯ সালের পূর্ববঙ্গ আইন)-এর ভিত্তিতে জারিকৃত ও কার্যকর বেঙ্গল স্পেশাল ক্ষমতা অধ্যাদেশ, ১৯৪৬ (১৯৪৬ সালের বেঙ্গল অধ্যাদেশ নং ৬)-এর ধারা ১০গ মোতাবেক একটি চিঠি প্রেরণের জন্য নির্দেশিত হয়েছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে চিঠিটি পৌঁছে দিতে এবং গৃহীত ব্যবস্থার জন্য সরকারকে রিপোর্ট করতে আপনাকে অনুরোধ করছেন। যত দ্রুত সম্ভব বন্দি কর্তৃক নির্ধারিত কোনো সরকারি প্রতিনিধি যদি থেকে থাকে তবে তার কাছে প্রেরণ করতে আপনাকে অনুরোধ করা হচ্ছে।
স্বাক্ষর, তারিখসমেত /- এ.বি. খান
পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব
নং ১৭১৩/১-এইচ.এস.
অবগতির জন্য অনুলিপি, সংযুক্ত বস্তুর অনুলিপি পূর্ববঙ্গ ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশের নিকট প্রেরিত হয়েছে।
ঢাকা
১৬ জুন, ১৯৪৯
স্বাক্ষর, তারিখসমেত
পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব
পূর্ববঙ্গ অধ্যাদেশ অস্থায়ী আইন প্রণয়ন ও আইন পুনর্প্রণয়ন আইন ১৯৪৯ (১৯৪৯ সালের পূর্ববঙ্গ আইন ১)-এর ভিত্তিতে জারিকৃত ও কার্যকর বেঙ্গল স্পেশাল ক্ষমতা অধ্যাদেশ, ১৯৪৬ (১৯৪৬ সালের বেঙ্গল অধ্যাদেশ নং ৬)-এর ধারা ১০গ মোতাবেক ডিটেনশনের কারণ বিষয়ক চিঠি।
পূর্ববঙ্গ অধ্যাদেশ অস্থায়ী আইন প্রণয়ন ও আইন পুনর্প্রণয়ন আইন ১৯৪৯ (১৯৪৯ সালের পূর্ববঙ্গ আইন ১)-এর ভিত্তিতে জারিকৃত ও কার্যকর বেঙ্গল স্পেশাল ক্ষমতা অধ্যাদেশ, ১৯৪৬ (১৯৪৬ সালের বেঙ্গল অধ্যাদেশ নং ৬)-এর ধারা ১০গ অনুযায়ী ২৫শে মে ১৯৪৯ তারিখের আদেশ নং ১৩৩৬ অনুযায়ী বর্তমানে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিকৃত ফরিদপুর, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়াস্থ ১৫০ মোঘলটুলি নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমান, আপনাকে উক্ত অধ্যাদেশের ১০ক ধারা অনুযায়ী ১(ক) ও ৪ উপধারার অধীনে নিম্নোক্ত কারণে আপনার ডিটেনশনের বিষয়টি অবগত করা যাচ্ছে:-
- এই সরকারকে অর্থাৎ পূর্ববঙ্গ সরকারকে সহিংস উপায়ে উৎখাত করতে ফরিদপুর ও ঢাকা জেলার কয়েকটি গোপন সংগঠনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে আপনি সংশ্লিষ্ট ছিলেন ও এখনও আছেন। এই সংযোগে সরকারের বিরুদ্ধে আপনি অনিষ্টকর ও অনৈতিক প্রচারণা চালিয়ে গেছেন এবং ফরিদপুর ও ঢাকা জেলার কৃষক, শ্রমিক ও ছাত্রদেরকে সরকারের বিরুদ্ধে অনৈতিক ও সহিংস কর্মকাণ্ড চালাতে উত্তেজিত করেছেন।
- উল্লিখিত আপনার সব কর্মকাণ্ড হুমকিস্বরূপ এবং প্রদেশের বিদ্যমান শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করতে পারে।
- আপনাকে আরও অবহিত করা যাচ্ছে যে, আপনার বিরুদ্ধে যে ডিটেনশন আদেশ জারি করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে অফিশিয়াল নালিশ জানানোর অধিকার আপনার রয়েছে এবং যদি আপনি তাই করতে ইচ্ছুক হন তবে আপনার উচিত হবে যেখানে আপনি বর্তমানে বন্দি আছেন অর্থাৎ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ইন্টেনডেন্টের মাধ্যমে নিম্নলিখিত জনের কাছে প্রতিবাদটি পাঠাবেন।
গভর্নরের নির্দেশে
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- এ.বি. খান
পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব
স্বরাষ্ট্র (রাজনৈতিক) বিভাগ
৮৬
শেখ মুজিবুর রহমান সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যার সাথে সংশ্লিষ্ট ১২জন ছাত্রের আইনগত অবস্থান বিষয়ক একটি রিপোর্ট ১৬/৬/১৯৪৯ তারিখে ঢাকার ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের ডিআইজির কাছে একজন আইবি অফিসার প্রেরণ করেন।
ঢাকা, ১৬ জুন ১৯৪৯
ডিআইজি, আই.বি.
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যার সাথে সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়ে আজ ১২জন ছাত্র কাস্টডিতে আছে। এদের মধ্যে ৩,৪,৫,৬,৭ ও ৮ নং জন আগামী কাল মুক্তি পাবে। ৩,৪ ও ৫ নং বন্দিদের মুক্তির ব্যাপারে সরকার নির্দেশ জারি করবে। এরা সবাই নিরাপত্তা বন্দি। ৬,৭ ও ৮নং-এর মামলা তুলে নেওয়া উচিত কি না এসপি-কে সে ব্যাপারেও প্রশ্ন করতে হবে।
১,২,৯,১০,১১ও১২ নংকে ২৭/৬/৪৯ তারিখের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে। সরকার নিরাপত্তা বন্দি ১ও২-এর বিষয়ে নির্দেশ জারি করবে এবং ৯-১২নং-এর বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি এস.পি. কর্তৃক প্রত্যাহার করা হবে।
নিতাই গাঙ্গুলি ছাত্র নয়। সে কলকাতায় তার বাবার কাছে ফিরে যেতে ইচ্ছুক কি না সে ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত সে বন্দি থাকবে।
অভিযুক্ত ছাত্ররা যেসব মামলায় জামিন পেয়েছে এসপি কর্তৃক সেসব তুলে নেওয়া হবে।
এতে এইচপিএম-এর সম্মতি আছে।
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- জেড. হোসেন
১৬/৬/৪৯
ডিআইজি, আইবি-র নির্দেশ মোতাবেক ফাইলটি সব ব্যবস্থা শেষে ফেরত দেওয়া যাবে।
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- এ.কে.এম. হাফিজুদ্দীন
১৬.৬.৪৯
১৬/৬/৪৯ তারিখের পিএফ নং ১১৮৭৮/১২৮-৪৮ এর নির্দেশ মোতাবেক
গোপনীয়
ঢাকার ডি.আই.বি.-র সহকারী পুলিশ সুপার ইন্টেনডেন্টের মাধ্যমে ঢাকার পুলিশ সুপার ইন্টেনডেন্টের নিকট বিশেষ মামলায় বন্দি ৬,৭ ও ৮ নং কে মুক্তিদানের অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে। আগামী কালের মধ্যে এরা মুক্তি পেয়েছে এমনটা দেখতে চান তিনি এবং ৯-১২ নং-এর বিরুদ্ধে যে মামলা রয়েছে ও যেসব মামলায় ছাত্ররা জামিনে আছে সব আইজিপি-র ইচ্ছায় তুলে নেওয়া হয়েছে।
স্বাক্ষর/- এম. ইউসুফ ১৬/৬
আই.বি.র ডিআইজির পক্ষে
নিচের ছাত্ররা এখনও জেলে
১. শেখ মুজিবুর রহমান ইপিএমএসএল | : | নিরাপত্তা কারাবন্দি |
২. বাহাউদ্দীন আহমদ এসএফসিপি | : | নিরাপত্তা কারাবন্দি |
৩. শামসুল হুদা ইপিএমএসএল | : | নিরাপত্তা কারাবন্দি |
৪. ওলি আহাদ ইপিএমএসএল | : | নিরাপত্তা কারাবন্দি |
৫. এনায়েত করিম এসএফসিপি | : | নিরাপত্তা কারাবন্দি |
৬. আবুল বরকত ইপিএমএসএল | : | কোতোয়ালি থানা, মামলা নং ১৮, তারিখ ২১/৪/৪৯, উপধারা ৭(৩) মোতাবেক, বি.এস.পি.ও. |
৭. খন্দকার গোলাম মোস্তফা ইপিএমএসএল | : | ঐ |
৮. আবুল হাসানাত ইপিএমএসএল | : | কোতোয়ালি থানা, মামলা নং …, তারিখ ২৪/৪/৪৯, উপধারা ঐ |
৯. সৈয়দ আফজাল হোসেন | : | লালবাগ থানা, মামলা নং …, তারিখ ১/৬/৪৯, উপধারা ৭(৩) বি.এস.পি.ও. |
১০. মৃণাল কান্তি বারোরি এস.এফ.সি.পি. | : | কোতোয়ালি থানা, মামলা নং …, তারিখ ২/৬/৪৯, উপধারা ৭(৩) মোতাবেক, বি.এস.পি.ও. |
১১. রফিকুল ইসলাম | : | ঐ |
১২. আবু মো. মোকলেসুর রহমান, এসএফসিপি | : | ঐ |
গোপনীয়
বরাবর
ডি.এস. স্বরাষ্ট্র (বিশেষ) বিভাগ
২৫/৫/৪৯ তারিখের আপনার স্মারক নং-১৩৩৫/১ এইচ.এস. মোতাবেক শেখ মুজিবুর রহমান বিষয়ক ২৫/৫/৪৯ তারিখের ডিটেনশন আদেশ নং-১৩৩৬ এইচ.এস. আপনার নিকট প্রেরিত হলো। আমি নিবেদন করতে চাই যে, উক্ত জনের অতিরিক্ত ডিটেনশন প্রমাণ করতে যথেষ্ট প্রমাণপত্র নেই।
আমি তাই সুপারিশ করছি যে, ছুটির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হলে উক্ত জন মুক্তি পেয়ে যেতে পারেন।
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- ১৬.৬
ডি.আই.জিআর. আই.বি.
- নিতাই গাঙ্গুলি ব্যতীত অবশিষ্ট দশজন মুক্তি পাবে। বিশ্ববিদ্যালয় যখন ছুটিতে বন্ধ হবে তখন ১০ ও ১১ নং কে মুক্তি দিতে হবে।
- বিশেষ মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট যেসব ছাত্র বন্দি হয়েছে তাদের মধ্যে কমউনিস্ট পার্টির সদস্য ছাড়া অন্য সবাইকে মুক্তি দিতে হবে এবং আগামী কালের মধ্যে তাদের মামলা তুলে নিতে হবে।
স্বাক্ষর, তারিখসমেত এফ.আর. খন্দকার
১৬/৬/৪৯
১ D/Ss V, II & VI দয়া করে নোট রাখুন।
২ একবারেই পদক্ষেপ নিতে ঢাকা ডি.আই.বি.র প্যারা (২) হতে গৃহীত
স্বাক্ষর, তারিখসমেত এম. ইউসুফ, ১৬/৬
পিএফ-এ দয়া করে রাখুন এবং একবারেই ব্যবস্থা নিন
স্বাক্ষর, তারিখসমেত এ.এইচ., ১৬/৬
দেখা হয়েছে। নিতাই গাঙ্গুলির পি.এফ.-এ অফিস নির্দেশের কপি রাখুন।
স্বাক্ষর, তারিখসমেত এ.জি. খান, ১৬/৬
১. | আজিজ আহমেদ | (৪৪৫-৪৯) | তাকে আরও আটকে রাখার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ নেই বলে মুক্তি দিতে বলা হচ্ছে |
২. | শামসুল হুদা | (৪৪৪-৪৯ পি.এফ.) | |
৩. | খালিক নেওয়াজ খান | (৪৪৪-৪৯ পি.এফ.) | |
৪. | গুলাম মাহবুব খান | (৪৪৪-৪৯ পি.এফ.) | |
৫. | নিতাই গাঙ্গুলি | (১২৮-৪৮ পি.এফ.) | আর.এস.পি.র একজন সক্রিয় সদস্য। ছয় মাসের জন্য আটক অবস্থা থাকার রিকমেন্ড করা হচ্ছে। |
৬. | এনায়েত করিম | (সিপি-এসপি) | ৪৩৯-৪৯ পি.এফ. |
৭. | গোলাম মোর্শেদ ফারুকি | (ইপিএমএসএল) | ৪৪১-৪৯ পি.এফ. |
৮. | মোহা. আবদুল মতিন | (ইপিএমএসএল) | ৪৪০-৪৯ পি.এফ. |
৯. | অলি আহাদ | ঐ | ৪৪২-৪৯ পি.এফ. |
১০. | সি.পি. | সি.পি. | ৪৪৩-৪৯ পি.এফ. |
১১. | শেখ মুজিবুর রহমান | (ইপিএমএসএল) | ৬০৬-৪৮ পি.এফ. |
৮৭
২৫শে মে ১৯৪৯ তারিখে জারিকৃত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের ডিটেনশন বিষয়ক আদেশটি (১৩৩৬-এইচএস) পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব কর্তৃক ২৭ জুন ১৯৪৯ তারিখ থেকে আর কার্যকর নয় বলে বাতিল ঘোষণা করা হয়।
ঢাকা, ১৭ জুন ১৯৪৯
পূর্ববঙ্গ সরকার
স্বরাষ্ট্র বিভাগ
বিশেষ
আদেশ
নং ১৭৪২-এইচ.এস.
তারিখ, ১৭ জুন ১৯৪৯
পূর্ববঙ্গ অধ্যাদেশ হিসেবে বিধিবদ্ধকৃত ও কার্যকর বেঙ্গল বিশেষ ক্ষমতা অধ্যাদেশ ১৯৪৬ (১৯৪৬ সালের অধ্যাদেশ ৬)-এর ধারা ১০ক-এর অধীন উপধারা (১) ও উপধারা (৪)-এর (ক) অনুচ্ছেদের ক্ষমতা বলে। অস্থায়ী আইনপ্রয়োগ ও পুনরায় আইন প্রয়োগ (১৯৪৯ তারিখের পূর্ব বঙ্গ আইন, ধারা ১) দ্বারা সরকার ২৫শে মে ১৯৪৯ তারিখ থেকে কার্যকর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের ডিটেনশন বিষয়ক আদেশটি (১৩৩৬-এইচএস) ২৭শে জুন ১৯৪৯ তারিখ থেকে সন্তুষ্টচিত্তে বাতিল করছে।
গভর্নরের আদেশে
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- এ.বি. খান
পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব
৮৮
পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব ১৭.৬.১৯৪৯ তারিখে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ইন্টেডেন্টের কাছে শেখ মুজিবুর রহমানকে কারাগার থেকে মুক্তিপ্রসঙ্গে একটি স্মারকলিপি প্রেরণ করেন
ঢাকা, ১৭ জুন ১৯৪৯
বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে
গোপনীয়
তাৎক্ষণিক
নিরাপত্তা বিভাগ
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- ২০/৬
পূর্ববঙ্গ সরকার
স্বরাষ্ট্র বিভাগ
বিশেষ বিভাগ
প্রেরক: মৌলভী এ.বি. খান, পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব
প্রাপক: সুপার ইন্টেনডেন্ট, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার
স্মারক নং: ১৭৪১-এইচ.এস., তারিখ: ঢাকা, ১৭ই জুন, ১৯৪৯
বিষয়: বেঙ্গল বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৪৬ (১৯৪৬ সালের বেঙ্গল অধ্যাদেশ ৬)-এর ১০ক ধারার অধীনে শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তিদান
***
উল্লিখিত বিষয়ে একটি স্বাক্ষরিত আদেশ (দুই কপি) তদসঙ্গে প্রেরিত হয়েছে। আদেশপত্রে উল্লিখিত ব্যক্তির সাথে যেমনটি করতে বলা হয়েছে তেমনটি করার আশুব্যবস্থা গ্রহণ করতে আপনাকে অনুরোধ করা হচ্ছে এবং উপযুক্ত সময়ে সরকারকে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে।
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- এ.বি. খান
পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব
–
নং ১৭৪১/১(৪)-এইচ.এস.
অনুলিপি, আদেশের একটি অনুলিপিসহ, তথ্যের জন্য পাঠানো হলো:-
- ইন্সপেক্টর—জেল জেনারেল, পূর্ববঙ্গ,
- ডেপুটি ইন্সপেক্টর—পুলিশ জেনারেল, ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ, পূর্ববঙ্গ,
- জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকা,
- উপপরিচালক, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো, পাকিস্তান সরকার ৮, কুমারটুলি লেন, ঢাকা
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- ১৭.৬.৪৯
পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব
ঢাকা, ১৭ জুন ১৯৪৯
নং ১২৭৩২/ নং ৬০৬-৪৮ পিএফ তারিখ ২৭/৬
অনুলিপি, আদেশের একটি অনুলিপিসহ, ডি.আই.বি.-র ঢাকা এডিশনাল এসপিকে জ্ঞাতার্থে প্রেরিত হয়েছে।
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- এসএস-১
৮৯
ঢাকাস্থ আইবিইবি-র ডিআইজি স্বরাষ্ট্র (বিশেষ) বিভাগের ডিএস-কে একটি গোপনীয় ম্যামো প্রেরণ করেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন যে, বিশেষ ক্ষমতা অধ্যাদেশ শেখ মুজিবুর রহমানের অধিক ডিটেনশনকে আর অনুমোদন করে না। তাই ডিআইজি তাঁর মুক্তির জন্য সুপারিশ করেন।
ঢাকা, ১৮ জুন ১৯৪৯
গোপনীয়
নং ১২২২০/৬০৬-৪৮ পিএফ তারিখ ২১/৬
বরাবর,
স্বরাষ্ট্র (বিশেষ) বিভাগের ডিএস, বিশেষ ক্ষমতা অধ্যাদেশের অধীনে শেখ মুজিবুর রহমানের ডিটেনশন বিষয়ক আপনার ম্যামো নং ১৩৩৫/১ এইচ.এস. তারিখ ২৫/৫/৪৯ প্রেরিতব্য জি.ও. নং ১৩৩৬ এইচ.এস. তারিখ ২৫/৫/৪৯ এর বরাতে। আমি বলতে চাই যে, আলোচ্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে তা তাঁর অধিক ডিটেনশনকে আর সমর্থন করে না।
সুতরাং আমি সুপারিশ করছি যে, বিশ্ববিদ্যালয় অবকাশ উপলক্ষ্যে (২৭.৬.৪৯ তারিখ থেকে) বন্ধ হলে তাকে মুক্তি দেওয়া যায়।
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- ডি.আই.জিআর.আই.বি.
১৮.৬
৯০
ঢাকার ১২ অভয় দাস লেন নিবাসী আবদুর রব ২০.৬.১৯৪৯ তারিখে আইবিইবি-র এসএসপি-র কাছে আবেদন করেন যে, তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিভিশনাল বন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করতে চান
ঢাকা, ২০ জুন ১৯৪৯
পুলিশের স্পেশাল সুপার ইন্টেনডেন্ট
ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ
ঢাকা
জনাব,
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ আমার আত্মীয় শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আমি সাক্ষাৎ করতে চাই। ২২শে জুন ৪৯ তারিখ সাক্ষাতের দিন হিসেবে ধার্য হলে ভালো হয়।
আমাকে সাক্ষাতের অনুমতি দিলে আমি আপনার নিকট কৃতজ্ঞ থাকব।
আপনার বাধ্যগত
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- আবদুর রব
২০.৬.৪৯
তারিখ
১২, অভয় দাস লেন
ঢাকা
পার্শ্ব নোট: এসআই শফিকুল হক দয়া করে আপনি সাক্ষাতের দিন উপস্থিত থাকবেন। স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- ২০.৬
: ২২.৬.৪৯ তারিখে বেলা ৫.০০ ঘটিকায় একজন আই.বি. অফিসারের উপস্হিতিতে সাক্ষাৎটির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- ২০.৬
৯১
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ইন্টেনডেন্ট ২১.৬.১৯৪৯ তারিখে আইবিইবি-র ডিআইজিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে শেখ মুজিবুর রহমান ও বাহাউদ্দীন আহমেদ চৌধুরীর মুক্তির বিষয়টি অবহিত করেন।
ঢাকা, ২১ জুন ১৯৪৯
গোপনীয়
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অফিস
ম্যামো নং ১১১১/এস.বি. তারিখ ২১/৬/৪৯
বরাবর,
ডি.আই.জি. আই.বি., ঢাকা
নিরাপত্তা কারাবন্দি
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/-
সুপার ইন্টেনডেন্ট
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার
ডি.এস.ভি.
জনাব,
সরকারি আদেশের প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা কারাবন্দি মোলভী শেখ মুজিবুর রহমান ও মৌলভী বাহাউদ্দীন আহমেদ ২৬.৬.৪৯ তারিখ সকালে এই কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন। দয়া করে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
স্বাক্ষর, তারিখসমেত
সুপার ইন্টেনডেন্ট
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার
ডি.এস.ভি.
জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ২২.৬.৪৯ তারিখ বেলা ৫.০০ টায় নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তাঁর শ্যালক আব্দুর রব সাহেবের সাক্ষাতের সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। তাঁরা সবাই কোনো রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেননি। ডেপুটি জেলার এমদাদুল্লাহ্ তখন উপস্থিত ছিলেন।
ফাইলে রাখুন দয়া করে।
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- ২৮.৬
এম.ও.এস.
এ.এফ. এম. শফিকুল্লাহ
এস.আই. আই.বি.
২৩.৬.৪৯.
৯২
২৯শে এপ্রিল ১৯৪৯ তারিখ থেকে বিনা বিচারে আটকে রাখার বিরুদ্ধে ঢাবির আইন বিভাগের ছাত্র শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে অ্যাডভোকেট এম.এ. খোন্দকার সাহেব ২০ ও ২৩ শে জুন ১৯৪৯ তারিখে দুটো হেবিয়াস কর্পাসের দরখাস্ত জমা দিয়েছেন। অ্যাডভোকেট জেনারেলের অনুরোধে বিষয়টি ১.৭.১৯৪৯ তারিখ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। ইত্তেফাক ও আনন্দবাজার পত্রিকায় খবরটি যথাক্রমে ২৪.৬.১৯৪৯ ও ২৭.৬.১৯৪৯ তারিখে প্রকাশিত হয়।
ঢাকা, ২৩ জুন ১৯৪৯
ইত্তেহাদ তারিখ ২৪.৬
(মূল বইয়ে বাংলা অংশ দেখুন)
পি.এফ.-এ রাখুন
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- ১.৭
আনন্দ বাজার তারিখ ২৭/৬/৪৯
(মূল বইয়ে বাংলা অংশ দেখুন)
ডিএস ৫
জনাব,
আমি হাইকোর্টে অবস্থান করছিলাম এবং নিশ্চিত হয়েছিলাম যে, শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে ২০.৬.৪৯ ও ২৩.৬.৪৯ তারিখে অ্যাডভোকেট এম.এ. খোন্দকার হেবিয়াস কর্পাস আইনের অধীনে একটি পিটিশন ফাইলবন্দি করেন। সম্মানিত হাইকোর্ট কর্তৃক শুনানির জন্য মামলাটি সেখানে স্থানান্তরিত হয়েছে। অ্যাডভোকেট জেনারেলের অনুরোধে মামলাটি ১.৭.৪৯ তারিখ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।
অবগত করতে ডি.আই.জি.-র প্রতি
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- ২৪.৬
এম.ও.এস.
ম. হোসেন পুলিশের এস.আই.
আই.বি.- ২৪.৬
গোপনীয়
নং ১২৭৩৩/নং ৬০৬-৪৮ পি.এফ. তারিখ ২৭.৬.৪৯
বরাবর,
এডিশনাল এসপি, ডিআইবি, ঢাকা
প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নিরাপত্তা কারাবন্দির পক্ষে হেবিয়াস কর্পাস পিটিশন কেইসের সাথে সম্পর্কিত হিসেবে ফাইলবন্দির কাজে অ্যাডভোকেট জেনারেলকে সহায়তা করতে অফিসারকে প্রেরণ করুন যিনি প্রকৃতই শেখ মুজিবুর রহমানকে নিশ্চিত করবেন।
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- ২৫.৬
ডিএস(ভি)
৯৩
দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকার ২৬.৬.১৯৪৯ তারিখের শিরোনাম ‘পূর্ববঙ্গে লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আরেকটি দল গঠিত হয়েছে। লীগ ওয়ার্কার কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত প্রকাশিত’ থেকে নেওয়া। ঢাকার রোজ গার্ডেনে ২৩.৬.১৯৪৯ তারিখের মুসলিম লীগ ওয়ার্কারস কাউন্সিলে ‘পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মুসলিম লীগ’ নামে মুসলিম লীগের বিরোধী একটি দল গঠিত হয়।
ঢাকা, ২৬ শে জুন ১৯৪৯
দৈনিক ইত্তেহাদ থেকে গৃহীত। তারিখ ২৬.৬.৪৯
(মূল বইয়ে বাংলা অংশ দেখুন)
৯৪
ঢাকাস্থ ডিআইবির ওসি ওয়াচ রিপোর্ট করেন যে, ২৬.৬.১৯৪৯ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমান ও বাহাউদ্দীন আহমেদ নামক দুজন নিরাপত্তা কারাবন্দির মুক্তিতে তাঁদের অভিনন্দন জানাতে ছাত্রদের একটি মিছিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকের দিকে এগিয়ে যায়।
ঢাকা, ২৬শে জুন ১৯৪৯
রেগ. ২৬.৬.৪৯ তারিখে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নিরাপত্তা কারাবন্দি মুজিবুর রহমান ও বাহাউদ্দীনের মুক্তি উপলক্ষ্যে মিছিল।
***
কাজী গোলাম মাহবুব, আফজাল, আজিজ আহমেদ, নুরুল ইসলাম সহ পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের প্রায় ৪০জন ছাত্র ও মোহাম্মদ আরিফ ও শামসুল হক নামের দুজন এম.এল.এ.-সহ একটি মিছিল ২৬.৬.৪৯ তারিখে ০৯:২০ ঘটিকায় কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ফটকের দিকে অগ্রসর হয়। নিরাপত্তা কারাবন্দিরা বেলা ৯:৩০-এ কারাগার থেকে মুক্তি পায় এবং মিছিলকারীরা তাঁদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়। সাবেক নিরাপত্তা কারাবন্দিরা বিজিডি ১৭০০ নামক একটি জিপ কারে করে মিছিলের সাথে চলতে থাকে। স্যার নাজিমউদ্দীন রোড, বক্সিবাজার ও রমনা এলাকা হয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়। পুরো রাস্তায় তারা নিম্নরূপ স্লোগান দেয়: (মূল বইয়ে দেখুন)
বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়ে সেখানে জমায়েত ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তাঁরা বলেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতনভাতা বৃদ্ধি ও অন্যান্য নৈতিক দাবি পূরণে একটি ধর্মঘট আয়োজন করতে যেসব ছাত্র পদক্ষেপ নিয়েছিল তাদের ওপর আরোপিত শাস্তি তুলে নেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করায় তাঁরা জেলে প্রেরিত হয়েছিলেন।সাবেক নিরাপত্তা কারাবন্দিরা আরও বলেন যে, বুলেট ও বেয়নেট দিয়ে একটি দেশ শাসিত হতে পারে না; পারস্পরিক ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্ববোধ দিয়েই কেবল তা চলতে পারে। সুতরাং জনগণ যেন স্বপ্রণোদিত হয়ে সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দেয় এমনভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতে তারা সরকারকে অনুরোধ করে। তারা আরও বলে যে, “যদি উপাচার্য আরোপিত শাস্তি তুলে না নেন এবং ছাত্রদের ন্যায্য দাবিকে সমর্থন না করেন তাহলে ছাত্ররা জোটবদ্ধ হয়ে সম্মিলিতভাবে তাদের দাবির জন্য আন্দোলন করবে।” বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে সাবেক নিরাপত্তা কারাবন্দিদের নিয়ে মিছিলগুলো চকবাজার ও মৌলভীবাজার এলাকা হয়ে ৩১, ট্রেনিং কলেজ রোডে যায়। বাহাউদ্দীন উক্ত প্রাঙ্গণে অবস্থান করেন এবং মুজিবুর রহমান অন্য দুজন এম.এল.এ.-কে সঙ্গে নিয়ে একই জিপে পূর্বদিকে যান।
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- আবদুর রাজ্জাক
ও/সি- ২৭.৬.৪৯
পার্শ্ব নোট: ১) ইপিএমএসএল ফাইলে রাখুন
: ২) অনুলিপিসমূহ মুজিবুর ও বাহাউদ্দীনের পিএফ স্বাক্ষর তারিখসমেত/- ২৯.৬, ৬০৬/৪৮ পি.এফ.
৯৫
ঢাকাস্থ ডিআইবি, ডিআইএ এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ম্যামো থেকে নেওয়া যেখানে এ কথা বলা হয়েছে যে, বিশেষ কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান ও বাহাউদ্দীন আহমেদ ২৬.৬.১৯৪৯ তারিখে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান।মৌলানা ভাসানী, শামসুল হক ও কিছু ছাত্র একটি জিপে করে ব্যান্ড পার্টি নিয়ে তাঁদের বরণ করে নেন।
ঢাকা, ২৭ জুন ১৯৪৯
ডি.আই.আর. নং ১১৮ থেকে নেওয়া, তারিখ ২৭.৬.৪৯, ডি.আই.বি., ঢাকা
II- বিশেষ কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান ও বাহাউদ্দীন আহমেদ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২৬.৬.৪৯ (এ.এম.) তারিখে মুক্তি পান।
মৌলানা আবুল হামিদ খান ভাসানী, এম.এল.এ. জনাব শামসুল হক, অ্যাডভোকেট জনাব আলী আমজাদ খান প্রায় ২০/২৫ জন ছাত্রদের নিয়ে একটি জিপে করে ও একটি ব্যান্ড পার্টি নিয়ে ১০.০০ ঘটিকায় বিশেষ কারাবন্দিদের মুক্তির পর তাদের বরণ করে নিতে জেল গেটের দিকে যান।
ব্যান্ড পার্টি সহ একটি জিপে করে বিশেষ কারাবন্দিরা পুরো শহরে চক্কর দেন।
***
গোপনীয়
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার অফিস
ম্যামো নং ১১৬০/এস.বি., তারিখ ২৭.৬.৪৯.
বরাবর
ডেপুটি সেক্রেটারি
পূর্ববঙ্গ, স্বরাষ্ট্র (বিশেষ) বিভাগ
রেফারেন্স নং:- তোমার নং ১৭৪১-এইচ. এস., তারিখ ১৭.৬.৪৯ এবং নং ১৭৩৬-এইচ.এস. তারিখ -১৭.৬.৪৯
তারিখ, স্বাক্ষরসমেত/ এ.এইচ. খান
সুপার ইন্টেনডেন্ট
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার
গোপনীয়
অনুলিপি:-
- ডি.আই.জি.আই.বি. ঢাকাকে অবহিত করতে
- কারাগারের আই.জি.কে অবহিত করতে
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/-
সুপার ইন্টেনডেন্ট
ঢাকা, কেন্দ্রীয় কারাগার
৯৬
আইবির ডিআইজি ঢাকাস্থ স্বরাষ্ট্র (বিশেষ) বিভাগের সহকারী সচিবকে ১৮/৬/১৯৪৯ তারিখে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে শেখ মুজিবুর রহমানকে ডিটেনশনে রাখার কারণপত্র সরবরাহসংক্রান্ত বিষয়টি অবহিত করেন। এই অবহিতকরণ সহকারী সচিবের অফিসের মর্জি মোতাবেক অ্যাডভোকেট জেনারেলের নিকট প্রেরিত হয়।
ঢাকা ২৭ জুন ১৯৪৯
নং ১২৭৩৪ তারিখ ২৭.৬
বরাবর,
সহকারী সচিব
স্বরাষ্ট্র (বিশেষ) বিভাগ u/o
নিরাপত্তা কারাবন্দি মৌলভী শেখ মুজিবুর রহমানকে ডিটেনশনে রাখার কারণপত্র (ম্যামো নং ১৭১৩ এইচএস, তারিখ ১৭.৬.৪৯) ১৮.৬.৪৯ তারিখে ডি.সি. জেলের নিকট সরবরাহ করা হয়। উক্ত তথ্যটি ২২.৬.৪৯ তারিখে অ্যাডভোকেট জেনারেলের নিকট আপনার মর্জিমাফিক আন-ওফিশিয়াল নোটে রাখা হয়েছে। তারিখ ২২.৬.৪৯।
নিচে আরেকটি
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- ২৭.৬
ডি.আই.জিআর. আই.বি.
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- ২৫.৬
৯৭
ঢাকাস্থ আই.বি.ই.বি-র ডিআইজির ২৭.৬.১৯৪৯ তারিখের প্রাত্যহিক রিপোর্ট নং ৮৭ থেকে নেওয়া যেখানে এ কথা উল্লেখ করা হয় যে, ২৬.৬.১৯৪৯ তারিখে বিশেষ কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান ও বাহাউদ্দীন আহমেদ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। অ্যাডভোকেট জেনারেল ডিআইবি ঢাকাকে অবহিত করেন যে, শেখ মুজিবুর রহমান যেহেতু মুক্তি পেয়েছেন সেহেতু তিনি এই মামলা থেকে বাতিল হয়ে গেছেন।
ঢাকা, ২৭ জুন ১৯৪৯
গোপনীয়
ঢাকাস্থ আই.বি.ই.বি. র ডেপুটি ইন্সপেক্টর অব পুলিশের ২৭.৬.৪৯ তারিখের দৈনিক রিপোর্ট নং ৮৭ থেকে নেওয়া।
নিরাপত্তা কারাবন্দির মুক্তি।
নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান ও বাহাউদ্দীন আহমেদ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২৬.৬.৪৯ তারিখে মুক্তি পান। মৌলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মৌলভী শামসুল হক এম.এল.এ. ও ঢাকার অ্যাডভোকেট মৌলভী আমজাদ খান এবং ২০/২৫জন ছাত্র তাঁদের সংবর্ধনা দেন। তাঁরা সবাই মিলে ব্যান্ড পার্টি দিয়ে সুসজ্জিত একটি জিপে করে শহরের চারপাশে চক্কর দেন।
***
কীভাবে উক্ত লোকগুলো এই বন্দিদের মুক্তির সময় জানতে পারল?
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- এ. আহমেদ
১.৭.৪৯
সি.এস.-এর প্রশ্নের উত্তরটি আমি দেখতে চাই।
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- এন. আমিন
২.৭.৪৯
ডি.আই.জি. (আই.বি.) থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করুন
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- এম. আজফর
১১.৭.৪৯
নং ১৫৫১৪/৬০৬-৪৮ পি.এফ. তারিখ ৫.৮
তাঁদের মুক্তির এই আদেশটি সচিবালয় থেকে কারাগারে যায়। শামসুল হুদা, এনায়েত করিম ও অলি আহাদের মুক্তির আদেশও উক্ত আদেশটির সাথে যায়। নিম্নোক্ত তিনজন ১৭.৬.৪৯ তারিখে মুক্তি পান। অর্থাৎ যে দিন তাঁদের মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল সে দিন থেকেও আরও ৯দিন পূর্বে তাঁরা মুক্তি পান যা একটি প্রশ্নের বিষয়ও বটে। তাঁদের মুক্তির বিষয়টি ২৬.৬.৪৯ তারিখ সকালে (সময় উল্লেখ করা হয়নি) জেল থেকে একটি পত্র পাঠিয়ে আই.বি.কে জানানো হয়। ঢাকাস্থ ডি.আই.বি.-ও বন্দিদের মুক্তির আদেশটি সম্পর্কে অবগত ছিলেন। এটা বলা সম্ভব নয় যে, যারা জেলগেইট থেকে বন্দিদের সংবর্ধনা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যান তারা জেল, সচিবালয়, আই.বি. অথবা ডি.আই.বি.-র কোনো একটি প্রতিষ্ঠান হতে বন্দিদের মুক্তি পাওয়ার খবর পেয়েছে না উল্লিখিত শামসুল হুদা, এনায়েত করিম ও অলি আহাদের মতো বন্দিদের নিকট থেকে মুক্তি পাওয়ার খবর পেয়েছে। এমনও হতে পারে যে, বন্দিদের মুক্তি পাওয়ার সঠিক সময় না জেনেই তারা সকাল সকাল জেলগেইটে গিয়ে বসে ছিল। কারণ সকালে যেসব বন্দির মুক্তি পাওয়ার কথা থাকে তাদের মুক্তির সময় সঠিকভাবে বলা যায় না। এবং লোকজনও বিষয়টি নিয়ে অবহিত।
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- মো. ইয়ুসুফ
৪.৮.৪৯
ডি.আই.জি., আই.বি.
মুক্তি পেয়েছেন বলে শেখ মুজিবুর রহমান এই মামলা থেকে খারিজ হয়ে গেছেন। তাই এমন কোনো কাগজের আর প্রয়োজন হবে না।
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- দুষ্পাঠ্য
অ্যাডভোকেট জেনারেল
৮.৭.৪৯.
গোপনীয়
জেলা ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ
ঢাকা, ১৩ই জুলাই ১৯৪৯
নং ৫৩০/৪৩৫০/১০০-৪৯
ঢাকাস্থ আই.বি.ই.বি.র এস.এস. খান সাহিব ম. ইয়ুসুফকে তাঁর ২৭.৬.৪৯ তারিখের চিঠি নং ১২৭৩৩/৬০৬-৪৮ পি.এফ. -এর বরাতে প্রেরিত।
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- ১৩.৭.
পুলিশের সহকারী সুপার ইন্টেনডেন্ট
ডি.আই.বি., ঢাকা
৯৮
২৮.৬.১৯৪৯ তারিখের একটি অভিগ্রহীত চিঠির অনুলিপি যা কলকাতা শহরের মানিক নামক কোনো ব্যক্তি করাচিতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে পাঠিয়েছিলেন। চিঠিতে এ কথা উল্লেখ করা হয় যে, ২৪.৬.১৯৪৯ তারিখের ইপিএমএসএল-এর যে সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল তা বানচাল করতে কায়েমি স্বার্থ গোষ্ঠীর শত রকমের পরিকল্পনা সত্ত্বেও তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। উক্ত সভায় মাওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়। শামসুল হক ও শেখ মুজিবুর রহমান যথাক্রমে তার সম্পাদক ও সহসম্পাদক হন।
ঢাকা, ২৮ জুন ১৯৪৯
কলকাতা শহরের মানিক নামক কোনো ব্যক্তি কর্তৃক করাচিতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে প্রেরিত ২৮.৬.১৯৪৯ তারিখের একটি অভিগ্রহীত চিঠির অনুলিপি।
***
সম্ভবত আপনি জেনে থাকবেন যে, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের কর্মীদের একটি সভা চলতি মাসের ২৪ তারিখে সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যদিও সভা বানচাল করতে কায়েমি স্বার্থগোষ্ঠী উঠেপড়ে লেগেছিল। প্রথমত, তাজমহল হলের মালিককে তারা চাপ দিয়েছিল। সভা সেখানেই হওয়ার কথা ছিল। এরপর আরমানিটোলা ময়দানে সভার স্থল নির্ধারিত হয়। দ্বিতীয়ত, একই দিন একই সময় ভিক্টোরিয়া পার্কে তারা একটি সভা আহ্বান করে সভায় জনাব খালিকুজ্জামান ও আওরঙ্গজেব খান উপস্থিত থেকে বক্তৃতা করবে বলে যেন আমাদের সভা থেকে লোকেদের তারা নিজেদের সভায় নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু সভায় তেমন কোনো লোক হয়নি বলে ভিক্টোরিয়া পার্কের মিটিং বাতিল করা হয়। শেষ পর্যন্ত কার্জন হলে প্রেস কনফারেন্স জাতীয় কিছু একটার আয়োজন করে তারা। তৃতীয়ত, এতেও সন্তুষ্ট না হয়ে সভা ভঙ্গ করার জন্য তারা গুন্ডা ভাড়া করে। শুরুতেই গুন্ডারা ঝামেলা করতে শুরু করে।কিন্তু মাওলানা সাহেবের আহ্বানে কেবল যে গুন্ডামি বন্ধ হলো তাই নয় বরং গুন্ডাদের নেতারা আত্মসমর্পণ করে স্বীকার করল যে, তাদের ভাড়া করা হয়েছে এবং তারা মুচলেকাও দিল।বৃষ্টি থাকা সত্ত্বেও ২০,০০০-এর ওপর লোক উপস্থিত হয়েছিল এবং পূর্ব পাকিস্তানের সব দল থেকে প্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়েছিল। ‘পূর্ব পাকিস্তান জনগণের মুসলিম লীগ’ নামক একটি নতুন প্রতিষ্ঠান গঠিত হলো। মাওলানা ভাসানীকে সভাপতি করে প্রতিষ্ঠানটির একটি আয়োজক কমিটি গঠিত হয়। শামসুল হক ও ডিটেনশনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমান উক্ত কমিটির যথাক্রমে সম্পাদক ও সহসম্পাদক হন।
৯৯
আইবিইবির ডিএস-৩ ঢাকাস্থ ডিআইবির এসপিকে একটি অফিসিয়াল ম্যামো পাঠান। ম্যামোতে এ কথা লেখা ছিল যে, শেখ মুজিবুর রহমান ও বাহাউদ্দীন আহমেদ ২৬.৬.১৯৪৯ তারিখে জেল থেকে ছাড়া পান এবং মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যান যেখানে একটি সভায় তারা অংশ নেয়। কারামুক্তি সংক্রান্ত এই সংবাদটি ইত্তেহাদ পত্রিকায় ২৯.৬.১৯৪৯ তারিখে প্রকাশিত হয়।
ঢাকা, ২৯ জুন ১৯৪৯
গোপনীয়
প্রেরক: এস.পি. ঢাকা, ডিআইবি
২৯.৬.৪৯ তারিখে ইত্তেহাদ পত্রিকায় এ কথা লিখিত হয় যে, শেখ মুজিবুর রহমান ও জনাব বাহাউদ্দীন আহমেদ দুজন জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর দুজনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মিছিলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ২৬.৬.৪৯ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত একটি সভায় তারা সংবর্ধিত হয়।
অনুগ্রহপূর্বক উক্ত সভার ওপর আমরা একটি রিপোর্ট করি। আপনার ডিআইআর বা ডব্লিউসিআর কোথাও উক্ত সভার কোনো উল্লেখ নেই।
স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- এসএস-৩-এর জন্য ডিএস-৩
আইবি
১০০
দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকায় ২৯.৬.১৯৪৯ তারিখে ‘ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান ও বাহাউদ্দীন আহমেদের মুক্তি, ঢাবিতে বিপুল সংবর্ধনা’ শিরোনামে খবর ছাপা হয়। ইংরেজি দৈনিক এ.বি.সি. ৩০.৬.১৯৪৯ তারিখে একই খবর প্রকাশ করে।
ঢাকা, ২৯ জুন ১৯৪৯
ইত্তেহাদ তারিখ ২৯.৬
এ.বি.সি. তারিখ ৩০.৬.৪৯
বাংলা
ঢাকা ছাত্রনেতা
জেল থেকে নিরাপত্তা কারাবন্দির মুক্তিঢাকা, জুন, নবগঠিত পূর্ব পাকিস্তান পিপলস মুসলিম লীগের যুগ্মসচিব ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান (২৭) ও জনাব বাহাউদ্দীন দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ধর্মঘট সংক্রান্ত ঘটনার কারণে গ্রেফতারকৃত হন ও নিরাপত্তা কারাবন্দি হিসেবে ডিটেনশনে যান। গতকাল ঢাকা জেল থেকে তাঁরা মুক্তি পান। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মিছিলে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় এবং একটি সভায় তাঁরা বিপুল সংবর্ধনা পান। এটাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যে, জনাব মুজিবুর রহমানের জন্য গত ২০শে জুন একটি হেবিয়াস কর্পাস পিটিশন ঢাকা হাইকোর্টে স্থানান্তরিত হয় এবং ১লা জুলাই উক্ত পিটিশনের শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে।