গোপন নথিসমূহ ১ম খণ্ড (৩০১-৩২১)

৩০১

আইবিইবির ডিআইজি পূর্ববঙ্গ সরকারের স্বরাষ্ট্র (বিশেষ) বিভাগের ডিএসকে একটি গোপন ম্যামো পাঠান যেখানে তিনি বলেন যে, পিপিসির ১৪৭ ধারা অনুযায়ী কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা মামলা নং ১৯(১০)৪৯-এ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান অভিযুক্ত এবং তিনি ৩মাসের জন্য আরআই বিচারে দণ্ডিত। তাঁর আটকাদেশ মুলতবি রাখতে আইবিইবির ডিআইজি একটি জিওর অনুরোধ করেন যেন এই অভিযুক্ত ব্যক্তি বিশেষ মামলায় তাঁর সাজাভোগ সমাপ্ত করেন।

ঢাকা, ১২ই অক্টোবর ১৯৫০

নং ১৯৪৭৯/৬০৬-৪৮ পিএফ, তারিখ ১২/১০/৫০

গোপনীয়

বরাবর,

উপসচিব, পূর্ববঙ্গ সরকার, স্বরাষ্ট্র (বিশেষ) বিভাগ

লুৎফর রহমানের পুত্র নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান ১৬/৯/৫০ তারিখের জিও নং ২১৪৩ অনুযায়ী পিপিসি ১৪৭ ধারায় দায়ের করা কোতোয়ালি খানার মামলা নং ১৯(১০)৪৯-এর আসামী এবং ১২/৯/৫০ তারিখের ঢাকার (দক্ষিণ) এসডিও অনুযায়ী ৩মাসের জন্য জিও আরআইয়ের অধীনে দণ্ডপ্রাপ্ত রয়েছেন। দ্রষ্টব্য ঢাকা ডিআইবির অতিরিক্ত এসপি ২/১০/৫০ তারিখের সংযুক্ত পত্র নং ৯৪২৮।

অতএব, আটকাদেশ মুলতবি রাখতে আমি একটি জিওর জন্য অনুরোধ করছি যেন এই অভিযুক্ত ব্যক্তি বিশেষ মামলায়  তাঁর সাজাভোগ সমাপ্ত করেন।

জামিনে মুক্তি, খালাস বা সাজা কমানোর বিষয়ের কথা বিবেচনা করে বিশেষ হিসেবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আটকাদেশটি বলবৎ করা উচিত।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ৯/১০

ডিআইজি, আইবি-এর পক্ষে

এসএস ৩

ম্যামো নং ১৯৪৭৯/(২), তারিখ ২/১০/৫০ ও এসপি ফরিদপুর

ঢাকাস্থ ডিআইবির অতিরিক্ত এসপিকে অবহিতকরণের জন্য অনুলিপি প্রেরিত।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ৯/১০

এসএস ৩

পিএফ নং ৪৮৩-৪৮-এর এনএসপি ৫৬-এর ব্যাপারে ডিএস ৬-এর আদেশের সংক্ষেপ

যখন নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের মামলাটি নেওয়া হবে বিশেষ মামলার বিচারে সাজা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁর আটকাদেশ মুলতবি করতে অনুরোধ জানিয়ে সরকারকে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে অবহিত করা হবে।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- আবু নাসর

৫/১০/৫০

ডিএস ৬-এর পক্ষে

৩০৩

ঢাকাস্থ আইবিইবির ডিআইজি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ইনটেনডেন্টকে শেখ হাবিবুর রহমানের করা ১১/১০/১৯৫০ তারিখের একটি আবেদনপত্রসহ একটি গোপন ম্যামো প্রেরণ করেন। ডিআইজি অবহিত করেন যে, মুজাহারুল হক ব্যতীত অন্য সবাই দেখা করতে পারবেন।

ঢাকা, ২০শে অক্টোবর ১৯৫০

গোপনীয়

গোয়েন্দা শাখা, পূর্ববঙ্গ

৭, ওয়াইজ ঘাট রোড,

ঢাকা, ২০/১০/১৯৫০

নং ২০১৫২/৬০৬-৪৮ পিএফ (সেক)

বরাবর,

সুপার ইনটেনডেন্ট

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, ঢাকা

শেখ হাবিবুর রহমানের ১১/ক/৫০ তারিখের একটি আবেদনের অনুলিপি এতদ্‌সঙ্গে প্রেরণ করে আমার নিবেদন এই যে, একজন আইবি অফিসারের উপস্থিতিতে মুজাহারুল হক ব্যতীত অন্য সবার সাক্ষাৎ মঞ্জুর করা যেতে পারে। দিনক্ষণ আপনি পরে ঠিক করবেন। সে অনুসারে আবেদনকারী দল ও অফিসকে অনুগ্রহপূর্বক অবহিত করবেন।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ২৪/১০

পুলিশের উপমহাপরিদর্শকের পক্ষে

গোয়েন্দা বিভাগ

৩০৫

পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ইনটেনডেন্টকে শেখ মুজিবুর রহমানের কারাবাস বিষয়ে একটি গোপন ম্যামো প্রেরণ করেন। তিনি একটি স্বাক্ষরিত আটক আদেশ প্রেরণ করে শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আশুব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ করেন।

ঢাকা, ২৫শে অক্টোবর ১৯৫০

গোপনীয়

বিশেষ দূত মারফত

জরুরি

পূর্ববঙ্গ সরকার

স্বরাষ্ট্র বিভাগ

বিশেষ শাখা

প্রেরক: মৌলভী ম. ফজলুল বারি

সহকারী সচিব, পূর্ববঙ্গ সরকার

প্রাপক: সুপার ইনটেনডেন্ট, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার

স্মারক নং: ২৬৬৬-এইচএস, তারিখ, ঢাকা ২৫শে অক্টোবর ১৯৫০

বিষয়: বঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা অধ্যাদেশ, ১৯৪৬ (১৯৪৬-এর Bengal Ordinance VI)-এর ১০ক ধারা অনুযায়ী শেখ মুজিবুর রহমানের আটক

উল্লিখিত বিষয়ে একটি স্বাক্ষরিত আদেশ (অনুলিপি) এতদ্‌সঙ্গে প্রেরিত হলো। এই আদেশটি বাস্তবায়ন করতে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এবং যথাসময়ে তা সরকারকে অবহিত করতে আপনাকে অনুরোধ করা যাচ্ছে।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- এম. এফ. বারি

পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ২৯/১০/৫০

নং ২৬৬৬/১(৪)-এইচএস

অনুলিপি, আদেশের একটি অনুলিপি অবহিতকরণের জন্য নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গের নিকট প্রেরিত হলো:-

  1. মহাকারাপরিদর্শক, পূর্ববঙ্গ
  2. পুলিশের উপমহাকারাপরিদর্শক, গোয়েন্দা শাখা, পূর্ববঙ্গ, তাঁর স্মারক নং ১৯৪৭৯, তারিখ ১২ই অক্টোবর, ১৯৫০-এর বরাতে
  3. জেলা ম্যাজস্ট্রেট, ঢাকা
  4. উপপরিচালক, গোয়েন্দা শাখা, পাকিস্তান সরকার, ৮ কুমারটুলি লেন, ঢাকা

ঢাকা

২৫শে অক্টোবর ১৯৫০

তারিখসহ স্বাক্ষর/-

পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব

পার্শ্বটীকা: ম্যামো নং ২০৭০৯, তারিখ ৮/১১/৫০। সংযোজনের একটি অনুলিপিসহ অনুলিপি অবহিতকরণের জন্য ডিআইবির অতিরিক্ত এসপিকে প্রেরণ করা হয়েছে।

৩০৮

পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ইনটেনডেন্টকে একটি গোপন ম্যামো প্রেরণ করেন যেখানে শেখ মুজিবুর রহমানের বিষয়ে বিএসপিওর অধীনে একটি যোগাযোগ (আটক আদেশ) প্রেরণের জন্য তিনি নির্দেশিত হয়েছেন। এই যোগাযোগটি সরবরাহ করতে তিনি সহকারী সচিবকে অনুরোধ করেন।

ঢাকা, ৬ই নভেম্বর ১৯৫০

বিশেষ দূত মারফত

গোপনীয়

জরুরি

পূর্ববঙ্গ সরকার

স্বরাষ্ট্র বিভাগ

বিশেষ শাখা

প্রেরক: মৌলভী ম. ফজলুল বারি

সহকারী সচিব, পূর্ববঙ্গ সরকার

প্রাপক: সুপার ইনটেনডেন্ট, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার

স্মারক নং: ২৭৪৮ এইচ.এস., তারিখ ঢাকা, ৬ই নভেম্বর ১৯৫০

নিম্ন স্বাক্ষরকারী ব্যক্তি এতদ্‌সঙ্গে East Bengal Ordinances Temporary Enactment and Re-enactment Act 1950 (যা ১৯৫০-এর East Bengal Act VI নামে পরিচিত) অনুযায়ী পাশ হওয়া ও বহাল থাকা পূর্ববঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৪৬-এর (১৯৪৬-এর Bengal Ordinance No. VI) ১০গ ধারা অনুযায়ী শেখ মুজিবুর রহমানের একটি যোগাযোগ (অনুলিপি) প্রেরণ করতে এবং সরকার তাঁর বিরুদ্ধে কী ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছে তা অবহিত করতে নির্দেশিত হয়েছেন। কারাবন্দি যদি কোনো প্রতিবাদলিপি প্রেরণ করে থাকে তবে যথাশীঘ্র তা সরকারকে প্রেরণ করতে আপনাকে অনুরোধ করা হচ্ছে।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- এম.এফ. বারি

পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব

অনুলিপি, অবহিতকরণের জন্য সংযুক্তির অনুলিপিসহ নিম্নোক্ত ব্যক্তির নিকট প্রেরণ করা হয়েছে:-

  • মহাকারাপরিদর্শক, পূর্ববঙ্গ
  • পুলিশের উপমহাপরিদর্শক, গোয়েন্দা শাখা, পূর্ববঙ্গ
  • জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকা
  • উপপরিচালক, গোয়েন্দা ব্যুরো, পাকিস্তান সরকার, ৮ কুমারটুলি লেন, ঢাকা

ঢাকা

৯ই নভেম্বর ১৯৫০

তারিখসহ স্বাক্ষর/-

পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব

East Bengal Ordinances Temporary Re-enactment Act 1950 (যা ১৯৫০-এর East Bengal Act VI নামে পরিচিত) অনুযায়ী পাশ হওয়া ও বহাল থাকা পূর্ববঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা অধ্যাদেশ, ১৯৪৬ (১৯৪৬-এর Bengal Ordinance VI)-এর ১০গ ধারার অনুযায়ী কারাগারে আটকে রাখার কারণসমূহ সম্বলিত যোগাযোগ।

East Bengal Ordinances Temporary Re-enactment Act 1950 (যা ১৯৫০-এর East Bengal Act VI নামে পরিচিত) অনুযায়ী পাশ হওয়া ও বহাল থাকা পূর্ববঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা অধ্যাদেশ, ১৯৪৬ (১৯৪৬-এর Bengal Ordinance VI)-এর ১০গ ধারার অনুযায়ী ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র, ১৫০ মোঘলটুলি ও ৬৯/১ খাজে দেওয়ান ঢাকা নিবাসী আপনি মৌলভী শেখ মুজিবুর রহমান উপর্যুক্ত অধ্যাদেশের ১০ক ধারার উপধারা (১) ও উপধারা (৪)-এর ক্লজ নং (ক) অনুযায়ী প্রস্তুতকৃত ২৫/১০/৫০ তারিখের আদেশ নং ২৬৬৭-এইচএস অনুযায়ী বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ রয়েছেন এবং আপনাকে অবহিত করা হচ্ছে যে, নিম্নলিখিত কারণে আপনাকে আটক রাখা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে:-

  • ঢাকা, ফরিদপুরসহ পূর্ববঙ্গের আরও কয়েকটি জেলায় আপনি এমন একটি গোপন সংস্থার সাথে বেআইনি কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন এবং এখনও আছেন যার উদ্দেশ্য হলো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এই সরকারকে (পূর্ববঙ্গ সরকার) উৎখাত করা। ১৯৪৭ (দেশভাগের পরে), ১৯৪৮ ও ১৯৪৯ সালে আপনি ঢাকা, ফরিদপুর, পাবনা ও বাকেরগঞ্জ জেলায় অহিতকর কিছু কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ছাত্র ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর মনে পূর্ববঙ্গ সরকার সম্পর্কে বিরূপ ধারণা তৈরি করাই ছিল এসব কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য। বিশেষ করে ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহ, ১৯৪৮ সালের মার্চ, এপ্রিল, মে, জুন, জুলাই ও সেপ্টেম্বর মাসে এবং ১৯৪৯ সালের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে কিছু সরকার বিরোধী ব্যক্তিবর্গের সাথে মিলে আপনি ঢাকা শহর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর শহর, নরসিংদী ও অন্য এলাকার ছাত্র ও মুসলিম জনতার মধ্যে ক্ষতিকর ও সংহতিনাশক প্রচারণা চালিয়েছেন এবং পূর্ববঙ্গে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে তাদেরকে ইন্ধন যুগিয়েছেন। কিছু বিভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গের সাথে মিলে সরকারকে উৎখাত করার লক্ষ্যে মানুষের অনুমাননির্ভর কথা বলে পূর্ববঙ্গের সরকারের নামে বদনাম করেছেন আপনি। উল্লিখিত এসব বিষয়ের অতিরিক্ত ঘটনা ও বিশেষ কিছু জননিরাপত্তার বিরুদ্ধে যাবে।
  • উপর্যুক্ত সমস্ত কর্মকাণ্ড এই প্রদেশের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্যে হুমকিস্বরূপ।
  • আপনাকে আরও অবগত করা হচ্ছে যে, আপনার বিরুদ্ধে করা কারাবরণের আদেশের প্রতিবাদ করে সরকারকে লেখার অধিকার আপনার রয়েছে… (পৃষ্ঠা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আসল নথিতে নেই)

৩০৯

ঢাকাস্থ আইবিইবির একজন ইন্সপেক্টর আইবিইবির ডিএস ৬-কে রিপোর্ট করেন যে, তিনি ১৬/১১/১৯৫০ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। বিচারপ্রক্রিয়ায় অংশ নিতে ২৬/১০/১৯৫০ তারিখে তাঁকে গোপালগঞ্জ সাবজেলে স্থানান্তর করা হয়েছে।

ঢাকা, ১৬ই নভেম্বর ১৯৫০

ডিএস ৬

আইবিইবি, ঢাকা

(সূত্র:- ৬০৬/৪৮-পিএফ)

জনাব,

আদিষ্ট হয়ে ১৬/১১/১৯৫০ তারিখে নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করতে আমি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলাম। কিন্তু বিচারপ্রক্রিয়ায় অংশ নিতে ২৬/১০/৫০ তারিখে তাঁকে গোপালগঞ্জ সাবজেলে স্থানান্তর করা হয়েছে। একই সঙ্গে, ১৩/১১/৫০ তারিখে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারও অবহিত করে যে, ২৯/১০/৫০ তারিখে তিনি ফরিদপুর কারাগারে আছেন।

তারিখসহ স্বাক্ষর/-

এস.এন. মাহমুদ

ইন্সপেক্টর আইবি ১৬/১১/৫০

পার্শ্বটীকা: অনুগ্রহপূর্বক ফাইলে রাখুন, তারিখসহ স্বাক্ষর/-

৩১০

সদস্যতা ও দলের জনসমর্থনের ভিত্তিতে এএমএলের শক্তি বিষয়ে ঢাকাস্থ ডিআইবি ঢাকাস্থ আইবিইবির এসএসকে একটি গোপন রিপোর্ট প্রেরণ করেন। বিশেষ করে প্রগতিশীল ছাত্রদের এবং এই জেলার ব্যাবসায়ীদের কয়েকজনকে দলটি নিজের প্রতি প্রভাবিত করতে পেরেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকায় আগমন উপলক্ষ্যে আর্মানিটোলা ময়দানে এএমএল ১১/১০/১৯৪৯ তারিখে একটি সভার আয়োজন করে। শেখ মুজিবুর রহমান সেখানে একটি জ্বালাময়ী ভাষণ দেন। সভাশেষে তারা একটা মিছিল নিয়ে বের হয় এবং গভর্নমেন্ট হাউজের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন অভিমুখে যাত্রা করে। সমাবেশটি বেআইনি ঘোষণা করা হয়। মওলানা ভাসানী, শামসুল হকসহ আরও ১৮জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।কোতোয়ালি থানায় তাঁদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়।

ঢাকা, ১৬ই নভেম্বর ১৯৫০

গোপন/জরুরি

জেলা গোয়েন্দা শাখা

ঢাকা, ১৬/১৭ নভেম্বর ১৯৫০

নং ১০৯৮৮/১৬৩-৪৯

জনাব এ হুসাইন

এসএস, আইবিইবি, ঢাকা

সূত্র:- আপনার নং ১৯৪২১(১৭)/৬১৩-৫০(জি১), তারিখ ১১/১০/৫০

  1. আওয়ামী মুসলিম লীগে নাম অন্তর্ভুক্তকরণের জন্য অফিসিয়াল কোনো পদ্ধতি দেখা যায় নি এবং সদস্যতার বিষয়ে তাদের বর্তমান শক্তি সম্পর্কে বলাটা খুব কঠিন।বিভিন্ন উৎস থেকে গোপনে যেভাবে তদন্ত করা হয়েছে তার প্রেক্ষিতে বলা যেতে পারে যে, এই জেলায় সংগঠনটির প্রায় ৮০০০ সদস্য রয়েছেন।
  2. এই জেলার বুদ্ধিদীপ্ত ছাত্রদের মধ্যে, যারা প্রগতিশীল তাদের ওপর এবং ব্যবসায়ীদের কিছু অংশের ওপর এই সংগঠনটি বেশ রকমের প্রভাব বিস্তার করেছে।
  3. সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ ও সমর্থকদের অভিমত, এটি একটি সাংবিধানিক সংগঠন এবং তাঁরা শান্তিপূর্ণ ও সাংগঠনিক উপায়ে এগিয়ে যাওয়াতে বিশ্বাস করে। কিন্তু ১১/১০/৪৯ তারিখে মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে ঢাকার আর্মানিটোল ময়দানে তাঁরা একটি সভার আয়োজন করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর (পাকিস্তান) ঢাকায় আগমন উপলক্ষ্যে সভাটির আয়োজন করা হয় এবং সেখানে তাঁর সমালোচনা করা হয়। এএমএলের সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান সেখানে জ্বালাময়ী বক্তৃতা করেন। সভাশেষে তারা একটা মিছিল নিয়ে বের হয় এবং গভর্নমেন্ট হাউজের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন অভিমুখে তা যাত্রা করে। ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে ক্রসিংয়ে মিছিলকারীরা মারমুখো হয়ে ওঠে এবং সমাবেশটিকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়। পুলিশরা মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে মওলানা ভাসানী, শামসুল হক (এমএলএ) সহ আরও ১৮জনকে ঘটনাস্থলে গ্রেপ্তার করা হয়। পিপিসি ১৪৭/৩২৫ ও বিএসপিও ৭(৩) ধারায় কোতোয়ালি থানার মামলা নং ১৯(১০)১৯-এর অধীনে তাঁদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৪জনকে দোষী সাব্যস্তকরণ ও মওলানার মুক্তির মাধ্যমে মামলাটির সমাপ্তি ঘটে।
  4. সংগঠনটি বর্তমানে যেভাবে এগুচ্ছে তাতে এর সম্প্রসারণ লোকজনের মননে এমন একটি ধারণা তৈরি করতে পারে যে, জনগণকে বিভ্রান্ত করতে এমএল সংগঠনটি মুষ্টিমেষ কিছু লোকের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিষ্ঠান হিসেবে সক্রিয় রয়েছে।

৩১৩

ফরিদপুর কারাগারের সুপার ইনটেনডেন্ট ঢাকা আইবির ডিআইজিকে একটি গোপনীয় ম্যামো প্রেরণ করেন যাতে তিনি অভিযুক্ত নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের একটি পিটিশন সংযুক্ত করেন। গোপালগঞ্জের আদালতে হাজিরা দেওয়ার সুবিধার্থে ফরিদপুরের জেল থেকে তাঁকে মুক্ত করতে অথবা বরিশাল বা খুলনা জেলে বদল করতে তিনি আবেদন করেন।

ফরিদপুর, ২৯শে নভেম্বর ১৯৫০

ফরিদপুর কারাগারের সুপার ইনটেনডেন্টের অফিস

গোপনীয়

ম্যামো নং ২১৬৬/ইবি, তারিখ ২৯শে নভেম্বর ১৯৫০

বরাবর,

পুলিশের উপমহাপরিদর্শক, গোয়েন্দা বিভাগ, ঢাকা

বিষয়: গোপালগঞ্জে একটি মামলার বিচারে হাজিরা দেওয়ার প্রেক্ষিতে আদালতে হাজিরা দেওয়ার সুবিধার জন্য মুক্তি চেয়ে কিংবা বরিশাল বা খুলনা কারাগারে বদলি করে দিতে অভিযুক্ত নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের আবেদন।

উক্ত নামের নিরাপত্তা কারাবন্দি যিনি জিও নং ২৬৬৭-এইচ.এস., তারিখ ২৫/১০/৫০ অনুযায়ী বন্দি আছেন, পিপিসির ১৪৭ ধারা অনুযায়ী ঢাকার এসডিও (এস) কর্তৃক অভিযুক্ত এবং ৩মাসের জন্য আরআই কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত, তিনি ১২/৯/৫০ তারিখে মুক্তির জন্য যে আবেদনটি করছেন তা প্রেরিত হলো।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ২৯/১১

সুপার ইনটেনডেন্ট

ফরিদপুর কারাগার

৩১৪

ঢাকাস্থ আইবিইবির ডিএস ৬ ফরিদপুরের ডিআইবির এসপিকে ফরিদপুর কারাগারে বন্দি নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য ২৪/১১/১৯৫০ তারিখের একটি আবেদনপত্র সহকারে একটি গোপন ম্যামো প্রেরণ করেন। মন্তব্য করে তা পুনরায় তাঁকে ফেরত পাঠাতে অনুরোধ করেন।

ঢাকা, ৮ই ডিসেম্বর ১৯৫০

গোপনীয়

নং ২৩৩৮৮/৬০৬-৪৮ পিএফ(সি) তারিখ ৯/১২/৫০

বরাবর,

পুলিশের সুপার ইনটেনডেন্ট, ডিআইবি

ফরিদপুর

অতি দ্রুত

বর্তমানে ফরিদপুর কারাগারে বন্দি নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য ২৪/১১/১৯৫০ তারিখের একটি আবেদনপত্র এতদ্‌সঙ্গে প্রেরণ করে মন্তব্য করে তা পুনরায় অনুগ্রহ করে আমাকে ফেরত পাঠাতে আমি আপনাকে অনুরোধ করছি।

তারিখসহ স্বাক্ষর/-

এসএস ৩-এর হয়ে ডিএস ৬

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ৮/১২

৩১৮

ফরিদপুরের ডিআইবির এসপি ঢাকাস্থ আইবিইবির এসএসপিকে একটি গোপন ম্যামো পাঠান যাতে এ কথা উল্লেখ ছিল যে, নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানকে খুলনা জেলে স্থানান্তরের বিষয়ে তাঁর কোনো আপত্তি নেই।

ফরিদপুর, ১৯শে ডিসেম্বর ১৯৫০

গোপনীয়

অতি দ্রুত

জেলা গোয়েন্দা শাখা

ফরিদপুর, ১৯শে ডিসেম্বর ১৯৫০

নং ৫১৮২/৩৩-৫০

বরাবর,

জনাব এ. হুসাইন

পুলিশের বিশেষ সুপার ইনটেনডেন্ট

আইবি, পূর্ববঙ্গ, ঢাকা

সূত্র:- আপনার নং ২৩৩৮৮/৬০৬-৪৮পিএফ(সি), তারিখ ৯/১২/৫০।

উক্ত নিরাপত্তা কারাবন্দিকে খুলনা জেলে স্থানান্তরের বিষয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই।

এতদ্‌সঙ্গে সংযুক্ত কপি ফেরত দেওয়া হয়েছে।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ১৯/১২

(এম.এস. হক)

পুলিশের সুপার ইনটেনডেন্ট

ডিআইবি, ফরিদপুর

৩২১

পূর্ববঙ্গ সরকারের স্বরাষ্ট্র (কারাগার) বিভাগের সহকারী সচিব একটি ম্যামোর মাধ্যমে ফরিদপুরের ডিএমকে অবহিত করেন যে, ফরিদপুরের জেলে বন্দি নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা বিচারাধীন মামলার বিচারের জন্যে খুলনার জেলা কারাগারে প্রেরণ করতে পূর্ববঙ্গের কারাগারের আইজিকে প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান করা হয়েছে।

ঢাকা, ২৯শে ডিসেম্বর ১৯৫০

পূর্ববঙ্গ সরকার

স্বরাষ্ট্র (কারাগার) বিভাগ

প্রেরক: জনাব ওয়াই.এ. খান, এম.এস.সি., ইপিসিএস

পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব

প্রাপক: জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ফরিদপুর

স্মারক নং ২১৫৩-এইচ.জে., ঢাকা, ২৯শে ডিসেম্বর ১৯৫০

বিষয়: বিচারাধীন কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানকে স্থানান্তর প্রসঙ্গে

সূত্র: স্মারক নং ২১৬৪/এসবি, তারিখ ২৯শে নভেম্বর ১৯৫০

ফরিদপুর জেলের সুপার ইনটেনডেন্টের মাধ্যমে পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট থেকে প্রেরিত আবেদন।

নিম্নস্বাক্ষরকারী এ কথা বলতে আদিষ্ট হয়েছে যে, ফরিদপুরের জেলে বর্তমানে বন্দি নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জের মহকুমা কোর্টে পাকিস্তান পেনাল কোর্টের ১৪৭ ধারায় দায়ের করা বিচারাধীন মামলার বিচারের জন্যে খুলনার জেলা কারাগারে প্রেরণ করতে পূর্ববঙ্গের কারাগারের ইন্সপেক্টর জেনারেলকে প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান করা হয়েছে।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ওয়াই. এ. খান

পূর্ববঙ্গ সরকার সহকারী সচিব

নং ২১৫৩/১-এইচ.জে.

প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে পূর্ববঙ্গের কারাগারের ইন্সপেক্টর জেনারেলকে অনুলিপি প্রেরিত হয়েছে।

শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জের কোর্টে পাকিস্তান পেনাল কোর্টের ১৪৭ ধারায় দায়ের করা বিচারাধীন মামলার বিচারের জন্যে তাঁকে ফরিদপুর জেল থেকে খুলনার জেলা কারাগারে প্রেরণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পূর্ববঙ্গের কারাগারের ইন্সপেক্টর জেনারেলকে অনুরোধ করা হয়েছে।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ওয়াই.এ. খান

পূর্ববঙ্গ সরকার সহকারী সচিব

তারিখ

২৯শে ডিসেম্বর ১৯৫০

উপর্যুক্ত অনুমোদনের অনুলিপিসহ একটি অনুলিপি অবহিতকরণের জন্যে পূর্ববঙ্গের গোয়েন্দা বিভাগের পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেলের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ২৯/১২/৫০

পূর্ববঙ্গ সরকার সহকারী সচিব

ম্যামো নং ৪৬৬/৬০৬-৪৮ পিএফ(সি), তারিখ ৯/১/৫০

ঢাকা, ২৯শে ডিসেম্বর ১৯৫০

পার্শ্বটীকা: অবহিতকরণের জন্য কপি ফরিদপুর ডিআইবির এসপিকে প্রেরণ করা হয়েছে। এসএস ৩-এর পক্ষে ডিএস৬। তারিখসহ স্বাক্ষর ৬/১/৫১