গোপন নথিসমূহ ১ম খণ্ড (১০১-১৫০)

১০১

রাজনৈতিক অবস্থার ওপর ১.৭.১৯৪৯ তারিখের একটি পাক্ষিক প্রতিবেদন যেখানে এ কথা উল্লেখ করা হয় যে, ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান স্থানীয় কিছু পরিচিত ব্যক্তির সাথে দেখা করতে বরিশালে গিয়েছেন। নাজিমউদ্দীনের মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে তিনি মিথ্যা প্রচারনা করেন এবং বলেন যে, মাওলানা ভাসানীর উচিত হবে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পক্ষের হয়ে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করা।

ঢাকা, ১ জুলাই ১৯৪৯

রাজনৈতিক অবস্থার ওপর ১.৭.১৯৪৯ তারিখের একটি পাক্ষিক প্রতিবেদন

  1. (খ) একজন গুপ্তচর ১৫ই জুন তারিখে রিপোর্ট করেন যে, নাজিমগ্রুপের বিরোধী দলের সাথে সংশ্লিষ্ট ঢাকার ছাত্রনেতা গোপালগঞ্জ নিবাসী মুজিবুর রহমান নামের কেউ একজন ১৩ই জুন তারিখে বরিশালে গিয়ে কিছু স্থানীয় মুসলিম ছাত্রদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং বর্তমান মন্ত্রিসভার বিরোধী প্রচারনা চালান। তিনি বলেন যে, ময়মনসিংহ নিবাসী মাওলানা আবদুল হামিদ ভাসানী জনাব সোহরাওয়ার্দীর পক্ষে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করবেন। …… constituency

১০২

ঢাকাস্থ জিপিওতে অভিগৃহীত হয়েছে ২.৭.১৯৪৯ তারিখের একটি বাংলা চিঠির কভার শিট ও কপি। চিঠিটি পাবনার শাজাদপুরের ইমামবাড়ি নিবাসী ওহিদ (মামা) শেখ মুজিবুর রহমানকে পাঠিয়েছিলেন।

ঢাকা, ২ জুলাই ১৯৪৯

গোপনীয়

জেলা ইন্টেলিজেনস ব্রাঞ্চ

৭ ওয়াইজ ঘাট সড়ক

ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ

৪.৭.১৯৪৯

ঢাকা;

ম্যামো নং.

(অভিগ্রহণের বিষয়টি অনুগ্রহপূর্বক গোপন রাখুন)

  • প্রেরক (ঠিকানাসহ) : ওহিদ (মামা) ইমামবাড়ি, শাজাদপুর, ডাকঘর: পাবনা, জেলা: পাবনা।
  • প্রাপক (ঠিকানাসহ) : শেখ মুজিবুর রহমান, লীগ কর্মীশিবির ১৫০, মোঘলটুলি রোড, ঢাকা।
  • চিঠির ভাষা : বাংলা
  • চিঠির তারিখ : ২.৭.৪৯
  • ডাকসিল : অস্পষ্ট
  • অভিগ্রহণকারী ডাকঘর : জিপিও ঢাকা
  • অভিগ্রহণের তারিখ : ৪.৭.৪৯
  • অভিগ্রহণের বিষয়টি যে অফিসার প্রমাণ করতে পারবেন : কারামত আলী ভুইয়া
  • ছবি তুলে রাখা হয়েছে : না
  • চিঠিটি ধরে রাখা হয়েছে না প্রেরিত হয়েছে : প্রেরিত হয়েছে
  • যদি প্রেরিত হয় তবে অনুলিপি রাখা হয়েছে কি : রাখা হয়েছে
  • অভিগ্রহণ ক্ষমতা প্রদানকারী সরকারি আদেশ নং ও তারিখ : নৈমিত্তিক অভিগ্রহণ

ডি.এস.ভি.কে প্রেরিত অনুলিপি/অনুবাদ

দয়া করে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন

এই চিঠিতে সমান্তরাল একটি দল গঠনে পাবনা নিবাসী ওহিদ নামের এক ব্যক্তি শেখ মুজিবুর রহমানকে সাহায্য করবেন বলে জানান।

চিঠিটি যিনি লিখেছেন তিনি যথাসম্ভব পাবনার শাহজাদপুর ইউনিয়ন লীগের সম্পাদক।

পাবনার ডি.আই.বি. সম্ভবত পত্রলেখক সম্পর্কে আরও বিস্তারিত লিখে থাকবে।

গোপন

নং ১৪০৯৬/৬০৬-৪৮ পিএফ তারিখ ১৪.৭

পাবনাস্থ ডিআইবিকে অনুলিপি প্রেরণ…

এসএস-৩ আইবি-কে ডিএস-৫

২.৭.৪৯ তারিখের একটি বাংলা চিঠির অনুলিপি। চিঠিটি ঢাকাস্থ জিপিওতে অভিগৃহীত হয়। পাবনা জেলার পাবনা ডাকঘর অধীন শাহজাদপুর ইমামবাড়ি নিবাসী ওহিদ (মামা) ঢাকাস্থ ১৫০ মোঘলটুলি রোড অধীন লীগ কর্মীশিবিরের শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রেরিত।

[বাংলা]

পাবনা জেলার শাহজাদপুরস্থ ইমামবাড়ি নিবাসী ওহিদ (মামা) ঢাকাস্থ ১৫০ মোঘলটুলি রোড অধীন লীগ কর্মীশিবিরের শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রেরিত একটি বাংলা চিঠির ইংরেজি অনুবাদ

[বাংলা]

গোপনীয়

জেলা ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ

পাবনা, ৯ সেপ্টেম্বর ৪৯

নং ৩৩০৫/আর ১৩৩৮/১৪-৪৭

বরাবর,

জনাব মু. ইউসুফ

বিশেষ সুপার ইন্টেনডেন্ট অব পুলিশ, আই.বি.

ঢাকা

রেফারেন্স আই.বি. নং ১৪০৯৬/৬০৬-৪৮ পি.এফ., তারিখ ১৩ জুলাই ১৯৪৯

ওহিদ হলো রওশন আলী মিয়া, পিতা পাবনা জেলার শাজাদপুর থানার শাজাদপুর নিবাসী অাসগর। তার বয়স প্রায় ২৮ বছর। সে ১০ম (মাদরাসা) শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। সে শাজাদপুর ইউনিয়ন মুসলিম লীগের সম্পাদক ছিল। এখন সে আওয়ামী লীগের সমর্থক।

স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- ৯.৯

সুপার ইন্টেনডেন্ট অব পুলিশ

ডি.আই.বি. পাবনা

১০৩

শেখ মুজিবুর রহমান বিষয়ক একটি গোপনীয় ওয়াচ রিপোর্ট, তারিখ ৫.৭.১৯৪৯। রিপোর্টে এ কথা বলা হয়েছিল যে, ডিউটিরত অবস্থায় তাঁকে আশেপাশে দেখা যায়নি। অপ্রত্যাশিত কিছু দেখা যায়নি।

ঢাকা, ৬ জুলাই ১৯৪৯

সিআর তারিখ ৫.৭.৪৯

রেক: সন্দেহভাজন শেখ মুজিবুর রহমানের জ়ন ৯ পাতলাখান গলিতে গোপন ওয়াচ ডিউটি

৫/৭/৪৯ তারিখে ৬.০০-১০.০০ ও ১৫.০০-১৭.০০ ওয়াচার কন্সটেবল মোসলেম আলীকে নিয়ে আমি উল্লিখিত সন্দেহভাজনের জন্য উক্ত স্থানের সন্নিকটে সিক্রেট ওয়াচ ডিউটিরত ছিলাম। আমরা যখন সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলাম তখন তাঁকে সেখানে পাওয়া যায়নি। সেখানে সন্দেহ করার মতো কিছু বা কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে দেখা যায়নি।

পেশকৃত/

ওয়াচার কন্সটেবল মুজাফফর আহমেদ

আই.বি. ঢাকা

৬.৭.৪৯

পার্শ্ব নোট: ডিএসভি, সন্দেহভাজন ব্যক্তিটি ঢাকা শহরে আছে, না নেই তা নিশ্চিত করতে তদন্ত করুন। স্বাক্ষর তারিখসমেত ৬.৭

: তদন্তে জানা গেছে যে, সন্দেহভাজন শেখ মুজিবুর রহমান আজ (৩.৭.৪৯) সন্ধ্যায় নিজের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করেছেন। স্বাক্ষর তারিখসমেত/- এ রাজ্জাক, ও/সি ৭.৭

১০৪

নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, ইপিএমএসএল ও ছাত্রলীগের মহিলা অংশের সব দাপ্তরিক কর্মীদের বিস্তারিত বর্ণনা ঢাকাস্থ ডিআইবি কর্তৃক এসএসপি, আইবিইবির নিকট জমা প্রদান করা হয় যেখানে শেখ মুজিবুর রহমানের নামও উল্লেখ করা হয়।

ঢাকা, ১০ জুলাই ১৯৪৯

গোপনীয়

ডিআইবি অফিস, ঢাকা, তারিখ ১০/১১.৭.৪৯

নং ৪২৬৬/৩১৩-৪৮/আর./১৯১৪

বরাবর

জনাব আহমাদ পিপিএস

বিশেষ সুপার ইন্টেনডেন্ট অব পুলিশ, আই.বি. ঢাকা

রেফ: তার নং ৫৫৮৭/৭৭১-৪৮ (সাধারণ) তারিখ ২৫.৩.৪৯ এবং পরবর্তী রিমাইন্ডার নং ৯৪৬৮/৭৭১-৪৮ (সাধারণ) তারিখ ১৩.৫.৪৯ (সিরিয়াল নং ৫)

নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, ইপিএমএসএল ও ছাত্রলীগের মহিলা অংশের সব দাপ্তরিক কর্মীদের বিস্তারিত বর্ণনা নিম্নে প্রদত্ত হলো:-

ই.পি.এম.এস.এল. (কেন্দ্রীয়)

  • ১৫০ মোগলটুলি নিবাসী, প্রযত্নে, কামুরুদ্দীন আহমেদ, শেখ মুজিবুর রহমান, ২য় বর্ষ আইনের ছাত্র, ঢাবি, সম্পাদক, পিতা: ফরিদপুরের টুঙ্গিপাড়া নিবাসী শেখ লুৎফর রহমান

১০৫

আইবিইবি-র এসএস-১, ঢাকাস্থ ডিএমকে একটি চিঠি লেখেন  যেখানে উল্লেখ করা হয় যে, দুইজন ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে মোসলেউদ্দীন আহমেদ নামের কোনো এক ব্যক্তি ৬.৬.১৯৪৯ তারিখে একটি যৌথ পিটিশন জমা দেন। বিশেষ কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে একটি সাক্ষাতের অনুমতির জন্য তিনি আবেদন করেন। আইবির ডিআইজি নিরাপত্তা কারাবন্দিদের সাথে দেখা করার অনুমতি দেন না, এ কথাও বলা হয়।

ঢাকা, ১৪ জুলাই ১৯৪৯

গোপনীয়

নং ১৪০৯৭/৬০৬-৪৮ পি.এফ. তারিখ ১৪.৭

ডি.এম. ঢাকা,

ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ মহকুমার অধীন টুঙ্গিপাড়া নিবাসী শেখ লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমান গত জুন মাসে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তা কারাবন্দি হিসেবে ডিটেনশনে ছিলেন।

মোসলেউদ্দীন আহমেদ নামক এক ব্যক্তি অন্য দুজনকে নিয়ে ৬.৬.৪৯ তারিখে একটি যৌথ পিটিশন জমা দেন। পিটিশনে উক্ত নিরাপত্তা কারাবন্দির সাথে সাক্ষাতের অনুমতি প্রার্থনা করেন তারা। একজন পুলিশ অফিসারের উপস্হিতিতে উক্ত সাক্ষাৎটি মঞ্জুর হয় এবং ঢাকাস্থ ডিআইবির এডিশনাল এসপিকে উক্ত সাক্ষাৎটি তদারকি করতে একজন অফিসার নিয়োগ করার আদেশ দিয়ে পিটিশনটি তাঁর নিকট পাঠানো হয়।

১৫ মার্চ ১৯৪৯ তারিখের জিও নং ৭১০-এইচএস-এর প্যারা ৪ এর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এমন অনুমতি কেবল আইবির ডিআইজি কর্তৃক প্রদত্ত হয়। ভবিষ্যতে নিরাপত্তা কারাবন্দিদের সাথে সাক্ষাতের পিটিশনগুলোতে আদেশ প্রদানে অনুমতিদানের ক্ষমতা আমাকে দেওয়া উচিত।

স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- ডিআইজি.আইবির জন্য এসএস-১

রেফারেন্স নং ৪৪৯৬/১০০-৪৯, তারিখ ১৮.৬.৪৯ সহ অবগতির জন্য ঢাকার ডিআইবিকে তথ্য প্রেরণ

স্বাক্ষর, তারিখসমেত/- এসএস-১, আইবি

১০৭

১৬/৭/১৯৪৯ তারিখকে সপ্তাহের শেষ দিন ধরে এসপি ফরিদপুরের ডব্লিউসিআর থেকে নেওয়া রিপোর্ট যেখানে উল্লেখ করা হয় যে, ‘ঢাকা জেলগেট হইতে গোপালগঞ্জের অনুসারীদের উদ্দেশ্যে শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের বাণী’ শিরোনামের একটি প্রচারপত্র ১/৭/১৯৪৯ তারিখে গোপালগঞ্জে বিলি করতে দেখা গেছে। প্রচারপত্রে লেখা ছিল যে, তিনি ক্ষুধার্ত ও নিপীড়িত মানুষদের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য লড়াই করছেন। নুরুল আমিনের মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে তারা সংগ্রাম চালিয়ে যাবেই ও তাঁকে বার বার জেলে প্রেরণের মাধ্যমেই স্বাধীনতার পথে তারা এগিয়ে যাবে—এমন দৃঢ় বক্তব্যও প্রচারপত্রে লেখা ছিল।

ফরিদপুর, ১৬ই জুলাই ১৯৪৯

ফরিদপুরের এসপি কর্তৃক সপ্তাহান্তের ডব্লিউসিআর থেকে নেওয়া। তারিখ: ১৬ই জুলাই ১৯৪৮, বার: শনিবার

২য় অংশ

  1. বিবিধ

(গ) ‘ঢাকা জেলগেট হইতে গোপালগঞ্জের অনুসারীদের উদ্দেশ্যে শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের বাণী’ শিরোনামের একটি মুদ্রিত বাংলা প্রচারপত্র

(ঢাকা জেলগেট হইতে গোপালগঞ্জের অনুসারীদের উদ্দেশ্যে শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের বাণী) শিরোনামের প্রচারপত্রটি গোপালগঞ্জ থানা নিবাসী মেরি-গোপীনাথপুরের জয়নুদ্দীন কাজির পুত্র এ. এম. জহুরুল হকের স্বাক্ষরে বের হয়। প্রচারপত্রটি ১/৭/৪৯ তারিখে বিলি করা হয়। প্রচারপত্রে অন্যান্য বিষয়ের সাথে এ কথা উল্লেখ করা হয় যে, ইসলামের নীতি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে গত ২ বছর ধরে মুজিবুর রহমান ক্ষুধার্ত ও নিপীড়িত মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য লড়াই করে আসছেন। কিন্তু এমন একটি আন্দোলনকে থামিয়ে দিতে সরকার তাঁকে জেলে প্রেরণ করেছে। প্রচারপত্রে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে লিপ্ত না হতে কিন্তু এমএলএ মৌলভী শামসুদ্দীন আহমেদ ও তাঁর জামাতা মৌলভী ওয়াহিদুজ্জামানের মতো সমাজের দুষ্টকীট যারা, যারা শেখ মুজিবুর রহমানের জেলে থাকার সুযোগে চাল, চিনি ও অন্যান্য নিয়ন্ত্রিত পণ্যের অপবণ্টনের মাধ্যমে দরিদ্র লোকেদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছিল তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। দরিদ্র লোকেদের অবস্থার উন্নয়নে মাননীয় নুরুল আমিন কোনোরূপ নজর না দিলে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে তাদের দৃঢ় সংকল্পের কথা প্রচারপত্রের শেষে বলা হয় এবং এও বলা হয় যে, জেল আদালতই তাদেরকে জনগণের মুক্তির পথ দেখাবে।

পার্শ্বটীকা: দেখা হয়েছে। ডি.এস.ভি. দয়া করে যদি দেখতেন। স্বাক্ষর ও তারিখ/- জি.সি.কে. ২১/৭

শেখ মুজিবুর রহমানের পিএফে রাখা হয়েছে। স্বাক্ষর ও তারিখ/- ডি.এস.ভির পক্ষে ২/৮

১০৯

ঢাকাস্থ আইবিইবির একজন ইন্সপেক্টর ২০/৭/১৯৪৯ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির সময় ফাঁস হয়ে যাওয়া বিষয়ক একটি তদন্তের রিপোর্ট করেন। শেখ মুজিবুর রহমান ২৬/৬/১৯৪৯ তারিখে মুক্তি পান। তাঁর তিনজন সঙ্গীর মাধ্যমে মুক্তির সময় ফাঁস হয়ে যায়। এই তিনজন তাঁর পূর্বে ১৭/৬/১৯৪৯ তারিখে মুক্তি পান। শেখ মুজিবুর রহমান ও বাহাউদ্দীন আহমদ উভয়ের মুক্তির আদেশ উভয়ের মুক্তির ৯ দিন পূর্বে অর্থাৎ ১৭/৬/১৯৪৯ তারিখেই আসে। এতে মনে হয়ছিল যে, মুক্তিপ্রাপ্ত তিনজনই এই সংবাদ ফাঁস করেছিল।

ঢাকা, ২০ জুলাই ১৯৪৯

পুন— শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি ও এই তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়া।

এসএস-৩/ডিএসভি

তদন্তে এ কথা নির্ধারিত হয় যে, শেখ মুজিবুর রহমান ও বাহাউদ্দীন আহমেদ উভয়ই ২৬/৬/৪৯ তারিখে সকালে নির্ধারিত সময়ে মুক্তি পান। পূর্বোক্তজন জিও নং ১৭৪২ এইচএস,তারিখ ১৭/৬/৪৯ অনুসারে মুক্তি পেয়েছিলেন যা পরে বাতিলকৃত হয়। ২৭/৬/৪৯ তারিখ থেকে কার্যকর ২৫/৫/৪৯ তারিখের ডিটেনশন নং ১৩৩৬। জেল কোড রুল ৫২৪ অনুযায়ী কারাবন্দির মুক্তির তারিখকেও জেলে বন্দি থাকার দিন হিসেবে গৃহীত হয়। জেল কোড রুল ৫৭৩ অনুযায়ী বন্দিকে সকালের নাশতার পর এবং যথাসম্ভব সূর্যাস্তের পর মুক্তি দিতে হতো।

মুক্তির সময় ফাঁস হওয়ার ব্যাপারে এটা নির্ধারিত হয় যে, শামসুল হুদা, এনায়েত করিম ও অলি আহাদ অর্থাৎ মুজিবুরের তিনজন সঙ্গীর মুক্তির আদেশ একই প্রেরিত ম্যামো নং ১৭৩৬ এইচএস, তারিখ ১৭/৬/৪৯-এ গৃহীত হয় এবং তাঁরা ধরে নেন যে, শেখ মুজিবুর রহমান ও বাহাউদ্দীন আহমেদও মুক্তি পাবেন। কিন্তু প্রথমোক্ত তিনজন ১৭/৬/৪৯ তারিখে, যখন আদেশটি গৃহীত হয় তখন মুক্তি পান। কিন্তু বাকি দুইজন অর্থাৎ শেখ মুজিবুর রহমান ও বাহাউদ্দীন ২৬/৬/৪৯ তারিখে মুক্তি পান। অর্থাৎ তাঁরা জেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মুক্তির আদেশপ্রাপ্তির ৯ দিন পরে মুক্তি পান। এই কারণে জেল কর্তৃপক্ষ, সচিবালয়, ডিআইবি অফিস, ঢাকা ও এই অফিস প্রায় ৯ দিন পূর্বেই তাঁদের মুক্তি বিষয়ক এই ঘোষণা পেয়েছিল।এমনও হতে পারে যে, ১৭/৬/৪৯ তারিখে যে তিনজন মুক্তি পেয়েছিলেন তাঁরাই এই খবর ফাঁস করেছিলেন ও এই ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন।

স্বাক্ষর ও তারিখ/-

ইন্সপেক্টর আইবি ২০/৭/৪৯

পুন— মুজিবুর রহমানের মুক্তি এবং এই তথ্য ফাঁস হওয়া

এসএস ৩/ডিএস ৫

নির্দেশমতো আমি ঢাকাস্থ ডিআইবি অফিসে ছিলাম এবং তদন্তসাপেক্ষে এটা নির্ধারণ করি যে, ১৭/৬/৪৯ তারিখের জিও নং ১৭৪২-এর রিসিপ্ট কপি আইবির ২৭/৬/৪৯ তারিখ থেকে কার্যকর ২৫/৫/৪৯ তারিখের ডিটেনশন অর্ডার নং ১৩৩৬-কে বাতিল করে। ঢাকাস্থ ডিআইবির পুলিশ ইন্সপেক্টর মৌলভী আনোয়ার উদ্দীন আহমদ ২৭/৬/৪৯ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি পেতে পারেন এ খবর জানতে পেরে শেখ মুজিবুর রহমান (নিরাপত্তা বন্দি)-এর সাথে সাক্ষাৎ করতে ২৬/৬/৪৯ তারিখে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যান। কিন্তু তিনি সেখানে গিয়ে দেখতে পান যে, মুজিবুর রহমান আগেই মুক্তি পেয়ে গেছেন এবং মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও অন্যরা তাঁকে জেল গেইটে সংবর্ধনা দিয়েছেন। মৌলভী আনোয়ার উদ্দীন আহমেদ বন্দির মুক্তির সময় ফাঁস হয়ে যাওয়া নিয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেন নি। ঢাকাস্থ ডিআইবিও বন্দির মুক্তির বিষয়ে জেল থেকে কোনোরূপ ঘোষণা পায়নি।

স্বাক্ষর ও তারিখ/- ২২/৭

১১৫

৬/৮/১৯৪৯ তারিখকে সপ্তাহের শেষ দিন ধরে ফরিদপুরস্থ ডিআইবির এসপির ডব্লিউসিআর থেকে নেওয়া যেখানে এ কথা উল্লেখ করা হয় যে, ১৮/৭/১৯৪৯ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমান ও আবদুস সালাম খান বন্দি হন।

ফরিদপুর, ৬ই আগস্ট ১৯৪৯

শনিবারকে সপ্তাহের শেষ দিন ধরে ৬ই আগস্ট ১৯৪৯ সালের ফরিদপুরস্থ ডিআইবির পুলিশ সুপারের ডব্লিউসিআর থেকে নেওয়া (২য় অংশ)।

***

  • মুসলিম বিষয়াবলি

(খ) সূত্র: শিরোনাম ১০(খ) ও তার সঙ্গে যুক্ত পরিশিষ্টের অধীন ২৩/৭/৪৯ তারিখের সপ্তাহান্তের ডব্লিউসিআর। শেখ মুজিবুর রহমান ও আবদুস সালাম খান ওরফে বাদশাহ মিয়াঁ ১৮/৭/৪৯ তারিখে বন্দি হন এবং তাতে উল্লিখিত ১৯/৭/৪৯ তারিখে নয়।

পার্শ্বটীকা: ১. সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটি সম্পর্কে পূর্ণ বৃত্তান্ত লিখুন।

  1. শেখ মুজিবুর রহমানের পিএফ থেকে নেওয়া হয়েছে। স্বাক্ষর ও তারিখ/- ওয়াই. এ. চৌধুরী, ১৩/৮

১১৬

ঢাকাস্থ আইবিইবির ডিএস ৩ ১০/৮/১৯৪৯ তারিখে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৪৩ ধারা অনুযায়ী শেখ মুজিবুর রহমান ও আবদুস সালাম খানের গ্রেফতার প্রসঙ্গে ফরিদপুরের ডিআইবির এসপির নিকট একটি তদন্ত প্রেরণ করেন।

ঢাকা, ১০ই আগস্ট ১৯৪৯

নং ১৬০৪৬/৬০৬-৪৮ পি.এফ. তারিখ ১৩/৮

গোপনীয়

এসপি, ফরিদপুর ডিআইবি

অনুগ্রহপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ‘(১০) মুসলিম বিষয়াবলি (খ)’-এর শিরোনামের অধীন ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৪৩ ধারা অনুযায়ী ১৯/৭/৪৯ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমান ও আবদুস সালাম খানের গ্রেফতার প্রসঙ্গে ২৩/৭/৪৯ তারিখের সপ্তাহান্তের রিপোর্ট বা ডব্লিউসিআরের সাহায্য নিন ও সম্পূর্ণ রিপোর্টটি সরবরাহ করুন।

স্বাক্ষর ও তারিখ/- ১০/৮

আইবির এসএস ৩-এর হয়ে ডিএস ৩

১১৭

ঢাকার ১৫০ মোঘলটুলি রোডস্থ লীগ কর্মী শিবিরের জনাব মানিক কর্তৃক করাচিস্থ ১৩এ কুচারি রোডের লীগ কর্মী শিবিরের হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে প্রেরিত ঢাকার আরএমএস কর্তৃক ১০/৮/১৯৪৯ তারিখে আটককৃত তারিখবিহীন একটি ইংরেজি চিঠির প্রকৃত প্রতিলিপি।

ঢাকা, ১০ই আগস্ট ১৯৪৯

ঢাকার ১৫০ মোঘলটুলি রোডস্থ লীগ কর্মী শিবিরের (১) জনাব মানিক কর্তৃক করাচিস্থ ১৩এ কুচারি রোডের লীগ কর্মী শিবিরের হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে প্রেরিত ঢাকার আরএমএস কর্তৃক আটককৃত ১০/৮/১৯৪৯ তারিখে তারিখবিহীন একটি ইংরেজি চিঠির প্রকৃত অনুলিপি।

***

মওলানা, এস হক, মুজিবুর এবং অন্যান্য কর্মীরা এ কথা স্পষ্টভাবে বলেন যে, একটি দলের জন্য জনসাধারণের এই উৎসাহ ধরে রাখা কিন্তু কষ্টসাধ্য এবং উক্ত দলটি ভেঙে পড়তে বাধ্য। যদিও গড়ে ৫০-৬০ হাজার লোক আওয়ামী লীগ আয়োজিত সব সভায় অংশ নেয়। দিনের পর দিন আজাদ বৈরী প্রচারণায় মেতে আছেই, বিশেষ করে ইত্তেহাদ নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর থেকে।

***

১১৮

শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক করাচির হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে প্রেরিত ঢাকার আরএমএস কর্তৃক ১০/৮/১৯৪৯ তারিখে আটককৃত তারিখবিহীন একটি ইংরেজি চিঠির প্রকৃত প্রতিলিপি।

ঢাকার ৯ পাতলা খান লেন নিবাসী মুজিবুর কর্তৃক করাচিস্থ ১৩এ কুচারি রোড নিবাসী হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে প্রেরিত ঢাকার আরএমএস কর্তৃক ১০/৮/১৯৪৯ তারিখে আটককৃত তারিখবিহীন একটি ইংরেজি চিঠির প্রকৃত অনুলিপি।

জনাব,

আমার সালাম নিবেন। মানিক ভাইয়ের৭৮ পত্রমারফত সব জানতে পারবেন। আপনাকে দেখতে আমি খুব উদ্বিগ্ন হয়ে আছি এবং আওয়ামী লীগ ও সংসদীয় কিছু বিষয় নিয়ে আপনার সাথে জরুরি আলাপ আছে। আপনি এখানে কবে আসবেন? দয়া করে আমাকে লিখুন ও সব নির্দেশনা প্রদান করুন। আপনি কেমন আছেন?

আপনার আদরের

স্বাক্ষর ও তারিখ/- মুজিবুর

দ্র: আমাকে এক মাসের মধ্যে ইপিএমএসএল-এর নির্দেশনা শেষ করতে হবে। কিন্তু আমাদের কোষাগার শূন্য। যাই হোক, আল্লাহ্ আমাদের সাথেই আছেন। খোদা হাফেজ।

স্বাক্ষর ও তারিখ/- মুজিবুর

  • মানিক ভাই: তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া (১৯১১-১লা জুন ১৯৬৯) ছিলেন একজন বিখ্যাত বাঙালি সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ। তিনি ইত্তেফাকের সম্পাদক ছিলেন।১৯৬০-এর দশকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থানের সময় মানিক মিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। সামরিক শাসন, স্বৈরতন্ত্র ও জনগণের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে মানিক মিয়ার বিশেষ ভূমিকা ছিল। হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বেশ কাছের ছিলেন তিনি।

১১৯

১১/৮/১৯৪৯ তারিখে ঢাকাস্থ আইবির একজন এসআই রিপোর্ট করেন যে, তোফাজ্জল হোসেন ওরফে মানিক মিয়া হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে অবহিত করেন যে, মওলানা ভাসানী, শামসুল হক ও শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সাথে ফোনে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সরাসরি রেডিয়ো লাইনে সংযুক্ত হতে সবাই সময় না পাওয়ায় এই যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়েছিল।

ঢাকা, ১১ই আগস্ট ১৯৪৯

মওলানা, শামসুল হক, মুজিবুর আপনার সাথে ফোনে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করেছিলেন এবং সরাসরি রেডিয়ো লাইনে সংযুক্ত হতে সবাই সময় না পাওয়ায় এই যোগাযোগ যত দূর সম্ভব বিঘ্নিত হয়েছিল। ঢাকা শহর ব্যতীত পূর্ববঙ্গের অবশিষ্ট অংশে প্রচারপত্র, পুস্তিকা ও পোস্টারের মাধ্যমে এই প্রচারনা ছড়িয়ে পড়ে। প্রচারসংস্থার অভাবে পূর্ববঙ্গ স্থির হয়ে যায়।

***

বিনীত

আপনার একান্ত

তারিখ ও স্বাক্ষর/- মানিক

জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পেশকৃত

স্বাক্ষর ও তারিখ/- এসআই, আইবি, ঢাকা

১১/৮/৪৯

১২১

১৪/৮/১৯৪৯ তারিখের একটি মুদ্রিত বাংলা পোস্টকার্ডের ইংরেজি অনুবাদ যা চট্টগ্রামের আন্দারকিল্লার সংবর্ধনা কমিটির সম্পাদক এস. মোজাফফর আহমেদ (প্রাক্তন সালার-এ-জিলা) কর্তৃক চট্টগ্রামের আনোয়ারা নিবাসী মীর বজলুল করিম ও অন্য ৭৭জনকে প্রেরিত হয়।

ঢাকা, ১৪ই আগস্ট ১৯৪৯

১৪/৮/৪৯ তারিখের একটি মুদ্রিত বাংলা পোস্টকার্ডের ইংরেজি অনুবাদ যা চট্টগ্রাম জিপিওতে ১৭/৮/৪৯ তারিখে আটক করা হয়।

***

প্রেরক: এস. মোজাফফর আহমেদ (প্রাক্তন সালার-এ-জিলা), সম্পাদক, সংবর্ধনা কমিটি, আন্দারকিল্লা, চট্টগ্রাম।

প্রাপক: মীর বজলুল করিম, বি.এ. ডাকঘর: আনোয়ারা, চট্টগ্রাম, তদন্তে উল্লিখিত অন্য ৭৭জন।

জনাব,

আসসালামু আলাইকুম। ২৫শে আগস্ট ১৯৪৯ তারিখ, বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় মুসলিম লীগের কর্মীদের একটি সভা স্থানীয় জি.এম. সেন হলে আহ্বান করা হয়। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন পীর জনাব মওলানা আবদুল হামিদ খান সাহেব ভাসানী।

বর্তমানের সংকটপূর্ণ অবস্থায় পাকিস্তানকে একটি সত্যিকারের ইসলামি রাষ্ট্র হিসাবে আমাদের গড়ে তুলতে হবে যাতে সমগ্র বিশ্বের সামনে এই দেশ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। আর তাই করতে পাকিস্তান দলের কর্মী ও দেশপ্রেমিকদের মতামতকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে আসছে।

সুতরাং আপনার কর্মীদের নিয়ে সভায় আপনার অংশগ্রহণ এই গুরুত্বপূর্ণ কাজের সাথে জড়িত আপনার দায়িত্ব সম্পূর্ণ করবে এমনটাই আমি আশা করছি।

প্রতিনিধি ফি: রুপি এক (Re. 1/-)

আপনার বিশ্বস্ত

স্বাক্ষর ও তারিখ/- এস. মোজাফফর আহমেদ (মুদ্রিত) (প্রাক্তন সালার-এ-জিলা)

সম্পাদক, সংবর্ধনা কমিটি

আন্দারকিল্লা, চট্টগ্রাম

১২৩

ফরিদপুরের ডিআইবির এসপি ঢাকাস্থ আইবিইবির এসএসপিকে শেখ মুজিবুর রহমান ও আবদুস সালাম খানের গ্রেফতারির তথ্য বিষয়ক একটি দাপ্তরিক ম্যামো প্রেরণ করেন।

ফরিদপুর, ১৮ই আগস্ট ১৯৪৯

জেলা গোয়েন্দা সংস্থা

ফরিদপুর, ১৮ই আগস্ট

নং ৩৩০৯/২-৪৯ সচল

বরাবর,

খান সাহিব এম. ইয়ুসুফ

স্পেশাল পুলিশ সুপার

আই.বি., পূর্ববঙ্গ, ঢাকা

সূত্র: তোমার নং ১৬০৪৬/৬০৬-৪৮ পিএফ (জে), তারিখ ১১/৮/৪৯

এই প্রসঙ্গে আমি এই দপ্তরের সূত্র নং ৩১২৮ (৪)/১৪-৪৯, তারিখ ৫/৮/৪৯-এর প্রসঙ্গ টানব। আবদুস সালাম খান ও শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রেফতার বিষয়ক ১৯/৭/৪৯ তারিখের গোপালগঞ্জের এস.ডি.পি.ও.-এর রিপোর্টের একটি অংশ সেদিন প্রেরিত হয়েছিল।

স্বাক্ষর ও তারিখ/- ১৮/৮/৪৯

(এম.এস. হক)

পুলিশ সুপার

ডিআইবি, ফরিদপুর

১২৪

ঢাকাস্থ পূর্ববঙ্গ পুলিশের ২০/৮/১৯৪৯ তারিখের সপ্তাহান্তের গোয়েন্দা রিপোর্টের সারাংশ থেকে নেওয়া যেখানে এ কথা উল্লেখ করা হয় যে, গোপালগঞ্জের এস.এন. একাডেমির ১৫০জন ছাত্র ১০ই আগস্ট তারিখে শহরের প্রধান সড়কের ওপর দিয়ে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৪৪ ধারার প্রতিবাদে এবং শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পৃথক একটি ছাত্রসংগঠন গড়ে তোলার তথ্য জানিয়ে প্যারেড করে সামনে এগিয়ে যায়।

ঢাকা, ২০ই আগস্ট ১৯৪৯

২০ই আগস্ট ১৯৪৯ তারিখকে সপ্তাহের শেষ দিন ধরে ঢাকাস্থ পূর্ববঙ্গ সরকারের গোয়ান্দা পুলিশের সপ্তাহান্তের রিপোর্টের সারসংক্ষেপ থেকে নেওয়া।

  • ফরিদপুর—গোপালগঞ্জ শহরের এস.এন একাডেমির প্রায় ১৫০জন ছাত্র ১০ই আগস্ট তারিখে ফৌজদারি দণ্ডবিধির নিষেধাজ্ঞামূলক নির্দেশ ১৪৪ ধারার প্রতিবাদে এবং বোর্ডিং হাউজ খুলে দেওয়ার দাবিতে শহরের প্রধান সড়কের ওপর দিয়ে  প্যারেড করে সামনে এগিয়ে যায়। ১৪৪ ধারা ঐ শহরে তখন বলবৎ ছিল। মিছিলের আয়োজন করতে নিম্নোক্ত ছাত্ররা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল:
  1. আবু আবদুল্লাহ, পিতা: মৌলভী জয়নুল আবেদিন, আইনজীবী ম্যাজিস্ট্রেট, গোপালগঞ্জ; দশম শ্রেণির ছাত্র, এস.এন. একাডেমি, গোপালগঞ্জ
  2. গোপালগঞ্জ থানার বনগ্রাম নিবাসী আজহারউদ্দীনের পুত্র আবদুল মান্নান শেখ
  3. গোপালগঞ্জ দেওয়ানি আদালতের শেরেস্তাদার এ. মজিদ লস্করের পুত্র ফজলুর রফিক ওরফে খোকা
  4. গোপালগঞ্জ শহরস্থ এস.এন একাডেমির দশম শ্রেণির ছাত্র মুকুল মিয়াঁ (স্থিরকৃত)

গোপালগঞ্জ শহরের ছাত্রদের নিয়ে রিপোর্ট করা হয় যে, তারা অফিসিয়াল মুসলিম লীগের ফোল্ডে থেকেই পৃথক একটি ছাত্র সংগঠন গঠনের আয়োজন করছে যা পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের সম্বন্ধ থেকে পৃথক এবং ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ থানার টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমান (প্যারা ১২৯০)-এর দলের অন্তর্ভুক্ত। এই উদ্দেশ্যে তারা এমন সব প্রচারপত্র বিলি করছে যা জনাব হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর (প্যারা ১০৪৬) সংগঠনের সাথে সম্পর্কযুক্ত বিদ্যমান মুসলিম ছাত্রলীগকে বর্ণনা করে। এর মানেই হলো, তারা পাকিস্তানের জনগণকে বিভ্রান্ত করছে এবং একই সাথে তাঁর (জনাব সোহরাওয়ার্দীর) স্বার্থপর উদ্দেশ্যকে চরিতার্থ করছে।

(শিরোনাম নং ১২৬-এ একই রিপোর্টকে নির্দেশ করা হয়েছে)

১২৬

ফরিদপুরের এসপির ডব্লিউসিআর থেকে নেওয়া ২০/৮/১৯৪৯ তারিখের সপ্তাহান্তের রিপোর্ট যেখানে গোপালগঞ্জ শহরের ছাত্রদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।

ফরিদপুর, ২০ই আগস্ট ১৯৪৯

২০শে আগস্ট ১৯৪৯, বৃহস্পতিবারকে সপ্তাহের শেষ দিন ধরে ফরিদপুরের পুলিশ সুপারের সাপ্তাহিক গোপন প্রতিবেদন থেকে নেওয়া।

***

  • যুবক ও ছাত্র আন্দোলন

(খ) গোপালগঞ্জ শহরের ছাত্ররা অফিসিয়াল মুসলিম লীগের ফোল্ডে থেকেই তথাকথিত পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের সম্বন্ধ থেকে পৃথক এবং পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের সাথে সম্পর্কযুক্ত (ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ থানার টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমানের দলের অন্তর্ভুক্ত) পৃথক একটি ছাত্র সংগঠন গঠনের চেষ্টা করছে।এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তারা এমন সব প্রচারপত্র বিলি করছে যা জনাব হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর (প্যারা ১০৪৬) সংগঠনের সাথে সম্পর্কযুক্ত মুসলিম ছাত্রলীগকে বর্ণনা করে।এর মানেই হলো, তারা পাকিস্তানের জনগণকে বিভ্রান্ত করছে এবং একই সাথে তাঁর (জনাব সোহরাওয়ার্দীর) স্বার্থপর উদ্দেশ্যকে চরিতার্থ করতে মরহুম কায়েদ-ই-আজমকে গালিগালাজ করছে।

(একই রিপোর্ট শিরোনাম নং ১২৪-ও নির্দেশ করছে)

কিছু ছাত্র যখন ১১.৮.৪৯ তারিখে প্রচারপত্র বিলি করছিল তখন নিম্নলিখিত বিপরীত ব্লকের এক জোট ছাত্র প্রচারপত্রগুলো ছিনিয়ে নেয় এবং বিতরণকারীদের ওপর চড়াও হয়। যেসব ছাত্র গ্রেফতার হয়েছিল সেসব দোষী ছাত্রের বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জ থানায় আই.পি.সি ১৪৭/৩৭৯ ধারায় মামলা রুজু করা হয়। পরে তারা বেইলে মুক্তি পায়:-

  • গোপালগঞ্জের আইনজীবী ম্যাজিস্ট্রেট মৌলভী জয়নুল আবেদিনের পুত্র আবু আবদুল্লাহ
  • গোপালগঞ্জ থানার বারুনি নিবাসী আবদুল মজিদ বিশ্বাসের পুত্র এ.কে.এম. মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস (আই.এ. ছাত্র)
  • গোপালগঞ্জ থানার বনগ্রামের আজহারউদ্দীন শেখের পুত্র আবদুল মান্নান ওরফে মান্নান ওরফে মান্নু
  • গোপালগঞ্জ থানার বারুনি নিবাসী জহুরুল হকের পুত্র সায়্যিদুল হক বিশ্বাস ওরফে দুদু মিয়া
  • গোলাম আকেল (ছবি সংযুক্ত) নামের গোপালগঞ্জ এস.এন. একাডেমির ১০ম শ্রেণির একজন ছাত্র

মামলাটি তদন্তাধীন আছে।

  1. নাম (সবৃত্তান্তে): ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ থানার টুঙ্গিপাড়া নিবাসী শেখ লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমান
  2. যে দলের সাথে যুক্ত: আওয়ামী মুসলিম লীগ
  3. কোনো নিরাপত্তা বন্দি বা সন্দেহভাজনের সাথে রক্তের সম্পর্ক: X
  4. পিআরবির পরিশিষ্ট ১০ মোতাবেক ব্যক্তিগত বিবরণ: সংযুক্ত

১২৯

ঢাকাস্থ পূর্ববঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার ২৭/৮/১৯৪৯ তারিখের সপ্তাহান্তের রিপোর্ট থেকে নেওয়া যেখানে রিপোর্ট করা হয় যে, ২৬/৮/১৯৪৯ তারিখে চট্টগ্রামের লালদীঘি পার্কে এএমএল-এর একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা ভাসানী, শামসুল হক, জহুর আহমদ চৌধুরী ও বজলুস সাত্তার সভায় বক্তৃতা করেন। খাদ্য ও বস্ত্র সমস্যা নিয়ে এমএল-এর মন্ত্রিসভার কড়া সমালোচনা করে বক্তারা উপস্থিত শ্রোতাদের আওয়ামী লীগে যোগ দিতে আহ্বান করেন এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেদের দেশ ত্যাগ না করতে অনুরোধ করেন। জে.এম. সেন হলে এমএসএল কর্তৃক আয়োজিত একটি সভা এবং রেলওয়ের কর্মকর্তাদের দ্বারা আয়োজিত আরেকটি সভা চট্টগ্রামস্থ রেলওয়ে ইন্সটিটিউটে ২৭শে আগস্ট ১৯৪৯ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকা, ২৭শে আগস্ট ১৯৪৯

২৭শে আগস্ট ১৯৪৯, শনিবারকে সপ্তাহের শেষ দিন ধরে ঢাকাস্থ পূর্ববঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার সারসংক্ষেপ থেকে নেওয়া।

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর (প্যারা ১৩২৬) সভাপতিত্বে ২৬শে আগস্ট লালদীঘির পার্কে একটি জনসভা (১০,০০০) অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম নিবাসী মৌলভী বজলুস সাত্তার (প্যারা ৮৬০) ও জহুর আহমেদ চৌধুরী (প্যারা ১২৬৬), পূর্ববঙ্গ আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান (প্যারা ১৩০২), এমএলএ মৌলভী শামসুল হক (প্যারা ১৩০২) এবং সভাপতি প্রত্যেকেই নিজ নিজ বক্তৃতায় খাদ্য ও বস্ত্র সমস্যা এবং জনসাধারণের শোচনীয় অবস্থার জন্য বর্তমান মন্ত্রিসভার তীব্র সমালোচনা করেন। আওয়ামী লীগে যোগ দিতে তাঁরা শ্রোতাদের আহ্বান জানান। সভাপতি তাঁর ভাষণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেদের পাকিস্তান ত্যাগ না করে দৃঢ় পায়ের ওপর পাকিস্তানকে খাড়া করতে মুসলিমদের হাতে হাত মেলাতে অনুরোধ করেন। সভায় অন্যান্য প্রস্তাবর সাথে নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলো গৃহীত হয়:

  1. পূর্ববঙ্গের বর্তমান মন্ত্রিসভা ও মাওলানা আকরাম খান (প্যারা ১২৬৬) কর্তৃক সংগঠিত মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে অনাস্থা আন্দোলনের প্রস্তাব বৈঠকে উত্থাপন করতে হবে।
  2. প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার প্রাপ্ত নাগরিকদের ভিত্তিতে নতুন ভোটার তালিকা তৈরি করে অতি দ্রুত সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।
  3. প্রাদেশিক বা কেন্দ্রীয় উভয় মন্ত্রিসভার মন্ত্রীদের মাসিক বেতন ১,১০০/- রুপির ওপর এবং নিম্নপদস্থ কর্মকর্তাদের বেতন ১২০/- রুপির নিচে হতে পারবে না।
  4. কোনো রূপ ক্ষতিপূরণ ছাড়াই জমিদারি প্রথার বিলোপ সাধন করতে হবে।
  5. সরকারের বিভিন্ন বিভাগ থেকে ছাটাইকৃত কর্মচারীদের সাথে সাথে পুনরায় চাকরিতে নিয়োগ দান করতে হবে।
  6. পূর্ববঙ্গ মন্ত্রীদের কার্যাবলি তদন্ত করার জন্য একবারেই বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করতে হবে।

জে.এম. সেন হলে৮৩ মুসলিম ছাত্রলীগের একটি সভা (৫০০)  ২৭শে আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভার সভাপতিত্ব করেন। তিনি ২৬শে আগস্ট তারিখে  পাশ হওয়া প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করেন। ছাত্রদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করতে অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা ও বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ চালু করতে আন্দোলনের লক্ষ্যে তিনি ছাত্রদের একতাবদ্ধ হতে পরামর্শ দেন।

একই দিন সন্ধ্যায় মওলানা আবদুল হামিদ খান রেলওয়ে ইন্সটিউটে ১০০০জন রেলওয়ে কর্মচারীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। ইপিআরইএল-এর কার্যনির্বাহী সভার সভাপতি চেরাগ আলী খান (প্যারা ১৩৩৮), একই প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক মাহবুবুল হক (প্যারা ১৩৩৮), এমএলএ মৌলভী শামসুল হক, পূর্ববঙ্গ আওয়ামী লীগের সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানও সভায় ভাষণ দেন। বক্তারা রেলওয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরাজমান  দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির নিন্দা জানান, ই.পি.আর.ই.এল-এ যোগ দিতে কর্মচারীদের আহ্বান জানান। এই সংস্থার মাধ্যমে অবিলম্বে কর্মচারীদের যথাযথ বাসস্থান প্রদান, মুদি দোকান পুনরায় চালুকরণ, ছাটাইকৃত লোকদের পুনঃনিয়োগ এবং বেতন কমিশন পুরস্কার প্রবর্তন প্রভৃতি দাবিদাওয়া পূরণে এই দলের মাধ্যমে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে শরণাপন্ন হতেও আহ্বান জানান। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব না হলে রেল কর্তৃপক্ষকে নোটিশ প্রদান করে ধর্মঘট ডাকতে মওলানা আবদুল হামিদ তাদের পরামর্শ দেন।

  • জে.এম. সেন হল: চট্টগ্রামের দিওয়ান বাজার সংলগ্ন স্থানে জে.এম. সেন হলের অবস্থান। যাত্রামোহন সেনগুপ্ত নামক ব্রিটিশ আমলের একজন আইনজীবী ও রাজনীতিবিদের নামে এই ভবনের নামকরণ করা হয়। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের গোড়াপত্তন করেন তিনি। উপমহাদেশের ব্রিটিশ শাসনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সময়ে এই ভবনে ও তার প্রাঙ্গণে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক, সামাজিক, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক সভাগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের প্রস্থানের অব্যবহিত পরে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী যখন ভাষার প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল তখন জে.এম. সেন হল চট্টগ্রামের ভাষা আন্দোলনের ক্ষেত্রভূমিতে পরিণত হয়েছিল। অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে ৯ই মার্চ, ১৯৭১-এ সেখানে আওয়ামী লীগের নারী সদস্যবর্গ একটি সভা করেছিলেন।

১৩১

৮/৯/১৯৪৯ তারিখে খুলনা জেলা মুসলিম ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস.এ. হামিদ কর্তৃক ঢাকাস্থ ১৫০ মোঘলটুলি, রমনা নিবাসী শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রেরিত একটি ইংরেজি চিঠির প্রকৃত প্রতিলিপি।

ঢাকা, ১৩ই সেপ্টেম্বর ১৯৪৯

গোপনীয়

জেলা গোয়েন্দা শাখা

গোয়েন্দা শাখা

ঢাকা, ১৪.৯.১৯৪৯

ম্যামো নং

(অনুগ্রহপূর্বক চিঠিটি আটক করার ঘটনাটি গোপন রাখুন)

  1. প্রেরক (ঠিকানা সহ) : এস.এ. হামিদ, সাধারণ সম্পাদক। জেলা মুসলিম ছাত্রলীগ
  2. প্রাপক (ঠিকানা সহ) : মুজিবুর রহমান, ১৫০ মোঘলটুলি, রমনা, ঢাকা
  3. চিঠির ভাষা : ইংরেজি
  4. চিঠির তারিখ : ৮/৪/৪৯
  5. পোস্টাল মোহর : খুলনা আর.এম.এস.
  6. অভিগ্রহণকারী ডাকঘর : রমনা
  7. অভিগ্রহণের তারিখ : ১৩/৯/৪৯
  8. অভিগ্রহণের পরীক্ষক অফিসারের নাম : এসআই, এ. আজিজ, আইবি
  9. ছবি তুলে রাখা হয়েছে কি : …
  10. চিঠি আটকে রাখা হয়েছে, না কি পাঠানো হয়েছে : অরিজিনাল কপি জমা দেওয়া হয়েছে
  11. প্রেরিত হলে অনুলিপি রাখা হয়েছে কি : রাখা হয়েছে
  12. অভিগ্রহণের অনুমতি প্রদানকারী সরকারি নির্দেশের নম্বর ও তারিখ :

৮/৯/১৯৪৯ তারিখে খুলনা জেলা মুসলিম ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস.এ. হামিদ কর্তৃক ঢাকাস্থ ১৫০ মোঘলটুলি, রমনা নিবাসী শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রেরিত একটি ইংরেজি চিঠির প্রকৃত অনুলিপি যা ১৩/৯/৪৯ তারিখে রমনা থানার এসআই এ. আজিজ কর্তৃক আটক করা হয়েছিল।

শ্রদ্ধেয় ভাইজান,

চলতি মাসের ৬ তারিখে আপনার পত্র পেয়েছি এবং সব বুঝতে পেরেছি। জেলা কমিটির সভাপতি আমজাদ আলী সাহেব এবং বাগেরহাটের অন্য আরও কয়েকজনকে অনুরোধ করেছিলাম। তাঁরা গত কাল এসেছিলেন। ১৩ তারিখে এখান থেকে ঢাকা যাব বলে  আমরা ঠিক করেছি এবং ১৫ তারিখে আমাদের ১৬জন প্রতিনিধিসহ ঢাকায় থাকব। কিন্তু টাকা-পয়সা নিয়ে আমরা বেশ দুশ্চিন্তায় আছি। আমাদের কমপক্ষে ৮০০/- রুপি দরকার। যাই হোক, সর্বশক্তিমানের কৃপায় আমরা কাউন্সিলের সভায় যাব। সাতক্ষীরার জনাব আনোয়ার হুসাইন ঢাকার উদ্দেশ্যে গত কাল রওনা করেছেন। আমি তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম, এর পূর্বেই যেন তিনি আপনার সাথে দেখা করেন। বরিশাল কলেজের ছাত্র ও মাদারীপুরের জনাব হাবিবুর রহমান এবং বরিশালের জনাব মহীউদ্দীন আহমদ (সম্পাদক, ডি.এম.এল.)-কে কেন্দ্র করে খুলনায় কিছু অপকর্ম সংঘটিত হচ্ছে। সাক্ষাতে এ ব্যাপারে আপনাকে বিস্তারিত বলব। আমজাদ আলী, চাঁদ মিয়া, হাফিজ, মোখলেস, মোহাম্মদ ও বাকিরা সবাই আসছেন। গোয়ালন্দের ট্রেনে করে আমরা ১৩ই জুনে যাত্রা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনুগ্রহপূর্বক হামিদ সাহেব ও জালাল সাহিবকে আমার শ্রদ্ধা ও সালাম পৌঁছে দেবেন। আশা করি, আপনারা ভালো আছেন।

আপনার একান্ত

এ. হামিদ

ডিএস ৩

অনুগ্রহপূর্বক মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

খুলনা জেলার মুসলিম ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এই চিঠি মুজিবুর রহমানকে লিখেছিলেন।

চিঠিতে লেখা হয় যে, সভায় যোগ দিতে ১৫ তারিখে ১৬জন প্রতিনিধি খুলনা থেকে ঢাকায় পৌঁছুবেন।

ফাইলে অনুলিপি রাখা যেতে পারে এবং ডিআইবি খুলনায় কপি প্রেরণ করুন এবং প্রতিনিধিদের নাম রিপোর্ট করুন।

স্বাক্ষর ও তারিখ/- ১৪/৯

নং ১৮৭২৪/৬০৬-৪৮ পি.এফ. তারিখ ২১/৯

গোপনীয়

প্রতিনিধিদের নাম নিয়ে তদন্ত করতে খুলনার ডিআইবিকে কপি প্রেরণ করুন

স্বাক্ষর ও তারিখ/- ১৪/৯, এসএস ৩ ডিএস ৩-এর জন্য,

স্বাক্ষর ও তারিখ/- ১৭/৯

১৩২

করাচিস্থ পাকিস্তান সরকারের ইন্টেলিজেনস ব্যুরো ঢাকার আইবিইবির ডিআইজিকে ১৬/৯/১৯৪৯ তারিখের একটি ম্যামো পাঠান। ম্যামোটি করাচি নিবাসী হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে পাঠানো শেখ মুজিবুর রহমানের একটি চিঠি বিষয়ক। শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর একটি নোট পেতে তারা অনুরোধও করে।

করাচি, ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৪৯

গোপনীয়

নং সিএপি/১৯৯-II

ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো

পাকিস্তান সরকার

করাচি, তারিখ ১৬/৯/৪৯

শ্রদ্ধেয় খন্দকার সাহেব,

অনুগ্রহপূর্বক ৫ই সেপ্টেম্বরের আপনার ম্যামো নং ১৭৬৫১ (২)/ ৫৬৩-৪৮/পি.এফ. ভালো করে দেখুন। ম্যামোটি ঢাকার শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক করাচি নিবাসী হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে পাঠানো একটি আটককৃত চিঠিবিষয়ক।

  • চিঠির লেখক সম্পর্কে আপনি যদি আমাকে একটি পরিপূর্ণ নোট দিতেন তবে আমি কৃতার্থ হতাম। ১৬ই ও ১৭ই সেপ্টেম্বর ১৯৪৯ তারিখে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের অনুষ্ঠিতব্য সভার একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টও আমরা যদি পেতাম তবে ভালো হতো।

আপনার একান্ত

স্বাক্ষর ও তারিখ/- এ.এম. সাদুল্লাহ্

১৬/৯/৪৯

সহকারী পরিচালক (পি)

এফ.আর. খন্দকার, মাননীয়, পিপিএস

আইবিইবি পুলিশের ডিআইজি

ঢাকা (বিমানডাকের মাধ্যমে)

১৩৩

পূর্ববঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ১৭/৯/১৯৪৯ তারিখের সপ্তাহান্তের রিপোর্ট থেকে নেওয়া। রিপোর্টের সব কিছু নিচের উপশিরোনাম i ও ii-এ উল্লেখ করা হয়েছে।

ঢাকা, ১৭ই সেপ্টেম্বর ১৯৪৯

i. ঢাকার তাজমহল সিনেমা হলে ১৬/৯/১৯৪৯ তারিখে ইপিএমএসএল-এর প্রাদেশিক সম্মেলনের প্রতিনিধিদের একটি ক্যামেরা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ইপিএমএসএল-এর প্রাদেশিক নির্বাহী পরিষদ গঠিত হয়। সভাপতির ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ছাত্রদের উচিত রাজনীতিতে যোগ দেওয়া। প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে ছাত্রদের পরামর্শ দেন তিনি। সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত না করায় তিনি সরকারের সমালোচনাও করেন।

ঢাকা, ১৭ই সেপ্টেম্বর ১৯৪৯

ঢাকাস্থ পূর্ববঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ১৭/৯/১৯৪৯ তারিখের সপ্তাহান্তের রিপোর্ট থেকে নেওয়া।

১৪৪৭/ ঢাকা — ১৬ই সেপ্টেম্বর। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ (প্যারা ৯৮৮)-এর প্রাদেশিক সম্মেলনে প্রেরিত প্রতিনিধিদের একটি ক্যামেরা মিটিং (২৫০) আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্মসম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ঢাকাস্থ তাজমহল সিনেমা হলে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দবিরুল ইসলামকে (নিরাপত্তা কারাবন্দি) সভাপতি, সিরাজুল ইসলাম ও আজিজ আহমেদকে (প্যারা ৬১৬) সহসভাপতি ও আবদুল খালিক নেওয়াজ খানকে সম্পাদক করে এবং আরও ২৫জন সদস্য নিয়ে প্রাদেশিক নির্বাহী পরিষদ গঠিত হয়। সভাপতির ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন যে, পাকিস্তানের মতো একটি রাষ্ট্র যেখানে মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশ শিক্ষিত সেখানে জনসাধারণের অবস্থার উন্নয়নে নানাবিধ সমস্যা সমাধান করতে ছাত্রদেরই রাজনীতিতে যোগ দিতে হবে। শত দমন-পীড়ন সত্ত্বেও তাদের আন্দোলনের মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। সম্প্রতি জারিকৃত অর্ডিন্যান্স রদ করতে তিনি সরকারের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তা না হলে ছাত্র আন্দোলনে জড়িত ছাত্ররা তাদের বৃত্তিপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবে এবং স্কুল-কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হবে। তিনি আরও বলেন, অর্ডিন্যান্সটি রদ করা না হলে তারা তাদের নিজেদের উপায় বের করে নিতে বাধ্য হবে। প্রকৃত পড়াশুনা—যে পড়াশুনার অর্থ শুধু পাঠ্যবই পড়া নয়—তা করতে তিনি ছাত্রদের পরামর্শ দেন। নানাবিধ সমস্যা নিয়ে তাদের চিন্তাধারার বহুল প্রচারের লক্ষ্যে এবং অশিক্ষার বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যেতে তিনি ছাত্রদের পাঠচক্র, বিতর্ক সংগঠন গড়ে তোলার পরামর্শ দান করেন। ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করে এবং অন্যান্য কালো আইন পুনরায় চালু করার মাধ্যমে দেশময় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে সমগ্র দেশবাসীর দাবি সত্ত্বেও সাধারণ নির্বাচন আহ্বান না করায় তিনি সরকারকে দোষারোপ করেন। বাংলা ভাষার লিখনে আরবি হরফ চালুকরণের প্রচেষ্টা ও অনৈতিকভাবে তাদের কমিউনিস্ট আখ্যা দেওয়ারও প্রতিবাদ করেন তিনি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সত্যিকারের মুসলিম হিসেবে সর্বশেষ ব্যক্তি পর্যন্ত তাঁরা কমিউনিজমের বিরুদ্ধে লড়ে যাবেন।

ii. আর্মানিটোলা ময়দানে সভাটির একটি মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা ভাসানী, শামসুল হক ও অন্য নেতৃবৃন্দ সভায় বক্তৃতা করেন। ছাত্রদের রাজনীতিতে যোগ দিতে যারা নিরুৎসাহিত করেছে বক্তারা তাদের সমালোচনা করেন। প্রশাসনে বিরাজমান শয়তানি উচ্ছেদ করতে বক্তারা ছাত্রদের এগিয়ে আসতে আহ্বান করেন এবং তাঁদেরকে কমিউনিস্ট হিসাবে আখ্যা দেওয়ায় তাঁরা সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন।

ঢাকা, ১৭ই সেপ্টেম্বর ১৯৪৯

উক্ত সভার (৩,০০০) একটি মুক্ত আলোচনা একই দিন সন্ধ্যায় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর (ভাসানীর মওলানা) (প্যারা ১৪৩৫) সভাপতিত্বে আর্মানিটোলা ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। শেখ মুজিবুর রহমান, মৌলভী শামসুল হক, এম.এল.এ., (প্যারা ১৩৪৪) সভায় বক্তব্য দেন। ছাত্র রাজনীতিতে অংশ নিতে ছাত্রদের যারা নিরুৎসাহিত করে অন্য কয়েকজন বক্তার সাথে সভাপতি তাদের সমালোচনা করেন। প্রশাসনে বিরাজমান শয়তানি উচ্ছেদ করতে এবং ইসলামি সমাজবাদ ও শরিয়তের ওপর ভিত্তি করে পাকিস্তানকে একটি ইসলামি রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে বক্তারা ছাত্রদের এগিয়ে আসতে আহ্বান করেন। তাঁদেরকে কমিউনিস্ট হিসাবে আখ্যা দেওয়ায় সরকার তীব্রভাবে সমালোচিত হয়। প্রাপ্তবয়স্ক সবাইকে বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান করতে এবং জরুরি মুহূর্তে পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তার জন্য সব পাকিস্তানিদের লাইসেন্সবিহীন অস্ত্র সরবরাহ করতে বক্তারা দাবি তোলেন।তাঁরা আরও অভিযোগ করেন যে, মন্ত্রীরা নিজেদের আত্মীয়-স্বজন ও পোষা লোকেদের সাহায্যে মিথ্যা একটি ছাত্রসংগঠন দাঁড় করিয়ে ছাত্রদের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টির চেষ্টা করছে।পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পূর্ব পাকিস্তানে আসন্ন ভ্রমণে দলে দলে জমায়েত হয়ে তাঁর সামনে নিজেদের দাবি-দাওয়া পেশ করতে এবং কাছ থেকে সেগুলো সম্পর্কে সুনিশ্চিত উত্তরদানে তাঁকে অনুরোধ করতে সভাপতি শ্রোতাদের অনুরোধ করেন।

১৩৫

ঢাকার ৯ পাতলা খান লেন নিবাসী শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ফরিদপুরের পাটগাতির সেরামকান্দি নিবাসী আবুল হাশেম ও আবদুস সাত্তারকে ২১/৯/১৯৪৯ তারিখে প্রেরিত বাংলায় লিখিত একটি চিঠির ইংরেজি অনুবাদ। চিঠিটি ২২/৯/১৯৪৯ তারিখে ঢাকার জিপিওতে আটক করা হয়।

ঢাকা, ২২শে সেপ্টেম্বর ১৯৪৯

গোপনীয়

জেলা গোয়েন্দা শাখা

গোয়েন্দা শাখা, ঢাকা

ম্যামো নং তারিখ: ২২শে সেপ্টেম্বর ১৯৪৯

(অনুগ্রহপূর্বক চিঠি আটক করার বিষয়টি গোপনীয় রাখুন)

  • প্রেরক (ঠিকানা সহ) : মুজিবুর রহমান, ৯ পাতলা খান লেন, ঢাকা।
  • প্রাপক (ঠিকানা সহ) : জনাব আবুল হাশেম ও আবদুস সাত্তার, গ্রাম: সেরামকান্দি, ডাকঘর: পাটগাতি, জেলা: ফরিদপুর।
  • চিঠির ভাষা : বাংলা
  • চিঠির তারিখ : নেই
  • পোস্টাল মোহর : বহির্গামী
  • আটককারী ডাকঘর : ঢাকা, জিপিও
  • আটকের তারিখ : ২২/৯/৪৯
  • অভিগ্রহণের পরীক্ষক অফিসারের নাম : এএসআই, আবুল কাসেম
  • ছবি তুলে রাখা হয়েছে কি : …
  • চিঠি আটকে রাখা হয়েছে না কি পাঠানো হয়েছে : পাঠানো হয়েছে
  • প্রেরিত হলে অনুলিপি রাখা হয়েছে কি : রাখা হয়েছে
  • অভিগ্রহণের অনুমতি প্রদানকারী সরকারি নির্দেশের নম্বর ও তারিখ : 

ঢাকার ৯ পাতলা খান লেন নিবাসী শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ফরিদপুরের পাটগাতির সেরামকান্দি নিবাসী আবুল হাশেম ও আবদুস সাত্তারকে ২১/৯/১৯৪৯ তারিখে প্রেরিত বাংলায় লিখিত একটি চিঠির ইংরেজি অনুবাদ।

স্নেহের হাশেম ও সাত্তার,

তোমাদের প্রতি আমার ভালোবাসা রইল। অনেক দিন ধরে তোমাদের কাছ থেকে কোনো খবর পাচ্ছি না। তোমরা পরীক্ষায় কেমন করেছ তা জানতে মন আকুপাকু করছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তোমাদের তুলে নেওয়া হয়েছে। চিন্তার কিছু নেই। আর দেরি না করে পড়তে শুরু করে দাও। কাউকে তুলে নিলে কিছু হয় না। আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।তাঁর ওপর বিশ্বাস রাখো। আর পড়তে শুরু করে দাও। খোদার ফজলে তোমরা পাশ করবেই। দেশের মানুষ তোমাদের কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করে।

দেশের অবস্থা নিয়ে আমরা ভাবতে শুরু করেছি। দেশের লোকজন আর বাঁচবে না। আমার শস্য নিয়ে যাবে…

হয়তো তোমাদের মনে থাকবে, খুলনা থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে স্বল্প সময়ে আমি তোমাদের বলেছিলাম, “এক হও। কর্ডন সিস্টেম তুলে নেওয়া হবে।” মন্ত্রীরা ভয় পেয়ে কর্ডন সিস্টেম রদ করে। আমরা যদি এক হই তবে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের কস়ম খেতে হবে যে, খাদ্য ছাড়া আমরা কেউই বাঁচব না। যেখানে আমরা সবই পেয়েছি সেখানে সাধারণ জনগণ কেন খাবারের কষ্ট পাবে? কিছু লোক মিলে দেশকে লুণ্ঠন করবে। অশিক্ষার জন্য দেশের মানুষ কিছুই বুঝে না। কোনো ভাবেই পড়ালেখা ছাড়বে না। আল্লাহ্ তোমাদের সহায় হবেন।তোমাদের পিতামাতাকে আমার সালাম দিয়ো। বড়ো মিয়া, হাক্কান মিয়া ও অন্যরা কেমন আছেন? লিখবে আমাকে।

তোমারই

স্বাক্ষর ও তারিখ/- মুজিবুর রহমান

পেশকৃত

মোহা. ইশাক

এস.আই., আই.বি. ২৭/৯

১৩৭

মওলানা আবদুল হামিদ খান কর্তৃক ঢাকার ১৫০ মোঘলটুলি আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্মসম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানকে ২২/৯/১৯৪৯ তারিখে প্রেরিত বাংলা চিঠির অনূদিত কপি। চিঠিটি ২৬/৯/১৯৪৯ তারিখে ঢাকার জিপিওতে আটক করা হয়।

ঢাকা, ২৬শে সেপ্টেম্বর ১৯৪৯

গোপনীয়

জেলা গোয়েন্দা শাখা

গোয়েন্দা শাখা, ঢাকা

ম্যামো নং তারিখ: ২৬শে সেপ্টেম্বর ১৯৪৯

(অনুগ্রহপূর্বক চিঠি আটক করার বিষয়টি গোপনীয় রাখুন)

  • প্রেরক (ঠিকানা সহ) : মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ভাসানী 
  • প্রাপক (ঠিকানা সহ) : জনাব মুজিবুর রহমান, যুগ্মসম্পাদক, আওয়ামী মুসলিম লীগ, ১৫০ মোঘলটুলি, ঢাকা
  • চিঠির ভাষা : বাংলা
  • চিঠির তারিখ : ২২/৯/৪৯
  • পোস্টাল মোহর : অস্পষ্ট
  • আটককারী ডাকঘর : ঢাকা, জিপিও
  • আটকের তারিখ : ২২/৯/৪৯
  • অভিগ্রহণের পরীক্ষক অফিসারের নাম : এএসআই, আবুল কাসেম
  • ছবি তুলে রাখা হয়েছে কি : প্রেরিত
  • চিঠি আটকে রাখা হয়েছে না কি পাঠানো হয়েছে : মূল কপি জমা দেওয়া হয়েছে
  • প্রেরিত হলে অনুলিপি রাখা হয়েছে কি : রাখা হয়েছে
  • অভিগ্রহণের অনুমতি প্রদানকারী সরকারি নির্দেশের নম্বর ও তারিখ :

২৫/৯/৪৯ তারিখে জিপিওতে আটকে দেওয়া একটি বাংলা চিঠির অনূদিত প্রতিলিপি

প্রাপক 

মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ভাসানী 

তারিখ ২২/৯/৪৯

প্রেরক

মৌলভী

মুজিবুর রহমান, যুগ্মসম্পাদক, আওয়ামী মুসলিম লীগ, ১৫০ মোঘলটুলি, ঢাকা

স্নেহের মুজিবুর রহমান,

আশা করি, খোদার ফজলে ভালোই আছ। আর্মানিটোলায় আগামী ১১ই অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য পাকিস্তান ভোটারদের একটি সভায় তোমাকে ডাকা হবে। লিয়াকত আলীর প্রতি জনগণের প্রকৃত দাবিগুলো সম্পর্কে অবহিতকরণই উক্ত সভার উদ্দেশ্য হবে। ‘ইত্তেফাক’-এ খবরটি প্রকাশিত দেখতে চাই এবং মুদ্রণের পরে পোস্টার ও নোটিসগুলো বণ্টন করতে হবে।ঢাকা শহরে আওয়ামী মুসলিম লীগের সদস্যদের পূর্ব থেকেই পেতে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। খোদার ফজলে আমি ঈদের পর ঢাকায় আসব এবং কয়েকটি জেলায় ঘুরে আসব। আশা করি, যত দূর সম্ভব সব কর্মীদের সাথে নিয়ে তুমি ১১ই অক্টোবরের সভায় অনুষ্ঠিত করতে চেষ্টা করবে। প্রতিটি জেলায় একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠন করবে তুমি।

স্বাক্ষর ও তারিখ/ মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ভাসানী

পেশকৃত

এ কাসেম, এএসআই

তারিখ ১/১০/৪৯

———

লিয়াকত আলী: লিয়াকত আলী খান (অক্টোবর ১৮৯৫-১৬ অক্টোবর ১৯৫১) পাকিস্তানের প্রথম দিককার একজন নেতৃস্থানীয় নেতা, রাজনীতিবিদ, আইনজীবী আর রাজনৈতিক তাত্ত্বিক। তিনি পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অধিকন্তু, ১৯৪৭ থেকে তাঁকে হত্যা করার পূর্ব পর্যন্ত অর্থাৎ ১৯৫১ সাল পর্যন্ত তিনি প্রথম পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও সীমান্ত অঞ্চলসমূহের মন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় অধিষ্ঠিত ছিলেন।

ডিএস ৩-কে প্রেরিত অনুলিপি/অনুবাদ

অনুগ্রহপূর্বক মনোযোগ দিয়ে পড়ুন

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক মুজিবুর রহমান (খান)-কে এই চিঠি লেখেন।

জনসাধারণের দুঃখ-দুর্দশা প্রচার করতে এবং প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানকে জানাতে ১১/১০/৪৯ তারিখে ঢাকার আর্মানিটোলা ময়দানে পাকিস্তান ভোটারদের নিয়ে একটি সভা করতে চিঠির প্রাপককে এতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

ফাইলে কপি রাখা যেতে পারে এবং ডি.আই.বি. ঢাকা কপি প্রেরণ করা যেতে পারে।

স্বাক্ষর ও তারিখ/- ২০/৯

পার্শ্বটীকা: এসএস ৩ দয়া করে দেখুন। স্বাক্ষর ও তারিখ/- ২৮/৯

মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। যেহেতু সারাশটি দেওয়ার কোনো সময় ছিল না।

নং ২০১৫৭/৬০৬-৪৮ পি.এফ., তারিখ ১৯/১০। প্রস্তাবমাফিক।

এসএস১, আইবির জন্য ডিএস ৩।

১৩৮

পূর্ববঙ্গ পুলিশের ১৫/১০/১৯৪৯ তারিখের সপ্তাহান্তের গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকে নেওয়া। আর্মানিটোলা ময়দানে ১১/১০/১৯৪৯ তারিখে এএমএল-এর একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্য দুজন নেতা বক্তৃতা করেন। সরকারের খাদ্যনীতি, কুটির শিল্পের উন্নয়ন ও প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে প্রেরিত পাঁচটি টেলিগ্রাম প্রভৃতি বিষয়ে বক্তারা কথা বলেন। সভার পর একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকা, ১৫ই অক্টোবর ১৯৪৯

পূর্ববঙ্গ পুলিশের ১৫/১০/১৯৪৯ তারিখের সপ্তাহান্তের গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকে নেওয়া।

***

১৫৮৮/ ঢাকা—মওলানা আবদুল হামিদ খানের (ভাসানীর মওলানা) (প্যারা ১৫০৩) সভাপতিত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগের (প্যারা ১৫০৩) একটি সভা (৫,০০০) অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় চ্যাম্বার অব কমার্সের সভাপতি শাখাওয়াত হুসেন, এম.এল.এ. মৌলভী শামসুল হক (প্যারা ১৫৭৩) ও শেখ মুজিবুর রহমান (প্যারা ১৪৪৭) বক্তৃতা করেন।

শাখাওয়াত হোসেন তাঁর বক্তৃতায় বলেন যে, কুটির শিল্পের উন্নয়নে এবং চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের অনীহা রয়েছে। তৎকালীন সরকারকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করা না হলে প্রত্যাশিত কোনো কাজ হবে না বলে তিনি শ্রোতাদের জোর দিয়ে বলেন।

মৌলভী শামসুল হক এমএলএ বলেন যে, কমপক্ষে ৫টি টেলিগ্রাম পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো হয়েছে। উক্ত সভায় অংশগ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে এগুলো পাঠানো হয়েছে যেন তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে দেশের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করার সুযোগ পান এবং পূর্ববঙ্গের মন্ত্রিসভাকেও একই সভার শ্রোতৃমণ্ডলির মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতির আয়োজন করতে অনুরোধ করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে বর্তমান মন্ত্রিসভার ওপরে তাঁদের আস্থা আছে কি নেই তা বোঝা যেত। শ্রোতৃমণ্ডলি তাদের আস্থা নেই বলে রায় দেয়।

শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের খাদ্যনীতির সমালোচনা করে বলেন যে, ৭০%-এর ওপর লোক না খেতে পেরে মারা গিয়েছে। এর কারণই হলো, কিছু লোক খাদ্যসামগ্রী নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। অন্যান্য বক্তার সাথে তিনি নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলো পড়ে শোনান:-

  • বর্তমান মন্ত্রিসভা কর্তৃক কৃত অপশাসন তদন্ত করতে একটি বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করা হবে।
  • অতি শীঘ্র একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাতে ব্যর্থ হলে ভোটাররা সবাই একটি সভায় জমায়েত হয়ে মন্ত্রিপরিষদকে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ ছেড়ে চলে যেতে অনুরোধ করবে। এরপর শ্রোতৃমণ্ডলির উদ্দেশ্যে তিনি প্রস্তাব রাখেন যে, বর্তমান পূর্ববঙ্গের মন্ত্রিসভার ওপর সাধারণ জনগণ যে সন্তুষ্ট নয় তা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে জানানোর লক্ষ্যে জনগণ একটি মিছিল করবে।

সভার শেষে মওলানা আবদুল হামিদ খানের নেতৃত্বে রমনা অভিমুখে একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে পুলিশ প্রথমে নওয়াবপুরে ও পরে নাজিরবাজার রেলওয়ে ক্রসিঙে মিছিল আটকে দেয়। দ্বিতীয় জায়গায় মিছিলকারীরা সহিংস আচরণ দেখায়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাই তাদের ছত্রভঙ্গ হওয়ার নির্দেশ দেন। তেমনটা করতে তারা রাজি না হয়ে বরং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে উত্তরের এস.ডি.ও. ও ১০জন কন্সটেবল আহত হন। তারপর তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়। এতেও কাজ না হলে হালকা লাঠিচার্জ করা হয়।

১৩৯

দিনাজপুর থেকে মশিরুদ্দীন আহমেদ কর্তৃক ঢাকাস্থ ১৫০ মোঘলটুলি নিবাসী শেখ মুজিবুর রহমানকে ১২/১০/১৯৪৯ তারিখে প্রেরিত একটি ইংরেজি চিঠির অনুলিপি। চিঠিটি ১৫/১০/১৯৪৯ তারিখে ঢাকার জিপিওতে আটক করা হয়।

ঢাকা, ১৫ই অক্টোবর ১৯৪৯

গোপনীয়

জেলা গোয়েন্দা সংস্থা

গোয়েন্দা শাখা, ঢাকা

ম্যামো নং তারিখ ১৫/১০/১৯৪৯

অনুগ্রহপূর্বক চিঠি আটক করার বিষয়টি গোপনীয় রাখুন)

  • প্রেরক (ঠিকানা সহ) : মশিরুদ্দীন আহমেদ, দিনাজপুর
  • প্রাপক (ঠিকানা সহ) : শেখ মুজিবুর রহমান, ১৫০ মোঘলটুলি, ঢাকা
  • চিঠির ভাষা : ইংরেজি
  • চিঠির তারিখ : ১২/১০/৪৯
  • পোস্টাল মোহর : দিনাজপুর, তারিখ ১২/১০/৪৯
  • আটককারী ডাকঘর : ঢাকা, জিপিও
  • আটকের তারিখ : ১৫/১০/৪৯
  • অভিগ্রহণের পরীক্ষক অফিসারের নাম : মো. ইসহাক, এসআই, আই বি
  • ছবি তুলে রাখা হয়েছে কি :
  • চিঠি আটকে রাখা হয়েছে না কি পাঠানো হয়েছে : অফিস পাঠিয়ে দিয়েছে
  • প্রেরিত হলে অনুলিপি রাখা হয়েছে কি : রাখা হয়েছে
  • অভিগ্রহণের অনুমতি প্রদানকারী সরকারি নির্দেশের নম্বর ও তারিখ : নৈমিত্তিক আটক

দিনাজপুর থেকে মশিরুদ্দীন আহমেদ কর্তৃক ঢাকাস্থ ১৫০ মোঘলটুলি নিবাসী শেখ মুজিবুর রহমানকে ১২/১০/১৯৪৯ তারিখে প্রেরিত একটি ইংরেজি চিঠির অনুলিপি। চিঠিটি ১৫/১০/১৯৪৯ তারিখে ঢাকার জিপিওতে আটক করা হয়।

জনাব শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব,

আপনাকে অভিনন্দন জানাই। রাজশাহী হয়ে আমি দিনাজপুর ফিরে এসেছি। সেখানে দবিরুল ইসলাম সাহেবের সাথে দেখা করতে পেরেছিলাম। তাঁকে জেলে রাখা হয়েছে এবং কঠিন সময় পার করছেন তিনি। তাঁকে আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম, ঢাকা বদলি হতে যেন তিনি মহাকারাপরিদর্শকের নিকট দরখাস্ত করেন। এখানে আমি এমন একটি সভা স্থগিত করা বিষয়ক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছি যা তাতে আপনার উপস্থিতির তারিখ ও কর্মসূচি নির্ধারণের ওপর কার্যত নির্ভর করছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ২০ তারিখে দিনাজপুর সফর করবেন। আমরা ভাবছি, সভাটি যদি ঐ তারিখের পূর্বে করা যেত। কিন্তু মনে হচ্ছে তা সম্ভব হবে না। কারণ কর্তৃপক্ষ তা করতে হয়তো আমাদের অনুমতি দেবে না।

আমার মনে হয়, আপনি ওতো ব্যস্ত নন। মওলানা সাহেব আর এমএলএ সাহেব সেখানে থাকবেন। আমার সেখানে যাওয়ার ইচ্ছে আছে এবং আপনার কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছে আছে। কিন্তু এই জায়গা ছাড়তে পারব না।

নওয়াবজাদাকে সংবর্ধনা জানাতে মাওলানা বাকি ও অন্যান্য তথাকথিত নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছানো সাধারণ জনগণের দ্বারা হবে না। জনগণের প্রকৃত অবস্থা ও দুঃখ-দুর্দশাকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে তারা। আমরা একটা স্মারকলিপি দেওয়ার কথা ভাবছি। কিন্তু কিভাবে দিব তা? অবশ্যই এর জন্য নির্দেশনা প্রয়োজন।

আইনের প্রয়োজনীয় বইপুস্তকের জন্য দবিরুল ইসলাম আমাকে বলেছেন, আপনাকে লিখতে এবং সম্ভব হলে তার কাছে জেলে পাঠিয়ে দিতে। উনি পড়ে দেখবেন। আমি তো জানি না, তার জন্য কোন বই উপকারী হবে। অনুগ্রহ করে যথাকর্তব্য করে আমাকে অবহিত করবেন। আমি বুঝতে পারছি না, ইত্তেফাক কেন আসছে না? মনে হয় তারা তা পাঠাতে ভুলে গেছে।এত দিন ধরে জেলাব্যাপী আমার বিস্তৃত নামডাক বিফলেই গেল। ম্যানেজার সাহেবের উচিত পত্রিকাটা নিয়মিতভাবে পাঠানো। দয়া করে তাঁকে মনে করিয়ে দেবেন। আমি ভালো আছি। আশা করি আপনি ও অন্যরাও ভালো আছেন।

আপনার একান্ত

স্বাক্ষর ও তারিখ/- মশিরুদ্দীন আহমেদ

পার্শ্বটীকা: ডিএস ৪ হয়তো দেখতে চাইতে পারেন। স্বাক্ষর ও তারিখ/-

১৪০

ঢাকাস্থ ডিআইবির ডিআইও১৩ কর্তৃক রেকর্ড করা ১৬/১০/১৯৪৯ তারিখের এমএলএ শামসুল হকের পরবর্তী বিবৃতি যাতে এ কথা বলা হয় যে, ডিওয়াইএলের অধিকাংশ সদস্যই মুসলিম লীগের কর্মী ও মুসলিম ছাত্র। শেখ মুজিবুর রহমান, শামসুল হক ও অন্য নেতারা মুসলিম লীগ থেকে এসেছেন। তিনি আরও বলেন যে, কমিউনিস্ট পার্টি ডিওয়াইএলকে পুনর্গঠিত করতে চেষ্টা করেছিল কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছিল।

ঢাকা, ১৬ অক্টোবর ১৯৪৯

ফাইল নং ৪০৮-৪৮ পিএফ-এর পৃষ্ঠা নং ২০০ থেকে নেওয়া।

আমি রেকর্ড করেছিলাম।

তিনি পড়েছেন এবং লিখিত কথা সত্য বলে স্বীকার করেছেন। কিন্তু তিনি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃত হয়েছেন। এইচএস, ইংরেজি ও বাংলা হস্তলিপির নমুনা এর সাথে যুক্ত হয়েছে।

স্বাক্ষর ও তারিখ/- কে. সাঈদুর রহমান

ডিআইও ১৩

১৭/১০/৪৯

ময়মনসিংহের দবিরুদ্দীনের পুত্র মোলভী শামসুল হকের পরবর্তী বিবৃতি।

নিম্নলিখিত ব্যক্তিবর্গ পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের আয়োজক কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য। দলটির অফিস ১৫০ মোঘলটুলি, ঢাকা।

সভাপতি: মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী

সম্পাদক: মৌলভী শামসুল হক, এমএলএ

যুগ্মসম্পাদক: “ শেখ মুজিবুর রহমান

কোষাধ্যক্ষ: “ আতাউর রহমান খান, অ্যাডভোকেট, সোয়ারিঘাট, ঢাকা

আমি রেকর্ড করেছি

স্বাক্ষর ও তারিখ/- কে সাঈদুর রহমান

ডিআইও ১৩, ঢাকা ডিআইবি

তারিখ ১৬/১০/৪৯

ময়মনসিংহের দবিরুদ্দীনের পুত্র মোলভী শামসুল হকের পরবর্তী বিবৃতি।

ডিওয়াইএলের অধিকাংশ সদস্যই মুসলিম লীগের কর্মী ও মুসলিম ছাত্র। প্রায় সব ছাত্র সংগঠনের সদস্য ছিল এই দলে। শেখ মুজিবুর রহমান, নূরউদ্দিন, মোয়াজ্জম হুসাইন, আজিজ আহমেদ, আলমাস আলী, কোরবান আলী, আমি নিজে ও অন্য কিছু নেতা মুসলিম লীগের সদস্য ছিলেন। ১৯৪৮ সালের আগস্ট বা সেপ্টেম্বরের দিকে কমিউনিস্ট পার্টি ডিওয়াইএলকে পুনর্গঠিত করতে চেষ্টা করেছিল কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছিল। ১৯৪৮ সালের মে মাস থেকেই দলটি বিলুপ্ত।

আমি রেকর্ড করেছি

স্বাক্ষর ও তারিখ/- কে সাঈদুর রহমান

ডিআইও ১৩, ঢাকা ডিআইবি

তারিখ ১৬/১০/৪৯

১৪১

ঢাকাস্থ আইবিইবির ১৭/১০/১৯৪৯ তারিখের দৈনিক রিপোর্টের সারাংশ যেখানে এ কথা বলা হয়েছিল যে, নিশ্চিত তথ্যের ভিত্তিতে শেখ মুজিবুর রহমান ও শওকত আলীর গ্রেফতার নিশ্চিন্ত করতে ১৭/১০/১৯৪৯ তারিখে ইপিএমএসএল-এর ১৫০ মোঘলটুলি অফিসে তল্লাশি দেওয়া হয়। এঁরা দুজন  কোতোয়ালি থানার মামলা নং ১৯(১০)১৯৪৯-এর সাথে সংশ্লিষ্ট একটি গ্রেফতারি থেকে কৌশলে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। এই মামলায় তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া গ্রেফতার হয়েছিলেন এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর অন্যদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।

ঢাকা, ১৭ই অক্টোবর ১৯৪৯

পূর্ববঙ্গের গোয়েন্দা শাখার ১৭ই অক্টোবর ১৯৪৯ তারিখের প্রাত্যহিক রিপোর্ট থেকে নেওয়া।

***

আওয়ামী মুসলিম লীগ

একটি নিশ্চিত তথ্যের ভিত্তিতে পূর্ববঙ্গের আওয়ামী মুসলিম লীগের ১৫০ মোঘলটুলির দলীয় কার্যালয় শেখ মুজিবুর রহমান ও শওকত আলীর অনুসন্ধানে আজ (১৭/১০/৪৯) ৪:৩০-এ তল্লাশি করা হয়। উক্ত দুজন দলটির জঙ্গি সদস্য যারা কোতোয়ালি থানার ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৭/৩২৫ ধারা ও বঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা অধ্যাদেশের (B.S.P.O.) অধীনে মামলা নং ১৯(১০)৪৯-এর সাথে সংশ্লিষ্ট এই গ্রেফতারি থেকে কৌশলে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। এঁদের কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি, সন্দেহজনক কিছুও পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে ছয়জনকে কোতোয়ালি থানায় আনা হয়েছিল এবং তাদের মধ্যে একজন হলেন বরিশাল জেলার পিরোজপুর থানার ভাণ্ডারিয়া নিবাসী মুসলেমউদ্দীন আহমেদের পুত্র তোফাজ্জল হোসেন ওরফে মানিক। ঘটনাস্থলে পুলিশ দেখামাত্রই তিনি দৌঁড়াতে চেষ্টা করেন। উপর্যুক্ত মামলায় সম্পর্কিত করে তাঁকে আটকে রাখা হয়। অবশিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়।

***

একজন লোককে গ্রেফতার করার জন্য কারণটিকে যথার্থ বলে মনে হয় না।

স্বাক্ষর ও তারিখ/- এ. আহমেদ,

২০/১০

মুখ্যসচিব

১৪২

মাদারীপুর মুসলিম ছাত্রলীগের সম্পাদক রফিকউদ্দীন আহমেদ কর্তৃক ১৫/১০/১৯৪৯ তারিখে ঢাকার ১৫০ মোঘলটুলি নিবাসী শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রেরিত একটি বাংলা চিঠির ইংরেজি অনুবাদ। চিঠিটি ১৮/১০/১৯৪৯ তারিখে ঢাকার জিপিওতে আটক করা হয়।

ঢাকা, ১৮ অক্টোবর ১৯৪৯

গোপনীয়

জেলা গোয়েন্দা সংস্থা

গোয়েন্দা শাখা, ঢাকা

ম্যামো নং তারিখ ১৯/৯/১৯৪৯

(অনুগ্রহপূর্বক চিঠি আটক করার বিষয়টি গোপনীয় রাখুন)

  • প্রেরক (ঠিকানা সহ) :  রফিকউদ্দীন আহমেদ, সম্পাদক, মাদারীপুর মুসলিম ছাত্রলীগ
  • প্রাপক (ঠিকানা সহ) : শেখ মুজিবুর রহমান, ১৫০ মোঘলটুলি, ঢাকা
  • চিঠির ভাষা : বাংলা
  • চিঠির তারিখ : ১৫/১০/৪৯
  • পোস্টাল মোহর : অস্পষ্ট
  • আটককারী ডাকঘর : ঢাকা, জিপিও
  • আটকের তারিখ : ১৮/১০/৪৯
  • অভিগ্রহণের পরীক্ষক অফিসারের নাম : মো. ইসহাক, এসআই, আই বি
  • ছবি তুলে রাখা হয়েছে কি :
  • চিঠি আটকে রাখা হয়েছে না কি পাঠানো হয়েছে : অফিস পাঠিয়েছে
  • প্রেরিত হলে অনুলিপি রাখা হয়েছে কি : রাখা হয়েছে
  • অভিগ্রহণের অনুমতি প্রদানকারী সরকারি নির্দেশের নম্বর ও তারিখ : নৈমিত্তিক আটক

মাদারীপুর মুসলিম ছাত্রলীগের সম্পাদক রফিকউদ্দীন আহমেদ কর্তৃক ১৫/১০/১৯৪৯ তারিখে ঢাকার ১৫০ মোঘলটুলি নিবাসী শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রেরিত একটি বাংলা চিঠির অনুলিপি। চিঠিটি ১৮/১০/৪৯ তারিখে ঢাকার জিপিওতে আটকে দেওয়া হয়।

বাংলা

মাদারীপুর মুসলিম ছাত্রলীগের সম্পাদক রফিকউদ্দীন আহমেদ কর্তৃক ১৫/১০/১৯৪৯ তারিখে ঢাকার ১৫০ মোঘলটুলি নিবাসী শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রেরিত একটি বাংলা চিঠির ইংরেজি অনুবাদ। চিঠিটি ১৮/১০/১৯৪৯ তারিখে ঢাকার জিপিওতে আটক করা হয়।

১৪৪

ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৭/৩২৫ ধারা ও বঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা অধ্যাদেশ  ৭(৩) অনুসারে কোতোয়ালি থানার মামলা নং ১৯(১০)৪৯ -এর সাথে সম্পর্কিত শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ববঙ্গে ফিরে আসার পর তাঁকে গ্রেফতার করতে ঢাকাস্থ আইবিইবির এসএস ঢাকার ডিআইবির অতিরিক্ত এসপিকে অনুরোধ করেন। এই বিষয়ক কয়েকজন অফিসারের নোটের উল্লেখ করা হয়।

ঢাকা, ২২শে অক্টোবর ১৯৪৯

গোপনীয়

জেলা গোয়েন্দা সংস্থা

ঢাকা, ২২শে অক্টোবর ১৯৪৯

নং ৮০০৮/১০০-৪৯

বরাবর

খান সাহিব এম ইউসুফ,

এসএস, আইবি, ইবি, ঢাকা

সূত্র: আপনার নং ২১৩২৬/৬০৬-৪৮ পিএফ (জে), তারিখ ২১/১০/৪৯

ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৭/৩২৫ ধারা ও বঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা অধ্যাদেশ ৭(৩) অনুসারে কোতোয়ালি থানার মামলা নং ১৯(১০)৪৯ -এর সাথে সম্পর্কিত ফরিদপুরস্থ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র ঢাকাস্থ লালবাগের ১৫০ মোঘলটুলি নিবাসী শেখ মুজিবুর রহমানকে পূর্ববঙ্গে ফিরে আসার পর গ্রেফতার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন, অনুগ্রহপূর্বক।

স্বাক্ষর ও তারিখ/- ২২/১০

পুলিশের অতিরিক্ত সুপার ইন্টেনডেন্ট

ডিআইবি, ঢাকা

ডিএস-৩

ঢাকাস্থ ডিআইবি থেকে পুলিশ স্টেশনের প্রতি লিখিত নিচের কাগজগুলো দয়া করে ভালো করে দেখুন। এসএস-৩ আদেশের অধীনে মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করতে ওসি ওয়াচকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যা হোক, তিনি তা নোট করতে পারেন।

স্বাক্ষর ও তারিখ/- ২৬/১০

অনুগ্রহপূর্বক নোট দিতে ওসি ওয়াচকে

স্বাক্ষর ও তারিখ/- ২৬/১০

ডিএস-২

ঢাকাস্থ ডিডিআই থেকে প্রেরিত কাগজটি দয়া করে পড়ুন। মুজিবুর রহমানের ফাইলটি প্রক্রিয়াধীন আছে। এফ.ও.পি.

স্বাক্ষর ও তারিখ/- ২০/১০

এসএস১

তথ্যের জন্য। মিছিলের সময় শামসুল হক এমএলএ গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে আমাদের ওয়াচ স্টাফও আলোচ্য ব্যক্তির উদ্দেশ্য বুঝতে পারেননি।

দেখা হয়েছে। ডিআইজিকে দেখান।

আামাদের ওয়াচ স্টাফের উচিত ছিল এই তথ্যটি সংগ্রহ করা।

স্বাক্ষর ও তারিখ/- ২০/১০

দেখা হয়েছে। এসএস-১ এর নোটের পরিপ্রেক্ষিতে ডিআইজিকে।

  • নিচে দেখুন। শেখ মুজিবুর রহমান অবিরাম নজরদারিতে ছিলেন না। নৈমিত্তিকভাবে দিনে দু বার তাঁকে নজরদারি করা হতো। ১১/১০/৪৯ তারিখের ঘটনার পর থেকে তিনি আমাদের পর্যবেক্ষকের দৃষ্টির বাইরে আছেন। ১৫০ মোঘলটুলির আওয়ামী লীগের অফিসে ১৭/১০/৪৯ তারিখে স্থানীয় পুলিশ তাঁর জন্য তল্লাশি করেছিল। কিন্তু তাঁকে পাওয়া যায়নি।
  • তথ্যের জন্য ঢাকাস্থ ডিআইবিকে এখনই রেডিয়োগ্রাম ম্যাসেজের প্রতিলিপি প্রেরণ করুন।
  • শেখ মুজিবুর রহমান ও জনাব সোহরাওয়ার্দীর পিএফে ম্যাসেজটির কপি রেখেও দিন।
  • নোট করে নেওয়ার জন্য ওসি ওয়াচকে।

পার্শ্বটীকা: জনাব শাইফউদ্দীনকে কপিগুলো প্রেরণ করা হয়েছে,স্বাক্ষর ও তারিখ/- ২১/১০

১৪৬

১১/১০/১৯৪৯ ও অন্য একটি তারিখে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত দুইটি বক্তৃতার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে আনীত মামলায়  অভিমত দিতে এপিপিকে আহ্বান করা হয়। সামগ্রিকভাবে বিষয়টি বিবেচনা করে শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে এপিপি কিছুই পায়নি।

ঢাকা, ৩০শে অক্টোবর ১৯৪৯

অভিমত

সংযুক্ত পত্রগুলো আর্মানিটোলা ময়দানে ১১/১০/৪৯ ও অন্য একটি তারিখে (১৫নং বক্তা হয়ে) মুজিবুর রহমান নামক এক ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত দুটো বক্তৃতার সারাংশ। বক্তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে অভিমতের জন্য সারাংশটি আমার নিকট প্রেরিত হয়।

দুঃখের সাথে লিখছি যে, প্রতিলিপিগুলো বেশ অপটু হাতের, অস্পষ্ট ও অস্বচ্ছ। এগুলো পড়ে আবার মেলাতে আমার বেশ কষ্ট হয়েছে।

এটি সত্য যে, বক্তৃতার কিছু কিছু অংশ পড়লে মনে হয় যে, কথায় আরেকটু সংযম আবশ্যক ছিল এবং বক্তার অতিরিক্ত হিংসাত্মক মনোভাব ও পবিত্রতা ধরা দেয় তাতে। কিন্তু পুরো বিষয়টা বিবেচনা করে বক্তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করার কিছু আমি তাতে পাইনি।

স্বাক্ষর ও তারিখ/- উপেন্দ্রকুমার চন্দ

সরকার পক্ষের সহকারী অভিযোক্তা

৩০/১০/৪৯

গোপনীয়

জেলা গোয়েন্দা শাখা

ঢাকা, ১০ই নভেম্বর ১৯৪৯

নং ৮৫৩০/আর/৬৬০১/৫৬-৪৮

ঢাকাস্থ আইবিইবির এসএস খান সাহিব মো. ইউসুফকে তাঁর ১৫/১০/৪৯ তারিখের সূত্র নং ২০৮৫৮/৭৭১-৪৮(সাধারণ)-এর প্রেক্ষিতে তথ্যের জন্য প্রতিলিপি প্রেরিত হয়েছে।

স্বাক্ষর ও তারিখ/- এ. গফুর

১০/১১

ঢাকাস্থ ডিআইবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার

পার্শ্বনোট: ফাইল নং ৭৭১-৪৮ জেনারেল ফাইল থেকে নোটগুলো কপি করা হয়েছে, দেখা হয়েছে। পি ২১০-এর একটি প্রতিলিপি আলোচ্য ব্যক্তির পি-৭ -এ রাখুন। স্বাক্ষর ও তারিখ/- এম ইউসুফ, ১২/১১/৪৯

১৪৭

ঢাকাস্থ ডিআইবির এডিশনাল এসপি ঢাকাস্থ আইবিইবির এসএসকে লিখেন যে, লেখক মুজিবুর রহমান আসলে ছিলেন ইপিএএমএল-এর শেখ মুজিবুর রহমান। উক্ত অফিসার শেখ মুজিবুর রহমানের চিঠির ওপর একটি মন্তব্যে লেখেন যে, যে বাক্যগুলোর নিচে দাগ দেওয়া হয়েছিল সেগুলো দিয়ে তিনি এএমএল-এর দলীয় কর্মকাণ্ড যে ভালোভাবে চলছিল তাই বোঝাতে চেয়েছিলেন। যদিও পূর্ববঙ্গের সব জেলায় দলীয় কর্মকাণ্ডকে পূর্ণ উদ্যমে পরিচালনা করা হয়নি তবুও তাদের লক্ষ্য অর্জিত হয়ে গেছে।

ঢাকা, ৮ই নভেম্বর ১৯৪৯

গোপনীয়

জেলা গোয়েন্দা শাখা

ঢাকা, ৮ই নভেম্বর ১৯৪৮

নং ৮৪০৪/১৬৩-৪৯(আন্তর্জাতিক)/আর. ৬২৮১

বরাবর,

মাননীয় এম. আহমেদ, পিপিএস

এসএস, আইবি,ইবি, ঢাকা

সূত্র: আপনার নম্বর ১৯২০৪(২)/৪৪৭-৪৮ পিএফ (এনএ), তারিখ ২৬/৯/৪৯

লেখক মুজিবুর রহমান আসলে ছিলেন ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র ইপিএএমএল-এর শেখ মুজিবুর রহমান।

যে বাক্যগুলোর নিচে দাগ দেওয়া হয়েছিল সেগুলো দিয়ে লেখক হয়তো ঢাকায় আওয়ামী মুসলিম লীগের দলীয় কর্মকাণ্ড যে ভালো চলছিল তাই বোঝাতে চেয়েছিলেন। এবং যদি লক্ষ্য (কম পক্ষে ১০ লক্ষ সদস্যকে অন্তর্ভুক্তকরণ) অর্জনের জন্য পূর্ববঙ্গের সব জেলায় দলীয় কর্মকাণ্ডকে পূর্ণ উদ্যমে পরিচালনা করা না হয় তাহলে জনসম্মুখে সংগঠকরা বিব্রত হবেন।

স্বাক্ষর ও তারিখ/- এ. গফুর

ঢাকাস্থ ডিআইবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার

৮/১১

১৪৮

পূর্ববঙ্গের অভ্যন্তরীণ অবস্থা সংক্রান্ত ১২/১১/১৯৪৯ তারিখের সাপ্তাহিক রিপোর্ট নং ৩৬-এর সারাংশ যেখানে এ কথা বলা হয়েছিল যে, কংগ্রেসের উচ্চপদস্থ নেতৃবন্দ এএমএল ও পাকিস্তানের কংগ্রেস নেতৃবৃন্দের ব্যাপারে অধিক উৎসাহী ছিলেন। শ্রীশ চ্যাটার্জী ও কংগ্রেসের অন্য দুই নেতার সাথে এএমএল নেতৃবৃন্দের যোগাযোগ রয়েছে বলে তদন্তে বলা হয়।

ঢাকা, ১২ই নভেম্বর ১৯৪৯

পূর্ববঙ্গের অভ্যন্তরীণ অবস্থা সংক্রান্ত ১২ই নভেম্বর ১৯৪৯ তারিখের সাপ্তাহিক রিপোর্ট নং ৩৬-এর সারাংশ। রিপোর্টটি তৈরি করেছিলেন ঢাকায় কর্মরত পাকিস্তান সরকারের গোয়েন্দা শাখার উপপরিচালক। তার নম্বর ১৭৭৭(২)/২-৪৯।

কংগ্রেসের৮৫ উচ্চপদস্থ নেতৃবন্দ পাকিস্তানের আওয়ামী মুসলিম লীগ ও পাকিস্তানের কংগ্রেস নেতৃবৃন্দের ব্যাপারে অধিক উৎসাহী। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশ না নেওয়ার মানে হলো মুসলিম লীগে ফাটল তৈরি করতে সুযোগের সদ্ব্যবহার করা। শ্রীশ চ্যাটার্জী, ভবেশ নন্দী ও মনরঞ্জন ধরের মতো নেতাদের সাথে পূর্ববঙ্গ আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্পাদক শামসুল হক ও যুগ্মসম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ রয়েছে বলে তদন্তে বলা হয়।

১৪৯

পশ্চিম পাঞ্জাবের ১২/১১/১৯৪৯ তারিখের সপ্তাহান্তের গোয়েন্দা রিপোর্টের সারসংক্ষেপ থেকে নেওয়া। সেখানে উল্লেখ করা হয় যে, এনডব্লিউএফপি আওয়ামী লীগের অর্গানাইজিং কমিটির একটি গোপন বৈঠক ৯/১১/১৯৪৯ তারিখে ক্যাম্পবেলপুরে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে পূর্ববঙ্গের শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য এনডব্লিউএফপি কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করতে সংকেতে লিখিত একটি টেলিগ্রাফিক ম্যাসেজের মাধ্যমে ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের এসডিপিওকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

পশ্চিম পাঞ্জাব, ১২ই নভেম্বর ১৯৪৯

পশ্চিম পাঞ্জাবের ১২ই নভেম্বর ১৯৪৯ তারিখের সপ্তাহান্তের গোয়েন্দা রিপোর্ট নং ৪৬-এর সারসংক্ষেপ থেকে নেওয়া।

মুসলিম বিষয়াদি

  • এনডব্লিউএফপি৮৬ আওয়ামী লীগের অর্গানাইজিং কমিটির একটি গোপন বৈঠক ৯ তারিখে ক্যাম্পবেলপুরে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে মানকি শরিফের পীর (প্যারা ৩৬৯), লৌন্দখোরের গুলাম মোহম্মদ (প্যারা ৩৪২), পূর্ববঙ্গের শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য এনডব্লিউএফপি কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সীমান্ত প্রদেশের সরকার কর্তৃক এন.ডব্লিউ.এফপিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আছে লৌন্দখোরের গুলাম মোহম্মদের উপর। এন.ডব্লিউ.এফ.পি.র মন্ত্রণালয়কে ক্ষমতাচ্যুত করতে এবং মুসলিম লীগের বিরোধী দলগুলোকে সংগঠিত করে পাঞ্জাব৮৭ ও সিন্ধু প্রদেশে৮৮ আওয়ামী লীগ গঠন করতে বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয় এতে। পোস্টার বিতরণ করা হয় সেখানে। অন্যান্য কিছুর সাথে পোস্টারে এন.ডব্লিউএফ.পি.র মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটাক্ষ-বিদ্রূপ করা হয়েছিল।

শেখ মুজিবুর রহমানের পিএফ-এর পি ৩৪৪এর এক্সটেনশন বি দেখা হয়েছে।

স্বাক্ষর ও তারিখ/- এম.ওয়াই. ১৩/১২

—————

  1. কংগ্রেস: ব্রিটিশ রাজের সময়ে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে ছিলেন এলান অক্টাভিয়ান হিউম (থিয়োসোফিকাল সোসাইটির একজন বিশিষ্ট সদস্য), দাদাভাই নওরোজি ও দিনশাও এদুলজি ওয়াচা। উনবিংশ শতকের শেষে ও বিংশ শতকের মাঝামাঝিতে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কংগ্রেস অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে এই দল তার ১.৫ কোটি সদস্য ও ৭ কোটি অংশগ্রহণকারী নিয়ে আন্দোলন পরিচালনা করে। ১৯৪৭-এর স্বাধীনতার পর কংগ্রেস ভারতের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়।
  2. এন.ডব্লিউ.এফ.পি.: উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ছিল ব্রিটিশ ভারতের একটি প্রদেশ। ১৯০১ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আট বছর ধরে পাকিস্তানের অধীন স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ হিসেবে থাকার পরে ১৯৫৫ সালে তা বিলুপ্ত হয়। পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অষ্টাদশ সংশোধনী স্বাক্ষরিত হওয়ার পরে ২০১০ সালের ১৯ই এপ্রিলে উক্ত এলাকা খায়বার পাখতুনখোয়া নামে পরিচিত হয়।
  3. পশ্চিম পাঞ্জাব: ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত পশ্চিম পাঞ্জাব ছিল পাকিস্তানের একটি প্রদেশ। লাহোর ছিল এর রাজধানী। প্রদেশটি চারটি বিভাগে বিভাজিত (লাহোর, সারগোদা, মুলতান ও রাওয়ালপিন্ডি)। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশটি ভেঙে নতুন দুইটি প্রদেশ হয়। শিখ ও হিন্দু অধ্যুষিত পূর্ব পাঞ্জাব ভারতের অংশ হয় যেখানে মুসলিম অধ্যুষিত পশ্চিম পাঞ্জাব পাকিস্তান শাসিত রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়।
  4. সিন্ধু প্রদেশ: পাকিস্তানের চারটি প্রদেশের একটি হলো সিন্ধু প্রদেশ। দেশটির দক্ষিণ-পূর্বে এর অবস্থান। ঐতিহাসিকভাবে এটি সিন্ধি জনগোষ্ঠীর আবাসভূমি। এর স্থানিক নাম মেহরান। করাচি এর রাজধানী।

১৫০

ঢাকাস্থ ডিআইবির অতিরিক্ত এসপি ঢাকার আইবিইবির এসএসপিকে একটি ম্যামো পাঠান যেখানে তিনি এ কথা অবহিত করেন যে, শেখ মুজিবুর রহমান ও বাহাউদ্দীন আহমদের মুক্তির পর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয় নি।

ঢাকা, ১৬ নভেম্বর ১৯৪৯

গোপনীয়

জেলা গোয়েন্দা শাখা

ঢাকা, ১৬/১৭ই নভেম্বর ১৯৪৯

নং ৮৭৩১/২৫-৪৯(৫)

বরাবর

খান সাহিব মো. ইউসুফ

এস.এস., আই.বি., ই.বি., ঢাকা

সূত্র: আপনার নং ১৬৯৬৯/৬০৬-৪৮ পি.এফ. (জে), তারিখ ২৬/৮/৪৯ এবং পরবর্তী নির্দেশের তারিখ ২৮/১০/৪৯

এই বিষয়ে ২৭/৬/৪৯ তারিখের ডি.আই.আর.১১৮-এর প্যারা ২ অনুগ্রহপূর্বক নির্দেশ করুন। শেখ মুজিবুর রহমান ও জনাব বাহাউদ্দীন আহমদের মুক্তির পর ২৬/৬/৪৯ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয় নি।

স্বাক্ষর ও তারিখ/- ১৭/১১

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার

ডিআইবি, ঢাকা