গোপন নথিসমূহ ১ম খণ্ড (০১-৫০)

  1. জনাব ফজলুল হক: পুরো নাম এ.কে. ফজলুল হক। শের-এ-বাংলা (বাংলার বাঘ) নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। তিনিই লাহোর প্রস্তাবের প্রথম প্রবক্তা যিনি ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাংশের প্রদেশসমূহ নিয়ে একাধিক মুসলিম অধ্যুষিত স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের আহ্বান করেছিলেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সময়কালের বঙ্গে ১৯৪৩ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচ্ত হয়েছিলেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে তিনি মহাপরিচালক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নিখিল ভারত মুসলিম লীগের কার্যকর কমিটিরও তিনি সদস্য ছিলেন। ১৯২৯ সালে তিনি কৃষক প্রদান পার্টি (কেপিপি) গঠন করেছিলেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রী ও গভর্নর হিসেবে তিনি যুক্তফ্রন্ট সরকারের নেতৃত্ব দেন।
  2. জনাব সোহরাওয়ার্দী: হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীঘ জন্ম সম্ভ্রান্ত বাঙালি মুসলিম পরিবারে। অক্সফোর্ড থেকে তিনি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি বিংশ শতকের প্রথমার্ধ্বে বঙ্গের একজন বিখ্যাত রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিক ছিলেন। ব্রিটিশ রাজের সময়ে তিনি বঙ্গের শেষ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতা অর্জনের পর পর তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একজন নেতৃস্থানীয় কূটনীতিক ছিলেন। তিনি পাকিস্তানের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতা অর্জনের পর মুসলিম লীগ ত্যাগ করে ১৯৫২ সালে তিনি নবগঠিত আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক গুরু ও জনন্দিত একজন বক্তা।
  3. যুগান্তর পার্টি: ঔপনিবেশিক বঙ্গের নেতৃস্থানীয় বৈপ্লবিক দলগুলোর একটি যুগান্তর পার্টি। ‘যুগান্তর’ পত্রিকার নামে দলটির নামকরণ করা হয়েছিল। পতেরিকাটি জঙ্গি জাতীয়তায় উদ্বুদ্ধকরণের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করত। দলটির নেতা বারীন্দ্র সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ হয়ে ও মানবতার মঙ্গলের জন্য ক্ষত্রিয় কর্তৃক হত্যাকে ন্যায্যতা দিয়ে ধর্মীয় অনুপ্রেরণার সাথে ব্রিটিশ উপনিবেশের কবল থেকে ভারতকে মুক্ত করার শপথ নেন। বৈপ্লবিক উদ্দীপনা নিয়ে তিনি ভারত ভাগ বিরোধী আন্দোলনের প্রবর্তন করেন। তিনি ও তাঁর অনুসারীবৃন্দ অস্ত্রশস্ত্র ও বিস্ফোরক সংগ্রহ করেন এবং বোমা তৈরি করেন। এভাবে যুগান্তর নামের একটি সন্ত্রাসী দলের ভিত্তি তৈরি করেন।
  • শামসুল হক: শামসুল হক ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রথম মহাসচিব। ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকগুলোতে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। বাঙ্গালী রাজনীতিবিদ হিসেবে ১৯৫০-এর দশকে ভাষা আন্দোলনের সময়ে বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতিদানের পক্ষে কথা বলতে পাকিস্তান গণপরিষদে আয়োজিত একটি সংসদীয় সভায় তিনি নেতৃত্ব দান করেন। ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য তিনি কারা বরণ করেছিলেন ও মানসিক সমস্যায় পীড়িত হয়েছিলেন। টাঙ্গাইল জেলায় ১৯৬৫ সালের কোনো এক সময় তিনি মৃত্যু বরণ করেছিলেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
  • নবাব: ক্ষমতাশীল মোঘল সম্রাট কর্তৃক দক্ষিণ এশিয়ার রাজপ্রদেশসমূহের অর্ধস্বায়ত্তশাসিত মুসলিম শাসকদের জন্য অনুমোদিত ও প্রদত্ত সম্মানসূচক উপাধি। সাধারণত পুরুষদের জন্য নবাব শব্দটি ব্যবহৃত হত। এর স্ত্রীতুল্য শব্দ হলো বেগম। একটি নির্দিষ্ট প্রদেশের প্রশাসনের দায়িত্বভার বহন করার সাথে সাথে মোঘল সাম্রাজ্যের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাই ছিল একজন নবাবের প্রধান দায়িত্ব।
  • নাইট: সম্রাট বা অন্য রাজনৈতিক নেতা কর্তৃক কোনো ব্যক্তিকে সাম্রাজ্যের বা দেশের প্রতি তাঁর বিশেষ অবদানের জন্য, বিশেষ করে সামরিক ক্ষেত্রে অবদানের জন্য, নাইটহুড নামক সম্মানসূচক উপাধি প্রদান করা হলে উক্ত ব্যক্তি নাইট নামে পরিচিত হবেন। ঐতিহাসিক বিবেচনায় ইউরোপে ঘোড়সওয়ার যোদ্ধাদের এই পদবী প্রদান করা হয়।
  • খান বাহাদুর: খান (নেতা) ও বাহাদুর (সাহসী) এই দুটো শব্দের সংযোগে সাধিত খানবাহাদুর শব্দটি ভক্তি ও সম্মানের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি আনুষ্ঠানিক উপাধি যা বিশেষ করে ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের মুসলিম প্রজাদেরকে প্রদান করা হতো। এই উপাধিটি খানা হিব্রু উপাধিটির থেকে এক স্তর উঁচু মাত্রার।
  • হামিদুল হক চৌধুরী (১৯০১-১৯৯২): হামিদুল হক চৌধুরী ১৯৩৭ সালে বঙ্গের আইনসভা সমিতিতে নির্বাচিত হন (সমিতির উপসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন) এবং ১৯৪৬ সালে একই সমিতিতে পুনঃনির্বাচিত হয়। স্যার কাইরাল রেডক্লিফ সীমান্ত কমিশনের পূর্বে ১৯৪৭ সালে হামিদুল হক মুসলিম লীগের প্রতিনিধিত্ব করতেন। ১৯৪৭-এর দেশবিভাগের পর তিনি সপরিবারে পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ)-এর  ঢাকায় চলে আসেন। পাকিস্তান গণপরিষদে তিনি নির্বাচিত হন এবং পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার একজন সদস্য ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধী ছিলেন।
  • Dominion status: ব্রিটিশ রাজের অধীনে থাকা অর্ধ-স্বাধীন রাষ্ট্রব্যবস্থার দেশগুলোই ডোমিনিয়ন। এই ডোমিনিয়নগুলোই ব্রিটিশ সাম্রাজ্য গঠন করে যার যাত্রা শুরু হয় ১৮৬৭ সালে কানাডিয়ান কনফেডারেশন গঠনের মাধ্যমে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, নিউফাউন্ডল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, আইরিশ ফ্রি স্টেট এবং পরবর্তী সময়ে ১৯৪০ সাল থেকে ভারত, পাকিস্তান ও সিংহল (বর্তমানের শ্রীলঙ্কা) ডোমিনিয়ন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯২৬ সালে বেলফুর ঘোষণার মাধ্যমে ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস আনুষ্ঠানিকভাবে সংজ্ঞায়িত হয়।এই রাষ্ট্রগুলো ‘ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল’ হিসেবে উক্ত ঘোষণায় স্বীকৃত হয়। এভাবেই যুক্তরাজ্যের মতো রাজনৈতিক সাম্য দেশগুলোর আছে বলে ঘোষিত হয়।
  • আবওয়াব: এটি একটি আরবি শব্দ। জমিদার কর্তৃক জমির মালিক বা প্রজার উপর ধার্যকৃত করই আবওয়াব।
  •  
  •  
  •  
  • আতাউর রহমান খান (১৯০৭-১৯৯১): রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সহসভাপতি। সর্বদলীয় ভাষা আন্দোলন কার্যকরী কমিটির মুখ্য সদস্য ও যুক্তফ্রন্টের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গঠিত  নতুন দল ‘বাকশাল’-এ যোগ দিয়েছিলেন তিনি।লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মন্ত্রিসভায় অংশ নিয়ে তিনি নয় মাস প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
  • বাহাউদ্দীন আহমেদ (১৯২৬-১৯৯৮): ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত কাজী বাহাউদ্দীন আহমেদ বরিশালের ভাষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় ব্যক্তিত্ব। ১৯৫৪ সালে পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন বিভাগের সহপরিচালক হিসেবে তিনি নিয়োগ লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি একই বিভাগে মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাংস্কৃতিক মননের অধিকারী এই ব্যক্তি ধ্রুপদী সংগীতের প্রতি তাঁর ঐকান্তিক আগ্রহের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।
  • বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ: সামরিক সেবায় বাধ্যতামূলকভাবে নিযুক্ত ও অন্তর্ভুক্ত হওয়া। কিছু রাষ্ট্র রয়েছে যাদের নাগরিকের পক্ষ থেকে বিশেষ সংখ্যায় সামরিক সেবার প্রয়োজন হয়, বিশেষ করে যুদ্ধ চলাকালে বা যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিলে। সম্পূর্ণরূপে স্বেচ্ছাসেবক একটি সেনাবাহিনী যে জাতির আছে তার সাধারণত জনগণের পক্ষ থেকে বাধ্যতামূলক সামরিক সেবার প্রয়োজন হয় না, যদি যুদ্ধের সময়ে তা সেনানিয়োগ সংকটে না পড়ে। ইসরায়েল, উত্তর কোরিয়া ও নরওয়েসহ ২৬টি দেশে বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ পদ্ধতি রয়েছে।
  • এস.ডি.ও.: ভৌগোলিকভাবে একটি জেলা কয়েকটি মহকুমায় বিভাজিত ছিল যাকে ইংরেজিতে sub-division বলে। মহকুমার দায়িত্বপ্রাপ্ত সর্বোচ্চ কর্মকর্তাকে এস.ডি.ও. বলে।এস.ডি.ও. ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টরের (ডিসি) সহায়তায় নিয়োজিত একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং জেলার প্রশাসনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশ আদেশ ১৯৮২-এর অধীনে মহকুমা বিলুপ্ত করা হয় এবং সেগুলো নতুন জেলা হিসেবে নির্ধারিত হয়।
  • বেসামরিক প্রতিরক্ষা: রাষ্ট্রের নাগরিকদের (সাধারণত অসামরিক জনগণ) সামরিক আক্রমণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার একটি প্রচেষ্টা হলো বেসামরিক প্রতিরক্ষা।জরুরি অপারেশনের নীতিগুলো এক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেমন: প্রতিরোধ, প্রশমন, প্রস্তুতি, প্রত্যুত্তর বা জরুরি স্থানান্তর ও পুনরুদ্ধার। শীতল যুদ্ধের পর থেকে বেসামরিক প্রতিরক্ষা বেশি নজর দিয়ে থাকে সামরিক আক্রমণ থেকে শুরু করে জরুরি অবস্থা ও দুর্যোগের প্রতি।

পৃষ্ঠা ৬১

২৫

ডব্লিউসিআর ও ইস্ট বেঙ্গল পুলিশ থেকে নেওয়া আইবিইবি, ঢাকার গোয়েন্দা রিপোর্টের সারসংক্ষেপ। অন্যান্য তথ্যের সাথে এই রিপোর্টে এ কথা উল্লেখ করা হয় যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত একটি ছাত্রসভায় শেখ মুজিবুর রহমান তাদের একত্রিত হতে আহ্বান করেন। সরকারের শিক্ষানীতির সমালোচনা করে তিনি ছাত্রদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাসমূহ প্রত্যাহারপূর্বক তাদের তাৎক্ষণিক মুক্তির জন্য হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

ঢাকা, ১লা জানুয়ারি, ১৯৪৯

শনিবারকে সপ্তাহের শেষ দিন ধরে ঢাকা জেলার সাপ্তাহিক গোপন প্রতিবেদন, ১লা জানুয়ারি ১৯৪৯

ইস্ট বেঙ্গল পুলিশের ৩০/১০/৪৮ ও ৬/১১/৪৮ তারিখের যথাক্রমে ৪১ ও ৪২ নং গোপনীয় প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ ২৮/১২/৪৮ তারিখে গৃহীত হয় এবং (২০/১০/৪৮ তারিখের ৪০ নংটি এখনও ছাপাখানায়। আইবি নং ১৭৫৪০ দ্রষ্টব্য (৩০), তারিখ ২৮/১০/৪৮)

  • ছাত্র ও যুবক আন্দোলন

৩/  নারায়ণগঞ্জের ডিআইও ২৬/১২/৪৮ তারিখের প্রতিবেদনে এ কথা উল্লেখ করেন যে, ই.পি. মুসলিম ছাত্রলীগের আনুকূল্যে নারায়ণগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরিতে ২৫/১২/৪৮ তারিখে কায়েদ-এ-আজমের জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষ্যে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শেখ মুজিবুর রহমান নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র সভাপতিত্ব করে। ই.পি.এম. ছাত্রলীগের নারায়ণগঞ্জ শাখার সম্পাদক এ. কে. এম. বজলুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু নাসের, মোহাম্মদ ওয়াহেদ, নারায়ণগঞ্জ এইচ.ই. স্কুলের শিক্ষক মনীন্দ্র ভৌমিক ও সভাপতি প্রয়াত কায়েদ-এ-আজমের জীবন ও কর্মের ওপর সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন। তাঁরা সবাই উপস্থিত শ্রোতাদের পাকিস্তান রাষ্ট্রগঠনে প্রয়াত কায়েদ-এ-আজমের নির্দেশনা এমনভাবে পালনের জন্য আহ্বান জানান যেন তা চিরকাল টিকে থাকে। দেশের প্রকৃত স্বাধীনতার জন্য যুধ্যমান আজাদ কাশ্মীর ফোর্স ৪২ কে সাহায্য করার জন্য যে কাশ্মীর ফান্ড গঠন করা হয়েছে তাতে অসঙ্কোচে অবদান রাখতে বক্তারা শ্রোতাদের আহ্বান করেন।

মার্জিনে মন্তব্য: ইপিএমএসএল-এর ফাইল হতে নেওয়া।   শেখ মুজিবুর রহমানের পার্সনাল ফাইল, স্বাক্ষর ও তারিখ ২৬/১/৪৯।

৪২/ আজাদ কাশ্মীর ফোর্স: আজাদ কাশ্মীর রেজিম্যান্ট অফ পাকিস্তান আর্মির পূর্বতন নাম ছিল আজাদ কাশ্মীর ফোর্স বা আজাদ কাশ্মীর রেগুলার ফোর্স (একেআরএফ)।একেআরএফের মতোই এটা আজাদ জম্মু ও কাশ্মীর প্রদেশের আধাসামরিক বাহিনীর অংশ ছিল। পদাতিক বাহিনী হিসেবে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ-পাকিস্তান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এটা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে একীভূত হয় এবং আজাদ কাশ্মীর রেজিমেন্ট বা একে রেজিম্যান্ট নামে পুনরায় নামকরণ করা হয় এর।

পৃষ্ঠা ৬২

শনিবারকে সপ্তাহের শেষ দিন ধরে ইস্ট বেঙ্গল পুলিশ থেকে নেওয়া ৩৫ নং গোপনীয় প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ। তারিখ ১লা জানুয়ারি ১৯৪৯, ঢাকা

৯৫/ ঢাকা। ঢাকা শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানর ছাত্রদের (৫০০) একটি সভা ৮ই জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৫০ জন ছাত্রীও অংশ নেয়। নাইমুদ্দীন আহমেদ (প্যারা ৯৫)-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় শেখ মুজিবুর রহমান ও নাদিরা বেগম ছাত্রদের জোটবদ্ধ হতে নিজ নিজ বক্তৃতায় আহ্বান করেন। তাঁরা সরকারকে হুশিয়ার করে দেন এই বলে যে, এক মাসের মধ্যে তাঁদের দাবি-দাওয়া মেনে না নিলে তাঁরা ডাইরেক্ট অ্যাকশনের আশ্রয় নেবেন। সরকারের শিক্ষানীতির সমালোচনাও তাঁরা করেন। দলের মধ্যে কমিউনিস্ট অনুপ্রবেশ হটানোর জন্য মুজিবুর রহমান ছাত্রদের সতর্ক থাকতে বলেন। সভায় নিম্নরূপ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়: ১. ছাত্রদের বিরুদ্ধে সর্বপ্রকার অমীমাংসিত মামলা তুলে নেওয়া এবং জেল থেকে তাদের অনতিবিলম্বে মুক্তিদান, ২. ছাত্রদের বিরুদ্ধে সরকার কর্তৃক ছাপিয়ে দেওয়া দমনমূলক নীতি বন্ধ করা এবং ৩. তাৎক্ষণিক ভিত্তিতে জাতীয় মেডিক্যাল বিদ্যালয়ের অধিগ্রহণ প্রত্যাহার ও ঢাকাতে অবস্থিত স্কুল-কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত আবাসনের ব্যবস্থা করা। সভা অনুষ্ঠানের পূর্বে ছাত্রছাত্রীরা শহর প্রদক্ষিণ করে ও গতানুগতিক মিছিলি স্লোগান দেয়। রণেন্দ্র বসু (সিপি) ও নিতাই গাঙ্গুলি (আরএসপি) উক্ত সভায় যোগ দান করেন।

পৃষ্ঠা ৭৫

৩০

দৈনিক জিন্দেগী পত্রিকায় ১০/১/১৯৪৯ তারিখে ‘দমন নিবারণ’ উপকমিটির চেয়ারম্যান শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বক্তব্য প্রকাশিত হয়।

ঢাকা, ১০ জানুয়ারি ১৯৪৯

জিন্দেগী, তারিখ ১০/১/১৯৪৯

মার্জিনে মন্তব্য: শেখ মুজিবুর রহমান, যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাঁর পার্সনাল ফাইলে আছে। এসএস-৩ দ্রষ্টব্য। স্বাক্ষর ও তারিখ ১২/১

পৃষ্ঠা ৭৬

৩১

১৫/১/১৯৪৯ তারিখ থেকে কার্যকর ডিআইবি, রংপুরের ডব্লিউসিআর যেখানে এ কথা উল্লেখ ছিল যে, ইপিএমএসএল-এর রংপুর শাখা ইপিএমএসএল-এর অধীনে ছাত্রদের একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে দলের আহ্বায়কের স্বাক্ষর সমেত একটি ঘোষণা জারি করে। এতে রাজশাহী কলেজের কিছু ছাত্রদের দমন, গ্রেফতার ও বহিষ্কার করার জন্য রাজশাহী জিলা কর্তৃপক্ষকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

রংপুর, ১৫ জানুয়ারি ১৯৪৯

  1. লিফলেট ও প্যামফলেট

ডব্লিউসিআর, রংপুর, ১৫/১/১৯৪৯ তারিখকে সপ্তাহের শেষ দিন ধরে

১.২.৩.৪.
শিরোনামভাষাযে দল এই কাজের জন্য দায়বদ্ধমূল বক্তব্য
 বাংলা  
মুসলিম ছাত্র সমাজের প্রতি নিখিল পূর্ব্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের রংপুর জিলা শাখার আবেদন। ইপিএমএসএল-এর ফাইল ও মুজিবুর রহমানের পিএফ-এ এর উদ্ধৃতি পাওয়া যেতে পারে। স্বাক্ষর তারিখসমেত ২৮/১ পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, রংপুর শাখা ৬০৬/৪৮ পিএফপূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, রংপুর শাখার আহ্বায়ক মো. মুজিবুর রহমানের স্বাক্ষরে এই ঘোষণাটি জারি হয়। এতে ‘ইস্ট পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’ নামক দলটির হয়ে র্যালিতে অংশ নিতে ছাত্রদের আহ্বান জানানো হয়। এই দলটিরই একটি শাখা ৫/১/৪৯ তারিখে রংপুরে গঠিত হয়। ছাত্রদের একমাত্র প্রতিনিধিত্বশীল দল ও পাকিস্তানের স্বার্থ সর্বাধিক রক্ষা করতে পারবে বলে এই লীগ নিজেদের দাবি করে। অবিভক্ত বঙ্গে এই দলটি ‘নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগ’ নামে পরিচিত ছিল। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই দলটি জনপ্রিয় ছিল।

II

শিরোনামভাষাযে দল এই কাজের জন্য দায়বদ্ধমূল বক্তব্য
রাজশাহী ছাত্র দমন নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করুন ইপিএমএসএল ফাইল থেকে নেওয়া তারিখ স্বাক্ষরসমেত ২৮/১বাংলাপূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, রংপুর শাখাএতে ২৪/১১/৪৮ তারিখের মিছিলে অংশগ্রহণের জন্য অভিযুক্ত রাজশাহী কলেজের কতিপয় ছাত্রদের দমন, গ্রেফতার ও বহিষ্কার করার জন্য রাজশাহী জিলা কর্তৃপক্ষকে নিন্দা করা হয়।অবশেষে একতাবদ্ধ হতে ও এ ধরনের দমনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে ছাত্রদের আহ্বান করা হয়।

বিলম্ব হওয়াতে ৪/২/৪৯ তারিখে ডিআইজির নিকট থেকে এই ফাইলটি ফিরে আসে। তারিখ স্বাক্ষরসমেত ৫/২

পৃষ্ঠা ৮৮

৩৩

২৯/১/১৯৪৯ তারিখ থেকে কার্যকর ডিআইবি খুলনার ডব্লিউসিআর যেখানে অন্যান্য রাজনৈতিক তথ্যের সাথে এ কথা উল্লেখ ছিল যে, ২৮/১/১৯৪৯ তারিখে খুলনা মিউনিসিপ্যাল পার্কে ঢাকা, ফরিদপুর ও কুমিল্লা থেকে আগত দাবালিয়াদের একটি জমায়েতে শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ দেন। ধান কাটার মজুরি হিসেবে প্রাপ্ত কাটা ধান নিয়ে ঘরে ফিরে যাওয়ার তাদের যে দাবিদাওয়া তা পূরণ করার লক্ষ্যে জিলা ম্যাজিস্ট্রেটের বাসভবন পর্যন্ত তাঁকে অনুসরণ করতে তিনি তাদের আহ্বান করেন।

খুলনা, ২৯ জানুয়ারি ১৯৪৯

বিবিধ

২৯/১/৪৯ তারিখকে সপ্তাহের শেষ দিন ধরে খুলনার ডব্লিউসিআর

২৭/১/৪৯ তারিখে মাননীয় মন্ত্রী শ্রী জগেন্দ্রনাথ মন্ডল খুলনা সফর করেন। মুসলিম ও নমঃশূদ্র৫২রা তাঁকে উষ্ণ সংবর্ধনা জানায়। স্থানীয় মিউনিসিপ্যাল পার্কে অনুষ্ঠিত একটি জনসভায় বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে অভিনন্দন পত্র পাঠ করার মাধ্যমে তাঁকে বরণ করে নেওয়া হয়।

মার্জিনে মন্তব্য

  • নমঃশূদ্র: নমঃশূদ্র (নমঃস্বেজ বা নমস্যুত) হলো একটি ভারতীয় অবর্ণ সম্প্রদায় যার উৎপত্তি তৎকালীন ভারতের বঙ্গ প্রদেশের কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চল থেকে। চাষাবাদ ও মাঝিগিরি তাদের ঐতিহ্যগত পেশা। চতুর্বর্ণ প্রথার বাইরে তারা বসবাস করত ও এজন্য তারা পতিত ছিল।

পৃষ্ঠা ৮৯

উক্ত সভায় ৫০০০ মানুষ অংশ নিয়েছিল। তাঁকে নিয়ে প্রচণ্ড উল্লাসে মত্ত উপস্থিত লোকজনকে উদ্দেশ্য করে মাননীয় মন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন যে, পাকিস্তানের জন্ম মানে হলো হিন্দুদের দলিত শ্রেণির ওপর দীর্ঘ ব্রাহ্মণ্যবাদী আধিপত্যের সমাপ্তির ঘোষণা। হিন্দুদের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়াকে তিনি নিরুৎসাহিত করেন এবং তারা পাকিস্তানে সুষ্ঠু ও ন্যায্য বিচার পাবে বলে হিন্দুদের নিশ্চয়তা দেন।

২৮/১/৪৯ তারিখে ০৮:৪৫ ঘটিকায় ফরিদপুরের গোপালগঞ্জস্থ টুঙ্গিপাড়া নিবাসী শেখ মুজিবুর রহমান খুলনা শহরস্থ টোথপারা নিবাসী নাজিমুদ্দীন সাহেবের পুত্র জনাব শামসুল আলমকে সঙ্গে নিয়ে খুলনা মিউনিসিপ্যাল পার্কে যান এবং সেখানে ফরিদপুর, ঢাকা ও কুমিল্লা থেকে আগত ৩৫০ জন দাবালিদের একটি জমায়েতে ভাষণ দেন। ধান কাটার মজুরি হিসেবে প্রাপ্ত ধান সাথে করে তাদের ঘরে নিয়ে যেতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি লাভ করার তাদের যে দাবিদাওয়া তার জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের বাংলো পর্যন্ত তাঁকে অনুসরণ করতে তিনি তাদের আহ্বান করেন। তারপর ‘আল্লাহু আকবার’ ও ‘আমাদের দাবি মানতে হবে’ স্লোগান দিতে দিতে শেখ মুজিবুর রহমান ও শামসুল আলম দাবালিয়াদের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের বাসভবন পর্যন্ত অগ্রসরমান একটি মিছিলের নেতৃত্ব দেন। তাঁরা দাবালিয়াদের ৫৩ দুঃখ-দুর্দশা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে পেশ করেন যেন মজুরি হিসেবে প্রাপ্ত ধান তারা তাদের সাথে ঘরে তুলতে পারে বা তাদের খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়। সিভিল সাপ্লাই অফিসার ৫৪ কর্তৃক দাবালিয়াদের হয়রানি করার বিষয়টি এবং তারাই যে তাদের মজুরি হিসেবে প্রাপ্ত ধান সাথে করে নিয়ে যেতে অনুমতি দেয় না তা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট শেখ মুজিবুর রহমান বিবৃতির আকারে পেশ করেন। শেখ মুজিবুর রহমান ও দাবালিয়াদের উদ্দেশ্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বলেন যে, তাঁর জেলার ধান জেলার বাইরে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার এখতিয়ার নেই তাঁর এবং সরকারি আদেশ অবশ্য পালনীয়। (উক্ত) শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বিকেলেই জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের উত্তরে অসন্তুষ্ট দাবালিয়ারা পুনরায় খুলনা মিউনিসিপ্যাল পার্কে জড়ো হয়। এই মুহূর্তে তাদের জন্য কিছু করতে পারবেন না বলে শেখ মুজিবুর রহমান তাদের জানিয়ে দেন। কিন্তু সরকার ধান সাথে করে নিয়ে যেতে তাদের অনুমতি দিয়েছে কিনা তা জানতে দাবালিয়াদের মুখপাত্রকে তাঁর সাথে সোমবার খুলনায় দেখা করতে বলেন।যেহেতু খুলনায় এসে ধান কাটতে অমানুষিক দুঃখকষ্ট ভোগ করতে হয় সেহেতু ধান কাটার লক্ষ্যে খুলনায় না আসতে তিনি তাদের উপদেশ প্রদান করেন।

ইস্ট বেঙ্গল পুলিশ থেকে নেওয়া ৩৫ নং গোপনীয় প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ। তারিখ শনিবার, ২৯ জানুয়ারি ১৯৪৯, ঢাকা, সপ্তাহের শেষ দিন

  1. খুলনা — ফরিদপুরের গোপালগঞ্জস্থ টুঙ্গিপাড়া নিবাসী শেখ মুজিবুর রহমান (প্যারা ৯৫) ২৮ জানুয়ারিতে ফরিদপুর, ঢাকা ও ত্রিপুরার প্রায় ৩৫০ জন ধানকাটুরেদের খুলনা মিউনিসিপ্যাল পার্কে জড়ো করেন। দাবালিয়াদের অভিযোগ পেশ করার জন্য এবং স্ব স্ব জেলায় নিজেদের প্রাপ্য ধান সাথে করে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি লাভ করতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের বাসভবন অভিমুখে একটি মিছিলে তিনি তাদের নিয়ে যান। জবাবে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমতাশীল সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করার অপারগতা স্বীকার করেন। তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পুনরায় চেষ্টা করবেন বলে শেখ মুজিবুর রহমান তাদের নিশ্চিত করেন এবং ধান কাটার উদ্দেশ্যে খুলনা না আসতে পরামর্শ দেন।

মার্জিনে মন্তব্য

  • দাবালিয়া: বাংলাদেশের কয়েকটি স্থানে ফসল কাটুরেদের বিশেষ করে ধান কাটুরেদের দাবালিয়া নামে ডাকা হয়। দাবালিয়ারা সাধারণত জমির মালিক নয়। ধান কাটার মজুরি হিসেবে তারা কাটা ধানের একটি অংশ পেয়ে থাকে। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ধানের স্থানান্তরের ওপর প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ধান নিয়ে তাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুমতি ছিল না।
  • সিভিল সার্ভিস অফিসার: স্বীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের যোগান দানে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা।

পৃষ্ঠা ৯৭

৩৭

২৬/২/১৯৪৯ তারিখে ফরিদপুরের ডব্লিউসিআর থেকে নেওয়া সপ্তাহান্তের রিপোর্ট। শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ২০/২/১৯৪৯ তারিখে মাদারিপুর এইচ.ই. স্কুলের প্রাঙ্গণে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে নতুন একটি মডেলের ওপর ভিত্তি করে মুসলিম ছাত্রলীগ গঠনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন তিনি। জমিদারি প্রথার বিলোপ সাধন না করায় এবং বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষার চালু করতে সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে তিনি আবারও ছাত্রদের আহ্বান করেন। মাদারিপুর শহরে অবস্থিত মসজিদের সম্মুখের ময়দানে ২১/২/১৯৪৯ তারিখে অন্য একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্য বক্তারা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি, কেবল শহর এলাকায় পৃথক রেশনিং ব্যবস্থা, দুঃশাসন, কর্ডন সিস্টেমের সমালোচনা করেন।

ঢাকা, ২৬ শে ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯

২৬/২/১৯৪৯ তারিখকে সপ্তাহের শেষ ধরে ফরিদপুরের ডব্লিউসিআর থেকে নেওয়া রিপোর্ট

(ঙ) ২০/২/৪৯ তারিখে বিকেলে মাদারিপুর থানার চরমুগরিয়া নামক স্থানের মাদারিপুর সিভিল সার্ভিস অফিসের করণিক আবদুল হামিদ খানের অনুরোধে মাদারিপুর এইচ.ই. স্কুলের প্রাঙ্গণে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ১৫০ জন মুসলিম ছাত্র  এতে অংশ নেয়। এতে ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ থানার টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। (১) মাদারিপুর থানার চর মুগরিয়া নিবাসী আবদুল হামিদ খান, (২) ইসলামিয়া এইচ.ই. স্কুলের ছাত্র আবদুল ওয়াহাব ওরফে মঞ্জু, (৩) গোপালগঞ্জ এইচ.ই. স্কুলের ম্যাট্রিক পরীক্ষার্থী ইউনুসুর রহমান মোল্লা ও সভাপতিসহ বক্তারা  শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে নতুন একটি মডেলের ওপর ভিত্তি করে মুসলিম ছাত্রলীগ গঠনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন। জীবনের জন্য নিছক প্রয়োজনীয় বস্তুসমূহের যোগান দিতে সরকারের অসামর্থ্যের বিরুদ্ধে সাহসী পদক্ষেপ নিতে তারা উপস্থিত ছাত্রদের আহ্বান জানান। জমিদারি প্রথার বিলোপ সাধন না করায়, বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা ও মিলিটারি ট্রেনিং চালু না করায় এবং দেশের প্রতিরক্ষার জন্য অস্ত্রের যোগান না দেওয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শেখ মুজিবুর রহমান আবারও ছাত্রদের আহ্বান করেন।

(চ) ২১/২/৪৯ তারিখে মাদারিপুর থানার চর মুগরিয়া নিবাসী মাদারিপুর সিভিল সাপলাইস অফিসের করণিক আবদুল হামিদের আহ্বানে অন্য একটি সভা মাদারিপুর শহরের মসজিদ সম্মুখস্থ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ ও আইন বিষয়ে অধ্যয়নরত ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ থানার টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। কয়েক জন হিন্দুসহ প্রায় ৬০ জন উক্ত সভায় অংশ নেয়। মাদারিপুর জেলা নিবাসী শ্রীসতীশের পুত্র ইএসপি ফণীভূষণ মজুমদার (এমজেপি),মাদারিপুর জেলা নিবাসী উকিল শ্রী যোগেশের পুত্র রামকৃষ্ণ মজুমদার (সিপি), মাদারিপুর থানাধীন খয়েরভাঙ্গা নিবাসী মৃত কেদারেশ্বরের পুত্র অরুণ সেন  (এমজেপি) এবং মাদারিপুর শহর নিবাসী কার্তিকচন্দ্র সাহা (এমজেপি)-ও সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভায় মাদারিপুর থানার জাফরাবাদ নিবাসী হেফিজুদ্দীনের পুত্র কবিরউদ্দীন আহমেদ ওরফে তারা মিঞা, গোপালগঞ্জ থানাধীন কালপুরস্থ গোপালগঞ্জ উপবিভাগীয় মুসলিম ছাত্র লীগের সভাপতি ইউনুসুর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ ও আইন বিষয়ে অধ্যয়নরত গোপালগঞ্জ থানার টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমান বক্তৃতা করেন। সভায় সব বক্তারা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি, কেবল শহর এলাকার জন্য সীমাবদ্ধ বর্তমান রেশনিং ব্যবস্থা, খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ ও বিতরণের সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারের নীতি নিয়েও সমালোচনা করেন।

বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে একত্রিত হতে এবং যাবতীয় দুঃশাসন ও স্বেচ্ছাচারিতা দূর করতে উপস্থিত জনতাকে শেখ মুজিবুর রহমান আহ্বান করেন। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বেতন থেকে কিছু অংশ কর্তন হওয়া উচিত এবং অধীনস্থ ও ভৃত্যদের প্রদেয় বৃদ্ধি হওয়া উচিত এই মর্মে তিনি বক্তৃতা দান করেন। জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় বস্তু সরবরাহ না করার জন্য, অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা ও বাধ্যতামূলক মিলিটারি প্রশিক্ষণ চালু না করার জন্য যে কেবল তিনি জনগণকে সোচ্চার হতে আহ্বান জানান তা নয় বরং কর্ডন সিস্টেম অপসারণ করার জন্য ও প্রতিটি গ্রামে রেশনিং সিস্টেম চালু করার জন্যও সোচ্চার হতে তিনি আহ্বান করেন। জনগণের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ দাবি করে উক্ত সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

পার্শ্ব নোট:  ১. মুজিবুর রহমানের ফাইলে ঙ) ও চ) নং প্যারা থেকে নেওয়া

  • এইরূপ জনসভা আয়োজনে সিভিল সাপ্লাই বিভাগের করণিকদের কার্যক্রম অদ্ভুত হতে পারে ও তা সরকারের নজরে নিয়ে আসতে হবে।

৩৮

৫/৩/১৯৪৯ তারিখে ডিআইবি, ঢাকার ডব্লিউসিআর থেকে নেওয়া সপ্তাহান্তের রিপোর্ট যেখানে এ কথা উল্লেখ করা হয় যে, ২৭/২/১৯৪৯ তারিখে নারায়ণগঞ্জে ইপিএমএসএল একটি সভা করেছিল, ঢাকা মুসলিম হলের নির্বাচন ১/৩/১৯৪৯ তারিখে অনুষ্ঠিত হয় এবং ইপিএমএসএল কর্তৃক আয়োজিত অন্য একটি সভা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল্ডিঙে অনুষ্ঠিত হয় যেখানে শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োজিত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবিদাওয়া বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অগ্রাহ্যতার সমালোচনা করেন।

ঢাকা, ৫ মার্চ ১৯৪৯

৫/৩/১৯৪৯ তারিখে ঢাকা জেলার ডব্লিউসিআর-এর সপ্তাহান্তের রিপোর্ট থেকে নেওয়া

৮*. যুবক ও ছাত্র আন্দোলন

  1. একজন ডি.আই.ও আরও রিপোর্ট করেন যে, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় ২৭/২/৪৯ তারিখে সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইপি ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জনাব ফয়েজ আহমদ বি.এল. উক্ত সভার সভাপতি ছিলেন। বর্তমান সরকারের খাদ্যনীতির সমালোচনা করে  এবং দরিদ্র লোকেদের পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রদান করতে অক্ষম হলে মন্ত্রীদের পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে মোহাম্মদ আলী, আজাহার হুসাইন ভুঁইয়া, অমরেন্দ্র ব্যানার্জি (আরএসপি) ও এম.এ. জহির উক্ত সভায় বক্তৃতা করেন।
  2. একজন ডি.আই.ও. রিপোর্ট করেন যে, ১/৩/৪৯ তারিখে সন্ধ্যায় ঢাকা সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জনাব আবদুর রহমান, একজন এম.এ. পরীক্ষার্থী ও আইন বিভাগের একজন ছাত্র (পার্টিসমেত ইপিএমএসএল-এর সমর্থক) নির্বাচনে জনাব রেজাউর রহমান ও তাঁর দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোটপ্রদানের ফলাফল ২/৩/৪৯ তারিখে ঘোষিত হবে।
  3. ৩/৩/৪৯ তারিখে একজন ডি.আই.ও. রিপোর্ট করেন যে, ২/৩/৪৯ তারিখে ১৩:৩০ ঘটিকায় ইপিএমএসএল-এর প্রায় ১৫০জন ছাত্রের উপস্হিতিতে একটি সভা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিল্ডিঙে অনুষ্ঠিত হয়। সভার সভাপতি ছিলেন ইপিএমএসএল-এর আহ্বায়ক মো. নাইমউদ্দীন আহমেদ যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে অধ্যয়নরত একজন ছাত্র।ইপিএমএসএল-এর সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান উক্ত সভায় বক্তৃতা প্রদান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োজিত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অবস্থার উন্নতির বিষয়ে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার সমালোচনা করে সভায় বলা হয় যে, কর্মচারীদের ধর্মঘটের ফলে ছাত্রদের অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করতে হবে। আর তাই কর্তৃপক্ষ যেন বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আসে সেজন্য তারা অনুরোধ জানায়।

সভাভঙ্গের পর জনাব নাইমউদ্দীনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের বিষয়টির প্রতিনিধিত্ব করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু তিনি প্রেরিত প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করতে অস্বীকৃত হন।

যেহেতু ডি.আই.ও. সভায় যেতে অসমর্থ হন সেহেতু পরবর্তী কালে অন্য উৎস থেকে সভার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে হয়েছিল।

*৮ তথ্যের ওপর নির্ভর করে ডব্লিউসিআরের বিভিন্ন রকম শিরোনাম হয়ে থাকে। ‘যুবক ও ছাত্র আন্দোলন’ ডব্লিউসিআর ফর্মের ৮ম শিরোনাম। সংশ্লিষ্ট তথ্য হিসেবে এই অনুচ্ছেদে এর কথাই উল্লেখ করা হয়।

৩৯

ইস্ট বেঙ্গল পুলিশের ৫/৩/১৯৪৯ তারিখের সপ্তাহান্তের গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকে নেওয়া

ঢাকা, ৫ মার্চ ১৯৪৯

শনিবারকে সপ্তাহের শেষ দিন ধরে ইস্ট বেঙ্গল পুলিশ থেকে নেওয়া ৩৫ নং গোয়েন্দা রিপোর্টের সারাংশ, শনিবার, ঢাকা, ৫ মার্চ ১৯৪৯

  • ঢাকা — ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র, ইপিএমএসএল-এর আহ্বায়ক নাইমউদ্দীন আহমেদের (প্যারা ৯৫) সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয় ভবনে ২রা মার্চ ইপিএমএসএল-এর ১৫০ জন ছাত্রের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইপিএমএসএল-এর সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান (প্যারা ৩৬৯) ও অন্যরা উক্ত সভায় অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োজিত কর্মচারীদের দাবিদাওয়া অনতিবিলম্বে পূরণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়। কারণ কর্মচারীদের প্রস্তাবিত ধর্মঘট মানেই ছাত্রদের নানাবিধ দুর্ভোগ।

(একই রিপোর্ট শিরোনাম নং ৩৮-এর সিরিয়াল নং ৩-এ বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে)

৪০

১২/৩/১৯৪৯ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নবাবপুর রোড ও সদরঘাটের দিকে প্রদক্ষিণরত একটি মিছিলবিষয়ক প্রতিবেদন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্রদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। নাদিরা বেগম ও অন্য ছাত্র নেতারা উক্ত সভায় বক্তৃতা করে। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার সমর্থনে তাদের সবাই বক্তৃতা করে। তারা খাদ্য ও বস্ত্রের বিষয়ে সরকারের নীতির সমালোচনা করে।

ঢাকা, ১২ মার্চ ১৯৪৯

বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত ১২ই মার্চের সভার রিপোর্ট।

সদরঘাট দিয়ে যাওয়ার সময় শেখ মুজিবুর রহমান, দাবিরুল ইসলাম ও কল্যাণ দাস গুপ্তের নেতৃত্বে ২০০ ছাত্রের একটি মিছিল ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’, ‘পুলিশ জুলুম চলবে না’ ও ‘ভাইস চ্যান্সেলরের বিশ্বাসঘাতকতা চলবে না’ ইত্যাদি স্লোগান  দিতে দিতে নবাবপুর রোড়ের দিকে যাচ্ছিল। ১২:০০টার সময় এফ.এইচ. হল পর্যন্ত আমরা তাদেরকে অনুসরণ করি।তারা হলে প্রবেশ করে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য একটি সভায় অংশগ্রহণের জন্য আমরা সেখানে যাই।

১৩:০০টার সময় জনাব দ্বারিকা নাথ বারারির পুত্র মৃণালকান্তি বিশ্বাসের নেতৃত্বে যুবকদের একটি দল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে এসে উপস্থিত হয়। ১৩:৩০ ঘটিকায় ১৫জনের মতো বালক সহকারে প্রায় ১০০জন ছাত্রীর একটি মিছিল নাদিরা বেগমের নেতৃত্বে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, আরবী হরফ চলবে না, পুলিশ জুলুম চলবে না’, ‘Students Federation’ ৫৮ এবং ‘ছাত্র সংঘ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে দিতে একই প্রাঙ্গণে এসে উপস্থিত হয়। তারা প্রাঙ্গণে একটি সভায় এসে জড়ো হয় যেখানে নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গ বক্তৃতা প্রদান করেন:-

মার্জিনে মন্তব্য: 

  • Students Federation- পাকিস্তানের প্রথম ছাত্র রাজনৈতিক দল ছিল Muslim Students Federation। ১৯৪৭ সালে শুরু হয়ে মুসলিম লীগের সহযোগী ছাত্র সংগঠন হিসেবে Muslim Students Federation পাকিস্তানে বেশ জনপ্রিয় ছিল। ক্ষমতায় আসার অল্প কিছু সময় পর মুসলিম লীগে ফাটল ধরা পর্যন্ত এই জনপ্রিয়তা অটুট ছিল। ১৯৫০ সালে দুই ধরনের ছাত্র রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটে: বামপন্থী মার্কসবাদী দল যেমন:  Democratic Students Federation এবং ডানপন্থী ধর্মভিত্তিক দল যেমন: ইসলামী জমিয়াত-এ-তালাবা।
  1. আফজাল হোসাইন
  2. নাদিরা বেগম
  3. জগন্নাথ ইন্টারমেডিয়েট কলেজের মোকলেসুর রহমান
  4. ঢাকা ইন্টারমেডিয়েট কলেজের রফিকুল ইসলাম
  5. আর্মানিতোলা এইচ.ই. স্কুলের নুরুল হক
  6. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি.এ. প্রথম বর্ষের ছাত্র বাহাউদ্দীন

রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার সমর্থনে এদের সবাই ভাষণ দেয়। খাদ্য ও বস্ত্রের ব্যাপারে সবাই সরকারের নীতির সমালোচনা করে। চীন ও বার্মা সমাজবাদী আন্দোলনের প্রসঙ্গ টানে সবাই। বাংলায় একটি শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজন বলে সবাই যার যার বক্তব্যে জোর দেয়।

সভা শেষ হওয়ার পর নাদিরা বেগমের নেতৃত্বে ভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে সবাই এসেম্বলি হলের দিকে অগ্রসর হয়। সভাকক্ষের সামনে এসে মিছিল থেমে যায়। নিম্নলিখিত ব্যক্তিবর্গ গ্রেফতার হলে মিছিলকারীরা জোরপূর্বক সামনে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করে।

  1. এ.কে.এম. মনিরুজ্জামান চৌধুরী, ২. সাইফুল ইসলাম, ৩. সাইদ আফজাল হোসাইন, ৪. একবাল আনোয়ারি খান, ৫. মৃণালকান্তি বারারি, ৬. আবুল খায়ের আবদুস সালাম।অন্য মিছিলকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে ফিরে যায়। দুজন ডব্লিউসি শামসুল আলম ও মুজাফফর আহমেদকে ঘটনাস্থলে মিছিলকারীদের আন্দোলন পর্যবেক্ষণ করতে বলে আমরা রিপোর্ট জমা দেওয়ার লক্ষ্যে অফিসে ফিরে যাই।

অফিস

মুজিবুর রহমানের পার্সনাল ফাইল থেকে নেওয়া

স্বাক্ষর তারিখসমেত এম.এ.এইচ.

১৬/৩

পেশকৃত

স্বাক্ষর তারিখসমেত

মো. ইউনুস, এস.আই.

স্বাক্ষর তারিখসমেত

আনোয়ারুল হক চৌধুরি, এস.আই.

আই.বি. ঢাকা, ১২/৩/৪৯

৪১

১২/৩/১৯৪৯ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োজিত কর্মচারী ও ছাত্রদের দুটো সভার ওসি ওয়াচ, আইবিইবি, ঢাকায় জমাকৃত একটি প্রতিবেদন। সান্ধ্যসভা শেষ হওয়ার পর শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি মিছিল হয়। তারা ঢাবির বিভিন্ন হলে যায় ও ঢাকা হলে ৫৯ প্রবেশের মাধ্যমে তাদের যাত্রার সমাপ্তি ঘটে।

ঢাকা, ১২ মার্চ ১৯৪৯

বরাবর,

ওসি ওয়াচ

আই.বি. ঢাকা

জনাব,

সবিনয় নিবেদন এই যে, ১২:৩০ ঘটিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োজিত কর্মচারী ও ছাত্রদের সভায় অংশ নিয়েছি আমি। সভায় তারা ধর্মঘট ডাকার সিদ্ধান্ত নেয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১০/৩/৪৯ তারিখের কর্মে যোগ দান করতে বলে তাদের। কিন্তু সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে কর্মচারীদের কয়েক ঘণ্টা দেরি হওয়াতে কর্তৃপক্ষ কর্মে পুনরায় নিযুক্ত হতে তাদের বাধা দেয় এবং তাদের জানিয়ে দেয় যে, চাকুরি থেকে তাদের নিষ্কৃতি দেওয়া হয়েছে। ১৭:০০ ঘটিকার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে কর্মচারীরা আরেকটি সভা ডাকে।আবদুর রহমান উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, তারা সবাই মিলে ছাত্র সম্প্রদায়ের শরণাপন্ন হবে। তারা ঢাকা হলের দিকে একটি মিছিল নিয়ে এগিয়ে যায়।এরপর কল্যাণ দাস গুপ্ত ও মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে উপাচার্যের বাসভবনের সন্নিকটে এফ.এম. হল গার্লস হোস্টেল, এস.এম. হল ও ইকবাল হল দক্ষিণ ভবনের দিকে এগিয়ে যায়।সেখান থেকে মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে এগিয়ে যায় এবং কল্যাণ দাস গুপ্ত আজাদ অফিসের দিকে এগিয়ে যান। আজাদ অফিসের পূর্ব পর্যন্ত আমি তাকে অনুসরণ করি। সেখান থেকে তিনি ঢাকা হলের দিকে ঘুরে যান। ২০:৪৫ ঘটিকায় তিনি ঢাকা হলে প্রবেশ করেন। ২২:০০ পর্যন্ত সেখান থেকে বের হওয়া পর্যন্ত আমি তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

পার্শ্ব নোট: এসএস-৩ দ্রষ্টব্য। শেখ মুজিবের পার্সনাল ফাইলে কপি রাখা আছে, ডিএস. ভি, স্বাক্ষর তারিখসমেত ১২/৩

মার্জিনে মন্তব্য:

  • ঢাকা হল: শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি আবাসিক হল ছিল। শহীদুল্লাহ হল সেগুলোর একটি যা ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ও লিটন হল নামে পরিচিত হয়। তারপর উচ্চ শিক্ষার সরকারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজ উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধনের সময় ছাত্র দিয়ে সাহায্য করে। এটির আবারও নামকরণ করা হয় ঢাকা হল। ১৯৬৯ সালে প্রখ্যাত ভাষাবিদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মৃত্যুর পর তাঁর নামে এই হলের পুনরায় নামকরণ করা হয়।

৪২

ত্রিপুরা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উত্তর লক্ষ্মীপুর নিবাসী জনাব রফিকের শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রেরিত ১২/৩/১৯৪৯ তারিখের একটি আটককৃত ইংরেজি চিঠির কপি। ত্রিপুরার ডিআইবি কর্তৃক ঢাকার Dintellকে এ বিষয়টি অবহিত করে একটি রেডিয়োগ্রাম প্রেরণ করা হয় যেখানে এ কথা জানানো হয় যে, ধানকাটুরেরা ঢাকাতে একটি সভায় জমায়েত হয়।

ঢাকা, ১২ মার্চ ১৯৪৯

গোপনীয়

ইন্টেলিজেনস ব্রাঞ্চ, পূর্ববঙ্গ

৭, ওয়াইজ ঘাট রোড

ঢাকা, ১২/৩/১৯৪৯

(চিঠি আটকের এই গোপনীয়তা অনুগ্রহপূর্বক রক্ষা করুন)

  1. প্রেরক (সাকিনসহ) : রফিক উত্তর লক্ষ্মীপুর

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ত্রিপুরা

  • প্রাপক (“): মৌলভী শেখ মুজিবুর রহমান

১৫০ মোঘলটুলি, ঢাকা

  • চিঠির ভাষা: ইংরেজি
  • চিঠির তারিখ: ৯/৩/৪৯
  • সিলমোহর: অস্পষ্ট
  • অভিগ্রহণকারী ডাকঘর: জিপিও ঢাকা
  • অভিগ্রহণের তারিখ: ১২/৩/৪৯
  • যে অফিসার অভিগ্রহণ প্রমাণ করতে পারে: এআসআই আবুল কাসেম
  • ছবি তোলা হয়েছি কি:…
  • চিঠি আটকে রাখা হয়েছে, না বিলি করা হয়েছে: আসল কপির সাথে ফেরত দেওয়া হয়েছে।
  • বিলি করা হলে কপি রাখা হয়েছে কি: রাখা হয়েছে
  • অভিগ্রহণে কর্তৃপক্ষের আদেশসহ অনুমতিপত্রের নম্বর ও তারিখ: ক্যাজুয়াল

ম্যামো নং …, তারিখ …

কপি/অনুবাদ

…-এর প্রতি প্রেরিত

মার্জিনে মন্তব্য

  • Dintell: DIG Intelligence-এর সংক্ষেপিত রূপ। তৎকালীন কেন্দ্রীয় আইবির একটি অফিস যা গোয়েন্দা, গোপনীয় ও অন্যান্য রিপোর্ট নিয়ে কাজ করত।

জিপিও, ঢাকা কর্তৃক অভিগৃহীত ইংরেজি চিঠিটির কপি

প্রেরকপ্রাপক
রফিক, উত্তর লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ত্রিপুরামৌলভি শেখ মুজিবুর রহমান ১৫০, মোঘলটুলি, ঢাকা

আমার স্নেহের মুজিব,

আশা করছি, দাবালিদের জমায়েত করার তোমার দেওয়া প্রতিশ্রুতি তুমি ভুলে যাওনি। এই লক্ষ্যে আগামী সোমবার ১৪ই মার্চ আশুগঞ্জের নিকটে লালপুর নামক স্থানে আমি একটি জমায়েতের আয়োজন করেছি। তোমার নামে আমি বিপুল প্রচার করেছি এবং তুমি যেমনটা ভাবতে পার তোমার কথা শুনতে তত লোকের সমাগম হবে।

জমায়েতে তোমার উপস্থিতি একান্ত কাম্য। তা যেন কোনোক্রমেই বিফল না হয়। তোমার অনুপস্থিতি মানে সব কিছু অনুপস্থিত। চট্টগ্রামের ফজলুল কাদের চৌধুরীকে আমি দাওয়াত করেছি। তাঁর ওয়াদামতো তিনিও অংশ নেবেন।

সকাল নয়টায় ঢাকা থেকে রওনা করলে বেলা একটায় তুমি আশুগঞ্জে এসে পৌঁছুবে। সভা ২টা থেকে ৩টার মধ্যে শুরু হবে।

আমি অথবা আমার লোকজন তোমাকে স্টেশন থেকে রিসিভ করবে। কোনো ভাবেই মিস করবে না।

মার্জিনে মন্তব্য:

  • ফজলুল কাদের চৌধুরী: ফজলুল কাদের চৌধুরী (১৯১৯-১৯৭৩) ছিলেন বাঙালি রাজনীতিবিদ। তিনি পূর্ব পাকিস্তান থেকে পাকিস্তান জাতীয় সংসদের ৫ম স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আইয়ুব খানের কনভেনশন মুসলিম লীগের সদস্য ছিলেন। আইয়ুব প্রবাসে গেলে সময় সময় তিনি পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রবর্তিত ছয় দফা দাবির বিরোধিতা করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামে ‘রাজাকার বাহিনী’ গঠন করে পাকিস্তান দখলদার বাহিনীকে সাহায্য করেন।তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এরাই গণহত্যা সংঘটিত করে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে মদদ দেওয়ার জন্য স্বাধীনতা অর্জনের পর তিনি ১৯৭৩ সালে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে গ্রেফতারকৃত হন এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৭ই জুলাই ১৯৭৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

আমি ভালো আছি এবং যথাসময়ে ঢাকা আসব।

তোমারই

স্বাক্ষর তারিখসমেত

রফিক

রেডিয়োগ্রাম ৬২

নং ৪৪৯৫, তারিখ ১২/৩/৪৯

ডি.আই.বি. ত্রিপুরা

দাওয়ালদের আয়োজিত করার লক্ষ্যে ১৪ই মার্চ আশুগঞ্জের নিকটে লালপুর নামক স্থানে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে।

স্বাক্ষর তারিখসমেত

১২/৩

Dintell

ম্যামো নং ৪৪৯৫ (১)/১ তারিখ ১২/৩/৪৯

নিশ্চিতকরণের জন্য কপি প্রেরিত হলো।

স্বাক্ষর তারিখসমেত

১২/৩

ডিআইজির জন্য ডিএস ১

ডিএস ১

অনুগ্রহপূর্বক পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখুন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ত্রিপুরার জনাব রফিক ঢাকা নিবাসী শেখ মুজিবুর রহমানকে এই চিঠি লেখেন।

চিঠিতে লিখিত যে, দাওয়ালরা সংগঠিত হচ্ছে এবং এই লক্ষ্যে ১৪ই মার্চ আশুগঞ্জের নিকটে লালপুরে একটি সভা আয়োজিত হচ্ছে। পত্রের প্রাপককে সভায় অংশ নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। প্রধান বক্তা হিসেবে চট্টগ্রামের ফজলুল কাদের চৌধুরী সভায় অংশগ্রহণ করবেন।

কুমিল্লা ও ঢাকার ডি.আই.বি.কে কপি পাঠানো যায়।

মার্জিনে মন্তব্য: 

  • রেডিয়োগ্রাম হলো রেডিয়োর মাধ্যমে প্রেরণযোগ্য আনুষ্ঠানিক লিখিত বার্তা। রেডিয়ো টেলিগ্রাম বা রেডিয়ো টেলিগ্রাফিক ম্যাসেজ নামেও এটা পরিচিত। রেডিয়োগ্রাম প্রামাণিক ম্যাসেজ ফর্মেট বা ফর্ম ব্যবহার করে এবং প্রেরণ ব্যবস্থা হিসেবে রেডিয়ো টেলিফোন বা রেডিয়ো টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা ব্যবহার করে।

পার্শ্ব নোট: গোপন নং ৪৫৫০ তারিখ ১৪/৩/৪৯

:  তথ্যের জন্য ত্রিপুরার ডি.আই.বি.র নিকট কপি প্রেরিত হয়েছে। স্বাক্ষর তারিখসমেত ১২/৩ এসএস-১ এর জন্য ডিএস-১।

:  কুমিল্লাতে কপি প্রেরণ। আজ রেডিয়োগ্রামের মাধ্যমে কুমিল্লায় তারিখ জানিয়ে দিন। স্বাক্ষর তারিখসমেত ১২/৩

৪৩

ইস্ট বেঙ্গল পুলিশের ১২/৩/১৯৪৯ তারিখের সপ্তাহান্তের গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকে নেওয়া যেখানে এ কথা উল্লেখ করা হয় যে, শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োজিত কর্মচারীরা ১০ই মার্চ পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছিল। ৯ই মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ও ধর্মঘটরত কর্মচারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে একটি সভা করে যেখানে ছাত্ররা ধর্মঘটকারীদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করেন।

ঢাকা, ১২ মার্চ ১৯৪৯

শনিবারকে সপ্তাহের শেষ দিন ধরে ইস্ট বেঙ্গল পুলিশ থেকে নেওয়া ৩৫ নং গোয়েন্দা রিপোর্টের সারাংশ, শনিবার, ঢাকা ১২ মার্চ ১৯৪৯

  • ঢাকা — ইপিএমএসএল-এর সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান (প্যারা ৪০৩), আখলাকুর রহমান (এস.এফ.) ও অন্যান্যদের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা (১৫০) ১০ই মার্চ পর্যন্ত তাদের ধর্মঘট অব্যাহত রাখে। তখন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ কর্তৃক চাকরিতে পুনরায় যোগদান হতে বহিষ্কৃত হয়েছিল।

৯ই মার্চ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২০০জন ছাত্র ও ধর্মঘটকারী কর্মচারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে একটি সভা করে যাতে ধর্মঘটকারীদের প্রতি ছাত্ররা তাদের পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করে। ছাত্ররা এ কথাও ঘোষণা করে যে, ধর্মঘটকারীদের দাবি পূরণ না হলে তারা তাদের ক্লাসে অংশ গ্রহণ করবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাধারণ আচরণ দেখে মনে হয়েছে অনেকটা বাধ্য হয়েই ধর্মঘটকারীদের প্রতি তারা তাদের সমর্থন প্রকাশ করছে। কর্মচারীদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে তারা ধর্মঘট চালিয়ে যায়। ফজলুল হক মুসলিম হল ও ঢাকা হলের ছাত্ররা ১১ই মার্চ একটি আন্দোলন করে যেখানে তারা বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় খুলে দিতে ও কর্মচ্যুত কর্মচারীদের পুনরায় নিয়োগ দানের দাবি জানায়।

৪৪

ডিআইবি ঢাকার প্রাত্যহিক গোয়েন্দা রিপোর্ট, নং ২৭,৩২ ও ৩৫। তারিখ যথাক্রমে ৪/৩/১৯৪৯, ১০/৩/১৯৪৯ ও ১৩/৩/১৯৪৯। বিভিন্ন সভা অনুষ্ঠিত হওয়া ও ঢাবি ছাত্রদের মিছিল, শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্য ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে ঢাকার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রছাত্রী পূর্ববঙ্গে আরবী হরফ চালু করার জন্য সরকারি নীতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রধারী পুলিশ পিকেট স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ইত্যাদি বিষয় রিপোর্টগুলোতে উল্লেখ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের দাবিদাওয়া পূরণের প্রতি কর্তৃপক্ষের অনীহার বিরুদ্ধেও তারা প্রতিবাদ করে।

ঢাকা, ১৩ মার্চ ১৯৪৯

দৈনিক গোয়েন্দা রিপোর্ট, নং ২৭, তারিখ ৪/৩/৪৯

  • ৩/৩/৪৯ তারিখে একজন ডি.আই.ও. রিপোর্ট করেন যে, ২/৩/৪৯ তারিখে ১৩:৩০ ঘটিকায় ইপিএমএসএল-এর প্রায় ১৫০ জন ছাত্র নিয়ে একটি সভা বিশ্ববিদ্যালয় ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র ও ইপিএমএসএল-এর আহ্বায়ক জনাব নাইমউদ্দীন আহমেদ। ইপিএমএসএল-এর সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান সভায় ভাষণ দেন। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কর্মচারীদের অবস্থার উন্নতির প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনীহার সমালোচনা করে বলা হয় যে, কর্মচারীদের ডাকা ধর্মঘট মানেই হলো, ছাত্রছাত্রীদের অবর্ণনীয় দুঃখকষ্ট। তাই তাদের বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে বিবেচনা করতে অনুরোধ করা হয়।

সভাশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে দেখা করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সমস্যাটি তুলে ধরতে জনাব নাইমউদ্দীনকে প্রেষণে পাঠানো হয়। কিন্তু উপাচার্য তার সাথে দেখা করতে অস্বীকৃত হন।

দৈনিক গোয়েন্দা রিপোর্ট, নং ৩২, তারিখ ১০/৩/৪৯

  • একজন ডি.আই.ও. রিপোর্ট করেন যে, ৯/৩/৪৯ তারিখে বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় পাঠাগারের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২০০জন ছাত্র ও ১৫০জন পরিচারক একটি সভা করে।ইপিএমএসএল-এর সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে অস্ত্রধারী পুলিশ পিকেট বসানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করেন। তিনি বলেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচারকদের রুটিরুজির সংগ্রামের প্রতি ছাত্রদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তিনি আরও ঘোষণা করেন, যত দিন পর্যন্ত পরিচারকদের সমস্যার সমাধান না হয় তত দিন পর্যন্ত ছাত্ররা তাদের ক্লাসে অংশ নেবে না। অতঃপর ১৮:০০ ঘটিকার দিকে প্রায় ৬০জন ছাত্র উপাচার্যের বাসভবনে যায়। সেখানে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী কর্মকর্তাদের একটি সভা চলছিল। ২১:০০ ঘটিকার দিকে ঢাকার এসপি ও এডিশনাল এসপি (শহর) ডিআইবির তথ্যের ভিত্তিতে উপাচার্যের সাথে যোগাযোগ করেন। তাদের জানিয়ে দেওয়া হয় যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে পুলিশের হস্তক্ষেপের কোনো প্রয়োজন উপাচার্যের নেই যেখানে কর্তৃপক্ষ স্বয়ং আপসের একটি পর্যায়ে চলে এসেছে অর্থাৎ, সন্তোষজনক কাজের শর্তে খণ্ডকালীন ঝাড়ুদারদের মজুরি সরকারি চাকরির বেতনবৃদ্ধির নিয়ম অনুযায়ী যেরূপ বর্ধিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত মালিদের মজুরিবৃদ্ধির ক্ষেত্রে তাই অনুসৃত হবে। আজ বেলা ১২:০০টার মধ্যে যদি তারা কাজে পুনরায় যোগ দিতে ব্যর্থ হয় তবে ধর্মঘটকারীরা চাকরি হতে বহিষ্কৃত বলে বিচার্য হবে। অতিরিক্ত এসপি (শহর) বিশ্ববিদ্যালয় হতে পুলিশ তুলে নেবেন উপাচার্য তাঁর কাছে এমনটাই আশা করেন।

তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ও ছাত্রদের অবরোধ চলতেই থাকে। এতদ্বিষয়ে নিচের ছাত্ররা নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে।

  1. শেখ মুজিবুর রহমান, সভাপতি, ইপিএমএসএল
  2. আখলাকুর রহমান, এসএফ
  3. অরবিন্দু বসু, এসএফ
  4. কল্যাণ দাস গুপ্ত, আরএসপি

(ডি.আই.ও. পরিস্থিতি অবলোকন করছেন)

দৈনিক গোয়েন্দা রিপোর্ট, নং ৩২, তারিখ ১৩/৩/৪৯

  • ১২/৩/৪৯ তারিখে ১১ ঘটিকায় এস.এম. হল, এফ.এইচ.এম. হল, ঢাকা হল ও জে.এন. হল ৬৩-এর ছাত্ররা ইকবাল হলে সম্মিলিত হয় এবং উর্দু রোড, চক, মিটফোর্ড রোড ও স্যার নাজিমুদ্দিন রোডের ওপর দিয়ে প্যারেডরত অবস্থায় একটি মিছিলে তাদের দেখা যায়। ‘বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে হবে’, ‘ম্যানিয়েলদের দাবী মানতে হবে’, ‘ছাত্র-মজদুর এক ভাই’, ‘পুলিশের জুলুম ধ্বংস হোক, ‘ছাত্রদের দাবী মানতে হবে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে তারা। ১৩:০০ ঘটিকায় তারা এফ.এইচ.এম. হলে ফিরে আসে। এমএ প্রথম বর্ষের ছাত্র কল্যাণ দাস গুপ্ত, ইপিএমএসএল-এর সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান, আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবদুর রহমান চৌধুরী মিছিলের নেতৃত্ব দেয়। ১৪:৩০ ঘটিকায় ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্কুলে পড়ুয়া পঞ্চাশের মতো ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জড়ো হয়। সেখানে এস.এফ. কর্তৃক একটি মিটিঙের আয়োজন হয়। ডি.আই.বি. অফিসাররা সভায় প্রবেশাধিকার পায়নি।বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র আফজাল হুসাইন, এমএ ২য় বর্ষের ছাত্রী নাদিরা বেগম, জগন্নাথ কলেজের ছাত্র মুখলেসুর রহমান, ঢাকা ইন্টারম্যাডিয়েট কলেজের ছাত্র রফিকুল ইসলাম, আর্মানিটোলা এইচ.ই. স্কুলের ছাত্র নুরুল হক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষের ছাত্র বাহাউদ্দীন উক্ত সভায় জড়ো হয়ে বক্তৃতা প্রদান করে। পূর্ববঙ্গে আরবি হরফের প্রচলন করার সরকারি প্রস্তাবের সমালোচনা করে তারা সভায় বক্তৃতা করে এবং এর বিরুদ্ধে সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হতে ছাত্রদের আহ্বান করে। সভাশেষে ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বেরিয়ে আসে এবং নাদিরা বেগম, বাহাউদ্দীন ও আফজাল হুসাইন (উল্লিখিত সবাই)-এর নেতৃত্বে একটি মিছিল নিয়ে এসেম্বলি হলের দিকে অগ্রসর হয়। অ্যাসেম্বলি হলে কর্তব্যরত পুলিশ মিছিলে বাধা দেয়। এদিক-সেদিক ছড়িয়ে পড়তে পুলিশ ছাত্রদের নির্দেশ করে। কিন্তু তারা পুলিশের নির্দেশ অমান্য করে জোরপূর্বক হলে প্রবেশের চেষ্টা করে। সামান্য লাঠি চার্জে পুলিশ তখন বেআইনি একই জমায়েত ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
  • জে.এন. হল: ঢাকা শহরে একই সময়ে বর্তমান উচ্চ শিক্ষার দুটো প্রতিষ্ঠান একত্রিত হয়ে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটোর একটি ঢাকা কলেজ যা একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। অন্যটি জগন্নাথ কলেজ যা ছিল বেসরকারি। ভারতীয় আইন পরিষদের জগন্নাথ কলেজ অ্যাক্ট (অ্যাক্ট নং ১৬, ১৯২০)-এর মাধ্যমে কলেজটির পুনরায় নামকরণ করা হয় জগন্নাথ ইন্টারম্যাডিয়েট কলেজ। পরবর্তী বছর অনেক শিক্ষক ও পাঠাগারের বইপুস্তকের মতো আসবাবপত্রের সাথে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের ছাত্রদের (৩০৩-এর সবাইকে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত করা হয়। পরবর্তী কালে এরই সাথে সংলগ্ন থেকে ‘জগন্নাথ হল’-এর নামকরণ করা হয়।

৪৫

পূর্ববঙ্গ সরকারের স্বরাষ্ট্র বিভাগের সচিবের নিকট থেকে একটি অফিশিয়াল মেমো ঢাকা কারাগারের আইজির নিকট পাঠানো হয়। মেমোটি বঙ্গের নিরাপত্তা কারাবন্দি আইন ১৯৪০-এর বিধি সংক্রান্ত ও রাজবন্দিদের কিছু সুবিধা সংক্রান্ত বঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা আইন অধ্যাদেশ বিষয়ক

ঢাকা, ১৫ মার্চ ১৯৪৯

পূর্ববঙ্গ সচিবালয়

স্বরাষ্ট্র বিভাগ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ

ইডেন বিল্ডিং, রমনা, ঢাকা

নং ৭১০-এইচ.এস., তারিখ ১৫ই মার্চ, ১৯৪৯, ঢাকা

প্রেরক: জনাব এম আজফার, ও.বি.এ., পি.এ.এস.,

পূর্ববঙ্গ সরকারের স্বরাষ্ট্র বিভাগের সচিব

প্রাপক: মহাকারাপরিদর্শক, পূর্ববঙ্গ সরকার, ঢাকা

জনাব,

আমি এ কথা বলার জন্য নির্দেশিত হয়েছি যে, বঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা আইন অধ্যাদেশে বন্দি রাজবন্দিদের আবাসন, আসবাবপত্র, সরঞ্জামাদি, খাদ্য, বস্ত্র, পুস্তকাদি, সংবাদপত্র, নিয়মানুবর্তিতা, শাস্তি প্রভৃতির শ্রেণিকরণ ও যোগান দিতে বঙ্গের নিরাপত্তা কারাবন্দি আইন ১৯৪০ এখনও ব্যবহৃত হচ্ছে বলে সরকারের নজরে আনা হয়েছে। ভারত প্রতিরক্ষা বিধি ২৬-এর উপধারা ৬ ও ৫(ক) অনুসারে এই বিধিগুলো সন্নিবিশিত হয়েছিল। ১৯৪৬ সালে ভারত প্রতিরক্ষা বিধি শেষ হওয়ার পর বঙ্গের নিরাপত্তা কারাবন্দি আইন ১৯৪৬ও রহিত হয়ে যায়। সুতরাং এই বিধিগুলো অপ্রচলিত হয়ে যায় এবং নির্দেশিকা হিসেবে না এগুলো ব্যবহার করা ঠিক হবে, না ১লা অক্টোবর ১৯৪৬ সাল থেকে কার্যকর বঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা আইন অধ্যাদেশে সাধারণ বা রাজনৈতিকভাবে বন্দি লোকেদের ক্ষেত্রে সেগুলো প্রয়োগ করা যাবে।

  • ১৯৪৬ সালের বঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা আইন অধ্যাদেশের ধারা ১০ঘ-এর উপধারা ৪ মোতাবেক, কোনো ব্যক্তি এই আইনে গ্রেফতার হলে কিছু শর্তসাপেক্ষে সে ছাড়া পেতে বা বন্দি হতে বাধ্য থাকিবে। শর্তসমূহ মেনে চলা, নিয়মানুবর্তিতা, প্রাদেশিক সরকার ৬৪-এর মাধ্যমে সাধারণ বা বিশেষ আইন কর্তৃক সময়ে সময়ে বিশেষায়িত আইনে অপরাধের সাজা ভোগ ইত্যাদি শর্ত একে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আমি বলতে চাচ্ছি যে, ১৯৪৬ সালের বঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা আইন অধ্যাদেশে কেউ গ্রেফতার হলে সবার জন্য শ্রেণিকরণ,আচরণ, আবাসন, আসবাবপত্র ও সরঞ্জামাদি, বস্ত্র, বন্দিত্বকালে ভ্রমণ ও পাহারা, আইন-শৃঙ্খলার জন্য গৃহীত ব্যবস্থা, লেখার সামগ্রী, পুস্তকাদি, সংবাদপত্র প্রভৃতির যোগানে বঙ্গের কারাগার ও উপকারাগার ৬৫ রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকি আইনের ১ম খণ্ডে নির্ধারিত ২য় ও ৩য় শ্রেণির অপরাধীদের জন্য যা প্রযোজ্য তাই প্রযোজ্য হবে।
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় ও প্রাদেশিক সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পরীক্ষায় নিরাপত্তা বন্দিদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে মহাকারাপরিদর্শকের লিখিত পূর্বানুমতি সাপেক্ষে তাকে সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। এসব পরীক্ষায় ব্যবহারিক পরীক্ষা যুক্ত থাকে। শর্ত থাকবে যে, পরীক্ষার ফি, বই ক্রয় ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রাদেশিক সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে না। এসব পরীক্ষা কারাগারের অভ্যন্তরেই হতে হবে। বন্দিত্বকালে কোনো নিরাপত্তা বন্দির অবস্থা অসন্তোষজনক হলে কারাগারের মহাপরিদর্শক তাঁর ক্ষমতাবলে পরীক্ষায় বসতে উক্ত বন্দিকে অনুমতি নাও দিতে পারেন।
  • গোয়েন্দা বিভাগের ডি.আই.জি.র লিখিত অনুমতি ব্যতীত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি কোনো নিরাপত্তা কারাবন্দি পুলিশ অফিসার ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তির সাথে ইন্টারভিউ দিতে অনুমতিপ্রাপ্ত হবে না। পুলিশ অফিসার ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তির সাথে জেলা কারাগারে বন্দির ইন্টারভিউ থাকলে পুলিশ সুপারের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের লিখিত নির্দেশে কেবল তা অনুমিত হবে। ইন্টেলিজেনস ব্রাঞ্চের একজন অফিসার ও কারাগারের একজন অফিসারের উপস্থিতিতে এই ইন্টারভিউগুলো পরিচালিত হবে।
  • প্রাদেশিক সরকার: ফেডারেল ব্যবস্থায় পরিচালিত একটি দেশের অঙ্গরাজ্যের সরকারকে প্রাদেশিক সরকার বলে। ১৯৪৭ সালের অাগস্টে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন হওয়ার প্রাক্কালে তৎকালীন পাকিস্তানের পাঁচটি প্রদেশ ছিল: বঙ্গ, পাঞ্জাব, সিন্ধু, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ (বর্তমান খায়বার পাখতুনখোয়া) ও বালুচিস্তান (প্রধান কমিশনারের প্রদেশ)।
  • উপকারাগার: প্রাক্তন জেলার মহকুমাগুলোর প্রধান কার্যালয়ে উপকারাগারগুলো স্থাপিত হয়েছিল। অপরাধী ও বিচারাধীন বন্দিদের কারাবাসের জন্য নির্ধারিত দণ্ডবিধির ৫৪১ ধারা মোতাবেক বর্তমানে সেগুলো জেলায় জেলায় স্থানান্তরিত হয়েছে। যে বন্দিরা ১৪ দিনের বেশি কারাবাস করার সাজা প্রাপ্ত হয় তাদের সাধারণত সাবজেলে রাখা হয় না। ১৪ দিনের ভেতরেই তাদের জেলা শহরের কারাগারে স্থানান্তরিত করতে হতো।
  • জেলসুপার বা ইন্টেলিজেনস ব্রাঞ্চের মাধ্যম ব্যতীত কোনো চিঠি, খবরের কাগজ, বই বা অন্য যোগাযোগ সংক্রান্ত কোনো বিষয় কোনো নিরাপত্তা বন্দির নিকট প্রেরণ করা যাবে না বা কোনো বন্দির নিকট থেকে অন্য কারও নিকট প্রেরণ করা যাবে না। প্রাদেশিক সরকারের কেন্দ্রীয় কোনো অফিসারের নিকট বা আইন বিভাগের সদস্য এমন কোনো প্রিজাইডিং অফিসারের নিকট একজন নিরাপত্তা কারারক্ষী যোগাযোগের ঠিকানা  চাইতে পারেন।
  • যেসব কারারক্ষীকে ডিভিশন ২-এ বিশেষ ভাবে রাখা হয়নি  তারা ডিভিশন ৩-এ স্থান পাবে।  কোনো কারারক্ষীকে ডিভিশন ২-এ রাখার জন্য যেসব মামলায় প্রস্তাব করা হয় সেগুলো জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক সরকারের নিকট সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রেরিত হতে হবে আর তাতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সুপারিশ ও কারাবন্দির সামাজিক অবস্থা, শিক্ষা, পেশা ও পদমর্যাদা বিষয়ক পুলিশ সুপারের তদন্ত রিপোর্ট অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

সরকারের বিচারাধীন আদেশ থাকলে সেসব কারাবন্দি ডিভিশন ৩-এ স্থান পাবে। কিন্তু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সরকারের বিচারাধীন আদেশের ক্ষেত্রে, জেলার সুপারকে জিজ্ঞেস করতে পারেন যেখানে ডিভিশন ২-এ কারাবন্দিকে আটকে রাখা হয়েছে। এরূপ কিছু ঘটলে তাঁর উচিত হবে আদেশের জন্য সাথে সাথে সরকারকে জ্ঞাত করা।

  • এই নির্দেশসমূহ এখনই বলবৎ করতে আমি আপনাকে অনুরোধ করছি।

আমার আছে, ইত্যাদি

স্বাক্ষর তারিখসমেত এম আজফার

সচিব

মেমো নং. ৭১০/১(৫)- এইচ.এস. তারিখ ১৫/৩/৪৯

স্বাক্ষর তারিখসমেত এম আজফার

সচিব ১৫/৩

বরাবর,

পূর্ববঙ্গের সব ডি.আই.বি.কে

অনুলিপি পাঠানো হয়েছে…

জ্ঞাত করতে ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে।

স্বাক্ষর তারিখসমেত এ. নেওয়াজ

১৬/৩/৪৯

(এম. আহমেদ)-এর জন্য

বিশেষ পুলিশ সুপার, আই.বি.

  • জেলা ম্যাজিস্ট্রেট: জেলার প্রশাসনিক প্রধান তিনভাবে পরিচিত, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ডিস্ট্রিকট কালেকটর ও ডেপুটি কমিশনার।

৪৬

১৮/৩/১৯৪৯ তারিখে ঢাকার একজন আইবি অফিসার শেখ মুজিবুর রহমানের গতিবিধির ওপর একটি গোপন ওয়াচ রিপোর্ট জমা দেন যে, উক্ত তারিখে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের পেছনে গোয়েন্দাগিরি করেছিলেন। আর তখন শেখ মুজিবুর রহমান অভয় দাস লেন থেকে বের হয়ে শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। ২৮/৩/১৯৪৯ তারিখে (তারিখে ভুল আছে) তাঁকে আর আশেপাশে দেখা যায় নি।

ঢাকা, ১৯ মার্চ ১৯৪৯

গোপন প্রতিবেদন ১৮/৩/৪৯

১৮/৩/৪৯ তারিখের ০৬:৩০-১০:৩০ ঘটিকা + ১৫:০০-২০:০০ ঘটিকা পর্যন্ত সন্দেহভাজন মুজিবুর রহমানের পেছনে গোপন ওয়াচ ডিউটি ১৫০, মিটফোর্ড রোড ১২ অভয় দাস লেন।উপর্যুক্ত স্থানে আমি গোপন নজরদারি করছিলাম। আমি তদন্ত করতে অনুরোধ করছি যে, ১৫০ মিটফোর্ড রোডে আমি উক্ত সন্দেহভাজনকে পাইনি। তারপর আমি সন্দেহভাজনকে খুঁজতে ১৫:০০ ঘটিকায় ১২ অভয় দাস লেনে (টিকাতুলি) যাই। প্রায় ১৫:৩০-এ অভয় দাস লেন থেকে শেখ মুজিবুর রহমান বের হয়ে আসেন এবং সাইকেলে করে তিনি শহরের দিকে যান। সাইকেল না থাকায় আমি তাঁকে অনুসরণ করতে পারিনি।

জমাকৃত

স্বাক্ষর তারিখসমেত

এএসআই, আনোয়ার আহাদ

আই.বি. ১৯/৩

পার্শ্ব নোট: সন্দেহভাজনের পি.এফ.-এ আছে। স্বাক্ষর তারিখসমেত ১৯/৩

গোপনীয় প্রতিবেদন তারিখ ২৮/৩/৪৯। ১২ অভয় দাস লেন, ঢাকার সন্দেহভাজন মুজিবুর রহমানের রেগ সিক্রেট ওয়ার্ড ডিউটি।

২৮/৩/৪৯ তারিখে ০৭:০০ থেকে ১০:০০ এবং ১৭:০০ থেকে ২০:০০ পর্যন্ত উপর্যুক্ত স্থানে উপর্যুক্ত সন্দেহভাজনের সিক্রেট ওয়াচে ছিলাম আমি।

আমার দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় উল্লিখিত সন্দেহভাজনকে দেখা যায়নি।

এস.আই. এম. আহামদ আমার দায়িত্ব তত্ত্বাবধান করেছেন।

পেশকৃত

স্বাক্ষর তারিখসমেত

আই.বি.-র এ.আস.আই., ঢাকা

পার্শ্ব নোট: তদন্তের কারণ সন্দেহভাজন ঢাকায় থাকলে

ডি.এস ভি

[পুন:- ১২ অভয় দাস লেন, মানে স্বীয় বাসভবনে সন্দেহভাজন শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতির কারণ তদন্ত করতে।

গোপন তদন্তের ভিত্তিতে জানা গেছে যে, প্রায় এক সপ্তাহ পূর্বে সন্দেহভাজন শেখ মুজিবুর রহমান রাজশাহী থেকে দিনাজপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন]

পেশকৃত

নাসিরউদ্দীন আহমেদ

এস.আই. আই.বি. ২৯/৩/৪৯

পার্শ্ব নোট: ডি.এস. ভি, এ. রাজ্জাক, ২৯/৩

: পি.এফ.-এ রাখুন ও মুজিবুর কী করছে তার ওপর নজর রাখতে রাজশাহী ও দিনাজপুরে খবর দিয়ে রাখুন

: অফিস, দয়া করে Sec Ds-V-র ওপরের অাদেশগুলো দেখুন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করুন। এ. রাজ্জাক, ওআইসি, ৩০/৩

ব্যক্তিটির পি.এফ. খুঁজে বের করতে বিশেষ বিষয়গুলো দয়া করে সরবরাহ করা হোক। তিনি আইনের ছাত্র। বিস্তারিত আর কিছু আমাদের রেকর্ডে নেই। বিস্তারিতের জন্য চার্জশিটের সূচিপত্র অংশ দেখা যেতে পারে।

স্বাক্ষর তারিখসমেত এ. রাজ্জাক

ও/সি ২/৪

পুন:- পাতার ওপর নোট

গোপালগঞ্জ থানার টুঙ্গিপাড়া নিবাসী শেখ লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ব্যক্তিটির মিল পাওয়া যেতে পারে। উক্ত ব্যক্তিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র। তিনি ডি.ওয়াই.এল.-এর মেম্বার।

স্বাক্ষর তারিখসমেত এফ. রহমান

সি/এস ৪/৪/৪৯

গোপনীয়

নং ৬৪৯১ (২)/৬০৬-৪৮ তারিখ ৬/৪/৪৯

ডিআইবি রাজশাহী/ডিআইবি দিনাজপুর

নেওয়া হয়েছে। প্রেরিত ও মুজিবুর রহমানের কার্যক্রমের ওপর নজর রাখতে অনুরোধ করা হচ্ছে। ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র) এবং ঢাকা নিবাসী।

স্বাক্ষর তারিখসমেত

এসএস ৩-এর জন্য ডিএস ৫

৪৭

ডিআইও, ডিআইবি, ঢাকা রিপোর্ট করে যে, ৪/৪/১৯৪৯ তারিখে মোগলটুলিতে ইপিএমএসএল-এর একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্য নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ধর্মঘটে অংশ নেওয়ার জন্য ঢাবি কর্তৃপক্ষ শেখ মুজিবুর রহমান সহ ছয়জন ছাত্রের জরিমানা করে।

ঢাকা, ৮ এপ্রিল ১৯৪৯

৮/৪/৪৯ তারিখের দৈনিক গোয়েন্দা রিপোর্ট, নং ৫৬

  1. একজন ডিআইও রিপোর্ট করেন যে, ইপিএমএসএল-এর  একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক ১৫০ মোগলটুলিতে ৪/৪/৪৯ তারিখে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয়। শেখ মুজিবুর রহমান, আজিজ আহমেদ, আবদুল ওদুদ ও অন্যরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ফ্যাকাল্টির ডিন ড. ডব্লিউ.এইচ.এ. শাদানিকে রেডিয়ো পাকিস্তানে দেওয়া তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্যের জন্য তীব্র সমালোচনা করেন। রেডিয়ো পাকিস্তান ঢাকার মাধ্যমে ড. শাদানি পূর্ববঙ্গের নারীসমাজ ও ছাত্রীদের সম্পর্কে অশোভন মন্তব্য করেছিলেন। (১) ড. শাদানির পদত্যাগ দাবি করে ও পূর্ববঙ্গের নারীসমাজকে লক্ষ্য করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে এবং রেডিয়ো স্টেশনে এই ধরনের মন্তব্য প্রচার করতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে রেডিয়ো পাকিস্তান অথরিটির নিন্দা জানিয়ে মিটিঙে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে এ ধরনের বিষয়ে নিশ্চুপ থাকায় পূর্ববঙ্গের সরকারকে সভায় নিন্দা জানানো হয়।
  • রেফারেনস ডি.আই.আর. নং ৫৫, তারিখ ৬/৪/৪৯, প্যারা ১, একজন ডি.আই.ও. রিপোর্ট করেন যে, ঢাবির তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বিগত ধর্মঘটে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালনের জন্য নিম্নলিখিত ছাত্রদের প্রতিজনের  বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে

নিম্নে বর্ণিত ছয়জন ছাত্রদের প্রত্যেককে ১৫/- রুপি করে জরিমানা করা হয়েছে।

  1. ফরিদপুর, ডাকঘর: পাটগাটি, টুঙ্গিপাড়া নিবাসী শেখ লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমান, সম্পাদক ইপিএমএসএল, ২য় বর্ষ আইন, ঢাবি

৪৮

৯.৪.১৯৪৯ তারিখের ইস্ট বেঙ্গল পুলিশ থেকে নেওয়া সপ্তাহান্তের গোয়েন্দা রিপোর্টের সারাংশ যেখানে এ কথা বলা হয়েছে যে, ২/৪/১৯৪৯ তারিখে ঢাকার সোয়ারিঘাটস্থ ইসলামিয়া এইচ.ই. হাই স্কুলের সব ইপিএমএসএল-এর পৃষ্ঠপোষকতায় একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকা, ৯ এপ্রিল ১৯৪৯

ইস্ট বেঙ্গল পুলিশ থেকে নেওয়া সপ্তাহান্তের ৩৫ নং গোয়েন্দা রিপোর্টের সারাংশ, তারিখ ঢাকা, শনিবার, এপ্রিল ৯, ১৯৪৯-কে সপ্তাহের শেষ ধরে।

  • ঢাকা — ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়নাল আবেদিন নামের এক ছাত্রের সভাপতিত্বে সব ইপিএমএসএল-এর পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকার ইসলামিয়া এইচ.ই. বিদ্যালয়ের প্রায় ৭৫ জন ছাত্রছাত্রীর একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ের বর্ধিত ফি বন্ধ করতে ও জমিদারি ব্যবস্থা রহিত করতে  সরকারের কাছে যাওয়ার প্রস্তাব পাস হয় সভায়।

৪ এপ্রিল ১৫০ মোঘলটুলিতে ইপিএমএসএল-এর একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে শেখ মুজিবুর রহমান (প্যারা ৪৫১), আজিজ আহমেদ (প্যারা ৬১৬), আবদুল ওদুদ ও অন্যান্য অংশগ্রহণ করেন। রেডিয়োতে সম্প্রচারিত বক্তব্যে পূর্ববঙ্গের নারীসমাজ ও ছাত্রীদের সম্পর্কে অশোভন মন্তব্য করায় ঢাবির আর্টস ফ্যাকাল্টির ডিন ড. শাদানির পদত্যাগ দাবি করে সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

৪৯

১৬/৪/১৯৪৯ তারিখে উদযাপিত ‘নিপীড়নবিরোধী দিবস’ উপলক্ষ্যে ছাত্রদের ধর্মঘটের ওপর এসআই, ওয়াচ, আইবিইবি, ঢাকা কর্তৃক পেশকৃত একটি রিপোর্ট

ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ১৯৪৯

‘নিপীড়নবিরোধী দিবস’ উপলক্ষ্যে ছাত্রদের ধর্মঘটের ওপর রিপোর্ট, তারিখ ১৬/৪/৪৯

১৬/৬/৪৯ তারিখের নিয়মিত ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। মিটিঙে কোনো রূপ বিক্ষোভ মিছিল ছিল না। নাদিরা বেগম, মুজিবুর রহমান, আবদুর রহমান চৌধুরী, আবদুল হামিদ, মাহবুব হুসাইন ও আরও কয়েকজন ধর্মঘটের সমর্থনে প্রচারণা চালান। শাহ আজিজুর রহমান, মোখলেসুর রহমান, দলিলুর রহমান, সুলতান উদ্দিন ও অন্য আরও কয়েকজন ধর্মঘটের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান। রিপোর্ট করার মতো আর কিছু ছিল না।

জমাকৃত

শাহজাদা খান কর্তৃক

এস. আই., ওয়াচ আইবি

১৭/৪/৪৯

৫০

পূর্ববঙ্গ সরকারের স্বরাষ্ট্রবিভাগের (রাজনৈতিক) উপসচিব ১৬/৪/১৯৪৯ তারিখে ঢাকার ডিআইবির অতিরিক্ত এসপিকে গভর্নরের নির্দেশে ডিটেনশনের কারণ উল্লেখ সহ একটি মেমো পাঠিয়েছেন। আদেশটি ৩ মাসের জন্য শেখ মুজিবুর রহমানের ডিটেনশন বিষয়ক।

ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ১৯৪৯

১৯৪৯ সালের পূর্ববঙ্গ অস্থায়ী আইন প্রয়োগ ও পুনঃনির্ধারণ অধ্যাদেশ আইন (ধারা ১) কর্তৃক পরিগৃহীত ও ধারাবাহিকভাবে কার্যকর বঙ্গীয় বিশেষ ক্ষমতা অধ্যাদেশ (১৯৪৬-এর অধ্যাদেশ)-এর অন্তর্ভুক্ত ধারা ১০গ-র অধীন ডিটেনশনের কারণ বিষয়ক যোগাযোগ।

১৯৪৯ সালের পূর্ববঙ্গ অস্থায়ী আইন প্রয়োগ ও পুনঃনির্ধারণ অধ্যাদেশ আইন (ধারা ১) কর্তৃক পরিগৃহীত ও ধারাবাহিকভাবে কার্যকর বঙ্গীয় বিশেষ ক্ষমতা অধ্যাদেশ (১৯৪৬-এর অধ্যাদেশ)-এর অন্তর্ভুক্ত ধারা ১০গ অনুসারে। উক্ত অধ্যাদেশের অধীন ১০ক ধারার অন্তর্গত ১(ক) ও (৪) উপধারা অনুযায়ী প্রস্তুতকৃত অর্ডার নং … , … তারিখ অনুযায়ী বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ১৫০ মোঘলটুলি, ঢাকা নিবাসী ও ফরিদপুরের অন্তর্গত গোপালগঞ্জ থানার টুঙ্গীপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমান আপনাকে এখানে এই মর্মে অবগত করা যাচ্ছে যে, নিম্নলিখিত কারণে আপনার ডিটেনশনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়েছে:-

  1. ফরিদপুর ও ঢাকা জেলায় গোপনসংস্থার সাথে মিলে আপনি অনৈতিক কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন ও এখনও আছেন। গোপন সংস্থার লক্ষ্য ছিল, সহিংস উপায়ে সরকার (মানে পূর্ববঙ্গের সরকার)-এর পতন ঘটানো। আর এভাবে সরকারের বিরুদ্ধে হানিকর ও অনৈতিক প্রচারণা চালিয়ে গেছেন আপনি। সরকারের বিরুদ্ধে দ্রোহ ও সহিংস আচরণ করতে ফরিদপুর ও ঢাকার কৃষক, শ্রমিক ও ছাত্রদের উসকে দিচ্ছেন আপনি। এবং
  2. আপনার উল্লিখিত কার্যাবলি হুমকিস্বরূপ ও এই প্রদেশের জন-আদেশ ও নিরাপত্তার অস্তিত্বকে বিপন্ন করতে পারে।
  3. আপনাকে আরও অবহিত করা হচ্ছে যে, আপনাকে ডিটেনশনে নেওয়ার সরকারি এই আদেশের বিরুদ্ধে লিখিত অভিমত জানানোর অধিকার আপনার রয়েছে। আপনার উচিত হবে তাই করা। তবে আপনি এখন যেখানে বন্দি আছেন সেখান থেকে মানে, ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপারইনটেনডেন্টের মাধ্যমে নিচে স্বাক্ষরকৃত জনের কাছে আপনার জবানবন্দি পাঠিয়ে দেবেন।

গভর্নরের নির্দেশে

পূর্ববঙ্গ সরকারের উপসচিব

স্বরাষ্ট্র বিভাগ (রাজনৈতিক)

১৬/৪/৪৯

গোপনীয়

নং ১০১৮৮/৬০৬-৪৮পিএফ তারিখ ২.৩.৫/৪৭

বরাবর

অতিরিক্ত এসপি ডিআইবি, ঢাকা

সূত্র: আপনার মেমো নং ৩০৩৮(১) তারিখ ২/৫/৪৯

তিন সপ্তাহের জন্য মুজিবুর রহমানকে ডিটেনশনে নিতে সরকার আবেদন করেছে।

স্বাক্ষর, তারিখসমেত

১৭/৫