গোপন নথিসমূহ ১ম খণ্ড (১৫১-২০০)

১৫১

i. পাকিস্তানের আইবির সহকারী পরিচালক ঢাকাস্থ পূর্ববঙ্গের গোয়েন্দা বিভাগের ডিআইজিকে একটি গোপন ম্যামো পাঠান। ম্যামোটি শেখ মুজিবুর রহমানের লাহোর ভ্রমণ বিষয়ক।এছাড়াও হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও পশ্চিম পাঞ্জাবের সংবাদ মাধ্যমের সাথে তাঁর বৈঠক এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎপ্রার্থী হওয়ার ইচ্ছায় করাচি যাওয়ার তাঁর পরিকল্পনা প্রভৃতিও উক্ত ম্যামোতে উল্লেখ করা হয়।

পশ্চিম পাঞ্জাব, ২১শে নভেম্বর ১৯৪৯

গোপনীয়

গুপ্ত

অপরাধের তদন্ত বিভাগ

পশ্চিম পাঞ্জাব

তারিখ, …নভেম্বর, ১৯৪৯ লাহোর

স্নেহের

পূর্ববঙ্গের শেখ মুজিবুর রহমানের বিষয়ে অন্য একটি দিন আমাদের মধ্যে যে আলোচনা হয়েছিল দয়া করে তা উল্লেখ করুন।

  1. আই.এন.এ.-র একটি বিমানে করে ৩০/১০/৪৯ তারিখে দিল্লি থেকে তিনি লাহোর পৌঁছান। বিমানে যাত্রীর নামের তালিকায় তাঁর নাম ছিল এস.এম. রহমান। বিমানবন্দরে থাকা সি.আই.ডি. অফিসারকে তাঁর আগমন সম্পর্কে পূর্বেই অবহিত করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তাঁকে শনাক্ত করতে পারেননি। কারণ এখানে পৌঁছানোর সাথে সাথে মুজিব-উর-রহমান তাঁর নজরদারিতে আসেননি। প্রকৃতপক্ষে তাঁকে রাখার কথা ছিল মোমদোত ভিলায়। সেখানে জনাব এইচ.এস. সোহরাওয়ার্দী পূর্ব থেকেই অবস্থান করছিলেন। কিন্তু বসবাসের জন্য তাঁকে লাহোর শহরের ২১নং আইকমান রোডস্থ মিয়াঁ ইফতিখার-উদ্-দীনের বাসায় রাখা হয়। পৌঁছানোর অল্প কিছু সময় পরে জনাব হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী একটি জনসভায় অংশ নিতে মন্টগোমরি জেলার পাকপত্তন এলাকায় যান। মুজিব-উর-রহমানের সাথে তাঁর দেখা হয় ১/১১/৪৯ তারিখে, মোমদোত খানের হৌজে। পরের দিনও তাঁরা পরস্পর উক্ত স্থানে মিলিত হয়ে মোমদোত খানের বিরুদ্ধে যে মামলাটি গায়ের করা হয়েছিল তা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। মোমদোত খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, পশ্চিম পাঞ্জাবের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের প্রথম দিকে তিনি পূর্ববঙ্গ থেকে দুই লক্ষ রুপির একটি চেক গ্রহণ করেছিলেন। পশ্চিম পাঞ্জাবে একটি আওয়ামী লীগ দল শুরু করার কাম্যতা ও সম্ভাবনা নিয়েও তাঁরা দুজন আলোচনা করেছিলেন। সংবাদ মাধ্যমের সাথে সাক্ষাত্কার প্রদানের সময় মুজিব-উর-রহমান পশ্চিম পাঞ্জাবে তাঁর ভ্রমণকে ব্যক্তিগত বলে উল্লেখ করেন এবং এর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের কথা অস্বীকার করেন। যাই হোক, তাঁর পরবর্তী কার্যক্রম এই বিবৃতিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। মুজিব-উর-রহমান প্রায় ৩/৪ দিন জ্বরের কারণে শুয়ে ছিলেন এবং ঐ সময়ে তিনি  কোনো রূপ কর্মকাণ্ডে অংশ নেননি। আরোগ্যলাভের পর  অন্য একজন সংবাদকর্মী তাঁর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন যে, তাঁর মতে মুসলিম লীগ এখন সরকারের অঙ্গসংঠন হিসেবে নিচে নেমে গেছে এবং সাধারণ জনগণের সাথে তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাঁর মতে, আসন্ন পশ্চিম পাঞ্জাব গণপরিষদ নির্বাচনগুলোতে জনসাধারণের সত্যিকারের অনুভূতি পরিমাপ করতে তাদেরকে নিয়ে একটি সংস্থা গড়ে তোলা উচিত হবে যার নাম রাখা যেতে পারে আওয়ামী লীগ। তিনি আরও বলেন যে, এইরূপ একটি দলের সৃষ্টি ক্ষমতায় যারা আছে  তাদের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে কিন্তু গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে শক্তিশালী একটি বিরোধী দল সবসময় স্থিতিশীল সরকার তৈরিতে সাহায্য করে। পূর্ববঙ্গ ও এন.ডব্লিউ.এফ.পি. উভয় প্রদেশে বিরাজমান সন্ত্রাস ও গ্রেফতারির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন তিনি। তাঁর মতে ঐ প্রদেশগুলোর সরকার কর্তৃক গৃহীত দমনমূলক কর্মকাণ্ডই সেখানে আওয়ামী লীগ তৈরি হওয়ার জন্য দায়ী। তাঁর অভিমত, সরকারের বিরোধী দল থাকা মানেই এই নয় যে, দলটির কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রবিরোধী হওয়া যেখানে পাকিস্তানের এমন কোনো ব্যক্তি খুঁজে বের করা দুষ্কর হবে যে তার দেশের খারাপ চায়। দৈনিক নাওয়া-ই-ওয়াকত৮৯ -এর হামিদ নিজামী ১লা ও ২রা নভেম্বর ১৯৪৯ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছেন বলে রিপোর্ট করা হয়। আওয়ামী লীগের পক্ষ হয়ে পূর্ববঙ্গ ও এন.ডব্লিউ.এফ.পি.তে নির্বিচারে গ্রেফতারি বন্ধ করার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দাবি উত্থাপন করতে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ প্রার্থনা করতে মুজিব-উর-রহমান করাচিগমনের কথাও ভেবেছিলেন।

ii. এন.ডব্লিউ.এফ.পি.-র গুলাম মুহাম্মদ লৌন্ডখোরের সাথে ৭/১১/১৯৪৯ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাৎ ও রাওয়ালপিন্ডিতে ভ্রমণ বিষয়ক একটি গোপন ম্যামো পাকিস্তানের আই.বি.-র সহকারী পরিচালক কর্তৃক ঢাকাস্থ পূর্ববঙ্গের গোয়েন্দা শাখার ডিআইজিকে প্রেরণ করা হয়।

পশ্চিম পাকিস্তান, ২১শে নভেম্বর ১৯৪৯

  • এন.ডব্লিউ.এফ.পি.-র গুলাম মুহাম্মদ লৌন্ডখোরের সাথে ৭/১১/১৯৪৯ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমান যোগাযোগ করে মোটামুটি ভালো সময়ের জন্য গোপন সাক্ষাতে মিলিত হয়। উভয়ই মানকি শরীফের পীরের৯১ সাথে দেখা করতে পরবর্তী সময়ে হয় রাওয়ালপিন্ডি যান না হয় ক্যাম্পবেলপুর যান। ক্যাম্পবেলপুরে৯২ তাদের এই সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয় এবং ৯/১১/৪৯ তারিখে এন.ডব্লিউ.এফ.পি.-র প্রায় ত্রিশজন ব্যক্তি একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন। উক্ত বৈঠকে মুজিব-উর-রহমান আওয়ামী লীগের প্রায় পঞ্চাশজন কর্মীদের উপর থাকা পূর্ববঙ্গ সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত জননিরাপত্তা অধ্যাদেশের অধীনে আটকাদেশের ব্যাপারে বিস্তারিত বলেন। উক্ত পঞ্চাশজন নেতাকর্মীদের মধ্যে হলেন পূর্ববঙ্গের আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ ও পূর্ববঙ্গের এম.এল.এ. জনাব শামসুল হক। নির্বিচারে আওয়ামী লীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে এই অধ্যাদেশ ব্যবহৃত হচ্ছে বলে মুজিব-উর-রহমান অভিযোগ করেন। অধ্যাদেশটির নিষ্ঠুর ব্যবহারই প্রমাণ করে যে আওয়ামী লীগ কতখানি শক্তিশালী, মুজিব-উর-রহমানের এমনটাই অভিযোগ। পূর্ব পাকিস্তান ও এন.ডব্লিউ.এফ.পি.-তে বিরাজমান দুটো আওয়ামী লীগের একত্রীকরণ এবং প্রথমে পশ্চিম পাঞ্জাব ও পরে সিন্ধু প্রদেশে একই দল গঠন করার প্রস্তাবনা দেন তিনি। পাকিস্তানের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিরুদ্ধে মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে মুজিব-উর-রহমান বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগ বলতে কিছু নেই। তিনি দাবি করেন যে, প্রাদেশিক আইনসভার প্রথম উপনির্বাচনে তাঁরা ইতোমধ্যেই জিতে গেছেন এবং অবশিষ্ট নয়টি উপনির্বাচনে যথাসময়ে এই দল তার শক্তি দেখাবেই। ‘মুসলিম লীগের সৎ ও বিশ্বস্ত নেতাকর্মী যারা আওয়ামী লীগ গঠন করেছে তাদের উপর দমন’ পূর্ব পাকিস্তান সরকারের এমন নীতিকে তিনি আত্মঘাতী বলে মন্তব্য করেন। ঐ সরকারের এই নীতির ফলে উক্ত নেতাকর্মীদের দুঃখ-দুর্দশার সুবিধা নিচ্ছে কমিউনিস্টরা এবং তারা জনগণের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করছে। নিম্নলিখিত ব্যক্তিবর্গ এই বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন:
  • মুজিব-উর-রহমান
  • মানকি শরীফের পীর
  • গুলাম মোহাম্মদ লৌন্ডখুর
  • কাজি মুহাম্মদ আসলাম, বার এট ল, পেশোয়ার
  • আরবাব শের আলী খান, নিক্কাখেল
  • হাজি আবুল মালিক, পেশোয়ার
  • সরদার খান, এম.এল.এ., হাজারা
  • তাজ মুহাম্মদ খান, খুলুর তারখেলি
  • ফজল হক শাহদাদ, পেশোয়ার
  • সৈয়দ শাহ, হোতি মারদান
  • আহমদ শাহ, পাবি
  • মুহাম্মদ ফরিদ, মারদান
  • গুলাম সরওয়ার, হাজারা
  • ফকিরা খান, হাজারা
  • মুহাম্মদ জামান, হাজারা
  • মুহাম্মদ আজিম, জিয়ারাতের কাকাখেল
  • মদদ খান, নওশেহরা
  • আসাফ খান, কোহাত
  • শাকার উল্লাহ
  • আবদুল আজিজ, হাজারা
  • আবদুল কাইয়ুম খান সোয়াতি
  • কাজি আবদুল হাকিম জাল্লৌজাঈ
  • হাবিব-উর-রহমান খেলপুরা
  • সরফরাজ, মানজাই
  • শফী-উদ-দীন
  • সিরাজ-উদ-দীন
  • মুহাম্মদ সাদিক, হাজারা
  • চুগতাই
  • আবদুস সাত্তার চমকানি

বৈঠকটি ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত চলেছিল। সভাটি প্রসঙ্গে আরও বিস্তারিত রিপোর্ট অপেক্ষা করছে। যখন তা হাতে এসে পৌঁছুবে তখন যথাসময়ে আপনাকে তা জানানো হবে।

  1. মুজিব-উর-রহমান এখন লাহোরে আছেন।

আপনার বাধ্যগত

(এসডি) হাবিব উল্লাহ্ মালিক

————

  • নাওয়া-ই-ওয়াকত: পাকিস্তানের উর্দু দৈনিক এটি। ১৯৪০ সালের ২৩শে মার্চ হামিদ নিজামী কর্তৃক নাওয়া-ই-ওয়াক্ত প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • গুলাম মুহাম্মদ লৌন্ডখুর: লৌন্ডখুর হলো পাকিস্তানের অন্তর্গত খায়বার-পাখতুনখোয়া নামক প্রদেশের (প্রদেশটির পূর্বের নাম এন.ডব্লিউ.এফ.পি.) মারদান জেলার তাখত ভাই তেহসিলের একটি ঐতিহাসিক গ্রাম ও ইউনিয়ন কাউন্সিল। রাজনীতিতে পূর্ব থেকেই সংলগ্ন থাকায় লৌন্ডখুরের খান বংশ এই অঞ্চলে বিখ্যাত ছিল।  ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনীতিতে খান গুলাম মুহাম্মদ লৌন্ডখুরের বেশ নামডাক ছিল। তিনি এন.ডব্লিউ.এফ.পি. আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
  • মানকি শরীফের পীর: পীর আবদুর রাউফের পুত্র আমিন-উল-হাসানাত মানকি শরীফের পূর নামে অধিক পরিচিত। বিংশ শতাব্দীর মধ্য সময়ে ভারতের (১৯৪৭-এর পরে পাকিস্তান) উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে তিনি একজন প্রগতিশীল ইসলামি ধর্মীয় নেতা ছিলেন। ১৯৪৫ সালে তিনি মুসলিম লীগে যোগ দেন। এন.ডব্লিউ.এফ.পি.-কে পাকিস্তানে যুক্ত করার ব্যাপারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
  • ক্যাম্পবেলপুর: বর্তমানের আট্টক পূর্বে ক্যাম্পবেলপুর নামে পরিচিত ছিল। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের উত্তর সীমানায় এই শহরটি অবস্থিত এবং আট্টক জেলার সদর দপ্তর এখানে অবস্থিত।

কে.বি. সৈয়দ সায়াদ আহমদ শাহ, ওবিই, পিপিএস

সহকারী পরিচালক (জি), আইবি, পাক,

করাচি

নং ১৬৮৮১-১২/১১/৪৯ তারিখের বিডিএসবি

অবহিত করার লক্ষ্যে পূর্ববঙ্গ, ঢাকার গোয়েন্দা বিভাগের পুলিশের উপমহাপরিদর্শকের (নাম) নিকট প্রতিলিপি প্রেরিত হয়েছে।

স্বাক্ষর ও তারিখ/-

পুলিশের সুপার ইন্টেন্ডেন্ট (বি)/সিআইডি.,

পশ্চিম পাঞ্জাব (তাজ)

সিআইডি, লাহোর থেকে ডিন্টেল, ঢাকায় প্রেরিত …র শব্দান্তরিত লিপি

২৭শে নভেম্বর বিমানে করে দিল্লির হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে মুজিবুর রহমান লাহোর ত্যাগ করেন। বিস্তারিত রিপোর্ট নিম্নরূপ।”

পূর্বেবঙ্গের গোয়েন্দা শাখা

৭ ওয়াইজঘাট রোড, ঢাকা

তারিখ, ১লা ডিসেম্বর ১৯৪৯

নং ২৪৪১১/৬০৬-৪৮ পি.এফ.

গোপনীয়

তাৎক্ষণিক প্রেরিতব্য

বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে

(১) ঢাকাস্থ ডি.আই.বি.র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ. গফুর সাহেবকে প্রতিলিপি প্রেরণ করা হয়েছে। উল্লেখিত ব্যক্তিকে দেখামাত্রই গ্রেফতার করতে খোঁজা হচ্ছে।

স্বাক্ষর ও তারিখ/-

(এম. আহমদ)

পুলিশের বিশেষ সুপার ইন্টেনডেন্ট

পূর্ববঙ্গের গোয়েন্দা বিভাগ

ঢাকা

পার্শ্বটীকা: অফিস ইন চার্জ

বিশেষ দূতের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা সহ ১২:০০ টার সময় ডেস্প্যাচারকে পাঠিয়ে দিতে

স্বাক্ষর ও তারিখ/- ১২.০০ ঘটিকা ১/১৮/৪৯

সহকারী পরিচালক (জি) থেকে ঢাকার ইন্টেলিজেন্সের উপপরিচালকের নিকট প্রেরিত ডি.ও. চিঠি নং ৯/বি/৪৯ (৩৭)-এর একটি প্রতিলিপি, তারিখ ৮/১২/৪৯

***

অনুগ্রহপূর্বক ১৮ই নভেম্বর ১৯৪৯ তারিখের আমাদের স্মারক নং ৯/বি/৪৯ (৩৭) নির্দেশ করুন। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান বিষয়ক একটি বিস্তারিত রিপোর্ট যা পশ্চিম পাঞ্জাব সি.আই.ডি. কর্তৃক গৃহীত হয়েছিল, তা অবহিত করার জন্য এর সাথে সংযুক্ত করা হয়।

উপপরিচালকের কার্যালয়, গোয়েন্দা বিভাগ

পাকিস্তান সরকার, ৮ কুমারটুলি লেন,

ঢাকা, ২০শে ডিসেম্বর ১৯৪৯

নং ১৯৬৯/১৭১-৪৯

ঢাকাস্থ পূর্ববঙ্গের গোয়েন্দা বিভাগের পুলিশের উপমহাপরিদর্শক এ.কে.এম. হাফিজুদ্দীন, পি.পি.এস.-কে অবহিত করতে তাঁর নিকট সংযুক্তি সহ প্রতিলিপি প্রেরিত হয়েছে।

স্বাক্ষর ও তারিখ/- ২০/১২

(এম.এইচ. খান)

উপপরিচালক, গোয়েন্দা বিভাগ, ঢাকা

iii. পাকিস্তানের পশ্চিম পাঞ্জাবের সি.আই.ডি. কর্তৃক ঢাকাস্থ গোয়েন্দা বিভাগের ডিআইজিকে প্রেরিত একটি রিপোর্টের প্রতিলিপি যেখানে এ কথা বলা হয়েছিল যে, ক্যাম্পবেলপুরে অনুষ্ঠিত সভায় যোগদান শেষে শেখ মুজিবুর রহমান ১০/১১/১৯৪৯ তারিখে লাহোরে ফিরে আসেন।

পশ্চিম পাঞ্জাব, ২১শে নভেম্বর ১৯৪৯

গোপনীয়

পশ্চিম পাঞ্জাবের সিআইডি কর্তৃক গৃহীত একটি রিপোর্টের প্রতিলিপি

ক্যাম্পবেলপুরে অনুষ্ঠিত সভায় যোগদান শেষে মুজিব-উর-রহমান ১০/১১/১৯৪৯ তারিখে লাহোরে ফিরে আসেন। এন.ডব্লিউ.এফ.পির সাধারণ সভাপতি গুলাম মুহাম্মদ লৌন্ডখুরের অনুরোধে লাহোরে ফিরে আসার অব্যবহিত পরে তিনি সেখানের ম্যাকলিয়ড রোডস্থ ওয়েস্ট এন্ড হোটেলে তল্পিতল্পা ছেড়ে চলে যান। পশ্চিম পাঞ্জাবে হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী উপস্থিত থাকায় তাঁর কাছ থেকে সুবিধাপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য এবং তাঁর প্রভাব-প্রতিপত্তি ও যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে পূর্ববঙ্গের আওয়ামী লীগের পক্ষে অনুকূল সমর্থন তৈরি করতে এবং পূর্ববঙ্গ, পশ্চিম পাঞ্জাব ও এন.ডব্লিউ.এফ.পি.তে বিদ্যমান দলসমূহের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করার উদ্দেশ্যে পশ্চিম পাঞ্জাবে সমজাতীয় দল তৈরি করাই হয়তো ছিল পশ্চিম পাঞ্জাবে মুজিব-উর-রহমানের যাওয়ার আসল উদ্দেশ্য। পশ্চিম পাঞ্জাবে অবস্থান করার সময়ে তিনি বেশ কিছু সংখ্যক ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন মিয়াঁ ইফতেখার-উদ্-দীন, গুলাম মুহাম্মদ লৌন্ডখুর, মানকি শরিফের পীর, জনাব হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মামদোতের খান ইফতেখার হুসাইন খান, খিলাফত-ই-পাকিস্তান দলের আবদুস সাত্তার নিয়াজি, পশ্চিম পাকিস্তান আঞ্জুমান-ই-মুহাজিরীনের রাও মেহরোজ আখতার, জিন্নাহ্ গ্রুপের আখতার মীর, চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইকবাল চীমা, পশ্চিম পাঞ্জাব মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নওয়াবজাদা মাজহার আলী, পাকিস্তান টাইমসের সহসম্পাদক সরদার শওকত হায়াৎ খান, সরদার মুহাম্মদ সাদিক, নিখিল পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক, মাজহার আলী আজহারের পুত্র খারাপ বাহার, প্রাক্তন আহরার নেতা, লাহোরের ল কলেজের একজন এল.এল.বি. ছাত্র এবং নিখিল পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সহসভাপতি। পাঞ্জাব মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের বেশ কিছু ছাত্র ওয়েস্ট এন্ড হোটেলে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে। এসব ব্যক্তির সাথে এবং অন্য যাঁরা এই সাক্ষাতে তাঁর সংস্পর্শে এসেছিলেন সবার সাথে মুজিব-উর-রহমানের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন। বর্তমানের মুসলিম লীগের নেতৃবৃন্দ নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে লীগের পবিত্র নামের অপব্যবহার করছে এবং দলটি যেভাবে দাঁড়িয়ে আছে তাতে এর কার্যালয়ে বিভিন্ন পদে আসীন নেতৃবৃন্দের সীমিত একটি সংস্থার অধিক আর কিছু এটি নয়—তাঁর যুক্তি ছিল এমনটা। তাঁর সাথে যাঁরা দেখা করতে এসেছিলেন এবং তিনি যাঁদের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন তাঁদের ওপর পূর্ববঙ্গ ও এন.ডব্লিউ.এফ.পি.র প্রসঙ্গে মুজিব-উর-রহমান এমন প্রভাব বিস্তার করেছিলেন যে তাঁরা ভেবে বসেছিল, উভয় প্রদেশে আওয়ামী লীগের কর্মীবৃন্দ সর্বাত্মক নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। মানকি শরীফের পীরের সমর্থন পাবেন—প্রথম প্রথম তিনি এ ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু পরে তাঁর কাছে যখন খবর এল যে, মানকি শরীফের পীরের আন্দোলন এন.ডব্লিউ.এফ.পির একটি জেলায় সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে এবং এন.ডব্লিউ.এফ.পি. র মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে তাঁর সম্পর্ক পুনরায় ঝালাই করে নেবেন পীরের এমনই প্রচষ্টায় সম্ভাবনা রয়েছে তখন তিনি তাঁর সাফল্য নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েন।এক্ষেত্রে অন্য আরেকজন যিনি তাঁরে সাহায্য করতে পারতেন তিনি হলেন গুলাম মুহাম্মদ লৌন্ডখুর। কিন্তু পশ্চিম পাঞ্জাবের ওপর তাঁর প্রভাব সীমিত এবং এন.ডব্লিউ.এফ.পি. র বাইরে থাকার বিধি তাঁর উপর বলবৎ হওয়ায় আরও ছয় মাসের জন্য তিনি ঐ প্রদেশে ফিরতে পারবেন না।

  1. ১৯৪৯ সালের ৩রা ডিসেম্বর পর্যন্ত মুজিব-উর-রহমান পূর্ববঙ্গে পিছিয়ে যাওয়ার তারিখ পিছিয়ে দেন। তিনি আশা করেছিলেন এই সময়ের মধ্যে পূর্ববঙ্গের জনাব হামিদ-উল-হক চৌধুরী ও জনাব রাগিব হুসাইন এখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন। এক সময় এসে শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই বলে বসছিলেন যে, লাহোরে তাঁর অবস্থান তিনি দীর্ঘায়িত করেছেন কারণ মামদোত খানের মামলায় বিবাদী পক্ষের হয়ে সাক্ষ্য দিতে তাঁর প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু কোনো মাধ্যম থেকেই এই তথ্যের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
  2. ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের তিনি অবহিত করেন যে, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কমপক্ষে ৫২জন ছাত্র সদস্য কেবল এই সন্দেহে কারাবাস করছে যে, তারা আওয়ামী লীগের সমর্থক। তিনি বলেন যে, তাদের মধ্যে বারোজন ঢাকার মেডিক্যাল কলেজের বাইরে থেকে গ্রেফতারকৃত হন যেখানে তারা একটি মিছিল করছিল এবং “বেগম লিয়াকত আলী খান ফিরে যান” ও “আমরা আপনার কথা শুনতে চাই না” এইরূপ স্লোগান দিচ্ছিল। পূর্ববঙ্গে পাকিস্তানের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিগত ভ্রমণের সময়ে বেগম লিয়াকত আলী খান তখন উক্ত প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রদান করছিলেন। মুজিব-উর-রহমান ১৩ই নভেম্বর ১৯৪৯ তারিখে জনাব হুসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে সোরগোদায় যান।হুসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী সেখানে একটি জনসভায় ভাষণ প্রদান করেন। ২০শে নভেম্বর ১৯৪৯ তারিখে এম.এ. কাজমি নামের আইনের একজন ছাত্র এবং মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মুজিব-উর-রহমানকে সান্ধ্যভোজের নিমন্ত্রণ করেন। উক্ত নিমন্ত্রণে অংশগ্রহণকারী অন্য ব্যক্তিবর্গের মাঝে ছিলেন জনাব নূর আহমেদ, ফজল-উর-রহমান জাকি, জাকা উল্লাহ্ শাহ, সৈয়দ মুহাম্মদ জাফর এবং ফেডারেশনের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যবৃন্দ। সান্ধ্যভোজের সময়ে বক্তৃতায় মুজিব-উর-রহমান বলেন যে, পশ্চিম পাঞ্জাবের ছাত্রদের তুলনায় পূর্ববঙ্গের ছাত্ররা চিন্তাধারায় বেশ প্রগতিশীল। তারা রাজনীতিতে অংশ নেয়, এমনকি নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। পূর্ববঙ্গে দুজন ছাত্র ছিল যারা এম.এল.এ. ছিল। পশ্চিম পাঞ্জাবের ছাত্রদের তদ্রুপ প্রগতিশীল হতে তিনি উপদেশ দান করেন। পশ্চিম পাঞ্জাব মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের পক্ষ থেকে পশ্চিম পাঞ্জাবের ছাত্রদের পূর্ণ সহযোগিতা দান করতে এম.এ. কাজমি ও নূর আহমদ তাঁর কাছে ওয়াদাবদ্ধ হন। কাজমি পরপরই একটি সংবাদ বিবৃতি দিয়েছিলেন যা কিছু সংখ্যক স্থানীয় দৈনিকে ছাপা হয়। সামরিক ও বেসামরিক  গেজেটের কপি এর সাথে যুক্ত করা হয়।
  3. দিল্লি হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে মুজিব-উর-রহমান আই.এন.এ.-র একটি প্লেনে করে ২৭শে নভেম্বর ১৯৪৯ তারিখে লাহোর ত্যাগ করেন। এভাবে ৩রা ডিসেম্বর ১৯৪৯ তারিখে লাহোর ত্যাগ করার তাঁর প্রকৃত পরিকল্পনা পরিবর্তিত হয়।

iv. ২৮/১১/১৯৪৯ তারিখের সামরিক ও বেসামরিক গেজেট থেকে নেওয়া সংক্ষেপ যাতে প্রেসকে দেওয়া পশ্চিম পাঞ্জাব মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের যৌথ বিবৃতি প্রসঙ্গে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছিল যে, উক্ত যৌথ বিবৃতিতে পশ্চিম পাঞ্জাব মুসলিম ছাত্র ফেডারেশন প্রাদেশিক সরকার কর্তৃক পূর্ববঙ্গের ছাত্রদের উপর দমন-পীড়নের নিন্দা জ্ঞাপন করে।

পশ্চিম পাঞ্জাব, ২৮শে নভেম্বর ১৯৪৯

 ২৮/১১/১৯৪৯ তারিখের সামরিক ও বেসামরিক গেজেট থেকে নেওয়া সংক্ষেপ

পূর্ববঙ্গের ছাত্রদের ওপর করা কথিত দমন-পীড়ন

পশ্চিম পাঞ্জাব ফেডারেশনের অসন্তোষ

পশ্চিম পাঞ্জাব মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রেসকে দেওয়া একটি যৌথ বিবৃতিতে পশ্চিম পাঞ্জাব মুসলিম ছাত্র ফেডারেশন পূর্ববঙ্গে প্রাদেশিক সরকার কর্তৃক সেখানকার ছাত্রদের উপর করা দমন-পীড়নের নিন্দা জ্ঞাপন করে।

তাঁরা বলেন, পূর্ববঙ্গের সরকার ছাত্র নেতাকর্মীদের ধরে ধরে ‘সি’ ক্লাস জেলে পুরছে। অনেক ছাত্র অভিযোগ করেছে যে, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে।

পূর্ববঙ্গের মুসলিম ছাত্রলীগের সভাপতি জনাব দাবিরুল ইসলাম ও একই সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক জনাব আবদুল হালিমের মামলাটির কথা উল্লেখ করে দিনাজপুর শহরের জেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, কর্তৃপক্ষ তারা উক্ত দুজনকে মারাত্মকভাবে প্রহার করেছেন। ফলে এদের মধ্যে একজন ছাত্র মূর্ছা গিয়েছে এবং অচেতন অবস্থায় প্রায় তিন দিন পড়ে ছিল।

পূর্ববঙ্গের সরকারকে এই দমন-পীড়নের ফল সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বিবৃতিত সাক্ষরদাতারা আরও বলেন যে, পশ্চিম পাঞ্জাবের ছাত্ররা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না যখন তারা দেখবে যে, পাকিস্তানের অপর অংশে থাকা তাদের মতো ছাত্ররা উৎপীড়নের শিকার হচ্ছে।

“এখন আমরা জানতে পেরেছি যে, ঐ প্রদেশে ৫০জনের মতো ছাত্র কারাগারে আছে। পাকিস্তান ও গণতন্ত্র নামক পবিত্র শব্দের উপর এ যেন কালিমালেপন। যাই হোক, কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর আমাদের দাবি থাকবে, পূর্ব পাকিস্তানের সব বন্দি ছাত্রকে মুক্ত করতে পূর্ববঙ্গের সরকারের উপর যেন চাপপ্রয়োগ করা হয়। ছাত্রদের উপর দমন-পীড়নের প্রতিবাদ করতে সব গণতন্ত্রমনা ব্যক্তিকে আমরা আহ্বান করছি।”

———

১৫২

গোপন সংকেতে লিখিত শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রেফতারবিষয়ক ৩০/১১/১৯৪৯ তারিখের একটি বার্তার শব্দান্তরিত করা প্রতিলিপি ঢাকাস্থ ডিনটেল থেকে ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের এস.ডি.পি.ও.-এর নিকট প্রেরণ করা হয়।

ঢাকা, ১লা ডিসেম্বর ১৯৪৯

শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রেফতারবিষয়ক ৩০/১১/১৯৪৯ তারিখের ৪০৭৮/সিএস নং সাইফার টেলিগ্রাফিক ম্যাসেজটির৯৩ শব্দান্তরিত করা প্রতিলিপি ঢাকাস্থ ডিনটেল থেকে ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের উপবিভাগীয় পুলিশ অফিসারের নিকট প্রেরণ করা হয়।

টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করুন।

গোপনীয়

গোয়েন্দা বিভাগ, ই.বি.

৭, ওয়াইজ ঘাট রোড,

ঢাকা, ১লা ডিসেম্বর ১৯৪৯

নং ২৪৪৬২/৬০৬-৪৮ পি.এফ.

বন্দি করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের উপবিভাগীয় পুলিশ অফিসারের নিকট ডাকযোগে প্রতিলিপি প্রেরিত হয়েছে।

স্বাক্ষর ও তারিখ/- ১/১২

পুলিশের বিশেষ সুপার ইনটেনডেন্ট, আইবি

পূর্ববঙ্গ, ঢাকা

  • সাইফার টেলিগ্রাফিক ম্যাসেজ: পাঠের অংশ কোডে রূপান্তরের যে কোনো পদ্ধতিকে সাইফার বলে। এতে পাঠ্যাংশকে ও এর অর্থকে দুষ্পাঠ্যে রূপান্তর করা হয়। মাঝে মাঝে এনক্রিপটেড টেক্সট ম্যাসেজ নামেও একে অভিহিত করা হয়। সুতরাং যোগাযোগের তাড়িৎ বার্তা পদ্ধতির মাধ্যমে সাধারণত সাইফার টেলিগ্রাফিক ম্যাসেজ পাঠানো হয়।

১৫৩

পাকিস্তানের পশ্চিম পাঞ্জাবের পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার ৩রা ডিসেম্বর ১৯৪৯ সালের সপ্তাহান্তের রিপোর্ট থেকে নেওয়া যেখানে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছিল যে, শেখ মুজিবুর রহমানের প্রচেষ্টায় ইপিএমএসএল নিখিল পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সাথে অধিভুক্ত হয়।

পশ্চিম পাঞ্জাব, ৩রা ডিসেম্বর ১৯৪৯

পাকিস্তানের পশ্চিম পাঞ্জাবের পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার ৩রা ডিসেম্বর ১৯৪৯ সালের সপ্তাহান্তের ৪৯ নং রিপোর্ট থেকে নেওয়া।

***

ছাত্রছাত্রী

[৫৮৬. পূর্ববঙ্গের মুজিব-উর-রহমানের (প্যারা ৫৭২) প্রচেষ্টায় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ নিখিল পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সাথে অধিভুক্ত হয়।]

***

তৃতীয় বন্ধনীতে [] আবদ্ধ অংশটুকু শেখ মুজিবুর রহমানের পি.এফ.-এর ৫৮৬নং প্যারা থেকে নেওয়া।

স্বাক্ষর ও তারিখ/- এম.ওয়াই.

১৪/১

গোপনীয়

নং ২৪৯৯০/৬০৬-৪৮ পি.এফ. তারিখ ১০/১২/৪৯

বিমানযোগে

বরাবর

এ.ডি. (পি) (জনাব সাদুল্লাহ্) আন্তর্জাতিক ব্যুরো, করাচি

আপনার সূত্র নং: সিএপি/১৯৯-II, তারিখ ১৬/৯/৪৯

শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে সংক্ষিপ্ত একটি নোটের কপি এতদ্সঙ্গে প্রেরিত হলো। ইচ্ছা মোতাবেক আটককৃত চিঠিটির লেখক নিয়ে প্রশ্ন আছে।

প্যারাগ্রাফ ১৪৪৭ -এর “৮ম যুবক ও ছাত্র আন্দোলন” শিরোনামের অধীন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের ১৬ই সেপ্টেম্বর, ১৯৪৯ তারিখের সভা বিষয়ক ১৭/৯/৪৯ তারিখের পূর্ববঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা রিপোর্ট নং ৩৮-এর একটি প্রতিলিপি অনুগ্রহপূর্বক নির্দেশ করা যেতে পারে। প্রতিলিপিটি ২৭/১০/৪৯ তারিখে ডি.ডি. (সি)কে প্রেরণ করা হয়েছে।

স্বাক্ষর ও তারিখ/-

এসএস ৩, আইবিইবি, ঢাকা

১৫৫

পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের রংপুরস্থ গাইবান্ধা শাখার সহকারী সম্পাদক সোবহান কর্তৃক ঢাকার ১৫০ মোঘলটুলির শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট ৯/১২/১৯৪৯ তারিখে প্রেরিত একটি বাংলা চিঠির ইংরেজি অনুবাদ। চিঠিটি ১৫/১২/১৯৪৯ তারিখে ঢাকার জি.পি.ও.তে আটক করা হয়।

ঢাকা, ১৫ই ডিসেম্বর ১৯৪৯

পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের রংপুরস্থ গাইবান্ধা শাখার সহকারী সম্পাদক সোবহান কর্তৃক ঢাকার ১৫০ মোঘলটুলির শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট ৯/১২/১৯৪৯ তারিখে প্রেরিত একটি বাংলা চিঠির ইংরেজি অনুবাদ। চিঠিটি ১৫/১২/১৯৪৯ তারিখে ঢাকার জি.পি.ও.তে আটক করা হয়।

***

ঐক্য শান্তি প্রগতি

পূর্ব পাকিস্তান উপবিভাগীয় মুসলিম ছাত্রলীগ, গাইবান্ধা, (রংপুর)।

সভাপতি: এ.হাই. আকন্দ

সাধারণ সম্পাদক: এম. লুৎফর রহমান

অফিস সম্পাদক: এ.আর.এম. গোলাম কিবরিয়া

শ্রদ্ধেয় মুজিব ভাই,

আমার সালাম নিবেন। আমরা অতি দুঃখিত যে, অনেক দিন ধরে আপনার কোনো খবর পাচ্ছি না। আশা করি, আপনি জেলে নেই এবং বেশ কুশলেই আছেন। নিয়মিত চিঠি লিখবেন বলে আমাদের ঠিকানা  লিখে নিয়েছিলেন আপনি। কিন্তু আপনি কেন চুপ করে আছেন—কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। মওলানা সাহেব ও শামসুল হককে নিয়ে এগারোজন ব্যক্তি গ্রেফতার হয়েছেন, আমরা জানতে পেরেছি। এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ জানাতে ছাত্রদের নিয়ে আমরা একটি সভা করেছি। আপনার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ব্যতীত আমাদের জন্য কাজ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব। স্বেচ্ছায় আমাদের সাথে নিত্যকার যোগাযোগ করার অনুরোধ করছি। অন্য কমরেডদের আমার সালাম দিবেন। জনাব আওয়ালের ঠিকানা  যদি আমাকে একটু দিতেন। ইত্তেহাদের অ্যাজেন্সি পেতে আপনার নির্দেশ মোতাবেক কলকাতায় ইত্তেহাদের প্রধান কার্যালয়ে সর্বমোট ২১০/- রুপি পাঠিয়েছিলাম।লুৎফর ও আমি যৌথভাবে এই টাকা দিয়েছি। কিন্তু কী কারণে জানি না  আমি সেখান থেকে কোনো খবর পাইনি। টাকাটা যে তারা হাতে পেয়েছে সেটাও তারা জানায়নি।  ইত্তেহাদের অফিস ঢাকায় সরিয়ে নেওয়ার কথা ছিল। ক্ষতিটা তো আমারই হলো। অবশ্য অফিস ঢাকায় আসলে আমি সেটা দেখব। আজ আর নয়। আমরা সবাই ভালো আছি।

স্বাক্ষর ও তারিখ/- সোবহান,

সাধারণ সম্পাদক, ইপিএমএসএল

গাইবান্ধা, রংপুর

১৫৮

আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্য। তিনি কোতোয়ালি থানায় ৩১/১২/১৯৪৯ তারিখে বঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা অধ্যাদেশ ৭(৩) ও ১৮(২)-এর সাথে সম্পর্কিত আই.পি.সি. ১৪৭ ধারার অধীন মামলা নং ১৯(১০)৪৯-এ গ্রেফতার হন।

ঢাকা, ৩১শে ডিসেম্বর ১৯৪৯

মৌলভী শেখ মুজিবুর রহমান, বি.এ., আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদকের বক্তব্য। ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ থানার টুঙ্গিপাড়া নিবাসী মৌলভী লুৎফর রহমানের পুত্র ১৫০ মোঘলটুলির শেখ মুজিবুর রহমান ও ৬৯/১ ঢাকার খাজা দেওয়ান (জন্ম ১৯২০) কোতোয়ালি থানায় ৩১/১২/১৯৪৯ তারিখে বঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা অধ্যাদেশ ৭(৩) ও ১৮(২)-এর সাথে সম্পর্কিত আই.পি.সি. ১৪৭ ধারার অধীন মামলা নং ১৯(১০)৪৯-এ গ্রেফতার হন।

***

আমার বিস্তারিত ও ঠিকানা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯শে এপ্রিল ১৯৪৯ তারিখ পর্যন্ত আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বিষয়ে আমি একজন ডি.আই.বি. অফিসারের সম্মুখে বিবৃতি দিয়েছিলাম যা আমি এখানে আমি পুনরায় বলতে চাই না। ২৬/৬/৪৯ তারিখে আমি জেল থেকে ছাড়া পাই। জেলে থাকার সময়ে আমি আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হই। জেল থেকে ছাড়া পেয়েছ আমি এ সংবাদ পাই। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও মৌলভী শামসুল হক যথাক্রমে এর সভাপতি ও সম্পাদক। আর আমি হলাম যুগ্ম সম্পাদক। এছাড়া এ.এম.এল.-এর কার্যনির্বাহী কমিটির আর কারও নাম আমি স্মরণ করতে পারছি না। ১৯৪৯ সালের সেপ্টেম্বরে তাজমহল হলে অনুষ্ঠিত ইপিএমএসএল-এর সম্মেলনে আমি সভাপতিত্ব করেছি। একই সূত্রে আর্মানিটোলায় অনুষ্ঠিত একটি জনসভায় আমি বক্তৃতাও করেছিলাম। ১১/১০/৪৯ তারিখে আর্মানিটোলায় এ.এম.এল.-এর একটি সভার আহ্বায়ক ছিলাম আমি। উক্ত সভায় আমিও বক্তৃতা করি। ১১/১০/৪৯ তারিখের মিছিল নিয়ে কিছু বলতে আমি প্রস্তুত নই। ১১ই অক্টোবর ১৯৪৯ তারিখের পরের দিনগুলোতে লাহোরের উদ্দেশ্যে আমি পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করি এবং পশ্চিম পাকিস্তানের কয়েকটি স্থানে গঠন করি। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আমি বলব না। সেখানে কিভাবে ও কোন মাধ্যমে গিয়েছি সে সম্পর্কে আমি বলতে চাচ্ছি না। এই দিন (৩১/১২/৪৯) সকালে বাড়ি থেকে আমি ঢাকায় আসি। এর কিছু দিন পূর্বে আমি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বাড়িতে আসি। ঢাকার ১৫০ মোঘলটুলিতে আমি প্রায়শ থাকতাম। কিন্তু এবার ঢাকায় ফিরে আসার পর আমি ৬৯/১ খাজে দেওয়ান বাড়িতে বাসাটা ভাড়া নেই।সেখান থেকেই আমাকে গ্রেফতার করা হয়।

গোপালগঞ্জ কোর্টে আমার বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার অভিযোগে একটি মামলা আছে। আমাকে বন্দি করা হয়েছিল ও পি.আর.-এ আমি ছাড়াও পেয়েছি। মামলাটি এখনও বিচারাধীন।

সার্চ লিস্টের ১নং আইটেম হলো সংবাদ বিবৃতির একটি কপি। আমি যখন লাহোরে ছিলাম তখন আমি বিবৃতিটি দিয়েছিলাম। পশ্চিম পাকিস্তানের প্রায় সব কটি খবরের পত্রিকায় এটি ছাপা হয়েছিল।

সাধারণ জনগণ যখন বিলি করছিল তখন আইটেম নং ২,৩,৪,৫ও৬ আমার হাতে এসেছিল। আইটেম নং ২-এ স্বাক্ষরকারী এস. মোজাফফর আহমেদকে আমি চিনি। স্বাক্ষরকারীরা চট্টগ্রাম জেলার এ.এম.এল. ও এম.এল. ছেড়ে মাস ব্যসিসে একটি এম.এল. গঠন করেন। এই দলটি অফিসিয়াল দলের সাথে একীভূত হয়েছিল কি-না তা বলার মতো অবস্থায় আমি এখন নাই। এই দলটি এ.এম.এল-এর একীভূত ছিল না।

আইটেম নং ৩-এর স্বাক্ষরদাতাদের আমি চিনি না। আইটেম নং ৪-এর সব স্বাক্ষারদাতাকে যারা এম.এল.-এর সাথে পূর্ব থেকেই যুক্ত ছিল তাদেরকে আমি চিনি। লিফলেটে (আইটেম নং ৫) কী লেখা আছে তা আমি জানি। এ.এম.এল.-এর পক্ষ থেকে আমার প্রদত্ত বক্তব্যই লিফলেটে মুদ্রিত ছিল। আইটেম নং ৬ কে প্রকাশ করেছিল আর এর খসড়াই বা কে করেছিল তা আমার জানা নেই। কিন্তু এই লিফলেট থেকেই পরিষ্কার যে, এটা মওলানা ভাসানীর বক্তব্য।

লাহোরে সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া আমার বক্তব্য ও জিজ্ঞাসাবাদের পর পত্রিকার (এ.পি.পি.) প্রতিনিধিকে দেওয়া আমার বক্তব্যের অনুবাদই আইটেম নং ৭।

একজন ছাত্র আইটেম নং ৮ পাঠিয়ে থাকতে পারে। ছাত্রটির নাম আমি মনে করতে পারছি না। ঢাকার ১৫০ মোঘলটুলিতে ৭/১/৫০ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য সভাটির ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।

আইটেম নং ৯ আমার বিষয় নয়। এটি কে তৈরি করেছে আমার জানা নেই। আইটেম নং ১০ সম্পর্কে আমি কিছুই বলতে পারি না। চিরকুটে নাম লেখা ব্যক্তিবর্গের কাউকে আমি চিনি না।

বলার মতো কিছুই আমার নেই।

স্বাক্ষর দিতে ও হস্তলিপির নমুনা দিতে তিনি রাজি হননি।

স্বাক্ষর ও তারিখ/- ৩১/১২/৪৯

আমি লিখেছি, পুরোটা পড়ে দেখেছি ও সব সঠিক বলে স্বীকার করছি।

স্বাক্ষর ও তারিখ/- ডিআইও, আইবি

১৬০

ঢাকাস্থ ডিআইবির প্রাত্যহিক গোয়েন্দা তদন্ত যেখানে উল্লেখ করা হয় যে, ইপিএএমএলের যুগ্ম সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানের ৬৯/১ নং খাজেদেওয়ান, ঢাকার বাসাটি ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে তল্লাশি করা হয় এবং ৩১/১২/১৯৪৯ তারিখে তিনি গ্রেফতার হন। কিছু নথিও জব্দ করা হয়।

ঢাকা, ১লা জানুয়ারি ১৯৫০

প্রাত্যহিক গোয়েন্দা তদন্ত নং ১, তারিখ ১/১/৫০

৩১/১২/৪৯ তারিখে বেলা ২:৩০টা থেকে ৪:০০টা পর্যন্ত ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে ৬৯/১ নং খাজেদেওয়ান বাড়ি তল্লাশি করা হয় এবং ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ থানার টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। কিছু নথিপত্রও জব্দ হয়। কোতোয়ালি থানার মামলা নং ১৯ (১০)৪৯-এর সাথে সংশ্লিষ্ট হিসেবে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং বঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৮(২) ধারায় তাঁকে চালান করা হয়।

গোপনীয়

জেলা গোয়েন্দা শাখা

ঢাকা, তারিখ ১লা জানুয়ারি, ১৯৫০

নং ৩(৪)/৩৮-৪৯

পরীক্ষা করে ফেরত পাঠানোর জন্য

  • খান সাহিব ম. ইউসুফ, এসএস, আইবিইবি, ঢাকা
  • পুলিশের মহাপরিচালক, ঢাকা রেঞ্জ, ঢাকা
  • জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকা
  • পুলিশ সুপার, ঢাকা-কে প্রেরিত

স্বাক্ষর

এ. গফুর

১.১

পুলিশের অতিরিক্ত সুপার

ডিআইবি, ঢাকা

পার্শ্বটীকা: প্রাত্যহিক রিপোর্টের সংযুক্ত। স্বাক্ষরসহ তারিখ ১/১/৫০

১৬১

ঢাকাস্থ ডিআইবি ৩১/১২/১৯৪৯ তারিখে ইপিএএমএলের যুগ্ম সম্পাদককে গ্রেপ্তার করে। তাঁর গ্রেপ্তারের এই খবরটি দৈনিক যুগান্তর ও আজাদে ১/১/১৯৫০ তারিখে বের হয়।

ঢাকা, ১লা জানুয়ারি ১৯৫০

যুগান্তর, তারিখ ১/১/৫০

শেখ মুজিবুর রহমান

পূর্ববঙ্গ জননিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার

ঢাকা ৩১শে ডিসেম্বর আজ অপরাহ্নে জননিরাপত্তা আইনে পূর্ববঙ্গ আজমি মুশ্লিম লীগের যুগ্ম-সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হইয়াছে। আজমি লীগ পাকিস্তানে বিরোধী দল। উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের মানকি শরিফের পীরের নেতৃত্বে এই লীগ গঠন করা হইয়াছে।

পি,টি, আই, আর

নং ৩, তারিখ ১০/১

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ১১/১

আজাদ, তারিখ ১/১/৫০

শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার

(ষ্টাফ রিপোর্টার)

গতকাল (শনিবার) গোয়েন্দা পুলিশ স্থানীয় থানার পুলিশের সহায়তায় ছাত্রকর্মী শেখ মুজিবর রহমানকে বিশেষ ক্ষমতাবলে গ্রেফতার করিয়াছে বলিয়া জানা গিয়াছে।

পিএফে রাখা হয়েছে

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ৭/১

১৬২

ঢাকাস্থ ডিআইবির অতিরিক্ত এসপি শেখ মুজিবুর রহমানের হিস্টরি শীট সংযুক্ত করে ঢাকাস্থ পূর্ববঙ্গের স্বরাষ্ট্র (বিশেষ) বিভাগের সহকারী সচিবকে একটি ম্যামো প্রেরণ করেন।ম্যামোতে উল্লেখ ছিল যে, কোতোয়ালি থানার ১৯(১০)৪৯ ১৪৭/৩২৫ আইপিসি, ৭(৩) বিএসপিও নং মামলার অধীনে ৩১/১২/১৯৪৯ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে ১/১/১৯৫০ তারিখে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

ঢাকা, ৩রা জানুয়ারি, ১৯৫০

গোপনীয়

জেলা গোয়েন্দা শাখা

ঢাকা, ৩রা জানুয়ারি, ১৯৫০

নং ২৯/১০০-৪৯

বরাবর

মাননীয় এ.বি. খান

সহকারী সচিব

পূর্ববঙ্গ সরকার

স্বরাষ্ট্র (বিশেষ) বিভাগ, ঢাকা

ফরিদপুর জেলার টুঙ্গিপাড়া নিবাসী মৌলভি লুৎফর রহমানের পুত্র ঢাকার ১৫০ মোঘলটুলি ও ৬৯/১ খাজে দেওয়ান নিবাসী আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান, বিএ-কে কোতোয়ালি থানার ১৯(১০)৪৯ ১৪৭/৩২৫ আইপিসি, ৭(৩) বিএসপিও নং মামলার অধীনে ৩১/১২/৪৯ তারিখে গ্রেফতার করা হয়। বঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা আইন (অর্ডার IV ১৯৪৬) ১৮(২)-এর অধীনে ১/১/৫০ তারিখে তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয়। উল্লেখ্য, বঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৪৬ সালে পাশ হয় এবং East Bengal Ordinance Temporary Enactment and Re-enactment Act 1949 (East Bengal Act I, 1949) অনুসারে তা বলবৎ ছিল।

স্বাক্ষর তারিখসহ

এ. গফুর, ৩/১

পুলিশের অতিরিক্ত সুপার, ডিআইবি, ঢাকা

হিস্টরি শীট

(নথির বিবরণেও ব্যবহার্য)

  1. নাম, উপনাম ও ডাকনাম (যদি থেকে থাকে): শেখ মুজিবুর রহমান, বিএ
  2. পিতার নাম: মৌলভী শেখ লুৎফর রহমান
  3. ঠিকানা:

(ক) বাড়ির ঠিকানা: গ্রাম: টুঙ্গিপাড়া, থানা: গোপালগঞ্জ, জেলা: ফরিদপুর

(খ) অন্য ঠিকানা: ১৫০ মোঘলটুলি, ঢাকা ও ৬৯/১ খাজে দেওয়ান, ঢাকা

  • ধর্ম: মুসলিম
  • জন্মতারিখ: ১৯২০
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পাশের বৎসর

গোপালগঞ্জ এম.এন. ইন্সটিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক ১৯৪২,

কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে আইএ ও বিএ ১৯৪৫ ও ১৯৪৭ যথাক্রমে

১৬৩

নিজেদের আইনজীবীর সাথে আলোচনা করতে অনুমতি চেয়ে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি শেখ মুজিবুর রহমান ও দুজন নিরাপত্তা কারাবন্দি ৭/১/১৯৫০ তারিখে আইবির ডিআইজি বরাবর একটি আবেদন করেন।

ঢাকা, ৭ই জানুয়ারি ১৯৫০

বরাবর

ডিআইজি, আইবি, পূর্ববঙ্গ

তারিখ, ঢাকা, ৭ই জানুয়ারি, ১৯৫০

মাধ্যম: ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ইন্টেনডেন্ট

জনাব,

সবিনয় নিবেদন এই যে, আমাদের মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয় নিয়ে জনাব কফিলউদ্দিন চৌধুরী, জনাব আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট, জনাব আলি আমজাদ খান, অ্যাডভোকেট, খাজে দেওয়ান ও জনাব কামরুদ্দিন আহমেদ, বি.এল. উকিল, ৪, জিন্দা বাহার, ইসলামপুর, ঢাকার সাথে আমরা বিকেল ৪:০০ টায় আলাপ করতে চাই।

অতএব আপনি আমাদের অনুগ্রহপূর্বক উকিলদের সাথে সাক্ষাৎলাভে অনুমতি দেবেন এবং তাঁদেরকেও বিষয়টি অবহিত করবেন বলে আপনার নিকট আশা করছি।

আপনার একান্ত

  • স্বাক্ষরসহ তারিখ/- আবদুল হামিদ খান
  • স্বাক্ষরসহ তারিখ/- মোহাম্মদ শামসুল হক
  • স্বাক্ষরসহ তারিখ/- শেখ মুজিবুর রহমান

নিরাপত্তা কারাবন্দি, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার

নং. ৩৩/এসবি, তারিখ ৭/১/৫০

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ইনটেন্ডেন্টের নিকট প্রেরিত। স্বাক্ষরসহ তারিখ/- এ.এইচ. খান, ৭/১/৫০।

গোয়েন্দা শাখা, পূর্ববঙ্গ

৭, ওয়াইজ ঘাট রোড

ঢাকা, ১০ই জানুয়ারি, ১৯৫০

নং ৫৭৪/৪৮৩-৪৮(সেক)জে.

বরাবর

জনাব এ.এইচ. খান

সুপার ইনটেনডেন্ট, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, ঢাকা

নিরাপত্তা কারাবন্দি মওলানা আবদুল হামিদ খান ও অন্যান্যের স্বাক্ষরিত ৭/১/৫০ তারিখের একটি আবেদনপত্রের অনুলিপি এতদ্‌সঙ্গে প্রেরণ করে আমি বিবৃত করছি যে, গোয়েন্দা শাখার একজন অফিসারের উপস্থিতিতে ১১/১/৫০ তারিখ বেলা ৪টায় প্রার্থিত সাক্ষাতের বিষয়টিকে অনুমোদন দেওয়া যায়। উক্ত অফিসারটি সাক্ষাতের বিষয়টি তদারকি করবেন।

তদানুসারে বিষয়টি উক্ত দলকে অবহিত করা যেতে পারে।

পুলিশের বিশেষ সুপার ইনটেনডেন্টের পক্ষে

আইবিইবি, ঢাকা

১৬৪

ঢাকাস্থ ডিআইবির ১২/১/১৯৫০ তারিখের অ্যাজেন্ট রিপোর্টটির সারসংক্ষেপ যেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, ইপিএমএসএলের সদস্যরা যেহেতু পুলিশি আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেনি সেহেতু ৭/১/১৯৫০ তারিখে ১৫০ মোঘলটুলিতে দলটির ওয়ার্কিং কমিটির যে সভা হওয়ার কথা ছিল তা হচ্ছে না। গুরুত্বপূর্ণ সব নেতাকর্মীকে আটক করার পরও সমর্থক ও অনুসারীদের কাছ থেকে সমর্থন আদায়ের জন্যে ১৩/১/১৯৫০ তারিখে আর্মানিটোলা ময়দানে তারা একটা জনসভা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য ইপিএমএসএলের সদস্যরা লিফলেট বের করে।

ঢাকা, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

১২/১/৫০ তারিখের ডি. ৩৪(সি.এ.)-এর সংক্ষিপ্তসার

পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের সদস্যরা যেহেতু পুলিশি আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেনি সেহেতু ৭/১/১৯৫০ তারিখে ১৫০ মোঘলটুলিতে দলটির ওয়ার্কিং কমিটির যে সভা হওয়ার কথা ছিল তা হচ্ছে না। জানা গেছে যে, দলটির কিছু সদস্য ৬৯/১ খাজে দেওয়ানে একত্রিত হয়েছিল এবং গুরুত্বপূর্ণ সব নেতাকর্মী যেমন ভাসানীর মওলানা আবদুল হামিদ, মৌলভী শামসুল হক ও শেখ মুজিবুর রহমানকে (এরা সবাই নিরাপত্তা কারাবন্দি) আটক করার পরও সমর্থক ও অনুসারীদের কাছ থেকে সমর্থন আদায়ের জন্যে ১৩/১/১৯৫০ তারিখে বেলা ৪টায় আর্মানিটোলা ময়দানে একটা জনসভা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য ইপিএমএসএলের সদস্যরা লিফলেট বের করে।

১৬৫

ফরিদপুরস্থ ডিআইবির এসপি ঢাকাস্থ আইবির এসএসপি বরাবর ১২.১.১৯৫০ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমানের বিষয়ে গোপনীয় রেফারেন্স নোটের একটি দ্রুতগামী রেডিওগ্রাম প্রেরণ করেন। গোপনীয় সেসব রেফারেন্স নোটে কী লিখিত ছিল তা নিচের উপশিরোনাম নং i থেকে xxv-এ উল্লেখ করা হয়েছে।

ফরিদপুর, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

P. 385-এর উত্তরে

রেডিওগ্রাম

নং ২০৪/৬০৬-৪৮ ব্য.ন. তারিখ ৫.১

পুলিশের সুপার ইন্টেনডেন্ট,

ডিআইবি, ফরিদপুর

গোপালগঞ্জের টঙ্গিবাড়ি ও ঢাকা নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমানের বিষয়ে কোনো রেফারেন্স নোট থাকলে দ্রুততার সাথে সেসব পাঠানোর জন্য অনুরোধ করছি।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ৪.১

নিশ্চিতকরণের জন্য অনুলিপি ডাকযোগে প্রেরণ করুন। ব্যক্তিটি ঢাকার ডিআইবি কর্তৃক ৩১.১২.৪৯ তারিখে আইপিসির ১৪৭/৩২৫ ও বিএসপিওর ৭(৩) ধারার অনুযায়ী দায়েরকৃত কোতোয়ালি মামলা নং ১৯(১০)৪৯-এর অধীনে গ্রেফতার হন এবং এসপিওর ১৮(২) ধারা অনুযায়ী ১/১/৫০ তারিখে কারাবাস করেছেন।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ৪/১/৫০

গোয়েন্দা বিভাগের এসএস ৩-এর জন্য ডিএস ৩

গোপনীয়

জেলা গোয়েন্দা বিভাগ

ঢাকা, ১২/১৪ জানুয়ারি ১৯৫০

নং ২২৯/৩৩-৫০

বরাবর,

খান সাহিব এম. ইউসুফ

পুলিশের বিশেষ সুপার ইন্টেনডেন্ট,

গোয়েন্দা বিভাগ, ঢাকা

সূত্র: ৫/১/৫০ তারিখের আপনার রেডিওগ্রাম নং ২০৪

আমি আপনার অভিপ্রায় অনুযায়ী ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুতফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমানের বিষয়ে হালনাগাদকৃত রেফারেন্স নোটগুলো এতদ্‌সঙ্গে প্রেরণ করছি।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ১২/১

পুলিশের সুপার ইন্টেনডেন্ট, ডি.আই.বি.

ফরিদপুর

গোপনীয়

ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুতফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমান, বয়স ৩০ (১৯৫০)-এর বিষয়ে হালনাগাদকৃত রেফারেন্স নোটসমূহ

i. প্রাক্তন মন্ত্রী এইচ.এস. সোহ্‌রাওয়ার্দীর সভাপতিত্বে গোপালগঞ্জে মুসলিম লীগের একটি সভা ৯/৭/১৯৪৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। বিপুল সংখ্যক সাধারণ জনতা, ছাত্র ও লাঠিয়ালরা (লাঠি খেলোয়াড়) উক্ত সমবায় অংশ নেয়। শেখ মুজিবুর রহমান ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ লাঠি খেলার আয়োজন করেন। সেখানে খানবাহাদুর এস. দাহার ও সালাম ওরফে বাদশাহ মিয়াঁর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি হয়।

ফরিদপুর, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

গোপালগঞ্জে প্রাক্তন মন্ত্রী এইচ.এস. সোহ্‌রাওয়ার্দীর সভাপতিত্বে মুসলিম লীগের একটি সভা ৯/৭/১৯৪৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। বিপুল সংখ্যক ছাত্র ও প্রায় ৫০০ লাঠিয়াল (লাঠি খেলোয়াড়)-সহ প্রায় ৩০০০ জনতা সভায় উপস্থিত ছিল। গোপালগঞ্জ মহকুমার নানা জায়গা থেকে এসব লাঠিয়াল এসেছিল। কাসিয়ানি থানার অন্তর্গত রাতাইলের খান বাহাদুর এস. দাহার (কলকাতার অবসরপ্রাপ্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট), গোপালগঞ্জের মুজিবুর রহমান ও মুশররফ হুসাইন (পিইউবি, পাটগাটি) এবং আবদুল আলি তালুকদার (পিইউবি ডুমুরিয়া, থানা কোটালিপারা) লাঠি খেলার আয়োজন করেছিলেন। খান বাহাদুর এস. দাহারের পক্ষে মুজিবুর রহমান চিৎকার দিলে সেখানে খানবাহাদুর এস. দাহার ও সালাম ওরফে বাদশাহ মিয়াঁর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

ii. দলের প্রচারকার্যে ১৮/৯/৪৫ তারিখে এবিএমএসএলের সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান আতাউর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে মাদারীপুর ভ্রমণ করেন। পরের দিন শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে এমএসএলের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতির ভাষণে পাকিস্তানকে ব্যাখ্যা করে তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন এবং পাকিস্তান অর্জন করা পর্যন্ত মুসলিম ছাত্রদের আন্দোলন অব্যাহত রাখতে অনুরোধ করেন। গণশিক্ষার জন্য গ্রামে গ্রামে পাঠাগার ও নৈশ বিদ্যালয় চালু করার জন্য তিনি ছাত্রদের উপদেশ দেন।

ফরিদপুর, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্পাদক মুজিবুর রহমান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে অধ্যয়নরত আতাউর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে দলীয় প্রচারকার্যে ১৮/৯/৪৫ তারিখে বরিশাল থেকে মাদারীপুর আসেন। ‘মুসলিম লীগ জিন্দাবাদ’, ‘কায়েদ-এ-আজম জিন্দাবাদ’ ও ‘ছাত্রনেতা মুজিবুর রহমান জিন্দাবাদ’ প্রভৃতি স্লোগানের মাধ্যমে মুসলিম ছাত্ররা তাঁকে আন্তরিকতার সাথে বরণ করে নেয়। মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ১৯/৯/৪৫ তারিখে মুসলিম ছাত্রলীগের একটি সভা বসে। প্রায় ১৫০জন মুসলিম ছাত্র তাতে অংশ নেয় যাদের কেউ কেউ পাকিস্তান কী এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন এবং নীতিতে অটল থেকে পাকিস্তান অর্জন না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যেতে মুসলিম ছাত্রদের অনুরোধ করেন। গণশিক্ষার জন্য গ্রামে গ্রামে পাঠাগার ও নৈশ বিদ্যালয় চালু করার জন্যও সভাপতি ছাত্রদের অনুরোধ করেন। ভারতের আসন্ন নির্বাচনের ওপর তিনি যথেষ্ট জোর দেন এবং মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে যিনি মনোনীত হবেন তিনি যেন একটি ভোট থেকেও বঞ্চিত না হন সে জন্য মুসলিম ছাত্রদের বিশেষ নিবেদন করেন।

iii. এবিএমএসএলের সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান ৯/১১/১৯৪৫ তারিখে মাদারীপুর অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের একটি প্রচারসভায় সভাপতিত্ব করেন। কলকাতার ছাত্রজনতার ওপর ১৯৪৫ সনের নভেম্বরে সংঘটিত পুলিশি নির্যাতনের খবর পৌঁছার সাথে সাথে স্থানীয় রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্ররা প্রতিবাদস্বরূপ ক্লাস পরিত্যাগপূর্বক বাইরে চলে আসে। পরে শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে একটি বড়ো প্রতিবাদসভা অনুষ্ঠিত হয়।

ফরিদপুর, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্র লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান ৯/১১/৪৫ তারিখে মাদারীপুরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের একটি প্রচারসভায় সভাপতির আসন অলংকৃত করেন। প্রায় ৪০০ জনতা উক্ত সভায় অংশ নেন।

কলকাতায় ছাত্রজনতার ওপর ১৯৪৫ সনের নভেম্বরে সংঘটিত পুলিশি নির্যাতনের খবর এখানে এসে পৌঁছার সাথে সাথে স্থানীয় রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্রছাত্রী সবাই প্রতিবাদস্বরূপ ক্লাস বর্জন করে বাইরে চলে আসে। পরে শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে কলেজপ্রাঙ্গণে একটি বৃহৎ প্রতিবাদসভা অনুষ্ঠিত হয়। কলকাতায় ছাত্রদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে কমরেড (১) অতুল ঘোষ, (২) অসিত দত্ত, (৩) মুহাম্মদ জাহিদ ও (৪) অমরেন্দ্র ঘোষ উক্ত সভায় বক্তৃতা করেন।

iv. ফরিদপুর জেলা মুসলিম লীগের সভাপতি ইউসুফ আলি চৌধুরীর সভাপতিত্বে ১১/১/১৯৪৬ তারিখে ফরিদপুরে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ‘বিজয়ের দিন’, কেন্দ্রীয় সংসদের নির্বাচনে মুসলিম লীগের সাফল্য এবং পরবর্তী প্রাদেশিক সংসদে মুসলিম লীগের সব আসন দখল করার জন্য প্রচারকার্য চালাতে এ সভা বসে। পাকিস্তানের পক্ষে শেখ মুজিবুর রহমান বক্তৃতা করেন।

ফরিদপুর, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনে মুসলিম লীগ পার্টির অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য দিনটিকে ‘বিজয়ের দিন’ হিসেবে উদ্‌যাপন এবং পরবর্তী প্রাদেশিক সংসদে মুসলিম লীগের সব আসন দখল করার জন্য প্রচারকার্য চালাতে ফরিদপুর জেলা মুসলিম লীগের সভাপতি ইউসুফ আলী চৌধুরীর সভাপতিত্বে ১১/১/৪৬ তারিখে ফরিদপুরে একটি সভা বসে। দিনটির তাৎপর্য বর্ণনা করে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র মুজিবুর রহমান খান পাকিস্তানের পক্ষে ভাষণ দেন।

মুসলিমদের ওপর বিগত কংগ্রেস মন্ত্রিসভার নিষ্ঠুর আচরণের নিন্দা জানিয়ে এবং ব্রিটিশ সরকার ও হিন্দু পুঁজিপতিদের শোষণের বিচার দাবি করে।

v. আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষ্যে লীগের প্রার্থী বাছাই করতে বঙ্গের প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি এইচ.এস. সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা আবদুল হাই ১৬/১/১৯৪৬ তারিখে মাদারীপুর ভ্রমণ করেন। নির্বাচনী প্রচারণায় তাঁরা ভাষণ দেন।

ফরিদপুর, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

বঙ্গের প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি জনাব এইচ.এস. সোহরাওয়ার্দী মওলানা আবদুল হাইকে সাথে নিয়ে আসন্ন নির্বাচনের জন্য লীগের নমিনি বাছাই করার লক্ষ্যে ১৬/১/৪৬ তারিখে মাদারীপুর আসেন। মুসলিম লীগের সাধারণ স্লোগান ও ‘ব্রিটিশ সাম্রাজ্য নিপাত যাক’ প্রভৃতি স্লোগানের মধ্যে প্রায় ৮০০ লোক স্টেশনে তাঁদের সংবর্ধনা দেন। একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় যাতে সব লোক অংশ নেয়। জনাব এইচ.এস. সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হাই ও মুজিবুর রহমান (মুসলিম ছাত্রলীগ) বরাবরের মতো একই রকমের নির্বাচনী প্রচারণার বক্তব্য প্রদান করেন। চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এবং দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবিতে সভায় সর্বসম্মতিতে একটি সিদ্ধান্ত হয়।

vi. ফরিদপুর শহরে মুসলিম ছাত্রলীগ কর্তৃক ২/২/১৯৪৬ তারিখে মরহুম নাজির আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়। এ উপলক্ষ্যে মুসলিম ছাত্রদের একটি মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে।

ফরিদপুর, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

১৯৪৩ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় ঢাকায় নিহত নাজির আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী মুসলিম ছাত্রলীগ কর্তৃক ২/২/৪৬ তারিখে এ শহরে (ফরিদপুর) অনুষ্ঠিত হয়। মুজিবুর রহমান নামের স্থানীয় কলেজের একজন ছাত্রের নেতৃত্বে প্রায় ২৫০ জন মুসলিম ছাত্র ক্লাস থেকে বেরিয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

vii. গোপালগঞ্জ কোর্ট মসজিদ প্রাঙ্গণে ৩/৩/১৯৪৮ তারিখে ভাষা আন্দোলনের ওপর ছাত্রদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় যাতে শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্য নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা প্রদান করেন।

ফরিদপুর, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

জয়নুল আবেদীন সর্দারের সভাপতিত্বে গোপালগঞ্জের কোর্ট মসজিদ প্রাঙ্গণে ভাষা বিতর্কের ওপর ছাত্রদের একটি সভা ৩/৩/৪৮ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় প্রায় ৪০০ লোক অংশ নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও প্রাদেশিক ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ থানার টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুতফর রহমানের পুত্র মু. মুজিবুর রহমানসহ অন্য ব্যক্তিবর্গ সভায় ভাষণ দেন। বাংলাকে আদালতের ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা এবং সম্মানিত মন্ত্রিবর্গের বেতন থেকে কিয়দংশ কর্তনের দাবি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

viii. গোপালগঞ্জে এইচ.এস. সোহরাওয়ার্দীর সফর উপলক্ষ্যে এস.এন. একাডেমি প্রাঙ্গণে ২৯/০৪/১৯৪৮ তারিখে গোপালগঞ্জ মহকুমা মুসলিম লীগের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় শেখ মুজিবুর রহমান বক্তব্য রাখেন।

ফরিদপুর, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

জনাব এইচ.এস. সোহরাওয়ার্দীর গোপালগঞ্জ সফর উপলক্ষ্যে গোপালগঞ্জের আইনজীবী কাজি মুজফফর হুসাইন (মহকুমা মুসলিম লীগের সভাপতি)-এর সভাপতিত্বে এস.এন. একাডেমি প্রাঙ্গণে ২৯/৪/৪৮ তারিখের বিকালে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুতফর রহমানের পুত্র মুজিবুর রহমান সভায় প্রথম বক্তব্য দেন। পূর্ব পাকিস্তানে কাপড়, খাবারসামগ্রী ও অন্য দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় বস্তুর সংকটের ওপর তিনি বিস্তর আলোচনা করেন। গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোক কীভাবে কষ্টে দিনাতিপাত করে তা তিনি বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, জনাব সোহরাওয়ার্দীর আহ্বানে মুসলিম ছাত্ররা আজ রাজনৈতিক বলয়ের মধ্যে চলে এসেছে। সরকারের সমালোচকদের সরকার পঞ্চম কলামিস্ট হিসেবে আলাদা করেছেন বলে তিনি সরকারকে সমালোচনা করেন। ঢাকায় ভাষা বিরোধের সময়ে ছাত্রদের বিরুদ্ধে পুলিশি কর্মকাণ্ডের নিন্দা জ্ঞাপন করেন। গোপালগঞ্জে জনাব এইচ.এস. সোহরাওয়ার্দীরকে একটি যথোচিত সম্বর্ধনা দিতে প্রয়োজনীয় সব কিছুর আয়োজন করেন তিনি।

ix. কিছু ছাত্রদের নিয়ে মুসলিমদের একটি সভা ৭/৫/১৯৪৮ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে গোপালগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতির ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান খাদ্য ও কাপড় সংকটের জন্য মন্ত্রিবর্গের সমালোচনা করেন।

ফরিদপুর, ১২ জানুয়ারি ১৯৫০

[ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে গোপালগঞ্জ শহরের মাঠে ৭/৫/৪৮ তারিখে কিছু ছাত্রদের নিয়ে প্রায় ১০০ জ়ন মুসলিমের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতির ভাষণে মুজিবুর রহমান বলেন যে, খাদ্য ও বস্ত্র সংকটের জন্য মন্ত্রীদের পাশাপাশি সংসদের সদস্যরাও দায়ী। অবিলম্বে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের জোর দাবি জানান তিনি এবং নিম্ন বেতনের সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি তিনি সহানুভূতি প্রকাশ] করেন।

পূর্ব পাকিস্তানের আইন-আদালতের ভাষা হিসেবে বাংলা চালুকরণের এবং জমিদারি প্রথার অবলুপ্তকরণের পক্ষে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভাপতি আরও বলেন যে, যদি তাঁরা (মন্ত্রি ও সংসদ সদস্যরা) এটা করতে ব্যর্থ হন তবে যেন তাঁরা অতিসত্ত্বর পদত্যাগ করেন। তাঁরা এটাও প্রস্তাব করেন যে, আর কোনো উপায় না থাকলে তাঁরা একটি করমুক্ত প্রচারণার ব্যবস্থা করতে পারেন।

x গোপালগঞ্জ শহরের মুসলিম ছাত্রদের আয়োজনে ২৬/৬/১৯৪৮ তারিখে গোপালগঞ্জ শহরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ‘জমিদারি প্রথা’অবলুপ্তিকরণের উপযোগিতার কথা বর্ণনা করেন তিনি এবং খাদ্য সমস্যা সমাধানে জনগণের দুর্ভোগ দূরীকরণের ব্যর্থ হওয়ায় গোপালগঞ্জের এমএলএ শামসুদ্দীন আহমেদের পদত্যাগ দাবি করেন।

ফরিদপুর, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে গোপালগঞ্জের মুসলিম ছাত্ররা ২৬/৬/৪৮ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে একটি সভার আয়োজন করে। সভায় মহকুমার মুসলিম ছাত্রলীগ পুনর্গঠিত হয়। সভাপতির ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান জমিদারি প্রথার অবলুপ্তি ঘটলে কী কী সুবিধা পাওয়া যাবে তার ওপর বক্তব্য রাখেন এবং গোপালগঞ্জ মহকুমার বর্তমান এমএলএ মৌলভি শামসুদ্দীন আহমেদের সমালোচনা করে বলেন যে, তিনি যদি গোপালগঞ্জ মহকুমার খাদ্যপরিস্থিতির উন্নতি সাধন করে জনগণের দুর্দশার লাঘব ঘটাতে না পারেন তবে এমএলএশিপ থেকে তাঁর বরখাস্ত করা উচিত। জমিদারি প্রথার আশু-অবলুপ্তি, পূর্ব পাকিস্তানের এমএনজির সালারে সুবা জনাব জহিরুদ্দীন, এম.এ. বি.এল.-এর নিঃশর্ত মুক্তি এবং সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের মাসোয়ারা হ্রাস প্রভৃতি বিষয়ের দাবি জানিয়ে সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

(উপশিরোনাম i থেকে x পর্যন্ত উল্লিখিত অংশটুকু ফরিদপুরের ডিআইবির এসপি কর্তৃক ঢাকাস্থ আইবিইবির এসএসপি বরাবর পূর্বেই প্রেরিত হয়েছিল। শিরোনাম নং ২০-এ উল্লিখিত ৬/৯/১৯৪৮ তারিখের ঢাকা গোয়েন্দা সংস্থা ফরিদপুরের ম্যামো নং ২৮১৪/৭০-৪৮ দ্রষ্টব্য।)

xi ইস্ট পাকিস্তান মুসলিম ইয়াং প্রগ্রেসিভ দলের কর্মীদের একটি সভা ১৯/৫/১৯৪৮ তারিখে ঢাকাস্থ ১৫০ মোঘলটুলীতে অনুষ্ঠিত হয়। সদর মহকুমা মুসলিম লীগের সম্পাদক ও রংপুর জেলা পাকিস্তান গণতান্ত্রিক যুবক লীগের সভাপতি আবুল হুসাইনসহ অন্য নেতৃবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন।

ফরিদপুর, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

সদর মহকুমা মুসলিম লীগের সম্পাদক ও রংপুর জেলা পাকিস্তান গণতান্ত্রিক যুবক লীগের সভাপতি আবুল হুসাইন অন্য নেতৃবৃন্দের সাথে ঢাকায় গমন করেন এবং ইস্ট পাকিস্তান মুসলিম প্রগ্রেসিভ দলের কর্মীদের সভায় যোগ দেন। সভাটি ঢাকার (মুসলিম লীগ কর্মীশিবির) ১৫০ মোঘলটুলিতে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, প্রগতিশীল মুসলিম ছাত্রলীগের সব কর্মীরা একসাথে কাজ করবে এবং কার্যালয় হবে ঢাকার ১৫০ মোঘলটুলিতে। ফরিদপুরের শেখ মুজিবুর রহমান অফিসের দায়িত্ব থাকবেন।

xii কলকাতার ৪০ থিয়েটার রোডের এইচ.এস. সোহরাওয়ার্দীর কোয়ার্টারে ১/৮/১৯৪৮ তারিখে একটি দলীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ময়মনসিংহ মুসলিম লীগের আয়োজক শামসুল হক, গোপালগঞ্জ মুসলিম লীগের কর্মী শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্য বিখ্যাত কিছু কর্মীবৃন্দ উক্ত সভায় অংশ নেন।

ফরিদপুর, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

জনাব এইচ.এস. সোহরাওয়ার্দী ১লা আগস্ট, ১৯৪৮ তারিখে ৪০ থিয়েটার রোড, কলকাতায় তাঁর কোয়ার্টারে কয়েকজন বিশিষ্ট নেতাকর্মীকে আমন্ত্রণ জানান। সেখানে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ময়মনসিংহের মুসলিম লীগের আয়োজক জনাব শামসুল হক, ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের এম.এল. কর্মী মুজিবুর রহমান এবং অন্যরা উক্ত সভায় অংশ নেন।

xiii পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম ছাত্রলীগের (প্রগতিশীল অংশ) একটি সভা ২২/৮/১৯৪৮ তারিখে ঢাকার ১৫০ মোঘলটুলিতে অনুষ্ঠিত হয়। শেখ মুজিবুর রহমান উক্ত সভায় অংশ নেন। উক্ত সভায় পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ লীগের কর্মকাণ্ড ও প্রাতিষ্ঠানিক অন্যান্য বিষয় আলোচিত হয়।

ফরিদপুর, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

জহিরউদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে ঢাকার ১৫০ মোঘলটুলিতে পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম ছাত্রলীগের (প্রগতিশীল অংশ) একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। নিম্নোক্ত ব্যক্তি সভায় অংশ গ্রহণ করেন:

ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুতফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য।

পূর্ব পাকিস্তানের সব জেলার পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ লীগের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তাঁরা আলোচনা করেন এবং এর প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডের জন্য কমপক্ষে ৩০০০/- ফান্ড উত্তোলনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দলের ব্যাপারে সরকারের আচরণের নিন্দা জানিয়ে কর্মীদের এ বলে সতর্ক থাকতে তাঁরা অনুরোধ করেন যে, যে কোনো সময়ে তাঁরা গ্রেফতার হতে পারেন। তাঁরা আরও উল্লেখ করেন যে, তাঁদের সহকর্মীরা যদি গ্রেফতার হয় তাঁদের মামলা পরিচালনা করতে এই ফান্ডের বাইরে যে খরচ হবে তা হয়তো তাঁদের বহন করা লাগতে পারে।সভায় সাব্যস্ত হয়, শেখ মুজিবুর রহমান ও ইপিএমএসএলের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন এই উদ্দেশ্যে শীঘ্রই উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে ঘুরতে যাবেন।

xiv শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষাগত যোগ্যতা বিষয়ে গোপালগঞ্জের এসডিপিওর একটি প্রতিবেদন

ফরিদপুর, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

গোপালগঞ্জের এসডিপিওর প্রতিবেদনগুলো পড়ে মনে হচ্ছে যে, ১৯৪২ সালে ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের মিশন ইন্সটিটিউট থেকে মুজিবুর রহমান ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৪৪ সালে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৪৭ সালে কলকাতার একই কলেজ থেকে বি.এ. পাশ করেন।

xv পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কমিটির একটি সভা ৭/১২/১৯৪৮ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্র সংগঠনটির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এতে আলোচিত হয়।

ফরিদপুর, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কমিটির একটি সভা ৭/১২/৪৮ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, ধর্মঘটে অংশগ্রহণের জন্য রাজশাহী কলেজের যেসব ছাত্রকে কলেজ থেকে বহিষ্কারের আদেশ দেওয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রেরিত ছাত্রদের প্রতিনিধি দলটি তা প্রত্যাহারে যদি ব্যর্থ হয় তাহলে প্রতিবাদস্বরূপ পূর্ব পাকিস্তানের জেলায় জেলায়, যদি সম্ভব হয়, মিছিল, মিটিং এবং অনশনের ধর্মঘটেরও আয়োজন করা হবে। এবং ফরিদপুর জেলায় একই আয়োজনের ব্যবস্থা নিতে ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ানিবাসী লুতফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হলো।

xvi ফরিদপুরের মহকুমা ছাত্রলীগের প্রাক্তন সভাপতি কে.এ. হামিদ ২২/১/১৯৪৯ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট একটি পত্র লেখেন। পত্রলেখক চিঠিতে অবহিত করেন যে, অধ্যাপক ও মাদারীপুর কলেজের অধ্যক্ষসহ মাদারীপুরের সব অফিসার মাদারীপুরে ইপিএমএসএল প্রতিষ্ঠা করার বিপক্ষে।

ফরিদপুর, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র মুজিবুর রহমানকে ১৮/১/৪৯ তারিখে ফরিদপুরের চর মুগুরিয়া থানার মহকুমা ছাত্রলীগের প্রাক্তন সভাপতি কে.এ. হামিদ একটি পত্র লেখেন যা ২২/১/৪৯ তারিখে আটকে দেওয়া হয়। পত্রলেখক তাঁর চিঠিতে এ কথা জানিয়ে দেন যে, মাদারীপুরে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ গঠনের বিপক্ষে মাদারীপুর কলেজের অধ্যাপকবৃন্দ ও অধ্যক্ষসহ সব অফিসাররা একযোগে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে কিছু ব্যক্তিগত বিষয়ে অধ্যক্ষের সাথে বাদলের বেঁধে যায়। ফলে সে কলেজ ছাড়তে বাধ্য হয়।

xvii গোপালগঞ্জে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেলের সফরের প্রাক্কালে শেখ মুজিবুর রহমান ও শামসুদ্দীন আহমদ খন্দকারের (এমএলএ) দলের মধ্যে গোপালগঞ্জ মহকুমার খাদ্য ও বস্ত্রসংকট নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়।

ফরিদপুর, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

গোপালগঞ্জে পাকিস্তানের মাননীয় গভর্নর জেনারেলের সফরকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জের দুটো দলের মধ্যে কিছু সময় ধরে ঘনায়মান বাজে কিছু বিষয় সামনে আসে। স্থানীয় লোকেদের অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা দূরীকরণে এবং মহকুমার খাদ্যসামগ্রীর মজুদ বৃদ্ধিকরণে কিছু করতে এমএলএ মৌলভী শামসুদ্দীন আহমেদ খন্দকার ও তাঁর দলের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলায় এমএলএর দল ও ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ থানার টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুতফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমানের দল পরস্পরের বিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। হয় এম.এল.এ.শিপ থেকে পদত্যাগ করতে না হয় গোপালগঞ্জ মহকুমার জনগণের জন্য খাদ্য ও বস্ত্রের ব্যবস্থা করতে এম.এল.এ.কে অনুরোধ জানিয়ে ‘পদত্যাগ করুন’ এই শিরোনামে খোলা চিঠি দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর দল গত জুনে বাংলা ভাষায় ছাপা একটি লিফলেট বিলি করে। সম্মাননীয় গভর্নর জেনারেলের স়ফ়রের সময় তাঁকে উদ্দেশ্য করে মুজিবুর রহমান ও তাঁর দল বাংলা ভাষায় কিছু লিফলেট ছাপায় যেগুলোতে চাল ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের উচ্চমূল্যের কারণে সৃষ্ট স্থানীয় লোকেদের দুঃখ-দুর্দশার বিষয়টি উঠে আসে এবং যখন সর্বত্র ক্ষুধা ও দুর্দশার রোল পড়ে গেছে ঠিক তখনই জনগণের কাছ থেকে নানা ইস্যুতে টাকা সংগ্রহের সমালোচনাও করা হয় এতে। সম্মাননীয়ের শরণাপন্ন হয়ে চলমান অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁকে ওয়াকিবহাল করতে এবং তাঁর সৌজন্যে আয়োজিত সংবর্ধনা কমিটির সভায় এই বিষয়ে বক্তব্য রাখতে মুজিবুর রহমান ও তাঁর দল মনস্থির করেছিল।

xviii গোপালগঞ্জে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করার বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য ১১/২/১৯৪৯ তারিখে গোপালগঞ্জ শহরে লিফলেটের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর দল একটি জনসভার ডাক দেয়। গোপালগঞ্জে উক্ত সভাটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে তিনি ঘোশারচরে অন্য একটি সভার আয়োজন করেন। সেখানে সব রকমের দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে শ্রোতাদের আহ্বান জানান তিনি এবং খুলনা জেলা থেকে ফরিদপুর ও ঢাকার ধানকাটুরেদের স্ব স্ব জেলায় অর্জিত ধান সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন।

ফরিদপুর, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

গোপালগঞ্জে একটি কলেজ কীভাবে প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে মূলত সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করার লক্ষ্যে ১১/২/৪৯ তারিখে গোপালগঞ্জ শহরে একটি জনসভা আয়োজন করার জন্য গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুতফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর দল ৮/২/৪৯ তারিখে লিফলেট বিলি করে। কিন্তু দুইটি দলের মধ্যকার আচরণ শত্রুভাবাপন্ন দেখা গেলে দণ্ডবিধির ১৪৪ ধারা অনুযায়ী ১০/২/৪৯ তারিখে পরবর্তী ৬০ দিনের জন্য গোপালগঞ্জ শহরে সব রকমের সভা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ফলে শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জ শহরাঞ্চলের বাইরে গোপালগঞ্জ থানার অধীন ঘোশারচরে ১১/২/৪৯ তারিখে একটি সভা করেন। প্রায় ৩০০ লোক সভায় অংশ নেয় এবং শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই এর সভাপতিত্ব করেন। সভাপতির ভাষণে তিনি বলেন যে, গোপালগঞ্জে কলেজের নাম করে প্রায় ৩ লক্ষ রুপির অধিক অর্থ সাধারণ জনগণ থেকে সংগ্রহ করে সে অর্থ করাচি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।পরবর্তী জুনে গোপালগঞ্জে কলেজ শুরু হওয়া উচিত বলে তিনি দাবি জানান এবং এই দাবির পক্ষে শক্তিশালী জনমত গঠনে তিনি জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেন। সব রকমের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ফের অনুরোধ জানিয়ে তিনি খুলনা জেলা থেকে ফরিদপুর ও ঢাকা জেলার ধানকাটুরেদের অর্জিত ধান সঙ্গে করে নিয়ে যেতে না দেওয়ার সরকারি প্রতিবন্ধকতার সমালোচনা করেন। তিনি আরও প্রচার করেন যে, বেসামরিক সরবরাহ বিভাগের চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর নিকট প্রেরিত প্রতিনিধি দলের সাথে তাঁদের কয়েকজনকে নিয়ে যেতে তিনি অনেক অনুরোধ করলেও এই জেলার এম.এল.এ. রা তাঁর প্রতি কর্ণপাত করেননি। বাধ্য করলেও জনগণ যেন কোনো ফান্ডে কোনো চাঁদা না দেয় সেজন্য তিনি তাদের অনুরোধ করেন। উচ্চপদস্থ কর্মচারী ও মন্ত্রীদের বিপুল বেতন উত্তোলনের সমালোচনা করেন তিনি।

xix মাদারীপুর এইচ.ই. স্কুলে ২০/২/১৯৪৯ তারিখে একটি সভা বসে। শেখ মুজিবুর রহমান তাতে সভাপতিত্ব করেন। নতুন মডেলের ভিত্তিতে মুসলিম ছাত্রলীগ গঠনের প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব তিনি শ্রোতাদের নিকট তুলে ধরেন এবং ‘জমিদারি প্রথা’র বিলুপ্ত না করায় সরকারের বিরুদ্ধে সাহসী ভূমিকা রাখতে ছাত্রদের আহ্বান করেন।

ফরিদপুর, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

মাদারীপুর থানার চরমুগুরিয়ায় অবস্থিত বেসামরিক সরবরাহ অফিসের করণিক আবদুল হামিদ খানের অনুরোধে মাদারীপুর এইচ.ই. স্কুলের প্রাঙ্গণে ২০/২/৪৯ তারিখে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ১৫০ জ়ন মুসলিম ছাত্র তাতে অংশ নেয়। ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার অধীন টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমান সভার সভাপতিত্ব করেন। একটি নতুন রূপরেখার ওপর ভিত্তি করে মুসলিম ছাত্রলীগ গঠনের প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব তিনি উপস্থিত সবাইকে ব্যাখ্যা করেন এবং জীবনের দুষ্প্রাপ্য প্রয়োজনীয় বস্তুসামগ্রী সরবরাহ করতে সরকারের অসক্ষমতার বিরুদ্ধে উপস্থিত ছাত্রদের প্রতিবাদমুখর হতে আহ্বান জানান। জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ না করায়, বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা ও সেনা প্রশিক্ষণ চালু না করায় এবং দেশমাতৃকার রক্ষার জন্য অস্ত্র সরবরাহ না করায় বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হতেও শেখ মুজিবুর রহমান উপস্থিত ছাত্রদের আহ্বান করেন। ২১/২/৪৯ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এম.এ.র ছাত্র ও ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের অধীন টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে মাদারীপুর শহরে মসজিদের সামনের মাঠটিতে আরেকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকজন ব্যক্তিসহ প্রায় ৬০০ জনতা তাতে উপস্থিত ছিলেন।প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, বর্তমান রেশন পদ্ধতি যা কেবল শহরাঞ্চলগুলোতেই সীমাবদ্ধ এবং খাদ্যশস্যের সংগ্রহ ও বিতরণ ব্যবস্থা প্রভৃতি বিষয়ে সরকারের নীতির সমালোচনা করেন তিনি। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং যাবতীয় সব রকমের দুঃশাসন ও স্বেচ্ছাচারিতা দূর করতে উপস্থিত জনতাকে তিনি এক হতে আহ্বান জানান।তিনি ঘোষণা করেন যে, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বেতন কমিয়ে অধীনস্থ ও তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন বাড়িয়ে দিতে হবে। জীবনের প্রয়োজনীয় বস্তুসামগ্রি সরবরাহ না করায়, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও বাধ্যতামূলক সেনা প্রশিক্ষণ চালু না করায় সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান এবং কর্ডন সিস্টেমের বিলুপ্ত ও প্রতিটি গ্রামে রেশনিং পদ্ধতি চালুকরণের দাবি জানান তিনি।

xx ছাত্রদের একটি মিছিল ৯/৪/১৯৪৯ তারিখে গোপালগঞ্জ শহরকে প্রদক্ষিণ করে। শেখ মুজিবুর রহমানসহ ২৭ জন ঢাবি ছাত্রের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৃহীত ব্যবস্থার প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

ফরিদপুর, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত নিম্নবেতনের কর্মচারীদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে ধর্মঘট ও আন্দোলন করার অপরাধে ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের অধীন টুঙ্গিপাড়া নিবাসী শেখ মুজিবুর রহমান সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ জন ছাত্রের বিরুদ্ধে ঢাবি কর্তৃপক্ষ যে ব্যবস্থা নিয়েছে তার প্রতিবাদস্বরূপ আলাউদ্দীন শিকদারের নেতৃত্বে গোপালগঞ্জের প্রায় ২০০ জন ছাত্রের একটি দল মিছিল নিয়ে ৯/৪/৪৯ তারিখে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

xxi ডিআইও-র একটি তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয় যে, মাদারীপুর মুসলিম লীগের সদস্যবৃন্দ ও নাজিমুদ্দিন কলেজের অধ্যাপকবৃন্দ মাদারীপুরে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কোনো শাখা যেন গড়ে না ওঠে সে জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়। কারণ ইতঃপূর্বে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে (যিনি সরকারকে সমর্থন করেন না) মাদারীপুরে তা অনেকটা গড়ে উঠেছিল।

ফরিদপুর, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

ডিআইও-র একটি প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয় যে, মাদারীপুর মুসলিম লীগ সমর্থকবৃন্দ, নাজিমুদ্দিন কলেজের অধ্যাপকবৃন্দ তাঁদের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছিলেন যেন মাদারীপুরে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কোনো শাখা গঠিত না হয়। এর পেছনের কারণ হলো ইতঃপূর্বে পূর্ব পাকিস্তান লীগের একটি শাখা মাদারীপুরে অনেকটা গড়ে উঠেছিল ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ থানার টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে কিন্তু তিনি বর্তমান সরকারের সমর্থক ছিলেন না। এখন পর্যন্ত এই ছাত্রদলটির সদস্যরা জনাব সোহরাওয়ার্দীর (বঙ্গের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী) দলের সমর্থক। বর্তমান মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে জনমত গঠন করার জন্য পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের সদস্যরা তাদের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

একজন ডিআইও তাঁর তদন্তে উল্লেখ করেন যে, ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র শেখ মুজিবুর রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ২০/২/৫৯ তারিখে মাদারীপুর মহকুমা ছাত্রলীগের ওয়ার্কিং কমিটি মাদারীপুরে সংগঠিত হয়।

xxii ইপিএমএসএল-এর একটি সভা ২৫/৬/১৯৪৯ তারিখে ১৫০মোঘলটুলি, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। শেখ মুজিবুর রহমান উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ জন ছাত্রের বিরুদ্ধে দণ্ডাদেশ প্রত্যাহার করে নিতে সরাসরি কর্মসূচী হিসেবে ছাত্ররা পুনরায় আন্দোলন শুরু করবে মর্মে নিজেদের প্রত্যয় ব্যক্ত করে।

ফরিদপুর, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

ঢাকার আজিজ আহমেদের সভাপতিত্বে ঢাকাস্থ ১৫০ মোঘলটুলিতে ইপিএমএসএল-এর একটি সভা ২৫/৬/৪৯ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আফজালুর রহমানের স্থলে কাজি গুলাম মাহবুবকে ইপিএমএসএলের আহ্বায়ক নির্বাচিত করা হয় এবং ইপিএমএসএলের ভবিষ্যৎ নীতি ও প্রকল্পকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়: ঢাকাতে আইনের ছাত্র হিসেবে অধ্যয়নরত ফরিদপুর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ জন ছাত্রের বিরুদ্ধে দণ্ডাদেশ প্রত্যাহার করে নিতে সরাসরি কর্মসূচী হিসেবে ছাত্ররা পুনরায় আন্দোলন শুরু করবে মর্মে সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সব রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তিদানের দাবিতে এবং শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষাকে ব্যবহার করার দাবিতে আরও কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

xxiii গোপালগঞ্জ শহরে একটি বেআইনি সভা করার অপরাধে ১৯/৭/১৯৪৯ তারিখে আবদুস সালাম খান ওরফে বাদশা মিয়াঁর সাথে শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন এবং পরে ব্যক্তিগত মুচলেকা দিয়ে মুক্ত হন।

ফরিদপুর, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

জনসমাগম নিবারণমূলক ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৪৪ ধারা অমান্য করে গোপালগঞ্জে কোর্ট মসজিদের অভ্যন্তরে প্রায় ৩০০ জন লোকের সমাগমে একটি বেআইনি সভা অনুষ্ঠিত করার অপরাধে আবদুস সালাম খান ওরফে বাদশা মিয়াঁ এমএবিএল-এর সঙ্গে ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমান ১৯/৭/৪৯ তারিখে গ্রেফতার হয়েছেন। ব্যক্তিগত মুচলেকা দিয়ে তারা এর পরে মুক্তি নিয়েছেন।

ঢাকা ডিআইবির ম্যামো থেকে এটা বোঝা যায় যে, ঢাকার ১৫০ মোঘলটুলি লেনের বাসিন্দা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক। তাঁর বয়স প্রায় ২৮ বছর।

xxiv এস.এইচ. সোহরাওয়ার্দীর সাথে সাক্ষাতের লক্ষ্যে শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। আবুল হাসেম ও আবদুস সাত্তারকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি একটি পত্র লেখেন।

ফরিদপুর, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

একজন ডিআইও তাঁর তদন্তে উল্লেখ করেন যে, জনাব সোহরাওয়ার্দীর সাথে সাক্ষাতের লক্ষ্যে ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র এম.এ. ক্লাসের ছাত্র শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতায় গমন করেন।

জনাব আবুল হাসেম ও ফরিদপুরের পাটগাতি থানার সেরামকান্দি নিবাসী জনাব আবদুস সাত্তারকে লেখা মুজিবুরের একটি চিঠি আটক করা হয়। চিঠিতে লেখক উক্ত দুজনকে ঐকবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। এতে তিনি ব্যাখ্যা করে আরও বলেন যে, কর্ডন সিস্টেমের অবলুপ্তি ঘটাতে মন্ত্রীরা ভীত হয়ে আছেন। তিনি আরও বলেন যে, কিছু লোক দেশে লুটতরাজ চালাচ্ছে আর আমার দেশের লোকেরা তাদের অশিক্ষার জন্য কিছুই বুঝতে পারছে না।

xxv মাদারীপুর মুসলিম ছাত্রলীগের সম্পাদক রফিকউদ্দীন আহমেদ ১৫/১০/১৯৪৯ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমানকে একটি চিঠি লেখেন যাতে তিনি অবহিত হন যে, মাদারীপুরের লোকজন তাঁর কথা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। গোপালগঞ্জের এসডিপিও তাঁর তদন্তে উল্লেখ করেন যে, গোপালগঞ্জ থানার মামলার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানকে খোঁজা হচ্ছে, কারণ নির্ধারিত দিনে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। ২৭/১১/১৯৪৯ তারিখে তিনি দিল্লি হয়ে লাহোরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।

ফরিদপুর, ১২ই জানুয়ারি ১৯৫০

মাদারীপুর মুসলিম ছাত্রলীগের সভাপতি রফিকউদ্দীন আহমেদ ঢাকার ১৫০ মোঘলটুলি নিবাসী শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৫/১০/৪৯ তারিখে একটি চিঠি লেখেন। চিঠিটি ১৮/১০/৪৯ তারিখে আটক করা হয়। চিঠিতে তাঁকে জানানো হয় যে, পির সাহিব ভাসানীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি যেন মাদারীপুরে আসেন; কারণ লোকেরা তাঁর কথা শুনতে উদ্‌গ্রীব হয়ে আছে।

গোপালগঞ্জের এস.ডি.পি.ও. তাঁর তদন্তে বলেন যে, আই.পি.সি.র ১৪৩/১৮৮ ধারা অনুযায়ী ১৮/৭/৪৯ তারিখের গোপালগঞ্জ থানার মামলা নং ১১ অনুযায়ী শেখ মুজিবুর রহমানকে খোঁজা হচ্ছে। চার্জশিটের সাথে যা শেষ হয়ে গেছে। তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন কিন্তু হাজিরায় দিনে উপস্থিত ছিলেন না।

ঢাকার ডিআইবির ম্যামো থেকে মনে হচ্ছে যে, ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমান ই.বি.র জন্যে ২৭/১১/৪৯ তারিখে দিল্লি হয়ে লাহোরের উদ্দেশ্যে বিমানযাত্রা করেন।

১৬৬

আইবির একজন অফিসার ১৩/১/১৯৫০ তারিখে রিপোর্ট করেন যে, নিরাপত্তা কারাবন্দি (১) শেখ মুজিবুর রহমান, (২) মওলানা ভাসানী ও (৩) মোহাম্মদ শামসুল হকের সাথে তাঁদের আইনজীবীদের সাক্ষাৎটি তাঁর উপস্থিতিতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ঢাকা, ১৩ই জানুয়ারি ১৯৫০

১৩/১/৫০ তারিখের একজন আইবি অফিসারের রিপোর্ট

আদিষ্ট হয়ে নিরাপত্তা কারাবন্দি (১) মওলানা আবদুল হামিদ খান, (২) মোহাম্মদ শামসুল হক ও (৩) শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তাঁদের আইনজীবীদের সাক্ষাতের সময় বেলা ৪.৩০ থেকে বেলা ৫.৩০ পর্যন্ত আমি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে উপস্থিত ছিলাম।

আইনজীবীরা কেবল মামলা নিয়েই উক্ত নিরাপত্তা কারাবন্দিদের সাথে কথা বলেন।

রাজনৈতিক কোনো কিছুই সেসময়ে আলোচিত হয় নি।

১৬৭

শেখ মুজিবুর রহমানের বিষয়ে অন্যান্য রেফারেন্স নোটসমূহ যেগুলোতে ঢাকা শহর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা ও কলকাতার বিভিন্ন স্থানে তাঁর সভাসমিতি ও অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রসঙ্গ এসেছে

ঢাকা, ১৪ই জানুয়ারি ১৯৫০

ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ থানার টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র এবং ঢাকাস্থ লালবাগ থানার অধীন ১৫০ মোঘলটুলি নিবাসী শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যান্য রেফারেন্স নোটসমূহ

D. 34 (C.A) তাং ১২/১০/৪৯

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ঢাকার লালবাগের তাজমহল হলে ১৬/৯/৪৯ তারিখে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

D. 34 (C.A) তাং ১৩/১০/৪৯

ঢাকার জিন্দাবাহারের উকিল কামারুদ্দীন আহমেদের বাড়িতে আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্মসম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানসহ এ.এম.এল.-এর কয়েকজন সদস্য অবস্থান করেন।

D. 34 (C.A) তাং ১১/১২/৪৯ পৃ. ৬১৭

তাজমহল হলে ১৬/৯/৪৯ তারিখে অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের একটি সভায় শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সভাপতির ভাষণে ছাত্রদের ভবিষ্যতের কার্যক্রমের ওপর আলোকপাত করেন।

D.10 (C.A) তাং ২৬/৮/৪৮ পৃ.১

জনাব এইচ.এস. সোহরাওয়ার্দীর আমন্ত্রণে কলকাতার ৪০ থিয়েটার রোডে ১/৮/৪৮ তারিখে মুজিবুর রহমান ও অন্য কয়েকজন ব্যক্তি একটি সভায় অংশ নেয়।

৫৬/৪৮ পৃ. ১

শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্য কয়েকজনকে নিয়ে ইপিএমএসএলের একটি সাংগাঠনিক কমিটি সাময়িকভাবে গঠিত হয়।

৫৬/৪৮ পৃ. ৭০

শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে কায়েদ-এ-আজমের জন্মদিন উদ্‌যাপন উপলক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ ইপিএমএসএলের আয়োজনে নারায়ণগঞ্জ গণপাঠাগারে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

৫৬/৪৮ পৃ. ৮৭

ডিআইবির ডে.এস.পি.৯৪ একটি তদন্তে উল্লেখ করেন যে, রাজশাহী কলেজ থেকে ৪ জন ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয় ও বিভিন্ন স্থানে ছাত্রদের বিরুদ্ধে দমনমূলক নীতি অবলম্বন করতে দেখা যায়। এর প্রতিবাদস্বরূপ ইপিএমএসএল কর্তৃক ৮/১/৪৯ তারিখে দমনবিরোধী দিবস পালিত হয়। শেখ মুজিবুর রহমান সহ আরও কয়েক জন ব্যক্তি এতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।

Do-পৃ. ১০৪

মুজিবুর রহমান ও অন্য কয়েকজন ব্যক্তি ৮/১/৪৯ তারিখে আন্দোলনে বিশিষ্ট ভূমিকা নেয়।

৫৬/৪৮ পৃ. ১০৬

ইপিএমএসএলের মুজিবুর রহমান ৮/১/৪৯ তারিখের মিছিলে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। তাঁরা একটি ‘অ্যাকশন কমিটি’ গঠন করেন এবং মুজিবুর রহমান তাঁর সভাপতি হন।

৫৬/৪৮ পৃ. ১১৭

মুজিবুর রহমান ও অন্যদের নেতৃত্বে ঢাকা শহরের বিভিন্ন কলেজ থেকে একশোরও অধিক ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে ৮/১/৪৯ তারিখে জমায়েত হয়। অন্যরা বন্দি ছাত্রদের মুক্তির দাবি জানিয়ে ভাষণ দেয় এবং ই.বি. মন্ত্রিসভার৯৫ কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে।

৫৬/৪৮ পৃ.১৮০

ঢাকার ১৫০ মোঘলটুলিতে ৪/৪/৪৯ তারিখ সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত ইপিএমএসএলের একটি সভায় মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য ব্যক্তি অংশ নিয়েছিলেন এবং ড. সাদানির বক্তব্যের সমালোচনা করেন।

আরপি-৯ তারিখ ৫/৪/৪৯ (ন১১৫/৪৭) পৃ. ২১৯

শেখ মুজিবুর রহমান দিনাজপুর হয়ে ২৮/৩/৪৯ তারিখে রংপুর পৌঁছান। তাঁকে উপলক্ষ্য করে রংপুর কলেজ প্রাঙ্গণে ২৯/৩/৪৯ তারিখে ইপিএমএসএল রংপুরের একটি কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ইপিএমএসএল দিনাজপুরের ছাত্রকর্মীদের গ্রেফতার করার লক্ষ্যে দিনাজপুর পুলিশের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন মুজিবুর রহমান।

মুজিবুর রহমান ঢাকায় ফেরার পথে ৩০/৩/৪৯ তারিখে গাইবান্ধায় যান এবং আবদুল হাই আকন্দ ও অন্য ব্যক্তিবর্গের সাথে যোগাযোগ করেন।

১-৪৯ পৃ. ৮৫

ইপিএমএসএলের সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনে ২/৩/৪৯ তারিখে অনুষ্ঠিত ইপিএমএসএলের একটি সভায় বক্তব্য দেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের যৎসামান্য উন্নতির জন্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের অনীহার সমালোচনা করেন।

১-৪৯ পৃ. ৯৭

ঢাকা শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্ররা ১২/৩/৪৯ তারিখে বেলা ১১টার সময় ইকবাল হলে৯৬ এসে জড় হয় এবং সেখান থেকে মুজিবুর রহমান ও অন্যদের নেতৃত্বে একটি মিছিল নিয়ে তারা বেরিয়ে আসে এবং বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে তারা ঢাকা শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে।

১-৪৯ পৃ. ৯৮

প্রায় ২০০ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্র ও ১৫০ জন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তাদের সম্মিলনে একটি সভা ৯/৩/৪৯ তারিখ বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সম্মুখে অনুষ্ঠিত হয়।বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে অস্ত্রধারী পুলিশ পিকেট বসানোর জন্যে ইপিএমএসএলের সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করেন এবং বলেন যে, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তাদের প্রতি ছাত্রদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

১-৪৯ পৃ. ১৪১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শেখ মুজিবুর রহমান ও অপর কয়েকজন ছাত্রের ১৫/- রুপি জরিমানা করেন।

১-৪৯ পৃ. ১৫৯

উপাচার্যের বাসভবনের সম্মুখে মিছিল সংঘটিত করায় শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯/৪/৪৯ তারিখে প্রতিরোধমূলক আটক আদেশ ধারা ২ অনুসারে গ্রেফতার করা হয়।

১-৪৯ পৃ. ১৬৮

উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে ১৯/৯/৪৯ তারিখ বেলা ৪টা পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যরা অবস্থান করেন। এ সময় সরকারের উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তিরা উপাচার্যের ভবনে প্রবেশ করেন। ডিএম তাদেরকে উক্ত স্থান ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ প্রদান করলেও তারা তা করতে অস্বীকৃত হয়। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫৪ ধারায় তাদের সবাইকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করা হয়।

১-৪৯ পৃ. ১৭০,১৬৯

১৬/৪/৪৯ ও ১৭/৪/৪৯ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে শেখ মুজিবুর রহমান ও নাদিরা বেগমকে আন্দোলন ও পিকেটিংরত অবস্থায় দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সমবেত ঢাকা শহরের ছাত্রদের জমায়েতে ১৭/৪/৪৯ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমান বক্তৃতা প্রদান করেন। ২৭জন ছাত্রের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের গৃহীত সিদ্ধান্ত তুলে না নেওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যেতে তিনি ছাত্রদের আহ্বান করেন।

১-৪৯ পৃ. ১৭৪

বঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা অধ্যাদেশের ১৮(১) ধারা অনুযায়ী ২৯/৪/৪৯ তারিখে মুজিবুর রহমান গ্রেফতারকৃত হন এবং ঐ দিনই তাঁরে কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়।

১-৪৯ পৃ. ১৮৯

একজন ডিআইও তাঁর প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে, ইপিএমএসএল কাউন্সিলের একটি সভা নারায়ণগঞ্জের পাবলিক লাইব্রেরিতে ১৭/৫/৪৮ তারিখে অনুষ্ঠিত হয় এবং মন্ত্রীর সমালোচনা করে শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্য ব্যক্তিবর্গ সেখানে বক্তৃতা করেন।

১-৪৮ পৃ. ২০২ ও ২০৭

নরসিংদিতে ১/৬/৪৮ তারিখে মুসলিম লীগের বিরোধী দলের একটি সভায় শেখ মুজিবুর রহমান বক্তৃতা করেন। কোনোরূপ ক্ষতিপূরণ না নিয়ে জমিদারি প্রথা বাতিল করতে এবং প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করতে বক্তব্য রাখেন তিনি। ঢাকায় ৩/৬/৪৮ তারিখে মুজিবুর রহমান এইচ.এস. সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে দেখা করেন।

  1. ডিএসপি: পুলিশের ডেপুটি সুপারইন্টেডেন্ট, ইন্দো-পাক উপমহাদেশ ও তৎপূর্বে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে পুলিশ বাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত একটি পদ। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া পরে পদটির নাম পরিবর্তন করে এসডিপিও রাখা হয়। সাবডিভিশনাল পুলিশ অফিসারের সংক্ষেপ হলো এসডিপিও। ১৪/৩/১৯৭৯ তারিখে পদটি অবলুপ্ত হয়।
  2. ইবি মন্ত্রিসভা: ভারত ভাগের প্রস্তুতির প্রাক্কালে ৩রা জুলাই ১৯৪৬ সালে বাংলা দুটো প্রদেশে বিভাজিত হয়—মুসলিমপ্পধান পূর্ব বাংলা ও হিন্দুপ্রধান পশ্চিম বাংলা। দুটো প্রদেশেরই আলাদা আলাদা মুখ্যমন্ত্রী ছিল। ১৯৪৭ সালের আগস্টে পশ্চিম বাংলা ভারতের অংশ হয় এবং পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের। উল্লিখিত পূর্ব বাংলার মন্ত্রিসভা হলো প্রধানমন্ত্রী মুসলিম লীগের নুরুল আমিনের মন্ত্রিসভা। এর মেয়াদ ছিল ১৪ই সেপ্টেম্বর ১৯৪৮ থেকে ৩রা এপ্রিল ১৯৫৪।
  3. ইকবাল হল: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা হওয়ার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের নাম পরিবর্তন করে সার্জেন্ট জহুরুল হকের সম্মানে জহুরুল হক হল রাখা হয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী হিসেবে তাঁকে ১৯৬৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সেনানিবাসে বন্দি অবস্থায় হত্যা করা হয়।
  4. বি.এস.পি.ও.: বেঙ্গল স্পেশাল পাওয়ার অর্ডিন্যান্স, (১৯৪৬ সালের অধ্যাদেশ)। তথাকথিত দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার লক্ষ্যে তৎকালীন সরকার এই অধ্যাদেশটি জারি করে। বাঙালি রাজনীতিবিদদের দমিয়ে রাখার জন্য বিশেষ করে যাঁরা পাকিস্তানি শাসকদের দমন-পীড়ন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তাঁদের প্রতিহত করার জন্যে এটি সত্যিকার অর্থেই একটি কঠোর অধ্যাদেশ ছিল। এই অধ্যাদেশের অধীনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুবার গ্রেফতার হন ও কারাবরণ করেন।

১৬৮

ঢাকাস্থ ডিআইবির অতিরিক্ত এসপি একটি ম্যামো পাঠিয়ে ঢাকাস্থ আইবিইবির এসএসকে অবহিত করেন যে, ৬ মাসের জন্য শেখ মুজিবুর রহমানকে কারাবন্দি করে রাখা দেশের নিরাপত্তার জন্য জরুরি বলে বিবেচিত হচ্ছে।

ঢাকা, ১৭ জানুয়ারি ১৯৫০

দ্রুত ডাক

গোপনীয়

ডিস্ট্রিক্ট ইন্টেলিজেনস ব্রাঞ্চ

ঢাকা, ১৬/১৭ জানুয়ারি ১৯৫০

নং ৫৩৫/১০০-৪৯

বরাবর,

খান সাহিব মু. ইউসুফ

এসএস, আইবিইবি, ঢাকা

সূত্র: এই অফিস ম্যামো ২৯(৩)/১, তারিখ ৩/১/৫০

এতদ্‌সঙ্গে ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া নিবাসী ল. লুতফর রহমানের পুত্র ঢাকার লালবাগ থানাধীন ১৫০ মোঘলটুলি নিবাসী শেখ মুজিবুর রহমানের রেফারেন্স নোটসমূহ প্রেরণ করলাম। ব্যক্তিটি আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক। লীগ ও ইপিএমএসএলের সবচেয়ে যুদ্ধংদেহী সদস্য এই ব্যক্তি। তিনি ১১/১০/৪৯ তারিখে আর্মানিটোলায় লীগের একটি সভা আহ্বান করেন এবং একটি মিছিলের নেতৃত্ব দেন। মিছিলটি নিয়ে পুলিশের বেষ্টনি ভেঙে রমনা এলাকায় প্রবেশ করতে তিনি চেষ্টা করেন। জনাব সোহরাওয়ার্দী ও লাহোরের অন্য বামদলগুলোর সঙ্গে এখনও তিনি তাঁর যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন এবং উক্ত ঘটনার পরপরই তিনি লাহোরে গিয়েছিলেন। ব্যক্তিটি কলহসৃষ্টিতে পটু। ৬ মাসের জন্য তাঁকে কারাবন্দি করে রাখা দেশের নিরাপত্তার জন্য জরুরি বলে বিবেচিত হচ্ছে।

ঢাকার ডি.এম.-ও বিষয়টি অনুমোদন করেছেন।

স্বাক্ষরসহ তারিখ/- ১৭/১

অতিরিক্ত এসপি

ডিআইবি, ঢাকা

১৬৯

ঢাকাস্থ আইবিইবির ডিএস-৩ শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা গোপালগঞ্জ থানার ১৮/৭/১৯৪৯ তারিখের ১১ নং মামলাটির অবস্থা জানতে চায়

ঢাকা, ১৮ই জানুয়ারি ১৯৫০

গোপনীয়

নং ১১৮০/৬০৬-৪৮ পিএফ/ তারিখ ১৮/১

দ্রুতডাক

এসপি, ফরিদপুর ডিআইবি

শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা ১৮/৭/৪৯ তারিখের গোপালগঞ্জ থানার মামলা নং ১১-এর প্রসঙ্গে ঢাকাস্থ ডিআইবির অতিরিক্ত এসপিকে ২৬/১০/৪৯ তারিখের রেডিওগ্রামটি অনুগ্রহপূর্বক নির্দেশ করুন। উক্ত রেডিয়োগ্রামটির কোনো নম্বর নেই। মামলাটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কেও তাঁকে অবহিত করুন।

নিচে আরেকটি ইসু করুন

স্বাক্ষরসহ তারিখ/- ১৭/১/৫০

স্বাক্ষরসহ তারিখ/- ১৮/১/৫০

এসএস ৩-এর পক্ষে ডিএস ৩

১৭০

ঢাকাস্থ আইবির একটি রিওয়ার্ড স্টেইটমেন্ট যেখানে পাঁচজন আইবি অফিসার ও একজন বেসামরিক অ্যাজেন্টকে পুরস্কৃত করা হয়। কারণ এদের প্রদত্ত সংবাদের ভিত্তিতে ৩১/১২/১৯৪৯ তারিখে এএমএলের যুগ্ম সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্বিঘ্নে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়।

ঢাকা, ১৮ই জানুয়ারি ১৯৫০

রিওয়ার্ড স্টেইটম্যান্ট, আইবি ঢাকা

অনুগ্রহপূর্বক ফাইলে সংরক্ষণ করুন। স্বাক্ষরসহ তারিখ/- ১০/১

ক্রমিক নংপদবিনামযে ভালো কাজটি তিনি করেছেন তার সংক্ষিপ্ত বিবরণডেপুটি এসপি কর্তৃক প্রদেয় পুরস্কারএসএস ১ অর্ডার 
১. পিএসিএ ২১পলাতক আসামী ও আন্ডারগ্রাউন্ড কর্মী শেখ মুজিবুর রহমান যিনি আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্মসম্পাদকও তাঁকে ৩১/১২/৪৯ তারিখে গ্রেফতার করতে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদানমাত্র ১০০/- রুপি পুরস্কার১০০/- রুপি স্বাক্ষরসহ তারিখ ২/২ 
২.এসআইসৈয়দ মু. সিদ্দিকপিএসিএ ২১-এর সাথে যোগাযোগ করে ৩১/১২/৪৯ তারিখে তাঁর প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতারকর্মটি নির্বিঘ্নে সম্পাদন করামাত্র ৫০/- রুপি পুরস্কার৫০/- রুপি স্বাক্ষরসহ তারিখ ২/২ 
৩.এসআইঢাকার ডিআইবির খন্দকার সাইদুর রহমানগ্রেফতারকর্মে সহায়তাপ্রদান৩, ৪ ও ৫ নংকে জিএস মার্ক প্রদান করা যেতে পারেজিএস মার্ক স্বাক্ষরসহ তারিখ/- ২/২৩, ৪ ও ৫ নংয়ের প্রত্যেককে ২৫/- রুপি (পঁচিশ রুপি) করে প্রদান স্বাক্ষরসহ তারিখ/-
৪.এসআইঢাকার ডিআইবির মো. ইসমাইল   
৫.এসআইআহসানউল্লাহ ওসি, লালবাগ থানা   
৬.কনস্টেবলআইবির শেখ ইউসুফ হুসাইন (২ নং গার্ড কনস্টেবল)মাত্র ৫ (পাঁচ) রুপি পুরস্কার স্বাক্ষরসহ তারিখ/- ১৮/১/৫০রুপি ৫/- স্বাক্ষরসহ তারিখ/- ২/২অনুমোদিত স্বাক্ষরসহ তারিখ/- ২/২/৫০

১৭১

ঢাকাস্থ আইবির একজন এসআই প্রতিবেদন করেন যে, নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা ভাসানী ও শামসুল হক ১৮/১/১৯৫০ তারিখে তাঁদের আইনজীবী আবদুস সালামের সাথে তাঁদের সাক্ষাতের সময়ে উপস্থিত ছিলেন। মামলাসংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে তাঁরা আলোচনা করেন।

ঢাকা, ১৯শে জানুয়ারি ১৯৫০

নিরাপত্তা কারাবন্দি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মৌলভী শামসুল হক এমএলএ এবং মৌলভী মুজিবুর রহমান ১৮/১/১৯৫০ তারিখে তাঁদের আইনজীবী ঢাকা বারের অ্যাডভোকেট আবদুস সালামের সাথে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বেলা ১৬.৪৫ থেকে ১৭.১৪ পর্যন্ত সময়ে সাক্ষাৎ করেন। আদিষ্ট হয়ে তাঁদের সাক্ষাতের সময়ে আমি উপস্থিত ছিলাম।উক্ত নিরাপত্তা কারাবন্দিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাসংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে তাঁরা আলোচনা করেন।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ডব্লিউ আলি

পুলিশের এসআই, আইবি

১৯/১/৫০

১৭২

ঢাকার (দক্ষিণ) উপবিভাগীয় অফিসারের প্রতি শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্য দুজন নেতা ১৯/১/১৯৫০ তারিখে একটি আবেদন করেন। সেখানে তারা অ্যাডভোকেট আবদুস সালামকে তাঁদের মামলাটি পরিচালনা করার জন্য নিযুক্ত করেন এবং অনুরোধ করেন যেন কমপক্ষে এক সপ্তাহের জন্য তাঁদের মামলার তারিখটি স্থগিত রাখা হয়।

ঢাকা, ১৯শে জানুয়ারি ১৯৫০

বরাবর,

উপবিভাগীয় অফিসার, ঢাকা দক্ষিণ

মাধ্যম: সুপার ইন্টেনডেন্ট, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার

তারিখ: ঢাকা, ১৯শে জানুয়ারি ১৯৫০

জনাব,

বিনীত নিবেদন এই যে, অ্যাডভোকেট মৌলভী আবদুস সালাম খান এমএ, বিএল আপনার আদালতে আমাদের মামলাটি পরিচালনা করবেন এবং যেহেতু তিনি পূর্ব থেকেই অন্য কোথাও ব্যস্ত আছেন সেহেতু তিনি ২৮শে জানুয়ারি ১৯৫০-এর পূর্বে আপনার সম্মানিত আদালতে উপস্থিত থাকতে পারবেন না।

অতএব আমাদের মামলার তারিখটি কমপক্ষে এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে আমাদের বাধিত করতে জনাবের যেন আজ্ঞা হয়।

আপনার বিশ্বস্ত

  1. এডি/- আবদুল হামিদ খান
  2. মোহাম্মদ শামসুল হক (এমএলএ)
  3. শেখ মুজিবুর রহমান

নং ১৪৬/এসবি তাং ২৪/১/৫০

বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্যে আইবিইবির পুলিশের ডিআইজিকে প্রেরিত।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- অস্পষ্ট

ঢাকা কেন্দ্রীয় জেলের সুপার ইন্টেনডেন্টের পক্ষে

২৪/১/৫০

ম্যামো নং ১৬৩৩/৪৮৩-৪৮(জে)। তারিখ ২৬/১/৫০

বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্যে উপবিভাগীয় অফিসার ঢাকা দক্ষিণের নিকট প্রেরিত।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- এ. মুকতাদির

ঢাকা আইবির স্পেশাল সুপারইনটেনডেন্ট অব পুলিশের পক্ষে

১৭৩

ঢাকা জজ কোটের অ্যাডভোকেট এ.জে. গোলাম সামদানি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্য দুজনের সঙ্গে তাঁদের মামলাসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলার জন্য একটি সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিতে আইবির স্পেশাল অফিসারের প্রতি আবেদন করেন।

ঢাকা, ২০শে জানুয়ারি ১৯৫০

বরাবর,

স্পেশাল অফিসার,

গোয়েন্দা শাখা, ঢাকা

জনাব,

বিনীত নিবেদন এই যে, বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি নিরাপত্তা কারাবন্দি (১) মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, (২) ম. শামসুল হক এমএলএ, (৩) মুজিবুর রহমানের সাথে একটি সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিতে বিনীত অনুরোধ করছি। মামলা সংক্রান্ত কিছু বিষয় জানতে তাঁদের সঙ্গে আমার আলাপ করা প্রয়োজন। অনুগ্রহপূর্বক তাঁদের সঙ্গে ২২/১/৫০ (রবিবার) তারিখে দেখা করার ব্যবস্থা করে যদি দিতেন।

ঢাকা, তারিখ ২০শে জানুয়ারি ‘৫০

বিনীত নিবেদক

তারিখসহ স্বাক্ষর/- এ.জে. গোলাম সামদানি

আইনজীবী, জজ কোর্ট, ঢাকা

১৭৪

পশ্চিম পাঞ্জাবস্থ সিআইডির ডিআইজি ঢাকাস্থ আইবির এসএসপিকে একটি ম্যামো প্রেরণ করেন যার সাথে তিনি ঢাকার পাকিস্তান অবজারভারের সম্পাদককে উদ্দেশ্য করে লাহোর নিবাসী আনওয়ার-উল-আজিমের লেখা একটি আটক করা চিঠির অনুলিপি সংযুক্ত করেন।

ঢাকা, ২০শে  জানুয়ারি ১৯৫০

প্রেরক,

উপমহাপরিদর্শক, পুলিশ

সিআইডি, পশ্চিম পাঞ্জাব

প্রাপক,

বিশেষ সুপার ইনটেন্ডেন্ট, পুলিশ

গোয়েন্দা শাখা, ঢাকা (পূর্ব পাকিস্তান)

নং ৭৮৩ বিডিএসবি, তারিখ ২০শে জানুয়ারি, ১৯৫০, লাহোর

স্মারকলিপি

আপনার অনুমোদিত ২৩শে নভেম্বর, ১৯৪৯ তারিখের পত্র নং ২৩৭০৩/৬-৪৯(আই) মোতাবেক ঢাকাস্থ পাকিস্তান অবজারভারের সম্পাদক বরাবর লাহোর নিবাসী আনওয়ার-উল-আজিম কর্তৃক প্রেরিত আটক করা চিঠিটির অনুলিপি প্রেরিত হলো।

চিঠির লেখক জনাব আনওয়ার-উল-আজিম, বিএসসি পূর্ববঙ্গের লোক। তাঁর পিতা জনাব মজিব-উর-রহমান পূর্ববঙ্গের গাইবা দেব মহকুমা স্টেশনে ডাক্তারি করেন। আনওয়ার-উল-আজিম পূর্ববঙ্গের আওয়ামী লীগের একজন ছাত্রকর্মী। সেখানে সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তাঁকে গ্রেফতার করার সম্ভাবনা দেখা দেয়। তা এড়াতে তিনি অক্টোবর মাসে লাহোর চলে আসেন। লাহোরে এসে তিনি এখানকার এম.এ.ও. কলেজে এমএসসিতে ভর্তি হন। ল কলেজ হোস্টেলের মন্টমরেন্সি হলের কক্ষ নং ৮০-এ তিনি থাকতে শুরু করেন। এখানে পৌঁছানোর অল্প কদিনের মধ্যে তিনি স্থানীয় ল কলেজের এলএলবির ছাত্র জনাব এমএ কাজমির ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে যান। শেষোক্ত জন পশ্চিম পাঞ্জাব মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি এবং একই হোস্টেলের কক্ষ নং ৯৮-এ থাকতেন। জনাব এমএ কাজমির মাধ্যমে লাহোরের নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি রানা মুহম্মদ জাহাঙ্গীর খানের সাথে তাঁর যোগাযোগ হয়। সংযুক্ত পত্রটি পূর্ববঙ্গের আওয়ামী লীগের নেতা জনাব শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে তিনিই লেখেন। জনাব শেখ মুজিবুর রহমান ২০/১০/১৯৪৯ তারিখে লাহোর ভ্রমণে আসেন এবং ২৭/১১/১৯৪৯ তারিখে ফিরে যান। দেশে ফিরে তিনি পূর্ববঙ্গের সরকার কর্তৃক গ্রেফতার হন। লাহোরে অবস্থানের সময়ে জনাব আনওয়ার-উল-আজিম জনাব মুজিবুর রহমানকে যেসব পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি ইতঃপূর্বেই সেসব কার্যকর করেছিলেন। ২০/১১/১৯৪৯ তারিখে মন্টমরেন্সি হলের স্বীয় কক্ষে (নং ৯৮) জনাব এম.এ. কাজমি মুজিবুর রহমানকে নৈশভোজে দাওয়াত করেন। জনাব এম.এ. কাজমি নিখিল পাকিস্তান ছাত্র ফেডারেশন ও পশ্চিম পাঞ্জাব মুসলিম ফেডারেশনের কয়েকজন ছাত্রকর্মীকেও নিমন্ত্রণ করেছিলেন। উক্ত সভায় পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের ছাত্রদের বিভিন্ন বিষয় আলোচিত হয়। অতএব ঢাকায় চলে আসার পূর্বে জনাব মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগকে নিখিল পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র ফেডারেশন, লাহোরের সাথে সংযুক্ত করেন। চুক্তির ধারাগুলো নিম্নরূপ:

  • নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশন দুটো ভাগে অর্থাৎ পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে বিভক্ত হবে।
  • আহ্বায়ক হবেন দুজন। যথাক্রমে একজন পশ্চিমের ও অন্যজন পূর্বের।
  • ব্যবস্থাপনা কমিটিতে ১৪ জন সদস্য থাকবেন যাদের ৮জন হবেন পশ্চিমের এবং ৬জন পূর্ব পাকিস্তানের।
  • কার্যকরী কমিটিতে ৩৫জন সদস্য থাকবেন যাঁদের মধ্যে পশ্চিম ও পূর্বের সদস্যদের অনুপাত হবে ২০:১৫।
  • উভয় অংশডকে পুনর্গঠিত করতে এবং অপ্রত্যাশিত বিষয়গুলো দূর করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- মুহাম্মদ আসগর,

সিআইডি পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল

পশ্চিম পাঞ্জাব

পার্শ্বটীকা: শেখ মুজিবুর রহমানের পিএফে পৃষ্ঠা নং ১০৩২-এর অনুলিপি রাখা হোক।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ম. ইউসুফ

৩/৩/৫০

১৭৫

ঢাকাস্থ ডিআইবির একটি ম্যামোর সংক্ষিপ্তসার ২৪/১/১৯৫০ তারিখে ঢাকাস্থ আইবিইবির এসএসপিকে পাঠানো হয় যেখানে এ কথা উল্লেখ করা হয় যে, শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্যের বিরুদ্ধে দায়ের করা কোতোয়ালি থানার ১১/১০/১৯৪৯ তারিখের ১৮নং মামলার চার্জশিট পেশ করা হয়েছে।

ঢাকা, ২৪শে জানুয়ারি ১৯৫০

ঢাকাস্থ ডিআইবির ২৪শে জানুয়ারি ১৯৫০ তারিখের ম্যামো নং ৬৯০/২১৪-৪৯-এর সংক্ষিপ্ত সার যা ঢাকার আইবিইবির পুলিশের সুপার ইনটেনডেন্টকে পাঠানো হয়েছে।

***

সূত্র: এই অফিসের নং ৩৭৫, তারিখ ১২/১/৫০।

আইপিসি ১৪৭/৩২৫ ও বিএসপিও ৭(৩)-এর ধারা মোতাবেক নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা ১১/১০/৪৯ তারিখের মামলা নং ১৯-এর চার্জশিট নং ২১১।অভিযুক্ত শেখ মুজিবুর রহমান অনেক দিন ধরেই আত্মগোপন করে ছিলেন। কালকে গ্রেপ্তার করে তাঁকে আদালতে চালান দেওয়া হয়েছে।

***

  1. ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ থানার টুঙ্গিপাড়া নিবাসী শেখ লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমান।

১৭৬

ঢাকাস্থ আইবির এসএসপি কর্তৃক জনাব এ.জে. গোলাম সামদানির নিকট থেকে প্রেরিত একটি আবেদনপত্রের অনুলিপি সুপার ইনটেনডেন্টকে প্রেরিত হলো। একটি সাক্ষাতের জন্য অনুমতি চেয়ে উক্ত আবেদনপত্রটি লেখা হয়েছিল।

ঢাকা, ২৫শে জানুয়ারি ১৯৫০

গোপনীয়

গোয়েন্দা বিভাগ, পূর্ববঙ্গ

৭, ওয়াইজ ঘাট রোড

ঢাকা, ২৫শে জানুয়ারি, ১৯৫০

নং ১৫৪২/৪৮৩-৪৮ পিএফ

বরাবর

জনাব এএইচ খান

সুপার ইনটেনডেন্ট

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, ঢাকা

জনাব এজে গোলাম সামদানির নিকট থেকে ২০/১/৫০ তারিখের একটি পিটিশনের কপি এতদ্‌সঙ্গে প্রেরিত হলো। নিম্নে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তি আপনাকে অনুরোধ করছে যেন আপনি একজন আইবি অফিসারের উপস্হিতিতে শীঘ্রই কোনো এক উপযুক্ত সময়ে সাক্ষাতের অনুমতি প্রদান করেন এবং এই অফিসের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পিটিশনারকে তা জানিয়ে দেন।আবেদনকারীর আবেদনের প্রেক্ষিতে সাক্ষাৎকারটি ২২/১/৫০ তারিখে আয়োজন করা যাবে না।

(ম. ইউসুফ)-এর পক্ষে

পুলিশের বিশেষ সুপার ইন্টেনডেন্ট,

আইবি, ঢাকা

১৭৭

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ইনটেনডেন্ট আইবিইবির ডিআইজিকে একটি ম্যামোর মাধ্যমে অবহিত করেন যে, কোতোয়ালি থানার মামলা নং ১৯(১০)১৯৪৯-এর প্রেক্ষিতে শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা ভাসানী ও ম. শামসুল হককে ২৮/১/১৯৫০ তারিখে ঢাকার এসডিও কোর্টের সামনে হাজির করা হবে।

ঢাকা, ২৫শে জানুয়ারি ১৯৫০

গোপনীয়

সুপার ইনটেনডেন্টের অফিস, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার

ম্যামো নং ১৫৫/এসবি তারিখ ২৫/১/৫০

বরাবর,

উপমহাপরিদর্শক, পুলিশ

আইবি, পূর্ববঙ্গ

এতদ্বারা আপনাকে অবহিত করা হচ্ছে আইপিসি ১৪৭/৩২৪ ও বিএসপিও ৭(৩)-এর ধারা অনুযায়ী দায়ের করা ১১/১০/১৯৪৯ তারিখের কোতোয়ালি থানার মামলা নং ১৯-এর প্রেক্ষিতে নিম্নলিখিত কারাবন্দিদের ২৮/১/১৯৫০ তারিখে সকাল ১০ টায় ঢাকার এসডিও কোর্টের সামনে হাজির করা হবে।

  • মওলানা আবদুল হামিদ খান
  • ম. শামসুল হক
  • শেখ মুজিবুর রহমান

তারিখসহ স্বাক্ষর/- এ.এইচ. খান

সুপার ইনটেনডেন্ট

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার

ঢাকা ডিআইবি পুলিশের অতিরিক্ত সুপার ইনটেনডেন্টকে অনুলিপি প্রেরণ।

১৭৮

ঢাকার ডিআইবির অতিরিক্ত এসপি ২৫/১/১৯৫০ তারিখে আইবিইবির এসএসপিকে সার্চ স্টেটম্যান্টের একটি অনুলিপি প্রেরণ করেন। লালবাগ থানার ওসির নেতৃত্বে ঢাকাস্থ শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ৬৯/১ নং খাজে দেওয়ানে তল্লাশি পরিচালিত হয়। ৩১/১২/১৯৪৯ তারিখে তল্লাশির সময়ে ২ কপি শেখ মুজিবুর রহমানের ইংরেজি টাইপ করা বক্তব্য, ১৪ কপি বাংলায় ছাপানো লিফলেট, ১ কপি উর্দু সংবাদপত্র, ২ কপি নোটিশ, ব্যক্তিবর্গের একটি তালিকা, বিভিন্ন লেখার প্যাড থেকে ছিঁড়ে নেওয়া ৩টি খালি কাগজ জব্দ করা হয়।

ঢাকা, ২৫শে জানুয়ারি, ১৯৫০

জেলা গোয়েন্দা বিভাগ

ঢাকা, ২৫শে জানুয়ারি, ১৯৫০

নং ৭২১/১০০-৪৯

বরাবর,

খান সাহিব ম. ইউসুফ

এসএস, আইবিইবি, ঢাকা

সূত্র: এই অফিসের ম্যামো নং ২৯(৩)/১, তারিখ ৩/১/৫০।

ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ থানাধীন টুঙ্গিপাড়া নিবাসী মৌলভী লুৎফর রহমানের পুত্র আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান বিএ-র প্রেক্ষিতে সার্চ স্টেইটমেন্ট এতদ্‌সঙ্গে আমি প্রেরণ করলাম।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ২৫/১

পুলিশের অতিরিক্ত সুপার ইনটেন্ডেনট,

ডিআইবি, ঢাকা

ফর্ম নং ৪২

গোপনীয়

সার্চ স্টেইটমেন্ট

  • মালখানা নং
  • যে জায়গা তল্লাশি করা হয়েছে (বাসার মালিকের নামসহ): শেখ মজিবুর রহমান, ৬৯/১ খাজে দেওয়ান, ঢাকা
  • তল্লাশির তারিখ (যে অফিসার তল্লাশি করবেন তাঁর নামসহ): ৩১/১২/৪৯ তারিখ, এসআই একেএম আহসানউল্লাহ, ওসি, লালবাগ থানা।
তল্লাশির তালিকায় ক্রমিক নংযে যে জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সেগুলোর বর্ণনাযা যা আছে এবং ব্যক্তিবিশেষমন্তব্য ও আদেশতদন্তের ফলাফল
১. ৩টি লম্বা কাগজে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্যের ইংরেজি সংস্করণের টাইপ করা দুই কপি এই বক্তব্যে শেখ মুজিবুর রহমান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও জনাব শামসুল হক এমএলএ-র গ্রেফতার বিষয়ে সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন এবং তাঁদেরকে অনতিবিলম্বে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। তিনি কৃষকদের পক্ষাবলম্বন করে আরও বলেন যে, পাটের দাম কমে যাওয়ায় পূর্ব পাকিস্তানের কৃষকদের অবস্থা বড়োই শোচনীয় এবং পাকিস্তান সরকার তাদের জন্যও কিছু করছে না। তিনি আরও বলেন যে, আওয়ামী মুসলিম লীগের সকল কর্মীকে ছেড়ে দিতে হবে এবং আওয়ামী লীগের ওপর জনগণের আস্থা আছে কি না তার প্রমাণের জন্য নতুন নির্বাচনে যেতে হবে। কোনো ব্যবস্থা নেই।তারিখসহ স্বাক্ষর/- ১৯/১
২.বাংলায় মুদ্রিত লিফলেটের ১ কপি যার শিরোনাম জিলা মুসলিমলীগ ও চট্টগ্রাম মুসলিম আওয়ামীলীগ কর্ম্মিগণের যুক্ত বিবৃতি।(১) জেলা লীগের সম্পাদক আবদুল কাদের বিএল, (২) চট্টগ্রাম সিটি লীগের সম্পাদক সালেহ আহমেদ মুক্তার, (৩) আওয়ামী মুসলিম লীগের আহ্বায়ক এস. মজাফফর আহমদ সম্মিলিতভাবে চট্টগ্রামের জনসাধারণ বরাবর এই মর্মে অনুরোধ করেন যে, আওয়ামী লীগ, মুসলিম লীগ ও জনগণ নির্বিশেষে সবাই লীগের সদস্য হতে পারবে। ১, ২ ও ৩ নং ব্যক্তিকে যোগান দিতে ডিআইবি চট্টগ্রামকে অনুরোধ করা হয়েছে।
তল্লাশির তালিকায় ক্রমিক নংযে যে জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সেগুলোর বর্ণনাযা যা আছে এবং ব্যক্তিবিশেষ (মন্তব্য ও আদেশ)তদন্তের ফলাফল
৩. বাংলায় মুদ্রিত লিফলেটের ১ কপি যার শিরোনাম জিলা মুসলিম লীগের ঘোষণাপাকিস্তান রাষ্ট্রকে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে (১) জেলা মুসলিম লীগের সম্পাদক আবদুল কাদির, (২) শহর মুসলিম লীগের সম্পাদক সালেহ আহমেদ, (৩) চট্টগ্রামকে যৌথভাবে মুসলিম আওয়ামী লীগ ও মুসলিম লীগের জন্য কাজ করতে চট্টগ্রাম নিবাসীদের প্রতি এটিও ছিল একটি আহ্বান।ঐ তারিখসহ স্বাক্ষর- ১৯.১
৪. বাংলায় মুদ্রিত লিফলেটের ১ কপি যার শিরোনাম চট্টগ্রাম আওয়ামী মুসলিম লীগ অর্গানাইজিং কমিটীর ঘোষণালিফলেটটি মোসলেম প্রেস, চট্টগ্রামে ছাপানো হয় এবং এস. মজাফফর আহমেদ, আমির হোসেন দোভাস-সহ আরও ৬জন ব্যক্তি কর্তৃক প্রকাশিত হয়। তাঁরা জনগণের মধ্যে এগুলো বিতরণ করে আওয়ামী মুসলিম লীগ ও মুসলিম লীগের সাথে যৌথভাবে কাজ করতে আহ্বান করেন। কারণ তাঁদের যুক্তি হলো, উভয় লীগই মুসলিম লীগের সাথে সংযুক্ত।ঐ তারিখসহ স্বাক্ষর/- ১৯/১
৫. বাংলায় মুদ্রিত লিফলেটের ১ কপি যার শিরোনাম জোনাব লিয়াকত আলী খান সাহেবের খেদমতেআওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান এই লিফলেটটি প্রকাশ করেন।এতে তিনি ১১/১০/৪৯ তারিখে ঢাকার আর্মানিটোলা ময়দানে অনুষ্ঠিতব্য একটি সভায় জনসাধারণকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করেন।ঐ তারিখসহ স্বাক্ষর/- ১৯/১
৬. [বাংলায় মুদ্রিত লিফলেটের ১২ কপি যেগুলোর শিরোনাম ১৪ই অক্টোবর ভাসানীর মাওলানার গ্রেপ্তার।][পুলিশ কর্তৃক ১৪/১০/৪৯ তারিখে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী গ্রেপ্তার হন। সে সময়ে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে তিনি একটি ভাষণ দেন যাতে তিনি বলেন যে, তিনি মুসলিম লীগের একজন প্রকৃত কর্মী।তিনি কমুনিস্ট নন বা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কখনও কোনো প্রপাগান্ডা চালান নি।তিনি একজন সত্যিকারের পাকিস্তানি। এই ভাষণটি প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছিল।]কোনো ব্যবস্থা নেই। তারিখসহ স্বাক্ষর/- ১৯/১

ফর্ম নং ৪২

গোপনীয়

সার্চ অ্যাস্টেটমেন্ট

  • মালখানা নং
  • যে স্থানটি সার্চ করা হয়েছিল (স্থানের মালিকের নামসহ)
  • সার্চের তারিখ (যে অফিসার সার্চ করেছিলেন তাঁর নামসহ)
তল্লাশির তালিকায় ক্রমিক নংযে যে জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সেগুলোর বর্ণনাযা যা আছে এবং ব্যক্তিবিশেষ (মন্তব্য ও আদেশ)তদন্তের ফলাফল
৭.২৭/১১/৪৯ তারিখের উর্দু পত্রিকা ‘ইমরুজ’-এর ১ কপি।এটি ২৭/১১/৪৯ তারিখের একটি উর্দু সংবাদপত্র। লাহোর থেকে এটি ছাপা ও প্রকাশিত হয়।লাহোরে অবস্থানের সময়ে তিনি সম্পাদককে যে ভাষ্য দিয়েছিলেন যা ক্রমিক নং ১-এ ছাপা হয় তাই ২৭/১১/৪৯ তারিখে এই পত্রিকায় ছাপা হয়। সেজন্য তিনি পত্রিকাটির একটি কপি তাঁর সঙ্গে রাখেন। 
৮.বাংলা পাণ্ডুলিপিতে ২ নং নোটিশের ২ কপি ১৫০ মোঘলটুলিতে অবস্থিত ইপিএমএসএলের যুগ্ম সম্পাদক আবদুল হালিম কর্তৃক নোটিশটি ইস্যু হয়। এতে নির্বাহী কমিটির প্রতি ৭ই জানুয়ারি ১৯৫০ তারিখ বেলা ৩টার সময়ে অনুষ্ঠিতব্য সভায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়। 
৯.ঢাকাস্থ ডেইলি পাকিস্তান অবজারভার বরাবর প্রেরিত পিটিশনের একটি ইংরেজি পান্ডুলিপিডেইলি পাকিস্তান অবজারভারের বিজ্ঞাপন ব্যবস্থাপক বরাবর এই পিটিশনটি প্রেরিত। এতে কোনো স্বাক্ষর নেই এবং বিজ্ঞাপন সরবরাহ করার জন্যে অনুরোধ করা হয়েছিল। 
তল্লাশির তালিকায় ক্রমিক নংযে যে জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সেগুলোর বর্ণনাযা যা আছে এবং ব্যক্তিবিশেষ (মন্তব্য ও আদেশ)তদন্তের ফলাফল
১০. ব্যক্তিবর্গের নামের তালিকার একটি চিরকুটএই চিরকুটটিতে নিম্নলিখিত ব্যক্তিবর্গের নামের একটি তালিকা তৈরি করা হয় যাদের সাথে অতিদ্রুত যোগাযোগ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছিল: (১) ভাই (২) চাঁদ মিয়াঁ (৩) শওকত হুসাইন দরিয়া (৪) মতিউর রহমান সিএসআই (৫) নুরুদ্দীন দরিয়া (৬) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রফেসর শামসুদ্দীন (৭) চট্টগ্রামের ফ. কাদের চৌধুরী (৮) বরিশালের এ. রব (৯) বাগেরহাটের আবদুল হক (১০) ফজলুল হক বর্তা ও বাকা (১১) ফরিদপুরের হেমায়েতউদ্দীন (১২) ফরিদপুরের আলতাফ (১৩) চট্টগ্রাম ইপিএমএসএলের সম্পাদক (১৪) কুষ্টিয়া ইপিএমএসএলের সম্পাদক (১৫) হাবিব সরকার (১৬) খুলনা ইপিএমএসএলের সম্পাদক (১৭) খুলনার মোবারক নিবাসী মনির মিয়া (১৮) ঝুগামারির মজিব ভাই (১৯) এসআই হামিদ (২০) এ সালাম (অ্যাডভোকেট)৬ নং ব্যক্তিকে কুমিল্লার ডিআইবি, ৭নং ব্যক্তিকে চট্টগ্রামের ডিআইবি, ৮নং ব্যক্তিকে বরিশালের ডিআইবি, ১৭ ও ৯ নং ব্যক্তিকে খুলনার ডিআইবি, ১১ ও ২০ নং ব্যক্তিকে ফরিদপুরের ডিআইবি কর্তৃক তদন্ত করা হোক। তারিখসহ স্বাক্ষর/- ডিআইও ২ টু ট্রেস নং .. কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি তারিখসহ স্বাক্ষর/- ১৯/১
১১.লেখার প্যাডের একটি খালি পাতাএটি লেখার প্যাডের একটি খালি পাতা যার ওপরের দিকে লেখা শেখ মুজিবুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক, ১৫০ মোঘলটুলিকোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি তারিখসহ স্বাক্ষর/- ১৯/১
১২.লেখার প্যাডের একটি খালি পাতাএটি লেখার প্যাডের একটি খালি পাতা যার ওপরের দিকে লেখা পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগঐ স্বাক্ষরসহ তারিখ/- ১৯/১
১৩.লেখার প্যাডের একটি খালি পাতাএটি লেখার প্যাডের একটি খালি পাতা যার ওপরের দিকে লেখা ম. জালালউদ্দীন আহমেদ, (এমএএলএলবি শেষ বৎসর), ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, ইপিএমএসএল, ৬৯/১ খাজে দেওয়ানডিআইও ২ টু ডিআরডব্লিউসিআর স্বাক্ষরসহ তারিখ/- ১৯/১

উপস্থাপিত, স্বাক্ষরসহ তারিখ/- ডিআইওX১৯/১

১৭৯

শেখ মুজিবুর রহমানের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের সঙ্গে পরবর্তীতে যুক্ত প্রথম সংযোজন যেখানে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছিল যে, তিনি এএমএলের যুগ্ম সম্পাদক এবং লীগ ও ইপিএমএসএলের সবচেয়ে যুদ্ধংদেহি সদস্য। তাঁর গ্রেপ্তার; সভাসমিতি; পুলিশি নিগ্রহ ও জনদুর্ভোগের প্রতিবাদে ভাষণ; সরকার বিরোধী মিছিল ও লিফলেট বিচরণ; এইচএস সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী ও এনডব্লিউএফপির রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ; দেশদ্রোহী ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত হওয়া প্রভৃতি তথ্য উক্ত সংযোজনে যুক্ত করা হয়।

ঢাকা, ২৬শে জানুয়ারি ১৯৫০

ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ থানাধীন টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র ১৫০ মোঘলটুলি ও ৬৯/১ খাজে দেওয়ান, ঢাকা নিবাসী শেখ মুজিবুর রহমানের (জন্ম আনুমানিক ১৯২১) সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের সঙ্গে পরবর্তী সময়ে যুক্ত প্রথম সংযোজন

  • বঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা আইনের অধীনে ২৯/৪/৪৯ তারিখে মুজিবুর রহমান হানিকর কিছু কর্মকাণ্ডের জন্য গ্রেফতার হন এবং ২৫/৫/৪৯ তারিখের জিও নং ১৩৩৬-এর অধীনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তা কারাবন্দি হিসেবে অন্তরীণ হন। ১৭/৬/৪৯ তারিখের জিও নং ১৭৪২-এর অধীনে ২৬/৬/৪৯ তারিখে তিনি নিঃশর্ত মুক্তি পান।
  • আরও কয়েকজন ব্যক্তির সাথে উক্ত ব্যক্তিটি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ শহরে সভা করতে গিয়ে ১৮/৭/৪৯ তারিখে পুনরায় বন্দি হন। আইপিসির ১৪৩/১৮৮ ধারা অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে এর বিচার শুরু হয় এবং মামলাটি এখনও বিচারাধীন।
  • উক্ত ব্যক্তিটি করাচি নিবাসী জনাব এইচ.এস. সোহরাওয়ার্দীকে একটি চিঠি লেখেন যা ১০/৮/৪৯ তারিখে ঢাকায় আটক করা হয়। এতে প্রেরক প্রাপকের কাছে জানতে চান কখন তিনি ঢাকায় আসবেন কারণ তিনি ঢাকায় আসলে আওয়ামী লীগ ও সংসদীয় কিছু বিষয়ে তাঁর সঙ্গে প্রেরকের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আছে।
  • উক্ত ব্যক্তিকে ১৫০ মোঘলটুলি, ঢাকাস্থ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে সম্বোধন করে ২৫/৯/৪৯ তারিখের একটি চিঠিতে (চিঠিটি ঢাকায় আটক করা হয়েছিল) মওলানা আবদুল হামিদ খান ঢাকা শহরের আওয়ামী মুসলিম লীগের সদস্যদের নামের একটি তালিকা তৈরি করতে বলেন। কারণ মওলানা আবদুল হামিদ খান তখন নিরাপত্তা বন্দি ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিটি জেলায় লীগের সাংগঠনিক কমিটি তৈরি করার কথাও এতে বলা হয়।
  • ১৯৪৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের বিভিন্ন দিনে ঢাকা শহরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগ ও ইপিএমএসএলের একাধিক সভায় আরও কয়েকজন ব্যক্তিকে নিয়ে উক্ত ব্যক্তিটি অংশ নেন। এসব সভায় তিনি বিনা বিচারে বন্দি রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দাবি করেন এবং কোনোরূপ ক্ষতিপূরণ ছাড়াই জমিদারি প্রথার বিলোপ, বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষার প্রবর্তন, পাটের ব্যাবসার জাতীয়করণ, প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে আগাম নির্বাচন এবং চট্টগ্রামে সরকারের দ্বারা অধিগ্রহণ করা জমির অবমুক্তকরণ দাবি করেন।
  • ১৯৪৯ সালের অক্টোবরের শুরুর দিকে আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে উক্ত ব্যক্তিটি বাংলা ভাষায় একটি লিফলেট বের করেন। এতে পাকিস্তানের এইচপিএম বরাবর দুঃখ-দুর্দশা তুলে ধারার কথা বলে ঢাকাস্থ আর্মানিটোলা ময়দানে ১১/১০/৪৯ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য একটি সভায় জনগণকে উপস্থিত থাকার আহ্বান করেন তিনি।আরও অন্য কয়েকটি বিষয়ের সাথে এটাও বলা হয় যে, লাখ লাখ নারী-পুরুষ-শিশু অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে, অনেকে অনাহারে মৃত্যু বরণ করছে এবং শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েরা খাদ্যসঙ্কটের কারণে দাসের মতো বিক্রি হচ্ছে।
  • আওয়ামী মুসলিম লীগের অনুরোধে ১১/১০/৪৯ তারিখে ঢাকা শহরের আর্মানিটোলা ময়দানে অনুষ্ঠিত সভায় উক্ত ব্যক্তিটি অংশগ্রহণ করেন। তিনি সরকারবিরোধী বক্তৃতা করেন এবং কিছু প্রস্তাব পড়ে শোনান। এতে পূর্ববঙ্গের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে আসা দুঃশাসনের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করা এবং সাধারণ নির্বাচন ত্বরান্বিত করার দাবি তোলা হয়। শহরব্যাপী মিছিল ও প্রতিবাদ-সমাবেশ করতে ভাষণে তিনি শ্রোতাদের উদ্বুদ্ধ করেন। সভাশেষে তিনি অন্যদেরকে নিয়ে ঢাকা শহরব্যাপী একটি মিছিলে নেতৃত্ব দেন।মিছিলে কিছু লোক উগ্র হয়ে ওঠে এবং তাদের ছোঁড়া পাটকেলে উত্তরের এসডিও ও পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়। ঢাকা জেলার ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক মিছিলকারীদের কর্মকর্মকাণ্ডকে বেআইনি ঘোষণা করে কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে ও লাঠির বাড়িতে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। আইপিএস ১৪৭/৩২৫ ও বিএসপিও ৭(৩) ধারা অনুযায়ী ১১/১০/৪৯ তারিখে কোতোয়ালি থানায় (মামলা নং ১৯ দ্রষ্টব্য) উক্ত কর্মকাণ্ডের প্রধান হোতাদের গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু উক্ত ব্যক্তিটি কোনো না কোনোভাবে ঘটনাস্থল থেকে সরে পড়ে এবং দৃশ্যপটের বাইরে চলে যায়।
  • ১২/১০/৪৯ তারিখে একটি তদন্তে বলা হয় যে, পূর্ব পাকিস্তানের কয়েকটি জেলায় উক্ত ব্যক্তিটি তাঁর দলের কয়েকজন সদস্যকে প্রেরণ করেছে। উদ্দেশ্য পুলিশি নিগ্রহের খবরটি প্রচার করা এবং পাকিস্তানের এইচপিএম উক্ত জেলাগুলোতে ভ্রমণে গেলে সেখানকার জনগণ যেন বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তাঁর বিরুদ্ধে আরও বলা হয় যে, ঢাকার পল্টন ময়দানে ১২/১০/৪৯ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য যে সভায় পাকিস্তানের এইচপিএমের ভাষণ দেওয়ার কথা আছে সেখানে যেন জনগণ অংশগ্রহণ না করে সেজন্য তাদের নিবারণ করতে দলের সদস্যদের প্রতি তিনি অনুরোধ করেন।
  • উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে আরও বলা হয় যে, লাহোরে গিয়ে জনাব এইচএস সোহরাওয়ার্দীর সাথে সাক্ষাৎ করতে সবার অজান্তে তিনি ১৫/১০/৪৯ তারিখে কলকাতায় চলে যান।
  • তদন্তে বলা হয় যে, উক্ত ব্যক্তিটি ৩০/১০/৪৯ তারিখে লাহোর গিয়ে উপস্থিত হন এবং সেখানকার ২১ আইকমান সড়কস্থ মিয়াঁ ইফতিখার উদ্দীনের বাড়িতে উঠেন।মামদোদের খান সাহেবের বাড়িতে ১/১১/৪৯ তারিখে তিনি জনাব সোহরাওয়ার্দীর সাথে সাক্ষাৎ করে পশ্চিম পাঞ্জাবে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড চালু করার বাঞ্ছনীয়তা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে আলোচনা করেন। সংবাদপত্রের একজন প্রতিনিধির সাথে কথোপকথনের সময়ে তিনি পূর্ববঙ্গ ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে ত্রাসের রাজত্বের নিন্দা করেন। তাঁর মতে, সরকারের দমন-পীড়নের কারণেই এ দুটো প্রদেশে আওয়ামী লীগ তৈরি হচ্ছে। ৯/১১/৪৯ তারিখে ক্যামবেলপুরে অনুষ্ঠিত একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তিনি অংশ নেন যাতে তিনি বলেন যে, পূর্ববঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রায় ৫০ জন সদস্য বন্দি রয়েছেন যাঁদের মধ্যে সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীও রয়েছেন। তারপর ১০/১১/৪৯ তারিখে লাহোর ফিরে তিনি বেশ কয়েকজন ব্যক্তির সাথে দেখা করেন। এদের মধ্যে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গুলাম মুহাম্মদ লন্ডকার, নিখিল পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সরদার মুহাম্মদ সাদিকের সাথে যোগাযোগ করেন এবং পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের বিষয়ে আলোচনা করেন।

পূর্ববঙ্গের ছাত্রদের মতো অধিক প্রগতিশীল হতে তিনি পশ্চিম পাঞ্জাবের ছাত্রদের নির্দেশনা দেন।

  • উক্ত ব্যক্তি ২৭/১১/৪৯ তারিখে লাহোর ত্যাগ করেন।
  • ৩১/১২/৪৯ তারিখে এমন একটি খবর আসে যে, শেখ মুজিবুর রহমান করাচি থেকে কলকাতা হয়ে ঢাকা ফিরে আসেন। তিনি যুক্তবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জনাব এইচ.এস. সোহরাওয়ার্দী থেকে বেশ কিছু নির্দেশনা নিয়ে আসেন এবং ঢাকায় এসে এখানকার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন আওয়ামী মুসলিম লীগের কর্মীদের সাথে গোপনে বৈঠক করেন।
  • ঢাকার আর্মানিটোলা ময়দানে ১১/১০/৪৯ তারিখে অনুষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগ কর্তৃক আয়োজিত একটি সভায় নেতৃত্ব দেওয়ায় আইপিসির ১৪৭/৩২৫ ও এসপিওর ৭(৩) ধারা অনুযায়ী কোতোয়ালি থানার মামলা নং ১৯(১০)৪৯ -এর সাথে সংশ্লিষ্ট করে উক্ত ব্যক্তিকে ৩১/১২/৪৯ তারিখে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর সম্পর্কে আরও অভিযোগ ছিল, তিনি শহরে একটি বৈরী মিছিল আয়োজন করেছিলেন যাতে মিছিলকারী ও পুলিশদের মধ্যে একটি সংঘর্ষ হয় (উক্ত ব্যক্তির ১০/১২/৪৯ তারিখের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের অনুচ্ছেদ ১৩ দ্রষ্টব্য)। ফলে বিএসপিওর ১৮(১) ধারা অনুযায়ী তিনি গ্রেফতার হন এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরিত হন।
  • উক্ত ব্যক্তিটি তাঁর ৩১/১২/৪৯ তারিখের ভাষ্যে নিজেকে আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক বলে স্বীকার করেন। আর্মানিটোলা ময়দানে ১১/১০/৪৯ তারিখে অনুষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের যে সভায় তিনি ভাষণ দেন তার আহ্বায়কও ছিলেন বলে তিনি স্বীকার করেন। কিন্তু উক্ত সভা শেষে যে মিছিল হয় তা নিয়ে কিছু বলতে তিনি অস্বীকৃত হন।তিনি বলেন, ১১ই অক্টোবর ১৯৪৯-এর কিছু দিন পরে তিনি লাহোরের উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করেন এবং পশ্চিম পাকিস্তানের বেশ কিছু স্থান ভ্রমণ করেন।
  • নিম্নলিখিত অংশটি ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থার অতিরিক্ত এসপি কর্তৃক আইবিকে প্রেরিত ১৬/১৭.১.৫০ তারিখের ৫৩৫/১০০-৪৯নং পত্রের সংক্ষিপ্ত সার:-

“শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক। উক্ত দলটির এবং ইপিএমএসএলের সবচেয়ে যুদ্ধংদেহী সদস্য তিনি। ১১/১০/৪৯ তারিখে তিনি আর্মানিটোলায় লীগের একটি সভা আহ্বান করেন এবং একটি মিছিলের নেতৃত্ব দেন। মিছিলটি পুলিশি ঘেরাও ভাঙার চেষ্টা করে এবং রমনা এলাকায় প্রবেশের করে। তিনি এখনও জনাব সোহরাওয়ার্দীর সাথে এবং লাহোরের অন্য বামপন্থী নেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। উপরে বর্ণিত ঘটনার পরপরই তিনি লাহোরে গিয়েছিলেন। অনিষ্টসাধনে তাঁর কোনো জুড়ি নেই। তাঁর ছয় মাসের কারাবরণ রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য অতি জরুরি বলে বিবেচিত হচ্ছে। ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটও এটি সমর্থন করেন।”

জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে সম্মত হওয়ার সাপেক্ষে

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ২৬/১/৫০

ডিআইজি, আইবি

১৮০

ঢাকাস্থ ডিআইবির অতিরিক্ত এসপিকে আইবিইবির এসএসপি একটি ম্যামো পাঠান যাতে তিনি নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা ভাসানী ও শামসুল হকের ১৯/১/১৯৫০ তারিখের পিটিশনের একটি অনুলিপি নিষ্পত্তির জন্যে ঢাকা দক্ষিণের এসডিও বরাবর প্রেরণ করেন। একজন আইবি অফিসারের রিপোর্ট ও কেন্দ্রীয় কারাগারের ম্যামোর অনুলিপিও তাঁর (অতিরিক্ত এসপির) প্রস্তুত সূত্র হিসেবে তিনি সংযুক্ত করে অবহিত করেন যে, আইবির ডিআইজি মহোদয়ের ইচ্ছা মামলাটি জেলের অভ্যন্তরে চলুক।

ঢাকা, ২৬শে জানুয়ারি ১৯৫০

গোপনীয়

অতি জরুরি

গোয়েন্দা বিভাগ, পূর্ববঙ্গ

৭, ওয়াইজ ঘাট রোড

ঢাকা, ২৬শে জানুয়ারি, ১৯৫০

নং ১৬৩২/৪৮৩-৪৮ পিএফ(জে)

বরাবর,

জনাব এ গফুর,

পুলিশের অতিরিক্ত সুপার ইনটেনডেন্ট, ডিআইবি, ঢাকা

নিরাপত্তা কারাবন্দি (১) মওলানা আবদুল হামিদ খান, (২) মোহাম্মদ শামসুল হক ও (৩) শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯/১/১৯৫০ তারিখের পিটিশনের একটি অনুলিপি নিষ্পত্তির জন্যে ঢাকা দক্ষিণের এসডিও বরাবর প্রেরণের জন্যে এতদ্‌সঙ্গে সংযুক্ত করা হলো। আপনার জ্ঞাতার্থে একজন আইবি অফিসারের রিপোর্ট সংযুক্ত করে নিম্ন স্বাক্ষরকারী ব্যক্তি বলছে যে, আইবির ডিআইজি মহোদয়ের ইচ্ছা মামলাটি জেলের অভ্যন্তরে চলুক।

অনুগ্রহপূর্বক আদালতে ২৮/১/৫০ তারিখে নিরাপত্তা কারাবন্দিদের অর্ডার অব প্রোডাকশন বাতিল করতে বিচারক ম্যাজিস্ট্রেটকেও পাঠিয়ে দিন। কারণ উক্ত মামলাটি প্রায় মুলতবি হওয়ার দিকে। আপনার নিকট ইতোমধ্যে প্রেরিত হয়েছে ২৫/১/৫০ তারিখের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ইনটেনডেন্টের ম্যামো নং ১৫৫/এসবির একটি অনুলিপি প্রস্তুত সূত্র হিসেবে এতদ্‌সঙ্গে সংযুক্ত হল।

(এম ইউসুফ)

বিশেষ পুলিশ সুপার ইনটেনডেন্ট, আইবি, ঢাকা

১৮১

আইবির একজন অফিসার ২৬/১০/১৯৫০ তারিখে রিপোর্ট করেন যে, শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা ভাসানী ও অন্যদের বিপক্ষে ১৪৭/৩২৩ ধারায় যে মামলাটি করা হয়েছিল ঢাকার কোর্ট ইন্সপেক্টর তা উচ্চতর কর্তৃপক্ষের নিকট স্থানান্তর করতে একজন পিপিকে নিযুক্ত করার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। ইবিএসপিওর ১০-এর গ ধারা মোতাবেক তাঁদেরকে কারাবন্দি করার প্রস্তাবও বিবেচনা করা হচ্ছে। কারাবন্দি করার কারণও উল্লেখ করা হয়েছে।

ঢাকা, ২৬শে জানুয়ারি ১৯৫০

আইবি অফিসারের রিপোর্ট, তারিখ ২৬/১/৫০

***

শামসুল হক ও অন্যদের বিরুদ্ধে ১৪৭/৩২৩ ধারা অনুযায়ী যে মামলা করা হয়েছিল তাতে একজন পিপিকে নিযুক্ত করার লক্ষ্যে ঢাকা কোর্টের কোর্ট ইন্সপেক্টর তা উচ্চতর কর্তৃপক্ষের নিকট স্থানান্তর করছে। মামলার শুনানির তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ২৮/১/৫০ তারিখ। উক্ত প্রস্তাবটি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি এবং তা এলআরের সাথে স্থগিত আছে। ২৮/১/৫০ তারিখে ফৌজদারি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মামলাটি গ্রহণের সম্ভাবনা কম বলে মনে হচ্ছে। পিপি ঢাকার বাইরে থাকবেন বলে জানিয়েছেন। ইন্সপেক্টর ভাষ্য মতে, মামলাটি নিজের থেকেই মুলতবি হয়ে যাবে। কারাগারের অভ্যন্তরে বিচারকার্য পরিচালনা সম্পর্কে তাঁর অভিমত হলো, এ ক্ষেত্রে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি প্রয়োজন হবে। এ বিষয়ে পূর্ববর্তী কোনো দৃষ্টান্ত নেই। যেসব অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা করা হয়েছে তাঁদের নাম নিম্নরূপ:

  • মওলানা আবদুল হামিদ খান
  • জনাব শামসুল হক, এমএলএ
  • ১৫ ট্রেনিং কলেজ রোড, ঢাকা এবং মিরসরাই, চট্টগ্রাম নিবাসী মৃত ম. সাঈদ আমিরের পুত্র সৈয়দ ম. ফজলুল হক
  • ত্রিপুরার মতলব থানার কালিপুর নিবাসী আবদুল হামিদ খান সাহেবের পুত্র আবদুর রউফ
  • ঢাকার নারায়ণগঞ্জ থানার আমলাপুর নিবাসী মৃত জনাব আলী শেখের পুত্র শামসুল হুদা
  • শেখ মুজিবুর রহমান

১৮২

ইবিএসপিওর ১০গ ধারা অনুযায়ী শেখ মুজিবুর রহমানের কারাবাসের কারণগুলো যেখানে উল্লেখ করা হয় যে, সরকারকে উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে কাজ করা, গুপ্তচরবৃত্তি করা এবং জনসাধারণের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্ভব হলে সহযোগিতা করার জন্যে ঢাকা ও ফরিদপুর জেলায় একটি গুপ্ত সংস্থার সাথে বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় সরকার তাকে অভিযুক্ত করে।

ঢাকা, জানুয়ারি ১৯৫০

পূর্ববঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা আইন অধ্যাদেশ (১৯৪৬-এর অধ্যাদেশ নং ৪)-এর ১০গ ধারা অনুযায়ী কারাবন্দি করার কারণবিষয়ক যোগাযোগ। উল্লেখ্য, East Bengal Ordinances Temporary Enactment and Re-enactment Act 1949 (যা ১৯৪৯-এর East Bengal Act I নামে পরিচিত) অনুযায়ী পূর্ববঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা আইনটি পাশ হয় ও বহাল থাকে।

***

East Bengal Ordinances Temporary Enactment and Re-enactment Act 1949 (যা ১৯৪৯-এর East Bengal Act I নামে পরিচিত) অনুযায়ী পাশ হওয়া ও বহাল থাকা পূর্ববঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১০গ ধারা অনুযায়ী ঢাকার ১৫০ মোঘলটুলি ও ৬৯/১ খাজা দেওয়ান নিবাসী ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার লুৎফর রহমানের পুত্র আপনি বাবু/মৌলভী শেখ মুজিবুর রহমান বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্দেশ নং … এইচএস তারিখ … অনুযায়ী বন্দি আছেন। উক্ত আইনের ১০ক ধারার উপধারা (১) ও উপধারা (৪) অনুযায়ী নিম্নলিখিত কারণে আপনার কারাবরণ প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হচ্ছে:-

  • আপনি ঢাকা ও ফরিদপুর জেলায় একটি গোপন সংগঠনের সাথে বেআইনি কর্মকাণ্ডে সংযুক্ত ছিলেন ও এখনও আছেন। সংগঠনটি সহিংস পন্থা অবলম্বন করে সরকারকে (পূর্ববঙ্গের সরকার) উৎখাত করতে চাচ্ছে। এ লক্ষ্যে আপনি সরকারের বিরুদ্ধে হানিকর ও রাষ্ট্রদ্রোহী প্রচারণা চালান এবং এ দুটো জেলার ছাত্র ও মুসলিম জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে হানিকর ও রাষ্ট্রদ্রোহী কর্ম সম্পাদনে উস্কানি দিয়ে যাচ্ছেন।
  • জেলায় গুপ্তচরবৃত্তি করার কাজে আপনি যুক্ত আছেন। প্রদেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে আমাদের শত্রুদের কাছে খবর সরবরাহ করার উদ্দেশ্যে পূর্ববঙ্গের সেনাবাহিনী, তাদের ঘনত্ব, কৌশলগত অবস্থান প্রভৃতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার মনোবৃত্তি নিয়ে আপনি এসব করছেন।
  • এই সরকার ও তার শান্তিপ্রিয় প্রজাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গকে পুনরায় একত্রীকরণের লক্ষ্যে নীলনকশা করছে এমন কিছু লোকেদের একটি দলের সাথে বেআইনি কার্যক্রমে আপনি অংশগ্রহণ করে চলেছেন এবং সম্ভব হলে সাহায্য করছেন।
  • উপর্যুক্ত সমস্ত কর্মকাণ্ড এই প্রদেশের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্যে হুমকিস্বরূপ।

আপনাকে আরও অবগত করা হচ্ছে যে, আপনার বিরুদ্ধে করা কারাবরণের আদেশের প্রতিবাদ করে সরকারকে লেখার অধিকার আপনার রয়েছে এবং সে রকম করতে যদি আপনি ইচ্ছে করেন তবে নিম্নে স্বাক্ষরকারী অফিসারের কাছে বর্তমানে আপনি যেখানে অন্তরীণ রয়েছেন অর্থাৎ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ইনটেনডেন্টের মাধ্যমে আপনি আপনার প্রতিবাদ লিখে প্রেরণ করতে পারেন।

সরকারের আদেশে।

পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব

স্বরাষ্ট্র (রাজনৈতিক) বিভাগ

১৮৩

ঢাকাস্থ ডিআইবির অতিরিক্ত এসপি আইবিইবির এসএসপিকে অবহিত করেন যে, মওলানা ভাসানী ও অন্যদের বিরুদ্ধে আইপিসির ১৪৭/৩২৪ ধারা অনুযায়ী কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা মামলা নং ১৯(১০)৪৯-এর বিচার কার্য ২৭/১/১৯৫০ তারিখের জন্য মুলতবি হয়ে যায় এবং ১১/২/১৯৫০ তারিখে এর পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানকে কারাবন্দি করার কারণসমূহ জরুরি বিবেচিত হচ্ছে।

ঢাকা, ২৭শে জানুয়ারি, ১৯৫০

গোপনীয়

অতি দ্রুত

জেলা গোয়েন্দা বিভাগ

ঢাকা, ২৭-২৮ জানুয়ারি, ১৯৫০

নং ৭৮৯/২১৪-৪৯

বরাবর,

খান সাহিব ম. ইউসুফ

এসএস, আইবি, ইবি, ঢাকা

সূত্র: আপনার নং ১৬৩২/৪৮৩-৪৮ পি.এফ. (জে) তারিখ ২৬/১/৫০।

বিষয়: মওলানা আবদুল হামিদ খান ও অন্যদের বিরুদ্ধে আইপিসি ১৪৭/৩২৪ ধারা মোতাবেক কোতোয়ালি থানার ১৯(১০)৪৯ নং মামলার বিচার।

মামলাটি ১১/২/৫০ তারিখ পর্যন্ত প্রাত্যহিক বিচারের জন্য মুলতবি হয়ে গেছে। ২৮/১/৫০ তারিখের কোর্টে নিরাপত্তা কারাবন্দিদের অর্ডার অব প্রোডাকশন পাওয়ার জন্য কোর্ট ইন্সপেক্টরকে আমি অনুরোধ করেছিলাম যা বাতিল হয়ে গিয়েছে। মামলাটির বিচারস্থল বিষয়ে আমি এসপি সাহেব ও ডিএম সাহেবের সাথে আলোচনা করেছিলাম। প্রথম দৃষ্টান্ত হিসেবে মামলাটির বিচারকার্য কোর্টে সংঘটিত হওয়া উচিত বলে উভয় জনই মন্তব্য করেছেন। যদি এমন করতে কোনো সমস্যা হয়ে থাকে তবে মামলাটি কারাগারের অভ্যন্তরে সংঘটনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

পরবর্তী নির্দেশে যদি থেকে থাকে তবে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

স্বাক্ষরসহ তারিখ/- এ. গফুর, ২৭/১

পুলিশের অতিরিক্ত সুপার ইনটেনডেন্ট, ডিআইবি

ঢাকা

১৮৪

ফরিদপুরের ডিআইবির এসপি ঢাকাস্থ আইবিইবির এসএসপিকে অবহিত করেন যে, গোপালগঞ্জ কোর্টে শেখ মুজিবুর রহমানের হাজিরায় জন্য মামলার বিচারটি স্থগিত করা হয়েছে।

ফরিদপুর, ২৮শে জানুয়ারি ১৯৫০

গোপনীয়

অতি জরুরি

জেলা গোয়েন্দা বিভাগ

ফরিদপুর, ২৮শে জানুয়ারি ১৯৫০

নং ৪৪০/৩৩-৫০

বরাবর,

খান সাহিব ম. ইউসুফ

পুলিশের বিশেষ সুপার ইন্টেনডেন্ট

আইবি, পূর্ববঙ্গ, ঢাকা

সূত্র: আপনার নং ১১৮০/৬০৬-৪৮ পিএফ, তারিখ ১৮/১/৫০, শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার প্রসঙ্গে

গোপালগঞ্জ কোর্টে তাঁর হাজিরায় জন্য মামলার বিচারটি স্থগিত করা হয়েছে। গোপালগঞ্জ কোর্ট থেকে তাঁর জন্য ৯/১/৫০ তারিখে হাজিরার ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ২৮/১/৫০

পুলিশের সুপার ইনটেনডেন্ট

ডিআইবি, ফরিদপুর

১৮৫

আটকের কারণসমূহ উল্লেখপূর্বক পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ইনটেনডেন্টকে একটি ম্যামো প্রেরণ করেন যাতে ১৯৪৬ সালের বিএসপিওর ১০ক ধারা অনুযায়ী শেখ মুজিবুর রহমানকে আটকে রাখার আটকাদেশ তাৎক্ষণিক সরবরাহ করতে তিনি তাঁকে অনুরোধ করেন। উক্ত বন্দি কর্তৃক যদি কোনো প্রতিবাদ হয়ে থাকে তবে তা-ও প্রেরণের অনুরোধ করেন তিনি।

ঢাকা, ২৮শে জানুয়ারি ১৯৫০

গোপনীয়

অতি দ্রুত

(বিশেষ দূতের মারফত)

পূর্ববঙ্গ সরকার

স্বরাষ্ট্র বিভাগ

বিশেষ বিভাগ

প্রেরক: মৌলভী এম. ফজলুল বারি

পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব

প্রাপক: ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ইনটেনডেন্ট

ম্যামো নং: ১৪৬-এইচএস ঢাকা, ২৮শে জানুয়ারি ১৯৫০

বিষয়: বঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা অধ্যাদেশ ১৯৪৬ (১৯৪৬-এর Bengal Ordinance VI)-এর ১০ক ধারা অনুযায়ী শেখ মুজিবুর রহমানের আটক

উক্ত বিষয় সম্পর্কে একটি স্বাক্ষরিত আদেশ (অনুলিপি) এবং উল্লিখিত অধ্যাদেশের ১০গ ধারা অনুযায়ী উক্ত ব্যক্তির আটকের কারণসমূহ উল্লেখপূর্বক একটি যোগাযোগ এতদ্‌সঙ্গে প্রেরিত হলো। আটকাদেশ ও উল্লিখিত নামের ব্যক্তিটি সম্পর্কে যোগাযোগ সরবরাহ করতে এবং যথাযথ সময়ের মধ্যে সরকারকে তা অবহিত করতে তিনি আপনাকে অনুরোধ করেন।

  • উক্ত বন্দি কর্তৃক যদি কোনো প্রতিবাদ হয়ে থাকে তবে তা-ও অনতিবিলম্বে সরকারের নিকট প্রেরণের আপনাকে অনুরোধ করেন তিনি।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- এম.এ. বারি

পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব

ম্যামো নং ১৪৬/১(৪)-এইচএস

অনুলিপি, অবহিত করতে আদেশ ও যোগাযোগের একটি অনুলিপি নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গের নিকট পাঠানো হল:-

  1. মহাকারাপরিদর্শক, পূর্ববঙ্গ
  2. পুলিশের উপমহাপরিদর্শক, গোয়েন্দা বিভাগ, পূর্ববঙ্গ
  3. জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকা
  4. উপপরিচালক, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো, পাকিস্তান সরকার, ৮ কুমারটুলি লেন, ঢাকা

ঢাকা, ২৮শে জানুয়ারি, ১৯৪৯

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ২৮/১/৫০

পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব

পার্শ্বটীকা: গোপনীয়

পিপি ৪৫১/৫০-এর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অনুলিপিসহ একটি অনুলিপি অনুগ্রহপূর্বক নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গকে প্রেরণ করা হয়েছে:-

  • অবহিতকরণের জন্য ঢাকা ডিআইবির অতিরিক্ত এসপিকে
  • অবহিতকরণের জন্য ও ফরিদপুরের অফিসের ৩১/১/৫০ তারিখের পত্র নং ১৮৪৫-এর ধারাবাহিকতার জন্য ফরিদপুর ডিআইবির এসপি, তারিখসহ স্বাক্ষর/- ৮/২

ঢাকা আইবির এসএস৩-এর পক্ষে ডিএস৩

পূর্ববঙ্গ সরকার

স্বরাষ্ট্র (বিশেষ) বিভাগ

আদেশ

নং ১৪৭-এইচএস

ঢাকা, ২৮শে জানুয়ারি ১৯৫০

যেহেতু উক্ত ব্যক্তিটি ১৫০ মোঘলটুলি ও ৬৯/১ খাজে দেওয়ান নিবাসী এবং ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ থানার টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমান East Bengal Ordinances Temporary Enactment and Re-enactment Act 1949 (1949-এর East Bengal Act 1)-এর দ্বারা প্রণীত ও কার্যকরী বঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা অধ্যাদেশ ১৯৪৬ (১৯৪৬-এর বেঙ্গল অর্ডিন্যান্স VI)-এর ধারা ১৮-এর বিধানের অধীনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি:-

এবং যেহেতু তাঁর বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপের বিষয় বিবেচনা করে সরকার এই মর্মে সন্তুষ্ট যে, জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করবে ও শৃঙ্খলায় ব্যত্যয় ঘটাবে এমন কোনো হানিকর কাজ থেকে তাঁকে বিরত রাখতে হবে সেহেতু তাঁর কারাবরণ দীর্ঘায়িত করতে নিম্নের আদেশটি জারি করা জরুরি।

এখন, East Bengal Ordinances Temporary Enactment and Re-enactment Act 1949 (যা ১৯৪৯-এর East Bengal Act VI নামে পরিচিত) অনুযায়ী প্রণীত ও কার্যকরী পূর্ববঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৪৬ (Bengal Ordinance, ১৯৪৬-এর VI)-এর ১০ক ধারার উপধারা (১) ও (৪)-এর অনুচ্ছেদ (ক)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার এ নির্দেশ প্রদান করছে যে,

ক. পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উক্ত ব্যক্তিকে উল্লিখিত অধ্যাদেশের ১০খ ধারার বিধান সাপেক্ষে আটক রাখা হবে

খ. এই অনুচ্ছেদের (ক) ধারার বিধান সাপেক্ষে উক্ত ব্যক্তি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক থাকবেন।

গ. এই আটকাবস্থায় উক্ত ব্যক্তি পূর্ববঙ্গ নিরাপত্তা কারাবন্দি বিধি ১৯৫০-এ বর্ণিত শর্তাবলির অধীন হবেন।

সরকারের নির্দেশক্রমে

তারিখসহ স্বাক্ষর/- এম.এফ. বারি

পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব

East Bengal Ordinances Temporary Enactment and Re-enactment Act 1949 (1949-এর East Bengal Act 1)-এর দ্বারা প্রণীত ও কার্যকরী বঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা অধ্যাদেশ ১৯৪৬ (১৯৪৬-এর বেঙ্গল অর্ডিন্যান্স VI)-এর ধারা ১০(গ)-এর বিধানের অধীনে আটকের কারণসমূহ সম্পর্কিত যোগাযোগ

East Bengal Ordinances Temporary Enactment and Re-enactment Act 1949 (1949-এর East Bengal Act 1)-এর দ্বারা প্রণীত ও কার্যকরী বঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা অধ্যাদেশ ১৯৪৬ (১৯৪৬-এর বেঙ্গল অর্ডিন্যান্স VI)-এর ধারা ১০ক-এর বিধানের অধীনে আপনি ১৫০ মোঘলটুলি ও ৬৯/১ খাজে দেওয়ান, ঢাকা নিবাসী এবং ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের অধীন টুঙ্গিপাড়া নিবাসী লুৎফর রহমানের পুত্র মৌলভী শেখ মুজিবুর রহমান ২৮শে জানুয়ারি ১৯৫০-এর আদেশ নং ১৪৭-এইচএস এর অধীনে বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি। আপনাকে আরও অবহিত করা হচ্ছে যে, উক্ত অধ্যাদেশের ধারা ১০ক-এর উপধারা (১) ও উপধারা (৪)-এর অনুচ্ছেদ (ক) অনুযায়ী নিম্নলিখিত কারণে আপনাকে বন্দি করে রাখা জরুরি বলে মনে হচ্ছে:-

  • আপনি ঢাকা ও ফরিদপুর জেলায় একটি গোপন সংগঠনের সাথে বেআইনি কর্মকাণ্ডে সংযুক্ত ছিলেন ও এখনও আছেন। সংগঠনটি সহিংস পন্থা অবলম্বন করে সরকারকে (পূর্ববঙ্গের সরকার) উৎখাত করতে চাচ্ছে। এ লক্ষ্যে আপনি সরকারের বিরুদ্ধে হানিকর ও রাষ্ট্রদ্রোহী প্রচারণা চালান এবং এ দুটো জেলার ছাত্র ও মুসলিম জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে হানিকর ও রাষ্ট্রদ্রোহী কর্ম সম্পাদনে উস্কানি দিয়ে যাচ্ছেন।
  • উপরোল্লিখিত আপনার সমস্ত কর্মকাণ্ড এই প্রদেশের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্যে হুমকিস্বরূপ।

আপনাকে আরও অবগত করা হচ্ছে যে, আপনার বিরুদ্ধে করা কারাবরণের আদেশের প্রতিবাদ করে সরকারকে লেখার অধিকার আপনার রয়েছে এবং সে রকম করতে যদি আপনি ইচ্ছে করেন তবে নিম্নে স্বাক্ষরকারী অফিসারের কাছে বর্তমানে আপনি যেখানে অন্তরীণ রয়েছেন অর্থাৎ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ইনটেনডেন্টের মাধ্যমে আপনি আপনার প্রতিবাদ লিখে প্রেরণ করতে পারেন।

সরকারের আদেশে

তারিখসহ স্বাক্ষর/- এম.এফ. বারি

পূর্ববঙ্গ সরকারের সহকারী সচিব

স্বরাষ্ট্র (রাজনৈতিক) বিভাগ

আদেশপ্রাপ্ত হয়ে আজ সকালে আমি নিরাপত্তা বন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের বিএইচ নিয়ে সচিবালয়ে যাই এবং তা স্বরাষ্ট্র  (বিশেষ) বিভাগের সহকারী সচিব জনাব এম.এফ. বারিকে অর্পণ করি এবং তাঁকে অনুরোধ করি যেহেতু এই নিরাপত্তা বন্দির বন্দিত্ব ৩০/১/৫০ তারিখে শেষ হয়ে যাচ্ছে তিনি যেন তাঁর নতুন আটক আদেশ আজই জারি করেন। জনাব বারি আমাকে বলেন যে, আজকের মধ্যে তদ্রূপ করতে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। তৎক্ষণাৎই ফাইলটি নিয়ে আরও কাজ করতে দেখা গেছে তাঁকে।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ২৮/১/৫০

পার্শ্বটীকা: ডিএস ৩, দয়া করে ভালো করে দেখুন। ফাইলটির কাজ চলছে। ফাইলে রাখা যেতে পারে। এখনও জিওর অপেক্ষা চলছে। তারিখসহ স্বাক্ষর/- ১/২/৫০

১৮৬

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ইনটেনডেন্ট ঢাকার মালিটোলার এ.জে. গোলাম সামদানিকে অবহিত করেন যে, নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা ভাসানী ও ম. শামসুল হকের সাথে সাক্ষাতের তারিখ হিসেবে ২/২/১৯৫০ তারিখটি নির্ধারণ করা হয়েছে।

ঢাকা, ৩০শে জানুয়ারি ১৯৫০

সুপার ইনটেনডেন্টের অফিস

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার

ম্যামো নং /এসবি, তারিখ ৩০/১/৫০

বরাবর,

জনাব এ.জে. গোলাম সামদানি

আইনজীবী, মালিটোলা, ঢাকা

নিরাপত্তা কারাবন্দি মৌলভী মু. শামসুল হক, মওলানা এ. হামিদ খান ও শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ২/২/৫০ তারিখ বিকাল ৫টায় একটি সাক্ষাৎ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পত্রটি জেল গেটে প্রদর্শন করতে হবে।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- এ.এইচ. খান

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ইনটেনডেন্ট

অনুলিপি প্রেরিত:-

পূর্ববঙ্গের আইবি পুলিশের ডিআইজি, তাঁর ২৫/১/৫০ তারিখের ম্যামো নং ১৫৪২-এর বরাতে। উক্ত উদ্দেশ্যে একজন আইবি অফিসারকে অনুগ্রহপূর্বক নিযুক্ত করুন।

১৮৭

ঢাকার আইবিইবির ডিএস৩ ফরিদপুরের ডিআইবির এসপিকে অবহিত করেন যে, কোতোয়ালি থানার মামলা নং ১৯(১০)১৯৪৯ এর অধীনে ৩১/১২/১৯৪৯ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা ডিআইবি কর্তৃক গ্রেফতার হন।

ঢাকা, ৩১শে জানুয়ারি ১৯৫০

গোপনীয়

নং ১৮৪৫, তারিখ ৩১/১/৫০

এসপি, ফরিদপুর ডিআইবি

আইপিসির ১৪৭/৩২৫ ধারা ও বিএসপিওর ৭(৩) ধারা মোতাবেক কোতোয়ালি থানার মামলা নং ১৯(১০)-এ ডিআইবি ঢাকা কর্তৃক ৩১/১২/৪৯ তারিখে ১৫০ মোঘলটুলি ও ৬৯/১ খাজে দেওয়ান, ঢাকা নিবাসী এবং ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ থানার টঙ্গিবাড়ি (টুঙ্গিপাড়া) নিবাসী মৌলভী লুৎফর রহমানের পুত্র আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান, বিএ গ্রেফতার হন। তাঁকে এসপিওর ১৮(২) ধারা মোতাবেক জেলে নেওয়া হয়।

এসপিওর অধীনে সরকার নিরাপত্তা কারাবন্দি হিসেবে উক্ত ব্যক্তিটিকে ডিটেনশনে নিয়েছে।

অবহিত করার জন্যে ও রেকর্ড রাখার জন্যে উক্ত ব্যক্তিটির বিএইচ ও তদ্‌সঙ্গে পরবর্তীতে সংযুক্ত প্রথম সংযোজনের অনুলিপিগুলো এতদ্‌সঙ্গে প্রেরিত হলো।

উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আপনাদের রেকর্ডে যদি কিছু থেকে থাকে তবে আমাদের তা অবহিত করুন।

নিচে আরেকটি

স্বাক্ষরসহ তারিখ/- ৩১/১

আইবির এসএস৩-এর পক্ষে ডিএস৩

গোপনীয়

নং ১৮৪৪, তারিখ ৩১/১/৫০

অতিরিক্ত এসপি, ঢাকা ডিআইবি

আপনার সূত্র নং ৫৩৫/১০০-৪৯, তারিখ ১৭/১/৫০। শেখ মুজিবুর রহমানকে ছয় মাসের জন্য অন্তরীণ করে রেখেছে সরকার।

অবহিত করার জন্যে ও রেকর্ড রাখার জন্যে উক্ত ব্যক্তিটির বিএইচ ও তদ্‌সঙ্গে পরবর্তীতে সংযুক্ত প্রথম সংযোজনের অনুলিপিগুলো এতদ্‌সঙ্গে প্রেরিত হলো।

স্বাক্ষরসহ তারিখ/- ৩১/১

আইবির এসএস৩-এর পক্ষে ডিএস৩

১৮৮

ইস্ট পাকিস্তান প্রোভিনসিয়াল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের হাবিবুর রহমান৯৮ আইবিইবির ডিআইজি বরাবর আবেদন করেন যে, তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নিরাপত্তা কারাবন্দি তাঁর ভাইপো শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ১৯৫০ তারিখে দেখা করতে চান।

ঢাকা, ১লা ফেব্রুয়ারি ১৯৫০

বরাবর,

ডিআইজি, আইবি

ওয়াইজঘাট, ঢাকা

১লা ফেবরুয়ারি ১৯৫০

জনাব,

বিনীত নিবেদন এই যে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নিরাপত্তা কারাবন্দি আমার ভাইপো শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আসছে ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ১৯৫০ তারিখে সকাল ৯টায় আমি দেখা করতে চাই।

আমাকে উক্ত সাক্ষাতের অনুমতি প্রদান করতে জনাবের যেন আজ্ঞা হয়।

বিনীত নিবেদক

আপনার একান্ত বাধ্যগত

এইচ. রহমান

(হাবিবুর রহমান)

ইস্ট পাকিস্তান প্রোভিনসিয়াল কো-অপারেটিভ ব্যাংক

পার্শ্বটীকা: একজন আইবি অফিসারের উপস্হিতিতে ৪/২/৫০ তারিখে সকাল ৯টায় সাক্ষাতটি মঞ্জুর করা হয়েছে।

ডিএস ৩ অনুগ্রহপূর্বক একজন অফিসারকে নিয়োগ করুন। সাক্ষাতপ্রার্থী দলটিকে অবহিত করা হয়েছে। তারিখসহ স্বাক্ষর/- ২/২/৫০।

এস আই কে আহমেদ। অনুগ্রহপূর্বক সাক্ষাতটির সময়ে উপস্থিত থাকবেন। দেখা হয়েছে। তারিখসহ স্বাক্ষর/- ২/২

গোপনীয়

গোয়েন্দা বিভাগ, পূর্ববঙ্গ

৭, ওয়াইজ ঘাট রোড

ঢাকা, ২/২/৫০

নং ২০৮২/৬০৬-৪৮ (সেক)

বরাবর,

সুপার ইনটেনডেন্ট, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার

ঢাকা

জনাব হাবিবুর রহমানের ১/২/৫০ তারিখের করা একটি আবেদনপত্রের অনুলিপি এতদ্‌সঙ্গে প্রেরণ করে আমার বিনীত নিবেদন এই যে, একজন আইবি অফিসারের উপস্থিতিতে ৪/২/৫০ তারিখে সকাল ৯টায় এই সাক্ষাতের অনুমতি প্রদান করা যেতে পারে।

সাক্ষাৎলাভে ইচ্ছুক দলটিকে সেভাবে অবহিত করা যেতে পারে।

পুলিশের সুপার ইনটেনডেন্টের পক্ষে

ডিএস ৩

গোয়েন্দা বিভাগ

৯৮ হাবিবুর রহমান: ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামের মরহুম শেখ আবদুল হামিদের পুত্র হলেন শেখ হাবিবুর রহমান। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের চাচা মানে শেখ মুজিবুর রহমানের পিতা শেখ লুৎফর রহমানের ছোটো ভাই। তিনি ঢাকাস্থ ভিক্টোরিয়া পার্কে অবস্থিত ইস্ট পাকিস্তান সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা এবং ঢাকার সূত্রাপুর (এখনকার গেণ্ডারিয়া) থানার ৫৫ সতীশ সরকার রোডে থাকতেন।

১৮৯

ঢাকাস্থ আইবিইবির একজন অফিসার রিপোর্ট করেন যে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ২/২/১৯৫০ তারিখে নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা ভাসানী, শামসুল হকের সঙ্গে অ্যাডভোকেট এ.জে. গোলাম সামদানির সাক্ষাতের সময়ে তিনি উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা মামলাসংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলেন।

ঢাকা, ৩রা ফেবরুয়ারি

আদিষ্ট হয়ে আমি নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা ভাসানী, শামসুল হকের সঙ্গে স্থানীয় বারের অ্যাডভোকেট এ.জে. গোলাম সামদানির সাক্ষাতের সময়ে ২/২/৫০ তারিখে বিকাল ৫:১৫ থেকে ৫:৪৫-এ ঘটনাস্থলে অর্থাৎ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে উপস্থিত ছিলাম। উল্লিখিত কারাবন্দিদের সাথে তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা নিয়ে তাঁরা কথা বলেন।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ডব্লিউ আলি ৩/২

১৯০

ঢাকাস্থ আইবিইবির একজন সাব ইন্সপেক্টর রিপোর্ট করেন যে, জেলারের উপস্থিতি ৪/৩/১৯৫০ তারিখে নিরাপত্তা কারাবন্দ শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর চাচা হাবিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাতের সময়ে তিনি উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।

ঢাকা, ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ১৯৫০

আদিষ্ট হয়ে আমি ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে যাই এবং জেলারের উপস্থিতি ৪/৩/১৯৫০ তারিখে (সকালবেলায়) নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তাঁর চাচা হাবিবুর রহমানের সাক্ষাতের সময়ে আমি উপস্থিত ছিলাম। তাঁরা সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।

পেশকৃত

এসআই, আইবি, ঢাকা

স্বাক্ষরসহ তারিখ/- ৪/২

১৯১

ঢাকা ডিআইবির অতিরিক্ত এসপি আইবিইবির এসএসকে ফজলুল কাদের চৌধুরী ও শামসুদ্দীন আহমেদের বিষয়ে একটি ম্যামো প্রেরণ করেন। শেখ মুজিবুর রহমানের সার্চ স্টেটম্যান্টে শেষোক্ত দুজনের নাম উল্লেখ ছিল।

ঢাকা, ৯ই ফেব্রুয়ারি ১৯৫০

গোপনীয়

জেলা গোয়েন্দা বিভাগ

ঢাকা, ৯-১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০

নং ১২১৫/১০০-৪৯

বরাবর,

খান সাহিব এম ইউসুফ

এসএস, আইবি,ইবি, ঢাকা

সূত্র: এই অফিস নং ৭২১/১০০-৪৯, তারিখ ২৫/১/৫০

শেখ মুজিবুর রহমানের সার্চ স্টেইটম্যান্টে উল্লিখিত দুইজন ব্যক্তি জনাব ফজলুল কাদের চৌধুরী ও শামসুদ্দীন আহমেদ এমএ-র বিস্তারিত নিচে প্রদান করলাম:-

  • ফজলুল কাদের চৌধুরী, চেয়ারম্যান, ডিবি, চট্টগ্রাম। তিনি চট্টগ্রামের রাউজানের গহিরা নিবাসী জনাব মৌলভী আবদুল জব্বার সাহেবের পুত্র।
  • শামসুদ্দীন আহমদ, এমএ। ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানাধীন গদাধরদঙ্গি নিবাসী মৌলভী ম. উমেদ আলীর পুত্র। তাঁর বয়স প্রায় ২৭ বছর এবং পেশা তালুকদারি।

স্বাক্ষরসহ তারিখ/- ৯/২

পুলিশের অতিরিক্ত সুপার ইনটেনডেন্ট

ডিআইবি, ঢাকা

১৯২

আইবিইবির এসএস৩ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ইনটেনডেন্ট বরাবর একটি ম্যামো প্রেরণ করেন যাতে বলা হয় যে, ১৮/৭/১৯৪৯ তারিখের গোপালগঞ্জ থানার মামলা নং ১১-এর প্রেক্ষিতে শেখ মুজিবুর রহমানকে আদালতে হাজিরা দিতে হয়। গোপালগঞ্জ কোর্টে স্থানান্তর করার বিষয়ে তাঁকে সম্যক অবহিত করতে তিনি অনুরোধ করেন।

ঢাকা, ৯ই ফেব্রুয়ারি ১৯৫০

গোপনীয়

নং ২৫১৭/৬০৬-৪৮ পিএফ, তারিখ ১০১২

সুপার ইনটেনডেন্ট, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার

১৮/৭/১৯৪৯ তারিখের গোপালগঞ্জ থানার মামলা নং ১১-এর প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানকে আদালতে হাজিরা দিতে হয়। গোপালগঞ্জ কোর্টে স্থানান্তর করার বিষয়ে তাঁকে সম্যক অবহিত করতে তিনি অনুরোধ করেন। গোপালগঞ্জ কোর্ট থেকে ৯/১/৫০ তারিখে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়।

উক্ত উদ্দেশ্যে নিরাপত্তা কারাবন্দিকে গোপালগঞ্জ কোর্টে স্থানান্তরের বিষয়ে আমাদেরকে সম্যক অবহিত করবেন।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ৯/২

আইবির এসএস৩-এর পক্ষে ডিএস৩

১৯৩

পশ্চিম পাঞ্জাবের সিআইডির এসপি কর্তৃক ঢাকাস্থ আইবিইবির ডিআইজিকে ১৫/২/১৯৫০ তারিখে প্রেরিত একটি এক্সট্রাক্টের অনুলিপি যাতে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছিল যে, ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের পূর্বে শেখ মুজিবুর রহমান ইবিএমএসএলকে লাহোরের নিখিল পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সাথে একীভূত করেন।

লাহোর, ১৫ই ফেবরুয়ারি ১৯৫০

পশ্চিম পাঞ্জাবের সিআইডির এসপি থেকে ঢাকাস্থ আইবিইবির ডিআইজিকে প্রেরিত ১৫/২/৫০ তারিখের ডিও নং ১৯০৮/বিডিএসবির এক্সট্রাক্ট

মনে পড়ে ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের পূর্বে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগকে লাহোরের নিখিল পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সাথে একীভূত করেন।

এ অংশটুকু নিয়ে সন্দেহ তৈরি না হলে অনুলিপিটি শেখ মুজিবুর রহমানের পিএফ ও পূর্ববঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের ফাইলে রাখতে হবে।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ম. ইউসুফ

২৮/২

  • অনুগ্রহপূর্বক মুজিবুর রহমানের পিএফ-এ রাখুন।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- এ. ওয়াহেদ

২৮/২/৫০

ডিএস৩

  • সূত্র: নং ২, অনুগ্রহপূর্বক সংযুক্ত ফাইল।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- এম.এ.এ.

৩/৩/৫০

(২) দেখা হয়েছে। a(A)-এর প্রেক্ষিতে মতামত প্রদানের জন্য পূর্ব পৃষ্ঠার এসএস৩-এর আদেশ।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- কে.এ.এম.

৭/৩

১৯৪

ঢাকাস্থ রমনা থানার ৪০/এ নিলখেত ব্যারাকের বাশিন্দা হাবিবুর রহমান ঢাকার ওয়াইজঘাটের আইবির ডিআইজি বরাবর আবেদন করেন যে, তিনি তাঁর ভাইপো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ২৫/২/১৯৫০ তারিখে সাক্ষাৎ করতে ইচ্ছুক।

ঢাকা, ২৩শে ফেবরুয়ারি ১৯৫০

বরাবর,

ডিআইজি, আইবি

ওয়াইজঘাট, ঢাকা

জনাব,

বিনীত নিবেদন এই যে, আমি আমার ভাইপো বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে এই মাসের ২৫ তারিখ, সামনে শনিবার বিকেল ৫.৩০-এ দেখা করতে চাই।

অনুগ্রহপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জনাবের যেন আজ্ঞা হয়।

বিনীত নিবেদক,

আপনার একান্ত বাধ্যগত

হাবিবুর রহমান

৪০/এ নিলখেত ব্যারাক

রমনা, ঢাকা

১৯৫

আইবিইবির এসএসপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ইনটেনডেন্টকে অবহিত করেন যে, হাবিবুর রহমানের কাছ থেকে তারিখ বিহীন একটি চিঠির অনুলিপি প্রেরণ করে তিনি বলেছেন যে, একজন আইবি অফিসারের উপস্থিতিতে ২৮/২/১৯৫০ তারিখে সাক্ষাতের অনুমতি প্রদান করা যায়।

ঢাকা, ২৭শে ফেবরুয়ারি ১৯৫০

গোয়েন্দা বিভাগ, পূর্ববঙ্গ

৭, ওয়াইজ ঘাট রোড

ঢাকা, তারিখ ২৭/২

নং ৩৬৫০/৬০৬-৪৮ (সেক)

গোপনীয়

বরাবর,

সুপার ইনটেনডেন্ট, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার

জনাব হাবিবুর রহমানের প্রেরিত তারিখহীন একটি চিঠি এতদ্‌সঙ্গে প্রেরণ করে আমার নিবেদন এই যে, একজন আইবি অফিসারের উপস্থিতিতে ২৮/২/৫০ তারিখে সকাল ১০টায় সাক্ষাতের অনুমতি প্রদান করা যায়।

সাক্ষাৎলাভে আগ্রহী ব্যক্তিকে সেভাবে অবহিত করা হয়েছে।

ডিএস ৩

পুলিশের বিশেষ সুপার ইনটেনডেন্টের পক্ষে

গোয়েন্দা বিভাগ

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ২৮/২

১৯৬

অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান খান আইবির এসএসপি বরাবর একটি আবেদনপত্র প্রেরণ করেন যাতে তিনি নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা ভাসানী ও শামসুল হকের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের পক্ষে habeas corpus পিটিশনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে অনুমতি প্রদানের অনুরোধ করেন।

ঢাকা, ফেবরুয়ারি ১৯৫০

পিটিশনের অনুলিপি

বরাবর,

পুলিশের বিশেষ সুপার ইনটেনডেন্ট

গোয়েন্দা বিভাগ

জনাব,

নিম্নে উল্লিখিত নিরাপত্তা কারাবন্দিদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের পক্ষে সামনের সোমবারে অনুষ্ঠিতব্য একটি habeas corpus পিটিশনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করার অনুমতি প্রদান করলে বাধিত হব।

সাক্ষাতের অনুমতি প্রদান করলে আজ অথবা আগামী কাল দুপুরের পরে সাক্ষাতের অনুমতি প্রদান করা যেতে পারে।

আপনার একান্ত

তারিখসহ স্বাক্ষর/- আতাউর রহমান খান,

অ্যাডভোকেট

  • মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী
  • জনাব শামসুল হক, এমএলএ
  • জনাব মুজিবুর রহমান (শেখ)

১৯৭

আইবিইবির এসএসপি এ.জে. গোলাম সামদানির নিকট থেকে প্রাপ্ত ২৮/২/১৯৫০ তারিখের একটি আবেদনপত্রের অনুলিপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ইনটেনডেন্টের নিকট প্রেরণ করে নিবেদন করেন যে, ১/৩/১৯৫০ তারিখে সাক্ষাতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

ঢাকা, ২৮শে ফেবরুয়ারি ১৯৫০

গোয়েন্দা বিভাগ, পূর্ববঙ্গ

৭ ওয়াইজঘাট রোড

ঢাকা, ২৮শে ফেবরুয়ারি ১৯৫০

নং ৩৭৫৭/৪০৮-৪৮ (সেক) এস

দ্রুতডাক

গোপনীয়

বরাবর,

জনাব এ.এইচ. খান

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ইনটেনডেন্ট

মৌলভী এ.জে. গুলাম সামদানির নিকট থেকে প্রাপ্ত ২৮/২/৫০ তারিখের একটি আবেদনপত্রের অনুলিপি এতদ্‌সঙ্গে প্রেরণ করে আমার নিবেদন এই যে, একজন আইবি অফিসারের উপস্থিতিতে ১/৩/৫০ তারিখে সকাল ৯.৩০-এ সাক্ষাৎটির অনুমতি প্রদান করা যায়। সাক্ষাৎলাভে ইচ্ছুক দলটিকে অবহিত করা হয়েছে।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- এ. মুকতাদির

২৮/২

আইবির বিশেষ সুপার ইনটেনডেন্টের পক্ষে

পূর্ববঙ্গ, ঢাকা

১৯৮

ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী এ.জে. গোলাম সামদানি আইবিইবির এসএস(১)-কে অনুরোধ করেন যেন তাঁকে শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা ভাসানী ও ম. শামসুল হক প্রভৃতি নিরাপত্তা কারাবন্দির সাথে তাঁদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে আলোচনা করতে সাক্ষাতের অনুমতি প্রদান করা হয়।

ঢাকা, ২৮শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫০

বরাবর,

বিশেষ সুপার ইনটেনডেন্ট (১)

গোয়েন্দা বিভাগ, ঢাকা

জনাব,

সবিনয় নিবেদন এই যে, নিম্নোক্ত ৩জন কারাবন্দির সাথে তাঁদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের আইনি বিষয়ে আলোচনা করতে তাঁদের সাথে সাক্ষাৎ করা জরুরি অনুভূত হচ্ছে।

অতএব জনাবের নিকট আবেদন এই যে, আজ অথবা কাল তাঁদের সাথে একটি সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিলে বাধিত থাকব।

নিরাপত্তা কারাবন্দি:-

  • মু, শামসুল হক, এমএলএ
  • মওলানা আবদুল হামিদ খান
  • শেখ মুজিবুর রহমান

নিবেদক

তারিখসহ স্বাক্ষর/- এ.জে. গোলাম সামদানি

আইনজীবী, জজ কোর্ট, ঢাকা

৭৬, মালিটোলা রোড, ঢাকা

তারিখ, ঢাকা

২৮শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫০

১৯৯

ঢাকার আইবিইবির একজন অফিসার রিপোর্ট করেন যে, ২৮/২/১৯৫০ তারিখে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে মৌলভী হাবিবুর রহমানের সাক্ষাতের সময়ে তিনি উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা, ১লা মার্চ ১৯৫০

এসএস ২

জনাব,

যথাবিহিত সম্মানপ্রদর্শনপূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, ২৮/২/১৯৫০ তারিখে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তা কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে মৌলভী হাবিবুর রহমানের সাক্ষাতের সময়ে আমি উপস্থিত ছিলাম।

তাঁদের আলোচনা পরিবার ও ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ছিল। তাঁদের আলোচনায় আপত্তিকর কিছু ছিল না।

উক্ত সাক্ষাতের সময়ে নিরাপত্তা বিভাগের ডেপুটি জেলার ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

তারিখসহ স্বাক্ষর/- ১/৩/৫০

পার্শ্বটীকা: ডিএস৩, অনুগ্রহপূর্বক পর্যবেক্ষণ করে নিচের কাগজগুলোর সাথে ফাইলে রাখতে পারেন। ফাইলটি শেষ। তারিখসহ স্বাক্ষর/- ৬/৩/৫০।

২০০

অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান খানের ৪/৩/১৯৫০ তারিখের একটি আবেদনপত্র সংযুক্ত করে ঢাকা আইবিইবির এসএসপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ইনটেন্ডেন্টকে একটি ম্যামো প্রেরণ করেন। এতে উল্লেখ করা হয় যে, আবেদনকারী ও ৩জন নিরাপত্তা কারাবন্দির মধ্যকার সাক্ষাতটি একজন আইবি অফিসারের উপস্থিতিতে ৮/৩/১৯৫০ তারিখে মঞ্জুর করা যেতে পারে।

ঢাকা, ৪ঠা মার্চ ১৯৫০

গোপনীয়

বরাবর,

জনাব এএইচ খান

সুপার ইনটেনডেন্ট, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার

ঢাকা।

অ্যাডভোকেট জনাব আতাউর রহমান খানের ৪/৩/১৯৫০ তারিখের একটি আবেদনপত্র এতদ্‌সঙ্গে যুক্ত করে আমার বক্তব্য এই যে, একজন আইবি অফিসারের উপস্থিতিতে ৮/৩/৫০ তারিখে বেলা ৪টায় তিনজন নিরাপত্তা কারাবন্দির সঙ্গে আবেদনকারীর সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। দলটিকে সেভাবে অবহিত করা হয়েছে।

(ম. ইউসুফ)-এর পক্ষে

বিশেষ সুপার ইনটেনডেন্ট অব পুলিশ, আইবিপূর্ববঙ্গ, ঢাকা