সজল সন্ধ্যা

রাতের ফুল রজনীগন্ধ্যা ফুটিলে তবে
আমার মনে সিন্ধুরঙের খেলা যে হবে ।
সন্ধ্যাতারা আকাশেতে ওঠে শিরিন রাগে;
নিশিগন্ধ্যা ঘাসের উরসে ফুটিল আগে ।
কার কূজনে পথের প্রান্তে গিয়েছি থেমে;
বুঝেছি আমি কালেওর আঁধারে সন্ধ্যা নামে ।
পথের ভুলে পন্থ হারিয়ে গিয়েছি বনে,
হঠাৎ বায়ু ছুঁয়েছে বদন দখিনা পানে ।
কিসের মোহে গিয়েছিনু কাঁহা― জানি নি আমি ।
মুগ্ধ বেগে মোহিনী আবহে দুলে কলমি ।।
একটু হেঁটে সবটুকু ভুলে নিশিগন্ধ্যা সুবাসে,
আলতো ছোঁয়া ভুলায়েছে মন যে সুনন্দা সুহাসে ।
ভবভবনে ফুলসৌরভ কেবল টানে,
বুঝেছি তাহা― আজিকার বেলাশেষের তানে ।
দখিনা বায়ু ফুলের সুবাস মায়াবী যেন সন্ধ্যা ।।
ভেসেছে মন চোখের স্বপ্নে অতীতকালে,
চাঁপার বনে সেই বসে থাকা মনে পড়লে―
শাদা-গোলাপী পুষ্প ঝরিলে তোমারই কোলে―
মুঠো ভরিয়ে দিয়েছে নজর দূর লহরী পদ্মা ।।
ঘাসের বুকে তুমি আর আমি এঁকেছি কত স্বপ্ন,
নীল গগনে ভেসেছে মোদের সে কল্পনা ।
চিলতে চিঠি দিয়েছিলে কত হে আনমনা―
লঘিমা ভরা প্রেমের যে চিঠি তুমি লিখতে,
গোপন কথা যা লুকিয়ে ছির মনের কুঠিতে ।
পুকুরপাড়ে কোনও গাছতলে তুমি ও আমি
যা স্বপ্নীল তাই যেন ভেবে হয়েছি এক ।
দেখেছি তীরে মেঘহও পাখি আরেক বক ।।
এ মনে সুর ঐ মনে পেত মধুর ভাষা,
আজও মোর বুকভরা সেই প্রেমের তৃষা ।
হারিয়ে গেছে মায়া মুখখানি সে স্বপ্নীল স্বপ্ন ্
কাঠগোলাপ আজি ঝরে পড়ে ঘাসের বুকে,
থব কবরী রচিতে পারি নি চাঁপার ফুলে,
গন্ধভরা তোমারই শরীরে নাহি মোহিলে,
সন্ধ্যা ঝুরে ভূবনের পথে বিরহি শোকে ।
সে সব কথা প্রেমভরা যেন দিল চোখেতে সলিল,
হাজার বার মনে পড়া তুমি আজিকে তবু সজল
                                      সন্ধ্যা ।।


৪ঠা৴ চৈত্র৴ ১৪১১
গুলবাগ