মাঝিহীন নৌকা

এক পল

  • ক্যাটাগরী: কবিতা

তখন আমি শৈশবে না যৌবনে―ঠিক বুঝে উঠতে পারি নি। মন যে আমার ছুটে বেড়াতে চায় শরতের স্নিগ্ধ কাশফুলে ঘেরা শিউলিকাননে। অথচ তার মাঝে গুনগুন করে বেড়ায় নববসন্তের আগমনী। এমনি সময়ে মন খুঁজে পায় ভাষা যা বয়োবৃদ্ধের চালশে চোখে কৈশোরের বাতুলতা।

শৈশবের হেঁটে আসা মেঠোপথ ভুলে কৈশোরে একই পথে হেঁটে কৈশোরের চোখের চাহনে আমি সে-পথ দেখেছি। কৈশোরের দুষ্টু দুটো পায়ে আমি সে-পথে দৌড়ঝাঁপ দিয়েছি। তখনও হাতের কাছে কদবাঁশিটি সবচেয়ে প্রিয়। আমি থেকে থেকে সুর তুলেছি আর সে পুরনো পথে তাকে ভাসিয়ে দিয়েছে।

কৈশোরের প্রথম কিশোরী হল আমার কবিতা। আবহ-আবেগের আবর্তনে এরা রচিত। নববধূর নীরব দুটো চোখ যেমন মনের আকুলতা বাড়িয়ে দেয় প্রথম কবিতার আয়োজন তারই অনুগামী হয়েছিল। সাদাপাতায় সে নববধূর নীরব দুটো চোখ যা শুধু প্রকাশ হতে ব্যাকুল। তার অবিরত তাকিয়ে থাকা যেনো অন্য জগতের কোনো মোহিনী ভাব।

জীবনের ছন্দ আমার অনেক আগেই হারিয়ে গিয়েছিল। কবিতা দিয়ে আমি তারই অভাব পূরণ করতে গিয়েছি। শব্দমূর্ছনায় হারিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনে এ-আয়োজন।

একান্তে অজান্তে কবিতার ভুবনে আমার আগমন। নিজেও বুঝি নি―জীবনের আশা কোথায় পেয়েছে ভাষা? জীবনপ্রিয়ার দুটো চোখে তাকিয়ে থাকার মনোবেদনা আমার চোখে তখনও লোনা ঢেউ তোলে নি।

ছন্দের বন্যা বর্না হয়ে একদিন সাদাখাতার পাতায় রঙতুলি ধরিয়ে দিয়েছিল আমার হাতে। অন্ধ হয়ে চোখ বন্ধ রেখে আমি আবহের পুজো করেছি এতো দিন। মানসীপ্রিয়া ঘোঙ্গট ফেলে দিয়েছে। আর এঁকেছি আমি সাদাখাতায় কথার ছবি। এতো দিন যে-আশা ভাষা খুঁজে পায় নি, বাহির-সমুদ্রের তরঙ্গে যে ছিল অসঙ্গ কেমন করে তার লুকানো আশা তরঙ্গের সঙ্গে বিহঙ্গের ডানায় ভর নিয়েছে―সে-কথা যে জানি নে।

২রা আশ্বিন ১৪১২