সতেরোটি বসন্ত পরে
আজি বাতাস কী কথা কহে দক্ষিণ প্রান্তর হতে?
পাতার কানে, আম্রকাননে ঝিরিঝিরি বায়ু বহে।
সতেরোটি বসন্ত ধরে―
এই মালঞ্চে সেবেছি যারে, সোনালি স্বপ্নের রাতে
একাকী হয়ে ভেবেছি তারে―অন্য কেহ কভু নহে।
সতেরোটি বসন্ত পরে―
মোর অঙ্গনে রঙ্গন ফুল ফুটিল এবার লালে।
সুরভি বিনা শুধু সুন্দর নয়নাভিরাম বলে―
বাতাস কহে শুধু যে কথা মাধবীলতার সাথে।
কী ফুল ফুটে কী অনুভবে আহা ধরণীর পথে?
আজি যে বনে দেখেছি আমি আমের মঞ্জরী শত
বলিছে তাহা―ফাগুন লগ্নে এই আরাধনা-ব্রত।
আনন্দ যেন আকাশ ছুঁয়ে ভূর্ধ্ব ধরাধামে ঝুলে।
সকালে উঠে প্রান্তর হেঁটে দেখেছি ঐ কোন ভুলে―
কুহকী বনে মহুয়াগন্ধে মোহমায়া যেন হারা।
ঘন অরণ্যে নতুন পর্ণে দক্ষিণবায়ুর নাড়া॥
শীতের শেষে ফাল্গুনী বেশে ঝরাপাতার যে চিঠি
পেয়েছ তুমি তোমারই দ্বারে; রেখো না মনেতে দুষ্টি।
ভালোবাসি―এ কথা বলিব চারিদিকে প্রেমসুরে,
সুরের মাঠে আসবে তুমি যবে নিমন্ত্রণ স্মরে।
সতেরোটি বসন্ত ধরে―
খুঁজেছি যারে মিলিবে তুমি আমারই কামনা হয়ে।
আঠারোতম বসন্তলগ্নে মোর ভালোবাসা লয়ে॥
এতটাকাল হেঁটেছি পথে শূন্য যে প্রেমের পাত্রে;
নিখিল প্রেম উজাড় করে প্রথম আমার পত্রে―
ওহে প্রেয়সী!—বলে সম্ভাষি তখন দিয়েছি মন।
কালির দাগে একটু করে হয়তো সে কথা জান॥
শালপাতার খামে যে চিঠি সযতনে রেখে যবে
একান্তে হৃদয়ের হবে;
―সে শুভক্ষণ আসে কবে?
ফাল্গুনী বায়ু নবকুসুমে বলিছে, এবার ফুটো।
বেলির কলি সে শুভ ছন্দে অমাবস্যা-রাতে ছুটো॥
সতেরোটি বসন্ত পরে―
জড়ায়ে ধরে মাধবী রাতে আলিঙ্গন যেন করি।
আহা আবেশে পরশ খেলে শাড়ির আঁচলে ধীরি
বাতাস ভুলে লহর তুলে খেয়ালী খেয়ার তটে।
কাফি সঙ্গীতে মন আমার ছুটে যে বেড়ায় কোথা?
তোমাকে পেয়ে কেবল কেন এতটা প্রাপ্তির ব্যথা॥
সতেরোটি বসন্ত ধরে―
খোঁজার পরে―আঠারো সনে যৌবন-উদ্বেগে তুমি
বসন্তবায়ু দূরের নদে উত্তালেতে তোলে ঊর্মি ।
চিরদিনের যে ভালোবাসাবন্ধনে জড়ালে তুমি
সতেরোটি বসন্ত পরে―
প্রতীক্ষার প্রেয়সী হয়ে।
ভালোবাসায় মোরে ছুঁয়ে॥
২ ফাল্গুন ১৪১১
গুলবাগ