সন্ধ্যাকন্যা
পাখির ডানায় নেমে-আসা-সন্ধ্যা―এতকাল ধরে আমি যে খুঁজেছি,
দখিন সাগরের সফেন ঢেউ―এতটা কাল পরে আমি পেয়েছি।
ফরফরে হাওয়া সমুদ্রের তীরে নিয়ে যাও না বুকের ভালোবাসা।
উদাসী পৃথিবী কখন আমাকে শিখিয়েছে বীণার বাণীতে ভাষা।
পেখম ধরেছে মনেতে আমার―সহসা পৃথিবীর মায়াবী জালে;
মুখের ঐ শরাবে প্রেয়সী তুমি―সানুরাগ দুটো ঠোঁট অবিরলে।
তোমার কেমন চাহনি মোহিল সাঁঝের আকাশে সূর্যনামা আভা,
চাহনির ইশারা তোমার যেন―চেয়েছে তোমাকে পেতে কবে কে-বা?
বসন্তের প্রথম সে মুলাকাৎ―
এক পৃথিবীর যত শিকায়েৎ—
কাহার কাহারবা রাগিণী কেন প্রশ্ন করেছে ভালোবাসা কেমন?
যখন সামনে পেয়েছি তোমায় বুঝেছি আমি—প্রিয়তমা যেমন।
বিদিক বিদূরে বিথার খেয়াল—প্রিয়তমা আমার আমি এখানে;
অমর পৃথিবীর যত সৌন্দর্য মনে হয়েছে মোর সব সেখানে।
গোধূলির ধূলি করেছে মলিন―
সমুদ্রগর্জন অন্তর্ভেদী যেন―
সন্ধ্যামালতী সবে ঝরল বলে বাকিরা করছে শুধু হায়! হায়!
এরূপ সন্ধ্যা পাখির ডানায় নামা খুঁজেছি তোমাকে যেন কামনায়।
কাঁঠালচাঁপার গন্ধে সর্বহারা―
মায়াবী মুখটি তোমার অধরা―
এত খুশবু সেদিনের সন্ধ্যায়―কাহার বিনুনি রচিছে সাগর?
বুঝে নিলাম তোমাকে এ সন্ধ্যায়, পরের রজনী শুধু যে আমার।
অজানা রাতের কামনা বুঝেছি; বিশাল সাগরবুকে আমি চেয়ে;
সমুদ্ররাগিণী যেন আমি চাই―রঙীন পৃথিবী যাক মোরে ছুঁয়ে।
সুরের সাগরে ভাসিয়েছি কিস্তী―এতটা সুন্দর পৃথিবী পেয়েছি;
এখানে আমি চেয়েছি প্রিয়তম; সায়ন্তন সায়রে খুঁজে ফিরেছি।
আমি শুধু খুঁজেছি সাঁঝের মায়া―
চুপিচুপি ডেকে বলেছি, “ও প্রিয়া”―
ঝুমকালতার ঝুলনে ঝুলিছে রঙীন পৃথিবী স্বপ্নীল স্বপ্ন;
আঁধারে সন্ধ্যায় হিজলের বনে হরিণীপ্রিয়ারে লেগেছে অনন্য।
সবটা ফেলে দিয়ে ইচ্ছে করে না―
ধূসর রাতের করি যে সূচনা।
পৃথিবীর মায়া, প্রিয়ার প্রণয় বারবার আমায় করে পাগল।
কখনও বিদায় বলো না, পৃথিবী―ডাহুক-ডাকা-রাতে একাকী ছল।
সমুদ্র-উল্লাস ছুঁয়েছে আমায়―
নাগেশ্বর চাঁপা দিয়েছি তোমায়।
২০ জ্যৈষ্ঠ ১০১২
গুলবাগ