হৈমন্তহেরা
কুসুমকলি ফুটিল যে হৃদয়ে,
দখিনা পবন বহে এ নিলয়ে,
মনের মাঝে যত স্বপ্ন আমার,
সব মিলে এক রঙিন মুকুর।
কার্তিকের ক্ষেতভরা সোনাধানে,
অমাবস্যার রাতে দীপালি টানে,
নিশির শিশির পরে আনমনে,
হাতে হাত রেখে চলো না দুজনে।
নদীর তীরে আবছা কুয়াশায়
স্বপ্নগুলো সাজে তারই আশায়।
কী রূপ তার! বলিব কী ভাষায়?
বেণুকুঞ্জে নীরব সৌরভ মাঝে
মনের কোণে শুধু যে বেণু বাজে।
আশ্বিন পরে স্বপনের হেমন্ত
আঁচলে মুখ ডেকে কেন যে শান্ত?
কুয়াশাঘেরা পথে তটিনীতটে
হেমন্তের মধুর সকাল কাটে।
ক্ষণপর রোদে ভেসে আসে প্রিয়া
তার মধুর হাসি মোহিল হিয়া।
শিশিরভেজা ঘাসে ঐ যে অদূরে,
কে যেন ডাকে মোরে মোহিনী সুরে?
কুয়াশায় ঢেকে যায় সবই যে।
ও প্রিয়া, তোমারই নিমীলিত চোখ
আজি খোলো না, দেখিবে এ কার্তিক।
কোথায় যেন আজ মন ভেসেছে?
কোন কুঞ্জে কী গান পাখি গাইছে?
প্রিয়তমাসু, কী পশিল অন্তরে?
আমারই সনে চলো না ঐ বাহিরে।
কত স্বপ্ন আজি রঙিন আঁখরে,
ফুটিল পদ্ম এ কঠিন পাথরে।
কী নব অনুভূতি মোর নয়ানে―
দিশি দিশি অহোরাত্রির স্বপনে।
খুঁজেছি যাহারে হিজলের বনে
পেয়েছি তাহারে বিজনের সনে।
আঁচল বিছায়ে যে ডাকিছে মোরে―
ক্ষণিকের বিরহে এত বিধুরে
যে হাত বাড়িয়েছে ফটিক মুখে,
মুছিয়া দিয়া বিধির কালরেখে
সে আঁকিয়াছে হেমসুন্দর চিত্র,
—ভরিয়াছে মোর হৃদয়ের পাত্র।
শীতল পরশ, এ গভীর রাত্র
মোদের মিলন হইবে পুরন্ত।
জলপাই পাতায় আসা হেমন্ত
প্রাণের কী হরষে এত ঘুমন্ত?
২৮ কার্তিক ১৪১১
গুলবাগ