শরৎবালা

  • ক্যাটাগরী: কবিতা

সেদিনও নীলাম্বরে সাদা মেঘে
নীলিমার কোন রঙে অনুরাগে,
ভেসেছিল এই মন কাশবনে?
শরতের এত মধুর পবনে―
ব্যাকুল বিকেলে আকুল আনন্দে,
কেটেছে সে ক্ষণ মধুরিমা ছন্দে।
আকাশী আশায় কী চেয়েছি আমি!
পল্লবকুঞ্জে সে সুরে বাজ তুমি।
নির্ঝরিণী স্রোতে কে আসিছে ধীরে?
স়ফ়েদ কাশে শরৎ ভাসে তীরে।
শেফালিকা-সৌরভে কী যে গৌরবে
আঁকিছে তার ছবি দুয়ারে সবে!
মাঠভরা কাঁচাধানের সুবাসে,
তীর হতে বহে আসা এ বাতাসে,
নীলা আকাশে আশার কী আবেশে
উড়িছে বক সুদূরের পরশে!
আস়মানী রঙে শরৎ রঞ্জিত,
কেলিকদম্বতলে কেয়ারী কত!
স্বচ্ছজলে আকাশের নীল ভাসে
শিশিরভেজা পায়ে তীরেতে এসে।
ধরার বুকে চুপে চুপে আসিছে।
চুমকি হাতে কানে কানে বলিছে।
তরণী ভিড়ায় ঘাটে ধীরে ধীরে,
তরুণী চাহে এ পানে ফিরে ফিরে।
বলি নু তাহারে―কেন এ চাহনি?
বয়ানবরনে কী আঁকিছে বর্ণী?
পরনে তাহার নিশি নীলাম্বরী,
নিরখিয়া নয়ানে রূপনহরী।
মোহিত সে চোখ শিউলিকুসুমে,
ভুলিয়ে এ মন নিয়েছে রেশমে।
মেঠো পথে সে চলিছে তার পরে,
দিঠি গিয়েছে আমার বহু দূরে।
পলকের সেই চাওয়া আবার
এখনও খুঁজিতে ইচ্ছে করে মোর।
স্মৃতির গভীরে ডুব দিয়ে আসি
―কেন যে বলি নি তারে, ভালোবাসি?
দীপালি দীপিত আলোকে একলী
কী সুবাস ভাসে হাসিতে পেহলী!
হৃদয়েতে করিছে ছায়া ব্যাকুলি;
কী দেখেছি আমি―যুবতি নহলী।
আরবার দেখার তরে উদাসী―
বুঝিনু সে বুঝি আমারই প্রেয়সী।
বিলোল নিশি কাটিল না নিমেষে;
পরদিন আসি তীরে অবশেষে।
ঢেউগুলি কী যেন কহে উল্লাসে!―
ভোরের শিশির পায়ে আসিছে সে।
ওপারের বনে স়ফ়েদ কাশেতে
মন লুকাল না। পারি না ভাবিতে।
অদূরের বিলে ভাসিছে কৈরব
রঙিলাভাবে; আহা কী অভিনব!
আমার মনে নাই কো অনুভব;
মনেতে কেন যে রাগিণী ভৈরব?
শরতের যত অনুভব মোর
নিয়েছে কেড়ে করে মোরে বিভোর।
শুধু তার সনে যে কথা বলিতে
এত ব্যাকুল আমি এই বেলাতে।
কাটিল মোহভরা আর প্রহর
একাকী আমি রয়ে পাশে নহর।
আসে আসে বলে অদূরের কোন
পাখি শিস দিয়ে যায়, এই মন
উদাসী হাওয়ায় বুঝে কি না পায়?
মনে হয় প্রিয়া অনুখন চায়।
যখন মন হতাশায় ফিরেছে
মঞ্জীর পায়ে ঝুমঝুম নাচিছে।
কথা হল দুজনাতে চোখে চোখে।
বঁইচিঝোঁপে কাশফুল গুচ্ছ করে,
শিউলিতলে সে ফুল মুঠোয় ভরে,
জানিয়েছি হৃদয়ের ভালোবাসা।

২৩ অগ্রহায়ণ ১৪১১
গুলবাগ