মুহুরীর ঢেউ
বাতায়নপাশে বহিল বাতাস চন্দ্রিমা রাতে যেন,
পূর্ণিমা চাঁদ আর আমি জেগে ঘুমহীন চোখে কেন?
রাতের পর্দা জ্যোৎস্না-নেশায় খোয়াবদোলায় দুলে,
তিমিরের পথে দীপ্তি ছড়িয়ে আজিকার রাত বলে
―পূর্ণমিলন মুখে আর ঠোঁটে তবু।
ফটিক চন্দ্রে জ্যোৎস্না ভাসিছে আস়মান পারে ঐ―
সহস্র তারা আজিকে নিশিতে আকাশে পেল না ঠাঁই।
বিভাবরীবিভা, দেবদারু চূড়া করেছে সৃজন পাশে;
উল্লোল বায়ু ইস়রার সুরে তমোহর রূপে আসে।
আমারই মনন সে বায়ুর সাথে হয়েছে সঙ্গী রাতে;
ভেবেছিনু কত মানসীরে মনে খুঁজেছি আরেক প্রাতে।
―পাই নি প্রেমেরে কভু।
রাতের বেদনা নিরাশার হয়ে থেমে গিয়েছিল কবে?
মায়িক মায়ায় গেঁথেছে স্বপ্ন অন্ধ রজনী সবে।
না বুঝি কোথায়, কোন আঁধিয়ারে ডাকিল হঠাৎ পাখি?
তা শুনে তখন বিরহ প্রেমের বাহুতে বেঁধেছে রাখি।
মনমঞ্জিলে মঞ্জীর নাচে রাঙানো চরণে আজি;
বিভাস রাগিণী প্রভাসঙ্গীতে ভরেছে মনের সাজি।
আমারই কাননে শত শতদল ফুটিল পরশে বুঝি―
কালকের রাতে চন্দ্রিমা চাঁদ দিল এ সুরতে সাজি।
পৃথিবীর কাছে এতখানি সুখ চেয়েছিনু আমি কবে?
গুলশান চেয়ে সকল গুলাব কহে ভালোবাসা হবে ।
পরম ভালো যে আমার লেগেছে প্রভাতের পথে হেঁটে;
বেতসবাগানে বিজনী বুলাল বাতাস চড়ার তটে।
বহতা বাতাস সব ভালোলাগা এনেছিল বুকে করে;
দেয়ালে দোয়েল বসে জলসায় গেয়েছিল মন ভরে।
সেদিন তোমারে ভুলে বেসেছিনু ভালো এসবেরে শুধু।
এখানে প্রভাতে কত পাখি গায়―কত-না ফুলেতে মধু!
―মানসীর মুখ গিয়েছিনু ভুলে তাই।
হিজলের ঘাটে মুহুরীর ঢেউ―শ্যামা ডেকে যেত কভু,
তরীতে ভেসেছি এই বাঙলার নদীতে কত-না প্রভু।
প্রিয়াছাড়া মন নীল আস়মানে নীলিমার হয়ে যেত,
মুহুরীর জলে ছুটেছি―প্রভাতে সে আমারে নাহি পেত।
কোথাকার বনে এতটা ঘুরেছি―ছিঁড়েছি একটি জবা,
প্রিয়ার কানে গুঁজে দিতে বলে হাসিতে ফুটিল কে-বা?
―সেই প্রান্তরে এখনও আমি রই।
১৪ চৈত্র ১৪১১
গুলবাগ