আর কীবা বলার আছে
হৃদয়সুর হৃদয়বীণায় যদি নাহি বাজে,
আমারি সুর আমারি হরষে যদি নাহি সাজে,
ফণীমনসা হয়ে যদি কাঁটা দিয়ে যায় বুকে,
মোর ছিন্নবীণা আর কি বাজিবে অব্যর্থ শোকে?
অনল শিখা যদিবা হৃদয়ে জ্বালি বহ্নিরাগে,
ব্যর্থ প্রেমের অব্যর্থ যাতনা চিরন্তন জাগে।
কেন যে মাদকতা জাগিয়েছিলে বিষের বাণে,
বিহ্বলিত করে চিত্ত মোর অনুপমা নয়ানে?
আশাগুলো সব চূর্ণ হয়ে যাক ব্যর্থ আঁখির লাশে,
বিষের বীণ আর নাহি বাজুক হৃদয়লাশে॥
অভিমানী চিত্ত আর কী গাহিবে কষ্টের সুরে?
আমার আর কীবা বলার আছে করুণ করে?
―যখন চাপানো বিষাদ বেরোয় নয়ননীরে,
নয়নতারা ঝলসিত হয় স্বপ্নের তীরে।
রঙধনু রঙ উঠেছিল গগনে সাঁঝে বৃষ্টিপরে―
স্বপ্ন জাগিয়েছিল হৃদয়ে মোর ছলনা করে।
হঠাৎ আমারি কণ্ঠবীণায় সুরগুলো সাজে,
বিরহবিষাণ আজিকে শুধু বাজে হৃদিমাঝে।
স্মৃতিগুলো বুনিছে মালা বিস্মৃত প্রণয়সুখে,
আজি এ সন্ধ্যাবেলা এসেছে আঁখির নীর দুখে॥
বিষাদসুর আজি বাজে মোর হৃদয়বীণায়,
আঁখিজলে স্মৃতিগুলো মুছে যাক মোর হিয়ায়।
যাতনায় বেদন বিষের সমান। কীবা বলি!
হৃদয়ের রক্তক্ষরণে ব্যথা আমি নাহি ভুলি।
সাঁঝের পবন বয়ে নিয়ে এল এই রিক্ততা।
বুঝেছি কি আমি কখনও বেদনার গভীরতা?
যদি হৃদয় ভেঙে চূর্ণ হয়ে যায় ব্যর্থ প্রেমে―
দহনজ্বালা নিভে কি কখনও? এই অগ্নিধূমে
উবে যাক মধুময় স্মৃতির শতেক কণ্টক;
মায়াহীন ব্যথার যেন এবার হয় অভিষেক।
আর নহে, আর নহে, হে প্রেমমোহিনী কবিতা!
নহে ব্যথার হৃদয়ে নিঝুম রাতের স্তব্ধতা।
এবার হোক নব সন্ধায় নব আলোকধারা।
আর নহে স্বপ্নের ছলনায় প্রেম মায়াভরা।
এ ব্যর্থ জীবনে মধুময় স্মৃতি আর চাই না।
ছুঁয়ে ছুঁয়েছে হৃদয় দূরে থেকে আর পাই না।
ফেলে আসা স্মৃতিতে স্বপ্নের আল্পনা আর নয়।
তবুও ভুল করে ব্যথা নিয়ে ফিরে যেতে হয়।
বিষাদ সুরে বিষাণে ঝঙ্কার আর নহে কাম্য।
নিষ্কৃতি চাই, আর মনে হয় না প্রেমই রম্য।
বেদনা সব হৃদয়ের হেসে যায় ছলনায়―
রক্তিম ঠোঁটে মায়া আজ মুছে যাক কল্পনায়।
হে প্রেম! ছুটি জানাই আজ তোমাকে আঁখিজলে
―দেখেছি আমি হৃদয়হীনা নারী রাতুল গালে।
১১ ভাদ্র ১৪১১
গুলবাগ