অশান্ত বসন্ত
ঐ পুবালি পুরে―
আকাশ অদূরে।
চেতনবনে বসন্তে যে চপলমতি
হেঁটেছে এ পথপাশে―নিশাস নিষুতি ।
লটকনপাতা
শীতের দোলায়
হি হি করে কাঁপে।
ঝরেছিলে বেদনায়
উত্তরেরই হাওয়ায়
পাতার মর্মরে,
চেয়েছি তোমারে।
ঝরাপাতার কান্তারে সময় পেরিয়ে―
প্রিয়তমা, কী করে এতটা কাল ছিলে দুঃখ দিয়ে?
হৃদয়ের মিতা,
নিশির নীলায়
চমকিতা রূপে
টলমল মুখে আমি চাহন চেয়েছি।
বেদনার নীলে তিতি তোমারে খুঁজেছি॥
দুধারে ঝরেছে
শুকনো বেদনা।
ধূসরবর্ণ নিচুল
পরেছে বৃক্ষ বিপুল।
হিমেল হাওয়া কি যেন জাদুর পরশে
শূন্য করেছে অন্তর―দেয়ালের পাশে
পাতাহীন বৃক্ষ আজি সুবিশাল মূর্তি।
―চেয়ে আছে দূরাকাশে দিশাহীন নিতি।
কত পাখি বসেছিল পাতার আড়ালে?
কত সুর উঠেছিল পল্লবের তালে ?
মায়াভরা দিগন্তের মাঠে শুধু শ্যামলিমা ঘাস।
দেখেছি ধরেছে তাতে ধূসরের আশ॥
বসুধরাপন্থে,
গোধূলির অন্তে,
অশান্ত বসন্তে,
পর্ণমোচী বৃক্ষ ফের
নবতম কিশলয়ে ভরপুর।
সবুজ পাতার অঙ্গে ফাল্গুনী দোলন।
বহু দিন পরে প্রাণে প্রেমের মাতন॥
দেখেছি উদ্যানে
লটকনপাতা
ফ্লেমিঙ্কোর মতো
রঙেতে রাঙানো।
ফাগের আগুনে
রঙ্গনের লতা
পুড়িছে সতত।
―ও মুখ লুকানো॥
মধুকতলেতে জানি ফুলের সুবাস;
পলাশের বনে তাই আশুসর্বনাশ।
শিমুলফুলে না জানি কেন শুকপাখি
ঠোঁট রেখেছে ঢুকিয়ে?―আমি নিত্য দেখি
যত ছবি বসন্তের
একলা পথপ্রান্তরে ।
―তার সাথে প্রিয়াছবি
বুঝায়েছে কবেকার আমি কবি॥
মোর মনন অন্তরে
তব প্রেম যে গভীর।
চেয়েছিনু প্রতিপলে ভালোবাসা শুধু।
ফাগের স্মরণে যেন ছড়ায়েছে বিধু
করভরা যে কিরণ মুকুলিত মুখে;
আজিকার খেলা সব মমতাময়ূখে।
এত দিন পরে
এতটুকু স্মরে
তোমার দুয়ারে
রেখেছি এ পদচিহ্ন;
গুজারিনু কত অহ্ন
তোমারে বিনি একলা―
অশান্ত বসন্তবেলা॥
আমাকে কবি করেছে অশান্ত বসন্ত,
ভাব পেয়েছে যে ভাষা হয়েছে দুরন্ত ।
তোমার নাম তো আমার কবিতায় লেখা,
মনোভাবে আসা তুমি, কোন পথে দেখা?
শীতের ঝরোকা খুলি―
ঝাউবনে তুমি এসে―
মন মোর গেলে চুমি।
মালঞ্চের ফুল তুলি
কোলভরা সে সুবাসে
উদাস হয়েছি আমি॥
তব শরীরে বসন্ত বাহিরে বসন্ত,
বসন্তের ফুল্লমালা বুকেতে দুরন্ত।
বাহুডোরে বাঁধা তুমি আজিকার রাতে,
―ডানাকাটা পরী হয়ে সুন্দর মুখেতে।
ধীরে ধীরে স্রোত বহে পাশের নদীতে।
দুটো ঠোঁটে ভাষা যেন হারায় চমকে;
দুটো আঁখি কান্নাভরা―মিলনের রাতে।
গুলাবী শাড়ির ছলে ডেকেছ নিজেকে।
কারাবা মধু ছিটিয়ে তোমারই শরীরে
―সুরভিবাহারে,
কলিল কমলে,
আমারে মোহিলে।
বেসেছি যে ভালো
অশান্ত বসন্তে
ফাগুনের অন্তে।
বীণার সে তাল
বাজিছে সে তালে
ফের ঝড় তুলে॥
২৫ ফাল্গুন ১৪১১
গুলবাগ